আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সান্ত্বনা



পায়ের আওয়াজ কানে যেতেই নিশি ফট করে কম্পুটার বন্ধ করে দিল। অজানা ভয়ে বুকটা ধ্বক করে উঠল যদি আর না চলে! কি হবে তার! কি ভাবে সে অয়নের জন্য সাথে যোগাযোগ করবে! ধ্যাৎ কি যে হয় তার, কেন যে বোকার মত কাজটা করল। আরে মা তো আর পিসিটা খেয়ে ফেলত না। একটু রাগ করত কিন্তু ঠিকই আবার পরে পিসিটা ফিরিয়ে দিত। লিলি এসে মেয়ের কাছে দাঁড়ায়, কি রে আবার ঐ ছেলের আশায় বসে আছিস? আরো কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে যায় নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে।

মেয়েটার চোখে পানি জমেছে। একটু চাপা দীর্ঘশ্বাস পরে তার। বেচারা নিশি। নেটে কোন ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। ছেলেটা বাইরে থাকে।

সেজন্য লিলি ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। দেখা সাক্ষাৎ আর হচ্ছেনা অসুবিধা কোথায়, একটু আধটু নেটে মেসেজ আদান প্রদান এ আর এমন কি! এ বয়সে ছেলে মেয়েরা আর কত কি করে। তার নিশি তো সেসব কিছু করছে না। লিলি বেশ নিশ্চিন্তেই ছিল। কিন্তু বাঁধ সাধল নিয়তি।

গফুর সাহেব একদিন নিশির পিসি ব্যবহার করতে যেয়ে সব ফাঁস হয়ে গেল। নিশি মেসেন্জার লগ অফ করতে ভুলে যায়। গফুর সাহেব তার দরকারি কাজ করার সময় খালি মেসেজ আসতে থাকে। ভাবেন যে ছেলেদের কোন মেসেজ এসেছে। উনি ক্লিক করতেই গোটা দশেক অয়নের মেসেজ পান।

প্রায় সবটাতেই দেশে ফিরে কবে কোথায় তারা দেখা করবে তার প্ল্যান প্রোগ্রাম। গফুর সাহেবের দরকারি কাজ মাথায় উঠে। উনি চিৎকার করে লিলিকে ডাকেন এবং নিশির কান্ড কারখানা দেখান। লিলি কোন কথা বলতে পারে না। সে এসবের কিছুই জানেনা।

উফ্‌ মেয়েটা এত বোকা যে কি করে হল। একটা গাধা মেয়ে পালছি মনে মনে নিজেকে অভিশাপ দেয় লিলি। কিছুই করার নেই। যা হবার তাই হবে। নিয়তিকে এখন মেনে নিতে হবে।

কারণ গফুর এসবের কিছুই শুনবে না। সে ইতিমধ্যে নিশির বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে। ভাল ছেলের খোঁজ পেলেই বিয়ে দিয়ে দিবে। নিশির পিসি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওর ঘর থেকে পিসি সরিয়ে লিলিদের শোয়ার ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে।

খালি পড়ার কাজে পিসি ব্যবহার তাও লিলির সামনে বসে করতে হয়। নিশি তক্কে তক্কে থাকে, যখন লিলির চোখ বন্ধ হয়ে আসে ঠিক তখন সে অয়নের সাথে যোগাযোগ করে। ইতিমধ্যে অয়ন দেশে চলে এসেছে। নিশি তার দুরবস্থার কথা অয়নকে জানায়, কিন্তু কি আশ্চর্য্য ওর মধ্যে কোন পরিবর্তণ সে বুঝতে পারে না। নিশি আশা করছিল অয়ন বলবে এসব কোন ব্যপার না, আমি তোমাদের বাসায় এসে তোমার বাবার সাথে কথা বলব, সেসব কিছু বললো না, বরং ভীষণ ব্যস্ত পরে যোগাযোগ করবে বলে লগ অফ হয়ে গেল।

নিশি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। মায়ের কাছে গিয়ে হুঁ হুঁ করে কাঁদতে থাকে। অয়ন যে তার সাথে এরকম করবে নিশি ভাবেনি। বিদেশ থেকে পড়া শেষ করে এসেছে, চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া বাড়িতে বাবা মা বিয়ের জন্য কয়েক জায়গায় মেয়ে দেখে রেখেছে।

সেগুলো নিয়েও মায়ের সাথে প্রায়ই বাইরে যেতে হচ্ছে। নিশিকে সে সবই বলেছে। নিশি ভেবেছে এর মাঝেই একসময় অয়ন নিশির কথা মাকে বলবে। কিন্তু বলা সম্ভব হচ্ছে না। অয়নের বাবা মা মফস্বলের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিবেন না।

নিশি এখন মফস্বলের মেয়ে হয়ে গেল! অথচ বিদেশে থাকতে নিশিকেই কত স্মার্ট মনে হত! নিশি আর চুপ থাকতে পারেনা। তার মনটা যে এভাবে ভেংগে যাবে সে বুঝতে পারেনি। লিলি বুঝতে পারে না কি বলে মেয়েকে সান্ত্বনা দিবে! বাস্তবের কাছে মানুষ যে কত অসহায়। কত প্রেম বলি হয়ে যায় নিষ্ঠুর বাস্তবের কাছে। নিশিকে বুকে জড়িয়ে রাখে।

তার নিজের চোখ দিয়েও অঝোরে পানি ঝরতে থাকে। নিজের জীবনের কথা মনে পরে যায়। ঠিক এরকম ভাবেই সে কাঁদতে ছিল, তার কথা কেউ শুনেনি। লিলির বাবার কলেজের চাকরিটা তখন খুব সামান্য লেগেছিল মানিকের বাবার কাছে, মেধাবি মানিকের জন্য অনেক বড়লোক মেয়ের বাবাই উপযাজক হয়ে বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন, তাদেরই একজনের সাথে মানিকের বিয়ে হয়ে যায়। সেই মানিক এখন কোথায় আছে কে জানে, লিলির কথা মনে আছে কিনা।

বোধহয় মনে নাই, সেও নিজেই এখন কেউকেটা হয়ে গেছে। বছর খানেক পরে লিলির বিয়ে হয় ব্যবসায়ী গফুরের সাথে। সংসারে মন বসতে না বসতে চার ছেলে মেয়ের মা হয়ে যায় লিলি। দুই ছেলেই বিদেশে পড়তে চলে গেছে, বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, এখন বাকি নিশি। সবার ছোট বলে আদুরে, আর সবচেয়ে বড় কথা বাপের আহ্লাদি মেয়ে।

আর সবার সাথে কঠোর থাকলেও নিশির কাছে গফুর পানি হয়ে যায়। নিশিকে দেখলেই তার মায়ের কথা মনে হয়। যেন মা আবার ফিরে এসেছে। আহ্‌ সত্যি যদি মা আবার বেঁচে উঠত। মায়া সব মায়া, কেন যে এমন হয়।

নিশিটা যে কেন এমন করল। এখন কি হবে। লোক জানাজানি হওয়ার আগেই নিশির বিয়ে দিতে হবে। দুয়েকটা ছেলের খবর আছে তার কাছে, এখন খালি উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা। সব ঠিক হয়ে যাবে।

সময়ে নিশিও ঠিক হয়ে যাবে। লিলি সান্ত্বনা খুঁজে পায় নিজের মনে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।