আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেশা



মূল লেখকঃ মোফাজ্জল করিম (অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা) বাপজান, আশা করি কুশলেই আছেন। পরসমাচার এই যে, সেদিন আপনি যে কান্ডটি করিলেন তার জন্য এই পত্রটি না লিখিয়া পারিতেছিনা। দেখিতেছি যতই বয়স বাড়িতেছে, ততোই আপনার কান্ডজ্ঞান একেবারেই লোপ পাইতেছে। আপনি কী করিয়া সেদিন আমার ড্রয়িং রুমে, অর্থাৎ বৈঠকখানায় বেমক্কা ঢুকিয়া পড়িলেন বুঝিলাম না। সারা গায়ে ঘামের গন্ধ, ময়লা তেল চিটচিটে পাঞ্জাবী, বগলে ছেঁড়া ছাতা, মাথায় ইচিতি পড়া কিস্তি টুপি, যেন আকবর বাদশার উষ্ণীষ আরকি।

হাতে মাটির হাড়ি, সর্বোপরি দু’পায়ের চামড়ার কুচকুচে কালো রং বোধহয় লজ্জায় ঢাকিয়া ফেলিবার আশায় রাস্তার সবটুকু ধুলি মাখাইয়া পা দুইটিকে মনে হইতেছিল চুনকাম করিয়া ছিলেন। কী লজ্জা। আপনার ঐ মূর্তি দেখিয়া আমার বন্ধুগণ এবং তাহাদের সুন্দরী স্ত্রীরা বজ্রাহতের মতো তাকাইয়া রহিল - যেন তাহারা চাক্ষুষ ভূত দেখিতেছে। আর আমার অবস্থাটা একবার ভাবিয়া দেখুন, মান, সম্মান, মর্যাদা সব জাহান্নামে গেল। তাও না হয় আপনি যদি দয়া করিয়া একটু চুপ থাকিতেন, তবু একটা কথা ছিল, তা না - আপনার আবার মুখদিয়া কথার ফোয়ারা ছুটিতে লাগিল।

বাবা কেমন আছ? বৌমা কোথায়? বলিহারি। ভাগ্যিস সেই মুহূর্তে ও সেখানে ছিল না, থাকিলেতো সে বেচারীর হার্ট এটাক হইয়া যাইতো। সে তো আবার হঠাৎ কোন খারাপ দৃশ্য মোটেই সহ্য করিতে পারে না, বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ কি না। বাপজান, তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি, আর যাই কর, এইভাবে আমাকে ডুবাইও না। টাকা পয়সা লাগিলে চিঠি দিও, পারিলে পাঠাইবো, আর অত টাকা পয়সাও যে কেন লাগে তোমাদের, তাও বুঝিনা।

তোমাদেও আবার এত খরচ কিসের? ক্লাবে যাওনা, পার্টি দাওনা, ইসবগুল আর চিরতার পানি ছাড়া আরতো কোন নেশাও কর না। এইটুকু পড়িয়া দরিদ্র স্কুল মাস্টার পিতা আপন মনে বলিয়া উঠিলেন - ‘না না ভুল বললিরে বাবা, নেশা একটা আছে, বড় পুরনো নেশা, কিছুতেই ছাড়তে পারিনা সেই নেশা। তোর জন্মের পর থেকে সারাক্ষণ তোকে দেখার নেশা। কিছুতেই ছাড়তে পারিনা বাপ, কিছুতেই ছাড়তে পারিনা। ’


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।