আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমে বিভ্রমে ভ্রমণ ২

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

[[ডিসক্লেইমারঃ ছবি আর কথা সম্বলিত পোস্ট। লোডাইতে সময় নিবে, পড়িতে অবশ্য ততটা সময় নিবে না। পড়িয়া ভালো লাগিলে জানাইবেন। ]] আগের পর্ব সিঙ্গাপুরে গিয়ে মোটামুটি সাতশ থেকে আটশ'র মতো ছবি তোলা হয়েছে। সেগুলো থেকে বেছে বেছে কয়েকটা দিলাম, তাও কেবল মাত্র প্রথম দিনের ঘোরাঘুরির।

সকালে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে হোটেলের দিকে আসতে আসতেই তুমুল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির কারণে সব পরিকল্পনা ভেস্তেই যাচ্ছিলো। শেষমেশ দশটার দিকে বৃষ্টি থামলো। আমরা প্ল্যান মোতাবেক রওনা দিলাম চিড়িয়াখানায়। মোটামুটি দর্শনীয় স্থান! দেখে মুগ্ধ হয়েছি, ছবিতে অবশ্য সেই রূপের বেশিটুকুই আসেনি।

ঢাকা এয়ারপোর্টে বসে ইমিগ্রেশনের ফর্ম ফিল-আপ করছি। মহা বিরক্তিকর কাজ। এটা করতে করতে "সীমানাহীন পৃথিবী"র অবাস্তব প্রস্তাবেও সমর্থন দিতে ইচ্ছা করে! ফিল-আপকৃত ফর্ম। দেখেন প্রচুর কাটাকুটি আর হিজিবিজি। এগুলো বিরক্তি আর রাতের ক্লান্তিজনিত ঘুমের লক্ষণ।

সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে নামার পরে এই ফলকটা চোখে পড়লো। ইমিগ্রেশন পেরিয়ে একটু সামনে এমনই কতগুলো পাবলিক ফোন। দেশে ফোন করা যায় সহজেই, সরাসরি। ৩০ সিঙ্গাপুরিয়ান সেন্ট/মিনিট। এয়ারপোর্টের ডিউটি-ফ্রি শপ।

থরে থরে নিশ্চুপ বোতল। অনুপস্থিত পেয়ালা। নিখোঁজ সাকী। আর আমার পকেট ফুটা! সকাল সকাল ক্ষিদে লাগলো। আমরা ভাবলাম হোটেলে যাবার আগে নাশতা করে যাই।

ওখানে তো আর রুটি-সবজি মিলবে না। ঘাড় ঘুরাতেই ম্যাকডোনাল্ডস আর ম্যাকক্যাফে। বহুদিনের খায়েশ মিটাতে সবাই 'মেগা-মীল' অর্ডার করলাম। খেয়ে ঝাল লেগে গেলো, আর আমেরিকান "আহা-উহু"বাচক কোন শব্দই বেরুলো না আমাদের মুখ দিয়ে। ডিড নট লাভ ইট্‌! ট্যাক্সিতে চড়ার পরে ফ্লাইওভারের জাল।

এই ছবিতে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কি মনোহর নিয়ম বানিয়েছে। একেবারে বেড়ার বুননের মত রাস্তা একে অপরকে বুনে গেছে। কোনো সিগন্যাল নাই, কেউ লেইন বদলায় না হুট করে। পাশাপাশি এক ফুট বা তারও কম দূরত্বে গাড়িগুলো শা শা করে একশো কিমি বেগে ছুটছে। দারুণ অভিজ্ঞতা।

মাঝের আইল্যান্ডে কেমন মাশরুমের মত ছায়াবৃক্ষ। পুরোটা পথ ছায়ায় ঢেকে রেখেছে। লম্বা গাছগুলোর চারপাশে বোগেনভেলিয়া ফুল! বেগুনি, লাল আর গোলাপি! বৃষ্টি শেষ হলে আমরা চিড়িয়াখানায় ঢুকছি। টিকেট কাউন্টারের সামনে তোলা। এখানে পুরো এলাকার মানচিত্র, স্যুভেনির এগুলো দেদারসে বিলানো হয়।

ঢুকেই চোখ জুড়ানো সবুজ। একটু আগের বৃষ্টিতে আরো সজীব সতেজ লাগছে। মনে ভ্রম হলো- কোনো গহীন বনের ভেতরে চলে আসছি। চারপাশে পাখপাখালির ডাক, পোকামাকড়ের শব্দ, পানি বয়ে চলা ঝর্ণার গান। সবুজ! আলো! এটার নাম ম্যাকাও পাখি।

টিয়ার জাত, চিল্লায়া কান ঝালাপালা করে ফেলে! ভাগ্যিস এগুলো আমাদের দেশে নাই, থাকলে কাকের দল পাত্তাও পেত না! (কাকভূ' ডোন্ট ও'রি) এটা একটা ওটার। বাংলা বলে ভোঁদড়। ওরে খোকন ফিরে চা', ভোদড় নাচে দেখে যা' তবে ভোদড়ের নাচ দেখা হলো না। এরকম অনেক ঘোরানো বিলীন সবুজ পথে পুরো চিড়িয়াখানা ছেয়ে আছে। প্রথম অবাক করা জীব।

মনে হলো সুকুমারের কবিতার বই থেকে সোজা সিঙ্গাপুরে চলে আসছে। নাম- গুয়ানাকা। মুখের দিকে হরিণ, কানের কাছে গাধা, পিঠের কাছে উট! বড়ই কেরফা প্রাণী। আবার লাফিয়ে পাতা খায়, দু'পায়েও দাঁড়ায়! এটা ওরাংওটাংদের আখড়া। ছবিতে কাঠের কাঠামোর সাথে মিশে গেছেন তাহারা।

বড়োই সুশীল, নড়ে চড়ে ধীরে। কান চুলকায়, অবসর কাটায়। মাঝে মাঝে বেরসিকের মতো আমাদের দিকে চায়... চিড়িয়াখানার মাঝে একটা কাঠের বানানো রেস্টুরেন্ট। নাম- "আহ মেঙ"। আসলেই তৃপ্তির স্বর বেরুলো যখন এখানে পৌঁছালাম।

রোদ উঠে গেছে ততক্ষণে। সবারই তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই অর্ডার হলো- কাঁচা ফল আর ঠাণ্ডা লেবু-চা। এইটা শামীমের সৌজন্যে। খাবারের ছবি চেয়েছিলে না? তৃষ্ণা মেটার পরে আবার বেরুলাম।

পথে পড়লো প্রজাপতি পার্ক। একটা জায়গায় অসংখ্য ছোট ছোট মধুবাহী ফুল আর তার উপরে উড়ন্ত প্রজাপতি। হরেক রকমের। কালো-খয়েরি-লাল-নীল। মোটামুটি রঙের মেলা।

এত চমৎকার দৃশ্য খুব কমই দেখেছি! হা হা হা! এগুলো এক জাতের বেবুন। পশ্চাৎদেশের ছালবাকল নাই। প্রথমে ভাবলাম দূর্ঘটনা। পরে বুঝলাম জেনেটিক ফাজলেমি। নিশ্চয়ই বানর সম্প্রদায়ে তারা হাসির পাত্র! আহারে বেচারা পুচ্ছবিহীন বেবুন!! তিন কৃষ্ণাঙ্গ যুবতীর সাথে আমি।

কেমন বোধ করছি তা মুখভঙ্গিতেই প্রকাশ্য! শ্বেত বাঘ। বিরাট আকার। পানিতে সাতার কাটে একজন, আর বাকিরা পাথরের 'পরে বসে বসে ঝিমোয়। গায়ে কালো ডোরাকাটা। হাতির খুলি।

পুরা হাতি আঁটলো না! এটা চিড়িয়াখানার অ্যাম্ফিথিয়েটার। এখানে অনেক রকমের পশুপাখির খেলা, প্রদর্শনী হয়। ভালোই লেগেছে। যদিও খাদ্যের বিনিময়ে খাটানো পশুপাখিগুলোর জন্যে মায়াও লাগছিলো। নিষ্ঠুর এবং সদানির্বোধ মানুষের বিনোদনের কারণে তাদেরকে কতকিছুই না করতে হয়! শো'য়ের একটা মুহূর্ত।

এইটাও শামীমের পেটুকচরিত কৃতার্থের জন্য দিলাম। খাবারের নাম- লাকশা। ডিম, নুডুলস, নারকেল আরও কি কি দিয়ে যেন বানায়। এটা বেশ পরিচিত। মুরগি বার-বি-কিউ, আলুভাজি, সালাদ।

এটা রাইস, চিকেন আর স্যুপের একটা ডিশ। খাওয়ার পরে ক্লান্ত অথচ পরিতৃপ্ত মনে হোটেলে ফিরে এলাম। প্রথম দিন ভালোই কাটলো! ** পর্ব তিন লেখা হবে কি না ঠিক শিওর না। না লেখা হলে নিজ গুণে সবাই ক্ষমা করিবেন। *** - অনীক আন্দালিব ২.১০.৯


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।