আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্র ইউনিয়ন

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

ছাত্র ইউনিয়ন কি এবং কেন? (বাকী অংশ) সন্ত্রাস বিরোধী সংগ্রাম জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নানা ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি “শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বিরোধী” আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। যখনই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তখনই ছাত্র ইউনিয়ন তা প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। এমনই এক গৌরবের সময় ১৯৯২ সাল। ১৯৯২ সালের ১৩ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভীত-সন্ত্রস- হয়ে পড়ে। সন্ত্রাস রুখে দাড়াতে ছাত্র ইউনিয়ন তার তখনকার যুক্ত মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ছাত্রলীগ ছাত্রদলের বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসেন রাজু শহীদ হন। রাজু’র স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র সড়ক দ্বীপে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য অবসি'ত।

রাজুর চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলছে ছাত্র ইউনিয়ন। এছাড়াও রুবেল, নতুন, প্রোটন দাশগুপ্ত, সুজন মোল্লাসহ আরো অনেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীই সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হয়েছে। বিশ্বের ছাত্র সমাজ ও ছাত্র ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো তাদের হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির স্বাধীনতা, জাতীয় অধিকার, প্রগতি ও আত্মবিকাশের পথে বাধার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন স'ানে তারা মানব সভ্যতা বিরোধী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আশ্রয় নেয়। কোথাও ঘৃণ্য গণহত্যার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে।

এরা বর্ণবৈষম্য, ধর্মীয় বিভেদ, জাতিগত বিরোধ সৃষ্টি করে। নানা প্রতিকূল অর্থনৈতিক শর্ত চাপিয়ে দিয়ে, পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতির জালে আবদ্ধ করে ও বিভিন্ন কলাকৌশলে তারা নয়া ঔপনিবেশিক শোষণ ও লুণ্ঠন চালায়। বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ও তাদের জনপ্রিয় নেতা-নেত্রীদেরকে হত্যা করার চক্রানে- এরা সক্রিয়ভাবে সামিল রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষ করে তার মোড়ল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, দেশে দেশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তুলে অস্ত্র ব্যবসায় বিপুল মুনাফা লুটে নেয়। এভাবে তারা বিশ্বকে একটি পারমানবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ গোটা বিশ্বকে তার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই ঘৃণ্য দুশমনদের প্রতিহত করার জন্য এবং দেশে দেশে মানুষের স্বাধীনতা, জাতীয় মুক্তি, শানি- ও প্রগতির লক্ষ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সমাজের ঐক্য এবং নিপীড়িত ও মুক্তিকামী জাতিসমূহের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা। এই বস'নিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পৃথিবীর সকল দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে এবং সাম্রাজ্যবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, মৌলবাদ, বর্ণবাদ ও নয়া ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দ্ব্যর্থহীন সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আন-র্জাতিক ছাত্র ইউনিয়ন (ওটঝ), বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (ডঋউণ) এশিয়ান স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (অঝঅ)-এর অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নয়া উপনিবেশিক শোষণ রুখে দাঁড়ানো, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যুদ্ধ-চক্রান- ও যুদ্ধের পাঁয়তারা বন্ধ করে শানি- প্রতিষ্ঠা, পারমাণবিক অস্ত্রসহ সকল ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান, পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ বিলোপ সাধন, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করা, বৃহৎ শক্তিগুলোর সামরিক বাজেট হ্রাস করে দরিদ্র দেশসমূহের উন্নতির জন্য তার অংশ ব্যয়, সাম্রাজ্যবাদী সামরিক জোট ও ঘাঁটি উচ্ছেদ, দেশে দেশে অগণতান্ত্রিক বন্দীশালা উচ্ছেদ এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে মানবজাতির কল্যাণে প্রয়োগের জন্য বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী-প্রগতিশীল শক্তির সংগ্রাম জোরদার করতে হবে, জাতিতে জাতিতে মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রগতির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ছাত্র-জনতা এক হও ‘ছাত্র-জনতা এক হও’- এই শ্লোগানকে এবং তার মর্মবাণীকে ছাত্র ইউনিয়ন সবসময় তার একটি প্রধান অঙ্গিকার হিসেবে গন্য করে থাকে।

দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক তিন বেলা খেতে পায় না, শতকরা ৫৫ ভাগ লোক ২ বেলা খেতে পায়না। উত্তরবঙ্গে মঙ্গা, তাছাড়া সারাদেশব্যাপী নীরব দুর্ভিক্ষ লেগেই আছে। প্রায় তিন কোটি কর্মক্ষম মানুষ বেকার। বি.এন.পি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামের মত প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দেয় না। বরং ক্ষমতার জন্য সন্ত্রাস, খুন-ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি, দুর্নীতি, লুটপাট, শোষণ লুন্ঠনের রাজনৈতিক কূটচাল ও ষড়যন্ত্রের খেলা পরিচালনা করে।

ক্ষমতায় থাকার জন্যে এরা সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু থাকে। ফলে আমাদের অভ্যন-রীণ রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদীরা হস-ক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছে। এরা আমাদের অর্থনীতিকে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসর বিশ্ব ব্যাংক, আই.এম.এফ ও ডব্লিউ.টি.ও’র হাতে তুলে দিয়েছে। যার ফলে আমাদের শিল্প-কৃষি ধ্বংস হচ্ছে। দিন দিন দরিদ্র হচ্ছি আমরা, দরিদ্র হচ্ছে আমাদের দেশ।

লুটপাটকারী বিত্তবানদের নেতৃত্বে পরিচালিত রাজনৈতিক দলগুলো তাই নিজেদের শ্রেণী স্বার্থের রাজনীতিকে স'ুল একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখে, রাখতে চায়। যাতে কখনো সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াই তীব্র ও শানিত না হয়। সব সময়ই যেন জনগণ এদের সৃষ্ট রাজনৈতিক চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে, সেটাই তারা নিশ্চিত করতে চায়। বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতারা বার বার মুক্তির স্বপ্ন দেখালেও মুক্তি আসেনি। মুক্তি আসেনি কেন? কারণ ছাত্র-শ্রমিক-জনতা কখনো স্ব-স্বার্থ সচেতন হয়ে বৃহত্তর গণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

ফলে, বারবার বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম করেছে সাধারণ মানুষ কিন' নেতৃত্ব চলে গেছে মুষ্টিমেয় কিছু কোটিপতির কাছে, কোটিপতিদের অর্থ-মদদে ও ভাবাদর্শে পুষ্ট পুঁজিবাদী ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। এই দুরবস'া থেকে মুক্তি পেতে হলে ছাত্র শ্রমিক-কৃষক সহ সর্বসত্মরের বঞ্চিত-শোষিত মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবং শ্রমজীবী মানুষের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আর একটি গণঅভ্যুত্থান তৈরী করতে হবে। যে গণঅভ্যুত্থান, সমাজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজের-রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো সম্পূর্ণ বদলে দেবে। ছাত্র সমাজের মৌলিক স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনেই ছাত্র ইউনিয়ন সবসময় দেশের মেহনতি মানুষ তথা আপামর জনগণের দাবী ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় সহযোগিতা করেছে।

অভাবে-অনটনে, দুঃখ-কষ্টে এবং তাদের আনন্দে-উৎসবে সবসময় জনতার পাশে থাকার জন্য সচেষ্ট থেকেছে। বন্যা, মহামারী, দুর্যোগে, দুর্ভিক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের দক্ষ সেবা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সকলের কাছে মডেল হিসেবে সব মানুষের প্রশংসা পেয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন পন'ায় সবসময় ছুটে গেছে জনতার মাঝে তাদের সাথে একাত্ম হতে, তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে, শিক্ষা দিতে। সমাজতন্ত্রই মুক্তির পথ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এখন পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস'া প্রচলিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ এক-আধ ডজন দেশ বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস'ার কেন্দ্রে অবস'ান করে বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক হয়েছে।

অবশ্য সে সব দেশেও সমস্যার পাহাড় জমে উঠেছে এবং সামপ্রতিক মহামন্দায় চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। কিন' পুঁজিবাদী নিিত অনুসরণকারী সিংহ ভাগ দেশের অবস'ান হলো প্রান-সি'ত। তারা ধনী দেশগুলোর শোষণ-বঞ্চনার শিকার। এই দুই ধরণের দেশের মধ্যে বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মানুষকে বেকারত্ব, সামাজিক অনাচার, অনিশ্চয়তা, গ্লানিময়, শোষিত, নির্যাতিত, অবহেলিত জীবন যাপনে বাধ্য করে পুঁজিবাদ মানুষের সার্বিক মুক্তি তো দূরের কথা নূন্যতম মানবিক অধিকারও নিশ্চিত করতে পারেনি।

পুঁজিবাদী গণতন্ত্রকে জনগণের শাসন ব্যবস'া বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করা হলেও প্রকৃত অর্থে তা মূলত ধনীক শ্রেণীর স্বার্থে তৈরী একটি ব্যবস'া। যে ব্যবস'ার মাধ্যমে ধনীক শ্রেণী-কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, মেহনতিসহ সকল প্রকার শ্রেণী পেশার মানুষকে শোষণ করে। যেখানে সমষ্টির উৎপাদন সম্পদ ভোগ করে মুষ্টিমেয় কতিপয় ব্যক্তি। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস'ায় সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যাক্তি মালিকানার মাধ্যমে। এ ব্যবস'ায় চালু থাকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি।

এই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হল ধনীক শ্রেণী। একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস'া যাদের হাতে থাকে তারাই ঐ রাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরা কারো শ্রমের মূল্য দেয় না। শ্রম শোষণের মাধ্যমে এরা টাকার পাহাড় গড়ে। জনগণের সম্পদ লুট করে।

ফলে রাষ্ট্রের মধ্যে অসি'তিশীলতা বিরাজ করে। ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব, স্বাস'্যহীনতা, অন্ধত্ব, কুসংস্কার, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজ, দুর্নীতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের এটাই মূল বৈশিষ্ট্য। এ ব্যবস'ায় সবকিছুকে পণ্য হিসেবে দেখা হয়। এখানে যার এক কোটি টাকা আাছে সে এক কোটি টাকার গণতন্ত্র পাবে।

অন্যদিকে যার একশ টাকা আছে সে একশ টাকার গণতন্ত্র পাবে। এ ব্যবস'ায় যে উৎপাদন করে সে ভোগ করতে পারে না। ভোগ করে ধনীকশ্রেণী। এ ব্যবস'ায় মধ্যস্বত্তাভোগীদের সংখ্যা অনেক বেশী। যার কারণে উৎপাদক তার উৎপাদিত সম্পদের ন্যায্য মূল্য পায়না।

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস'ায় কেউ না খেয়ে থাকলে অন্য কেউ তাকে দেখে না। কেউ শিক্ষাহীন, স্বাস'্যহীন, চিকিৎসাহীন, বাসস'ানহীন থাকলে তাতে কারো কিছু যায় আসেনা। এখানে মানুষ মানবতা-মনুষ্যত্বের চিন-া থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে মানুষ দিন দিন নিঃস্ব হতে থাকে। শোষক আর শোষিত এই দুই বৈরী শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে সমাজ।

সমাজে শ্রেণী বৈষম্য ও শ্রেণী দ্বন্ধ বাড়তে থাকে। শোষণের স্বার্থে চালু করা হয় নানা প্রকারের আইন-কানুন-প্রথা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য ও সংঘ-সংস'া ইত্যাদি। এভাবে রাষ্ট্র হয়ে উঠে শোষণের যন্ত্র। এই যন্ত্র শোষণের অর্থনৈতিক ব্যবস'ার পাশাপাশি পুঁিজবাদী দর্শন ও শোষণের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখে। যে সমাজ ব্যবস'ায় একজন মানুষ সুখী, সুস' ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার পায়, যে সমাজ ব্যবস'ায় মানুষের উপর মানুষ শোষণ, নির্যাতন, অত্যাচার করেনা সেই সমাজ ব্যবস'ার নামই সমাজতন্ত্র।

অর্থাৎ যে সমাজ ব্যবস'ায় একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার সাথে সাথেই শোষণ মুক্ত একটি উজ্জ্বল, সুস', সুন্দর ও প্রাচুর্যময় ভবিষ্যতের অধিকারী হয় সে সমাজ ব্যবস'াই হল সমাজতন্ত্র। সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস'া বা রাজনৈতিক ব্যবস'া হল মানুষের উপর থেকে মানুষের শোষণের অবসান। সকল প্রকার শোষণ-বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি। ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানা। উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রেও সামাজিকীকরণ।

যেখানে আর শ্রম শোষণ থাকবেনা। থাকবেনা বেকারত্ব, দারিদ্রতা, শিক্ষাহীনতা, স্বাস'্যহীনতা, বাসস'ানের অভাব, চিকিৎসাহীনতা, অন্ধত্ব-কুসংস্কার, সন্ত্রাস, লুটপাট দুর্নীতি বরং মানুষের মৌল মানবিক অধিকার নিশ্চিত করার পরও তার মেধা-মননানুসারে বিকশিত হওয়ার পথ থাকবে উম্মুক্ত। যেখানে মানুষ সত্যিকারভাবে জীবনকে উপলব্ধি করতে পারবে। বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিস'াপন করতে পারবে। সমাজে, রাষ্ট্রে কোথাও ক্ষুধা, দারিদ্র, শোষণ-বৈষম্য থাকবেনা।

সাম্য সুন্দর সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি। এর কোনো বিকল্প পথ নেই। এরকম একটি সমাজ ব্যবস'া প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই ছাত্র সমাজের আকাঙ্খা ও স্বপ্ন বাস-বায়ণন সম্ভব হতে পারে। তাই ছাত্র ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রকে মুক্তির পথ হিসেবে বিবেচনা করে সেই লক্ষ্যে ছাত্র সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করার প্রয়াস চালায়। শিক্ষা বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ ১।

অসাম্প্রদায়িক গণমূখী বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা। ২। শিক্ষাক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা। ৩। ন্যায্য-মূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা।

৪। শিক্ষাঙ্গনে সকল শিক্ষার্থীর পরিচয় পত্র প্রদান করা। ৫। সকল শিক্ষার্থীর জন্য হেলথ কার্ড বরাদ্দ করা। ৬।

সকল প্রকার যানবাহনে ৫০% ছাত্র কনসেশন প্রদান করা। ৭। শিক্ষা ও চাকুরিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর সমাধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ৮। জাতীয় আয়ের শতকরা ৮ ভাগ শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ করা।

৯। শিক্ষাঙ্গনকে অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত করা। ১০। পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস'া এবং শিক্ষা শেষে কাজের নিশ্চয়তা দেয়া। ১১।

নির্দিষ্ট স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য ছাত্র শিক্ষক কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। ১২। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে জাতীয়করণের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকের আর্থিক সমস্যা সমাধান করা। ১৩। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের প্রতিটি মানুষকে পর্যায়ক্রমে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক দশম শ্রেণী পর্যন- শিক্ষিত করে তোলা।

১৪। শিক্ষকের সংখ্যা ছাত্র অনুপাতে বাড়ানো। ১৫। দেশের সর্বত্র আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস নির্মান করা এবং ছাত্রবাসসমূহে সরকারি সাবসিডি নিশ্চিত করা। ১৬।

শিল্প, ললিত কলা, নাট্যকলা, সঙ্গীত ও চারুশিল্পের বিকাশের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ানো। ১৭। সর্বস-রে মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস'া করা। মাধ্যমিক শ্রেনীতে মাতৃভাষার পাশাপাশি বিদেশী ভাষায় শিক্ষার ব্যবস'া করা। ১৮।

অপরাপর জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্বীয় মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহনের অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধি করা। ১৯। শিক্ষা জীবনের উপযুক্ত কোনো একটি স-রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষার ব্যবস'া করা। ২০। মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, গাফিলতি, অকর্মন্যতা ও দায়িত্বহীনতা কঠোর হসে- দমন করা।

২১। সার্বিক শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়কে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা । সংগঠনের নেতা-কর্মীদের করণীয় ১। সকল নেতা-কর্মীকে সংগঠনের নীতি ও আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। ২।

সকল নেতা-কর্মীকে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পত্রিকা পড়া ও সংগঠনের তালিকাভূক্ত বইগুলো পড়তে হবে। ৩। শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের প্রয়াস থাকতে হবে। ৪। সকল নেতা-কর্র্মীকে স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

৫। সংগঠন পরিচালনার স্বর্াথে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। ৬। সংগঠনের সকল স-রে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। ৭।

শিক্ষাক্ষেত্রে এবং জাতীয় আনর্-জাতিক ও স'ানীয় সমস্যার ভিত্তিতে ছাত্র-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ৮। যোগ্য নেতৃত্ব ও সাহসী ভূমিকা নিয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। ৯। প্রত্যেক নেতা কর্মীকে পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও আলোচনার ভিত্তিতে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

১০। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মান বৃদ্ধি করতে হবে। ১১। পাঠচক্র, নাটক, বিতর্ক, আবৃত্তি, বিজ্ঞান ক্লাব গড়ে তোলা সহ সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করতে হবে। ১২।

সাধারণ মানুষ বিশেষত মেহনতি মানুষের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং শ্রমের প্রতি মর্যাদা থাকতে হবে। ১৩। যার যা দায়িত্ব তা যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে। আহ্বান ছাত্র সমাজের শিক্ষা জীবনের আশু ও দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের জন্য এবং দেশবাসীর সমস্যা-সঙ্কট দূর করার জন্য সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য সামনে রেখে ছাত্র সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায়, শিক্ষা জীবনের ছোট-বড় সমস্যা-সংকট নিরসনে, ছাত্র সমাজের আশা আকাঙ্খা বাস-বায়নে ছাত্র ইউনিয়ন তার সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে।

ছাত্র সমাজ যাদের সন-ান সেই আপামর দেশবাসীর জীবন সংকট মোচনেও ছাত্র ইউনিয়ন দৃঢ় ও একাগ্র। প্রতিকূল এক বৈরি পরিবেশে তথাকথিত ‘চলতি হাওয়ার’ বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছাত্র ইউনিয়নকে অগ্রসর হতে হচ্ছে। কবির কথায়, ‘দেশে আজ কৃষ্ণপক্ষ চলছে’ এবং সে কারণেই এই ভয়ংকর সর্বগ্রাসী প্রতিকূলতা। কিন' ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চিরস'ায়ী হবার নয়। ‘এই দিনই দিন নয়, আরো দিন আছে’ এই দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন কাজ করে যাচ্ছে।

দীর্ঘ আন্দোলন ও আত্মদানের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ-ছাত্রসমাজ, বিশেষত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবী সংগ্রামের ধারায় দেশ ও জনগণের শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর তীব্র আন্দোলনের সামনে কোনো প্রতিক্রিয়াশীল ও গণবিরোধী গোষ্ঠী টিকে থাকতে পারে না। অতীতের স্বৈরাচারী শাসক ও শোষকদের মতো সকল সাম্রাজ্যবাদী, পুুুুুঁজিবাদী, সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী মহল অবশ্যই পরাজিত হবে। সচেতন কর্মপ্রচেষ্টা, উদ্যম, দেশপ্রেম ও আত্মদান, মেধা ও শিক্ষার দ্বারা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিজয় ছিনিয়ে আনবেই। লাখ লাখ শহীদের আত্মদান, কোটি কোটি মানুষের যুগ যুগের লালিত স্বপ্ন বৃথা যেতে পারে না।

দেশের সব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আজ ছাত্র ইউনিয়নের আহবান, আসুন আরেকবার ঘুরে দাঁড়াই। যে দেশমাতৃকা আমাকে আপনাকে নিরন-র স-ন্য দান করে চলেছে, যার সূর্যোদয় আমাকে ও আপনাকে ধরিত্রীর বহু বর্নীল রূপ বৈচিত্র্য উপভোগের অবারিত সুযোগ করে দিয়েছে সেই দেশ মাতৃকাকে আবারো আলিঙ্গণ করি গভীর মমতায়। সকল ষড়যন্ত্রী-ক্ষমতালিপ্সু-মৌলবাদী-কূপমণ্ডু-ভণ্ড তপস্বীদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করি, দেশকে গড়ে তুলি মানুষের বাসযোগ্য করে। আসুন, বেজে উঠেছে সময়ের ঘড়ি। মেরুদণ্ড সোজা করে একসাথে পা ফেলি।

আসুন, ছাত্র ইউনিয়নের নীল পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হই, মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রামের শাণিত যোদ্ধা হই। জয় আমাদের হবেই। শপথনামা “লাখো লাখো শহীদ যাঁরা ভাষা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজপ্রগতি, শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, সাম্রাজ্যবাদ-সামপ্রদায়িকতা-মৌলবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে তাঁদের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ ‘জীবন’ কে উৎসর্গ করেছেন-তাঁদের রক্তের নামে আমরা শপথ গ্রহণ করছি যে, সেই সকল বীর শহীদদের স্বপ্ন বাস-বায়িত না হওয়া পর্যন- আমরা লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমরা শপথ গ্রহণ করছি যে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল থেকে সংগঠনের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র মেনে চলবো। আমরা আরো শপথ গ্রহণ করছি যে, এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে প্রয়োজনবোধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করবো।

শিক্ষা-গণতন্ত্র-সমাজপ্রগতির লড়াইকে এগিয়ে নেবো- শহীদের স্বপ্নসাধ বাস-বায়নে- আমরা আমাদের সংগ্রামকে অব্যাহত রাখবো আমরা আমাদের সংগ্রামকে অব্যাহত রাখবো আমরা আমাদের সংগ্রামকে অব্যাহত রাখবো। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। জিন্দাবাদ।

” ছাত্র ইউনিয়ন সংগীত কথা: আক্তার হোসেন সুর: শেখ লূৎফর রহমান “আমরাতো ঐক্যের দৃঢ় বলে বলিয়ান শোষণের কারাঘর ভাঙ্গবোই শিক্ষার আলোকে প্রতিগৃহ কোণকে রাঙ্গবোই আমরাতো রাঙ্গবোই-২ হাতে হাত রাখো ভাই দৃঢ়পণে জাগো ভাই হাতে হাত রাখো ভাই-২ দৃঢ়পণে জাগো ভাই আগে বাড়ো আগে বাড়ো দুর্জয় দৃঢ়তায় আর নয় দেরী নয় আমাদের হবে জয় এসো মিলি মুক্তির পতাকায়- ২ আমরাতো শানি-র দুর্বার সৈনিক শুনি নাতো আহ্বান ধ্বংসের আমরাতো আমরণ প্রগতির পক্ষে গড়বোই বিশ্বতো সাম্যের হাতে হাত রাখো ভাই(------)২ আমরাতো স্বদেশের দুর্জয় প্রহরী স্বদেশের মাটি তাই গড়িয়ান আমাদের অবিরাম শ্রমে আর ফসলে ফোটাবোই স্বদেশের মুখে গান হাতে হাত রাখো ভাই (------) আমরাতো মিলিছি পৃথিবীর লাঞ্চিত সংগ্রামী মানুষের কাফেলায় যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম সেখানেই আমরাতো মিলি লৌহ দৃঢ়তায় হাতে হাত রাখো ভাই (-------)”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.