আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উনিশ তত্ত্ব বিশ্লেষণ (২য় পর্ব) : অ্যানসারিং সাবমিশন ১

মেঘমুক্ত নীলাভ দিঘীর কবোষ্ণতা খুঁজছে মন!

সেদিন এক বন্ধু বলল, রাশাদ খলিফারে নিয়া এত লাগলি ক্যান! প্রসংঙ্গটা হেসে এড়িয়ে গেলাম। প্রশ্নটা সিরিয়াসলি নিলে কী বলতাম তাই শেয়ার করে শুরু করি। ব্যাপারটা আসলে বেশ সরল কথা, রাশাদ খলিফার সাবমিশন ধর্ম অনেককে বিভ্রান্ত করেছে, করছে। সাবমিটার অর্থাৎ রাশাদের অনুসারীরা রাশাদের মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় নি, তারা এখনো টিকে আছে আর তাদের এই নতুন ধর্ম যার মেসেঞ্জার রাশাদ খলিফা-তারা এখনো সে ধর্ম প্রচার করছে। আর সে প্রচারের অন্যতম মাধ্যম কিংবা হয়তো একমাত্র মাধ্যমও বলা যায়-ইন্টারনেট।

সময়ের সাথে সাথে তারা অত্যন্ত যুগোপযোগী মাধ্যম ও কৌশলকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা সংখ্যায় অত্যন্ত কম, কিন্তু পুরো ওয়েবে আছে সাবমিটারদের অনেক সাইট। দুয়েকটা ছাড়া অধিকাংশই চট করে চেনার উপায় নেই, ইসলামী সাইটের সাথে খুব ভিতরে না ঢুকলে কোন পার্থক্য পাওয়া যায় না। তবে আমাদের দেশে এ নিয়ে সচেতনতার প্রয়োজন আসলে আছে কী? প্রয়োজন এজন্য যে প্রথমত ধর্ম সংক্রান্ত্র বিভ্রান্তির অপনোদন। দ্বিতীয়ত রাশাদীয় ধারনা খুব আকর্ষনীয়।

এর ১৯ সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারনা ইতিমধ্যে ছড়িয়ে গেছে অনেক ভাবে। নেটের প্রসারে ক্রমে আরও ছড়াবে না তার নিশ্চয়তা কি? তৃতীয়ত হতে পারে এখন অনেকে রাশাদ খলীফার নাম জানে না, সাবমিশন দূরের কথা, কিন্তু বছর কয়েক পরে কোন সাবমিটার এ দেশেও প্রচারণা শুরু করবে না - তাই বা নিশ্চিত করে কে বলতে পারে। তাই এসব লেখার এই মুহূর্তে কোন অ্যাপ্লিকেশন না থাকলেও ৫ কি ১০ বছর পরে হয়তো জরুরী হয়ে পড়বে। ভবিষ্যতের ভাবনা না ভাবার কারনেই আমাদের অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। রাশাদীয় ১৯ তত্ত্ব চেনার একটি উপায় হচ্ছে সেখানে সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াতকে তারা অস্বীকার করে, তাতে রাশাদের নবীত্বের দাবিতে সুবিধা হয়।

তারমানে নয় নং সূরা তাওবার আয়াত যেখানে আমরা কোরআনে পাই ১২৯ টি, সেখানে সাবমিটাররা দাবি করে ১২৭ টি। তার জন্য তাদের খোঁড়া যুক্তি গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন অনেকে , সেগুলোর কিছু নিয়ে বিগত পোষ্ট রাশাদ খলিফা ১ : সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত অথচ ১৯ তত্ত্ব বা ইসলামিক ১৯ তত্ত্ব দিয়ে অনেক ভালো ভাবে প্রমাণ করা যায় সূরা তাওবার আয়াত ১২৯ই। সাবমিটারদের ঘায়েল করার জন্য জবাব দিতে হবে ঠিক তাদের মত করেই,তাই এই প্রচেষ্টা। একই সাথে এটি একটি ইসলামিক ১৯ তত্ত্বের অন্যতম উদাহরণ। অ্যানসারিং সাবমিশন ১ নিচে একটি টেবিল দেয়া হল ( টেবিল ১ ) ,টেবিলে ৫টি কলাম রয়েছে।

প্রথম কলামে, কোরআন শরীফের সূরাসমূহের ক্রম দেয়া আছে দ্বিতীয় কলামে, সূরাসমূহের আয়াত সংখ্যা তৃতীয় কলামে, যেসব সূরার ক্রম সংখ্যার পর আয়াত সংখ্যা বসালে নতুন যে সংখ্যা তৈরি হয় তা যদি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় চতুর্থ কলামে, ৩য় কলামকে ১৯ দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় পঞ্চম কলামে , ভাগফলের ক্রম টেবিল ১ ::১:: প্রথম কলামের যোগফল ৬৫৫৫ (সূরা সংখ্যা) দ্বিতীয় কলামের যোগফল ৬২৩৬ ( আয়াত সংখ্যা) তৃতীয় কলামের যোগফল ৩৬০৬২ (১৯ বিভাজ্য সূরা+আয়াত ) চতুর্থ কলামের যোগফল ১৮৯৮ (ভাগফল) পঞ্চম কলামের যোগফল ৫৫ (ভাগফলের ক্রম) সর্বমোট= ৬৫৫৫+৬২৩৬+৩৬০৬২+১৮৯৮+৫৫=৫০৮০৬= ১৯*২৬৭৪ আবার দেখুন ১৯ এর সাথের ২৬৭৪=২+৬+৭+৪=১৯ ::২:: সর্বমোট= ৬৫৫৫+৬২৩৬+৩৬০৬২+১৮৯৮+৫৫=৫০৮০৬ এই ৫০৮০৬ সংখ্যাটির প্রত্যেকটি ডিজিট যোগ করে পাই ৫০৮০৬=৫+০+৮+০+৬=১৯ ::৩:: ক্রম ও আয়াত সংখ্যা পাশাপাশি রাখলে গঠিত সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় এমন সূরা পাওয়া গেল ১০টি । তারমানে ক্রম ও আয়াত পাশাপাশি রাখলে বিভাজ্য হয় না এমন বাকি রইল (১১৪-১০)=১০৪ টি। সূরা সংখ্যা ৬৫৫৫ আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ এখন এই দুই সংখ্যার সাথে ১০৪ বসিয়ে পাই ৬৫৫৫ ৬২৩৬ ১০৪ ৬৫৫৫ ৬২৩৬ ১০৪=১৯* ৩৪৫০৩২৮২১৬ টেবিল ২ টেবিল-২ এ আমরা টেবিল-১ এর ডাটা গুলো আরেকটু সংক্ষিপ্ত ভাবে প্রকাশ করি প্রথম কলামে, টেবিল ১ এর ভাগফলগুলো দ্বিতীয় কলামে, ভাগফলগুলোর ক্রমিক তৃতীয় কলামে, ভাগফল + ক্রমিক ::৪:: টেবিল ২ থেকে প্রথম কলামের যোগফল ১৮৯৮ (ভাগফল) দ্বিতীয় কলামের যোগফল ৫৫ (ভাগফলের ক্রম) তৃতীয় কলামের যোগফল ১৯৫৩ (ভাগফল + ক্রমিক) সংখ্যাগুলো পাশাপাশি বসিয়ে পাই, ১৮৯৮ ৫৫ ১৯৫৩= ১৯* ৯৯৯২৩৭৮৭০ টেবিল৩ এই টেবিল টেবিল-১ এরই আরেকটি বিন্যাস প্রথম কলামে, ভাগফলগুলোর ক্রম দ্বিতীয় কলামে, যেসব সূরা-আয়াত ১৯ দ্বারা বিভাজ্য তাদের আয়াত সংখ্যা ::৫:: টেবিল ৩ থেকে, প্রথম কলামের যোগফল ৫৫ (ভাগফলের ক্রম) দ্বিতীয় কলামের যোগফল ৪৪২ (যেসব সূরা-আয়াত ১৯ দ্বারা বিভাজ্য তাদের আয়াত সংখ্যার যোগফল) সংখ্যাগুলো পাশাপাশি বসিয়ে পাই, ৫৫৪৪২=১৯* ২৯১৮ ::৬:: এবার আমরা আরেকটা বড় হিসাব করি, টেবিল ৩ এর প্রত্যেকটি ক্রম সংখ্যার পর আয়াত সংখ্যা বসিয়ে একটি বড় সংখ্যা তৈরি করি ১ ৯৩ ২ ৮৮ ৩ ৩০ ৪ ৮৫ ৫ ৮৯ ৬ ১২ ৭ ৩০ ৮ ৮ ৯ ৪ ১০ ৩, বিস্ময়কর ভাবে এটিও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য ১ ৯৩ ২ ৮৮ ৩ ৩০ ৪ ৮৫ ৫ ৮৯ ৬ ১২ ৭ ৩০ ৮ ৮ ৯ ৪ ১০ ৩ =১৯ * ১০১৭৩০৭০০২৫৫৫৭৩৪৮০৩৮৪৬৭৮৬৩৭ লক্ষ্য করুন, এটি একটি ২৮ ডিজিটের সংখ্যা । এটা এত বড় সংখ্যা যে সাধারণ কোন ক্যালকুলেটরে আপনি এটা হিসাব করতে পারবেন না। (এটা হিসাবের জন্য একটি অনলাইন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন, এটা ৫০০ ডিজিট পর্যন্ত রেসাল্ট দেখাতে পারে http://www.alpertron.com.ar/BIGCALC.HTM এর জন্য পিসিতে জাভা থাকা আবশ্যক।

আপনার পিসি তে জাভা ইনস্টল না থাকলে একই পেজ থেকে জাভা ডাউনলোড করে নেন। ) বিশ্লেষণ প্রকরণ: আগেই বলেছি এটা একটা ইসলামিক ১৯ তত্ত্বের উদাহরণ এবং রাশাদ খলিফার সাবমিটারদের ১৯ তত্ত্বের বিরুদ্ধে একটি জবাব। কারন, এতে সব গুলো হিসাব করা হয়েছে সকল সূরার আয়াত সংখ্যা মূল কোরআনের অনুরূপ ধরে (৬২৩৬)। তারমানে সূরা তাওবার আয়াত ১২৯ ধরা হয়েছে-১২৭ ধরা হয় নি, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমকে সূরার আয়াতের সাথে ধরা হয় নি। এবং এটা রাশাদীয় তত্ত্বের হিসাব গুলির চেয়েও অনেক শক্তিশালী।

সংখ্যাতাত্ত্বিক সম্পর্ক নির্ণয়ের মাপকাঠিতে যাচাই মাপকাঠি :::: সংখ্যা নির্বাচন বা উৎস সংখ্যা নির্বাচন বা নির্বাচিত সংখ্যার উৎস কোন সংখ্যাতাত্ত্বিক মিল সন্ধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর এই ১৯ সংখ্যাটিকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদক হিসেবে ধরার যথেষ্ট যৌক্তিক উৎস রয়েছে। বিস্তারিত :::: গাণিতিক ধর্ম ১৯ একটি প্রাইম সংখ্যা,এটি অষ্টম প্রাইম সংখ্যা । তাই কোন র‌্যান্ডম সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হওয়া যথেষ্ট কঠিন। প্রাইম সংখ্যা হিসেবে ১৯ এর যথষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

১৯ এর গুণিতক সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে ‘এরা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য’ -এই ধর্ম ছাড়া অন্য কোন সহজে বোঝা যায় এমন কোন সাধারণ ধর্ম নেই । . কোন সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য কিনা তা জানার জন্য যে উপায় আছে সেটিকে অবশ্য একটি সাধারণ ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিস্তারিত দেখুন ফুটনোটে ( পোষ্ট অযথা বড় হয়ে যাবে বলে আমার সহযোগী ব্লগ ফুটনোটে গাণিতিক ধর্মটুকু দিয়ে দিলাম) :::: মিলের সঠিকত্ব , আন্তসম্পর্কযুক্ত মিল, সামগ্রিকতা শর্ত ও অন্যান্য এই পুরো হিসাবে তালিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত সংখ্যাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে,চট করে বিচ্ছিন্ন কোন সংখ্যা কোন অজুহাত দেখিয়ে নিয়ে আসা হয় নি বা বাদ দেয়া হয় নি। ব্যবহৃত মূল সংখ্যাগুলি হল ৬৫৫৫=কোরআনের সমস্ত সূরা সংখ্যার যোগফল বা ক্রমের যোগফল (১+২+৩+৪+...+১১৪) ৬২৩৬=কোরআনের সমস্ত আয়াত সংখ্যার যোগফল ৩৬০৬২ = পাশাপাশি বসালে যেসব সূরা-আয়াত ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাদের যোগফল ১৮৯৮= সমস্ত ভাগফলের যোগফল ৫৫= ভাগফলের যে ক্রম হয় তার যোগফল (১+২+৩+...+১০) ১০৪=যেসব সূরা-আয়াত পাশাপাশি বসালে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় না। ১৯৫৩= ভাগফল + ক্রমিক এর যোগফল ৪৪২=যেসব সূরা-আয়াত ১৯ দ্বারা বিভাজ্য তাদের আয়াত সংখ্যার যোগফল ১৯৩২৮৮৩৩০৪৮৫৫৮৯৬১২৭৩০৮৮৯৪১০৩ = বেশ বড় সংখ্যা, তৈরি হয়েছে আলোচ্য ১০টি সূরার আয়াত সংখ্যাকে তাদের ক্রমিকের পাশাপাশি বসিয়ে তৈরি।

সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুই ভাবে: (১)উৎপাদক-গুণিতক সম্পর্ক , যথা পয়েন্ট ১,৩,৪,৫,৬ (২)নিউমেরিকাললি সংখ্যার ডিজিটগুলো যোগ করে মূল সংখ্যা প্রাপ্তি, যথা পয়েন্ট ১,২ ১৯ এর গুণিতক সংখ্যা তৈরি হয়েছে যেভাবে- (১) তালিকার সংখ্যাগুলো যোগ করে যোগফল (২) মূল সংখ্যা পাশাপাশি বসিয়ে নতুন সংখ্যা এখানে প্রতিটি সংখ্যা একটি তালিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত, শুধু তাই নয় সবগুলিই অন্তত ১০থেকে ১১৪ টি সংখ্যার যোগফল,তারমানে কোনটিকেই বিচ্ছিন্ন বলার কোন উপায় নেই, নির্দিষ্ট শর্তের মাধ্যমে প্রাপ্ত,পরস্পরের সাথে আন্ত:সম্পর্কযুক্ত । সিদ্ধান্ত : কোন সিদ্ধান্তে এখনি আসতে চাচ্ছি না । তবে মূল সংখ্যাগুলোর অনেকগুলি কম্বিনেশনের জন্য দেখা যাচ্ছে তারা ১৯ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই ইসলামিক ১৯ তাত্ত্বিক এই উদাহরণটি নিছক কাকতাল বলতে আমার মন সায় দেয় না এবং সম্পর্কগুলোকে আমার মতে দুর্বল বলার খুব একটা উপায় নেই। যাই হোক, আরও কিছু বলার আগে আমাদের আরও অনেক উদাহরণ দেখতে হবে।

যে কোন ভুল ধরিয়ে দিলে নিশ্চয়ই উপকৃত হব। (and ofcourse allah knows the best)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.