আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতা

সুতো ছেড়া ঘুড়ি

ইসলামের মাহাত্ব্য হলো, এটা প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্ম বিশ্বাস লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতা'লা বলেছেন, "কুলিল হাক্কু মির রাব্বিকুম ফামান শা' ফালইউমিন ওয়ামান শা' ফাল ইয়াক্ ফুর" অর্থাৎ "তুমি বল, তোমার প্রতিপালক-প্রভূর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক"(সুরা কাফাহ্ : আয়াত ২৯)। তাই আল্লাহকে কে মানলো বা মানলো না, কে ধর্ম করল বা করল না এটা নিয়ে জগতে বিচার বসানোর কুন শিক্ষা ইসলামে নাই, বরং এর বিচার আল্লাহ্ পাক নিজে করবেন বলে শেষ শরীয়ত গ্রন্থ আল কুরআনে বার বার জানিয়েছেন। এ স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে সমাজে আস্তিক থাকবে, নাস্তিকও থাকবে।

মুসলমানও থাকবে হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও থাকবে। ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র পরিচালনার একটি নীতি। এর অর্থ ধর্মহীনতা বা ধর্ম বিমুখতা নয়। এর অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনায়কেরা নাগরিকদের ধর্ম বা বিশ্বাসের ক্ষেট্রে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। কে কোন ধর্মে বিশ্বাসী বা কে অবিশ্বাসী এ নিয়ে রাষ্ট্র-যন্ত্র কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করবেনা।

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকই রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সমান- এটাই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পর মদীনার ইহুদী ও অন্যান্য ধর্ম গোষ্ঠি ও গোত্রের সাথে তিনি একটি সন্ধি করেন যা বিখ্যাত 'মদিনা সনদ' নামে পরিচিত। এই মদিনা সনদের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে সকল ধর্মের ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চত করা হয়েছে। মদিনা সনদের ২৫ নম্বর ধারায় ধর্ম নিরপেক্ষতার একটি বিরল উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে বলা হয় : ২৫. বনু আওফ গোত্রের ইহুদীরা মু'মিনদের সাথে একই উম্মতভুক্ত বলে গন্য হবে।

ইহুদীদের জন্য ইহুদী ধর্ম, মুসলমানদের জন্য ইসলাম ধর্ম। " একই কথা এদের মিত্রদের এবং নিজেদের জন্য প্রযোজ্য। তবে যে অত্যাচার করবে এবং অপরাধ করবে সে কেবল নিজেকে এবং পরিবারকেই বিপদগ্রস্থ করবে। বিশ্বনবী মহানবী (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত নীতি হল, যে ব্যক্তি যে ধর্মেরই হোক না কেন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তার তাদের জাগতিক অবস্থান সমান। এ কারনেই সম্ভবত মহানবী (সাঃ) মদিনাকে 'ইসলামী রাষ্ট্র' বা 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' ঘোষনা করেন নি।

যে কাজ মহানবী (সাঃ) করেন নি সে কাজ সম্পাদন করে কেউ কি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারব?? রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী দ্ব্যর্থহীনভাবে সাব্যস্ত। কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক বলেছেন, "ওয়ালাও শা' রাব্বুকা লা'আমানা মান ফিল আরযি কুল্লুহুম জামিয়া আফা আনতা তুকরিহুন নাসা হাত্তা ইয়াকুনু মুমিনিন" - অর্থাৎ , তোমর প্রতিপালক- প্রভূ চাইলে জগতের সবাই ঈমান আনত। তুমি কি তবে মানুষকে মুমিন- বিশ্বাসী হওয়ার জন্য বল প্রয়োগ করতে পার ? (সুরা : ইউনুস ; আয়াত : ৯৯) । আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষনা দিয়ে বলছেন, তিনি চাইলে সবাই ঈমান আনতে পারত কিন্তু এমনটি তিনি করেন নি বরং সত্য গ্রহন বা বর্জনের ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। এই হচ্ছে ধর্ম বিষয়ে ইসলাম প্রদত্ত স্বাধীনতা।

পরিশেষে বলব, ধর্মনিরপেক্ষতা এমনই একটি চশমা যা পরিধান করলে শাষকদের চোখে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ একজন মানুষ হিসেবেই ধরা দেয়। এই শিক্ষা আমরা মহান আল্লাহ'র ব্যাবহার থেকেও গ্রহণ করতে পারি। তিনি যেমন মুসলমান-অমুসলমান, আস্তিক-নাস্তিক, পূর্ণবান-পাপী সবার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাদের সৎ কর্মের প্রতিদান দেন, সবাইকে সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত করেন, সবাইকে তার করুণার বৃষ্টি বর্ষণ করেন, সকলকে যেমন সমান ইন্দ্রিয় এবং দৈহিক ও মানসিক শক্তি প্রদান করেন, ঠিক তেমনি জাগতিক সরকার বা বাষ্ট্রনায়কদেরও এই গুনটি অবলম্বন করা উচিৎ। তবেই রাষ্ট্র ও দেশ হবে সুখী ও সমৃদ্ধ। মহান আল্লাহ আমাদের শাষকদেরকে নিরপেক্ষ ভাবে দেশ ও দশের সেবা করার তাওফিক দান করুন।

(আমিন) (মওলানা আবদুল আউয়াল খান- এর লেখা অবলম্বনে) ০২/১০/০৯ বাকলেইট

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.