আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মালালা [ শিক্ষায় শান্তিতে ]

আধুনিক সময়ে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রার পথিকৃত বলে আলোচিত পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মেয়ে নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে তালেবানদের অবস্থান নিয়ে সোচ্চার হয়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন। মাত্র ১১ বছর বয়সে বিবিসি ব্লগে এসব নিয়ে লিখে বিশ্ববাসীর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ রাখেন এই কিশোরী। তবে তার চলার পথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে তালেবানরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

কিন্তু পাকিস্তানে মেয়েদের লেখাপড়ার পক্ষে আর তালেবানের বিপক্ষে কথা বলে গেছে প্রকাশ্যে। এমন ভূমিকার জন্য বেসামরিক নাগরিকদের জন্য পাকিস্তানে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পায় সে। অবশেষে সোয়াত উপত্যকার মিনগোরাতে ১৪ বছর বয়সী মালালা ও তার দুই বান্ধবীকে তাদের স্কুলের সামনেই গুলি করে তালেবান জঙ্গিরা। মালালার মেরুদণ্ডের কাছাকাছি বিদ্ধ গুলিটি বের করতে তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার সফল হলেও তার জ্ঞান ফিরতে দেরি হচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য মালালাকে পেশওয়ার থেকে রাওয়ালপিণ্ডির সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

পরে মালালাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনে নিয়ে আসা হয়। সফল অস্ত্রোপচারের পর ফেব্রুয়ারিতে মালালা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। তার মাথায় একটি ইউরেনিয়াম প্লেট এবং বাম পাশের কানে ককলেয়ার ইমপ্লান্ট নামক শ্রবণ যন্ত্র সংযোজন করা হয়। বর্তমানে মালালা যুক্তরাজ্যের একটি স্কুুলে অধ্যয়নরত। মাত্র ১১ বছর বয়সে বিদ্যালয় জীবন ও সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে ডায়েরি লেখা শুরু করে মালালা।

বিবিসি উর্দু সার্ভিসে তার দিনলিপিটি প্রকাশ হতে থাকে। তার লিখিত দিনলিপি 'লাইফ আন্ডার দি তালিবান' প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক পরিচিতি পায় সে। জঙ্গিদের প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পেতে একসময় গুল মাকাই ছদ্মনামে প্রকাশ হতো তার দিনলিপি। তালেবানরা সোয়াত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্যে আসে মালালা। পরবর্তীতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে সে।

পাকিস্তানের সোয়াতে মালালা ইউসুফজাইয়ের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরটি শুনে পপ সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনাও কেঁদেছিলেন। এদিকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর নতুন করে নাম আসে মালালার। নেদারল্যান্ডের আমস্টার্ডামভিত্তিক অধিকার সংগঠনের সম্মানজনক শিশু শান্তি পুরস্কার 'ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস পিস প্রাইজে' ভূষিত হয় পাকিস্তানের কিশোরী ব্লগার মালালা ইউসুফজাই। ২০১১ সালের শান্তিতে নোবেলজয়ী ও নারী অধিকারকর্মী তাওয়াক্কুল কারমান তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। শিশু অধিকার সংগঠন কিডস রাইটসের পক্ষ থেকে মালালাকে এই সম্মাননা প্রদান করে।

বিশ্বের নারীদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য লড়াই করতে গিয়ে মালালা তার প্রাণের ভয় করেননি এ কারণে তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। শিশুদের অধিকারের জন্য বিশেষ অবদান রাখায় মালালার মেধা ও সাহসকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবেই তাকে আইকন মানা হয়। অধিকার আদায়ের এক জীবন্ত কিংবদন্তি মালালা ইউসুফজাই। জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে মালালা নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন। ভাষণে নারী শিক্ষা ও শান্তি নিয়ে তার বক্তব্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।

অতি সম্প্রতি তালেবানদের মুখপাত্র এক সংবাদে মালালার ওপর হামলা নিয়ে বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তার ওপর হামলা করা হয়নি। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ না করলেও তালেবানদের স্বীকারোক্তি মেলে। মালালা এখনো নারী শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পাকিস্তানি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ও শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে তার এই অবিচল অবস্থানের জন্য সে সারা দুনিয়ায় কিশোরীদের রোল মডেল।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.