আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘৃণ্যতম অন্যায় করেও এতটুকু লজ্জিত নয় আমেরিকান মডেল কন্যা



আমেরিকান পাসপোর্টধারী সুন্দরী তরুণী লিয়া মককরড - বয়স তখনও ১৮ পেরোয় নি, কিন্তু অনিন্দ্য দেহ সৌষ্ঠবের জন্য নজর কাড়ে যে কারোর। ১৯৯২ সালের শুরুর দিককার কথা: টু্রিষ্ট ভিসা নিয়ে লিয়া মককরড বেড়াতে আসে বাংলাদেশে। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে কেটে গেল বেশ ক'টি দিন। এবার দেশে ফেরার পালা। নির্ধারিত দিনে বাক্স পেটরা গুছিয়ে হাজির জিয়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে।

যত বিপত্তির শুরু এখান থেকেই। লিয়ার শরীর স্ক্যান করার সময় ফাজিলের হদ্দ স্ক্যানিং মেশিনটা লালবাতি জ্বেলে বিকট শব্দে বেজে উঠল। কাষ্টমস কর্মকর্তারা তৎক্ষণাৎ ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে। আলাদা কক্ষে নিয়ে তল্লাশী করে লিয়ার কাধ ব্যাগে কালো কাগজে মোড়ানো একটি প্যাকেট পাওয়া যায়। আর সে-ই প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে এল নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হেরোইন।

ওজন করে দেখা গেল তিন কেজি হেরোইন বহন করছেন লিয়া। বিমানবন্দর পুলিশ লিয়াকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করে এবং পরদিন সকালে তাকে প্রেরণ করা হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে। মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা কারাগারে লিয়ার সাথে দেখা করতে গেলে উদ্ধত মডেল কন্যা লিয়া মককরড নিজের অপরাধের প্রতি বিন্দু মাত্র অনুতপ্ত না হয়ে কারাগার থেকে তাকে বের করে নিয়ে যাবার জন্য উক্ত কর্মকর্তাকে বারবার অনুরোধ করে। দূতাবাস কর্মকর্তা লিয়াকে জানান, কারাগারে লিয়াকে নিয়মিত খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা হচ্ছে কি-না এবং লিয়া কোন শারিরীক লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে না - এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই তিনি এসেছেন। কারাগার থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে তিনি বা মার্কিন দূতাবাস লিয়াকে কোন প্রকার সহযোগিতা করতে অপারগ বলে অবহিত করেন।

মাত্র দু'সপ্তাহ পরেই ১৮ তে পা দিতে যাচ্ছে লিয়া মককরড। বন্ধুদের সাথে পার্টি করে তা উজ্জাপন করার স্বপ্নে বিভোর লিয়া দূতাবাস কর্মকর্তার এহেন কথায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং আর একদিনও কারাগারে থাকতে আবারও অস্বীকৃতি জানায়। মাদকদ্রব্য বহন করার অপরাধে বাংলাদেশ হাইকোর্ট ১৯৯৫ সালে লিয়াকে মৃত্যুদন্ডাদেশ জারি করে। কনগ্রেসম্যান বিল রিচার্ডসন তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে লিয়ার সাজা মওকুফের আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি আবেদন মজ্ঞুর করেন এবং লিয়ার ক্ষমা ঘোষণা দেন। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে লিয়া কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে।

কয়েকটি বিষয় এখানে আমি উল্লেখ করতে চাচ্ছি: ভিডিও চিত্রে লিয়াকে নিজের অপরাধের জন্য সামান্যতমও অনুতপ্ত বলে দেখা যায় নি। বরং ১৮তম জন্মদিন পালনের স্বপ্নে বিভোর লিয়া দূতাবাস কর্মকর্তার কাছে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে বলে নিদ্বির্ধায় উল্লেখ করে। যদিও পরবর্তী অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ হাজারের ডলারের বিনিময়ে তিন কেজি হেরোইন বহনের চুক্তিতেই লিয়া বাংলাদেশে আসে। লিয়া মককরডের মা সাংবাদিক মারফত নিজের মেয়ের এহেন কর্মকান্ডের কথা অবহিত হন। এর আগ পর্যন্ত লিয়ার মা নিজেও জানতেন না, তার মেয়ে টেক্সাস শহরের বাইরে তো বটেই, আমেরিকার বাইরে কোথাও আছে।

ভিডিও চিত্রে লিয়া রাতে সেলের বাতি নিভে যাওয়াকে ভৌতিক বলে উল্লেখ করে। অথচ একবারও উল্লেখ করে নি, তার সাথে বাংলাদেশী নারী বন্দীদের সহমর্মী ব্যবহারের কথা - কত সহজে তারা লিয়াকে আপন করে নিয়েছিল। গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দীরা রাতের আধারে বাতি নয়, প্রতিটি সেকেন্ডে টরচার থেকে বাঁচার প্রার্থনা করে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলেই বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমেরিকার কনগ্রেসম্যানের অনুরোধ (???) অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখান নি। একদিন নয়, কেবল আধবেলাও যদি লিয়া মককরডকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে রাখা যেত, তাহলেই বোধ করি লিয়ার বোধোহয় হত, টাকার লোভে ভীষণ এক অন্যায় করেও কেবল তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলেই সে আজ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছে এবং নির্দ্বিধায় এহেন মিথ্যাচার করে যেতে পারছে।

আসুন আমরা ধিক্কার জানাই, লিয়া মককরডের এহেন মাদক পাচার এবং এর পরবর্তী মিথ্যাচারকে। এখানে ভিডিও চিত্রটি দেখুন নিচের লিংকে আপনারা লিয়ার ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলেও লিয়ার এই ভিডিও চিত্রটি পাবেন। View this link নিজ দেশে ফিরে লিয়াকে সেখানকার আ্ইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল কিনা জানা যায় নি। বাংলাদেশের আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য মার্কিন দূতবাসকে একদিকে যেমন অভিনন্দন দেয়া যায়, তেমনি এ কথাও সত্যি যে, ঠিক বিপরীত ঘটনাটি যদি ঘটত, অর্থাৎ, কোন বাংলাদেশী যদি মাদকদ্রব্য বহনের দায়ে আমেরিকায় আটক হতেন, তাহলে তার কপালে গুয়ানতানামো বে কারাগার ছাড়া যেমন কিছু জুটত না। পাঠকগণ, ব্লগে আমি একেবারেই নতুন এবং এটাই আমার প্রথম এতবড় লেখা।

ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন অনুরোধ রইল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।