আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতোমধ্যেই তীব্র পানি সংকটে সুরমা



বরাক নদীর টিপাইমুখে বাঁধ নির্মিত হওয়ার আগেই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের শত শত নদী ও খাল-বিল শুস্ক মৌসুমে পানি সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তারা জানান, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে বরাকের শাখা সুরমা নদীর মুখে বড় একটি চর জাগে এবং সেটি সিলেটে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের "নো ম্যান'স ল্যান্ড' হওয়ায় তা ড্রেজিং করতে পারছে না পাউবো। তবে সিলেটের অমলসিদে সুরমা নদীর মুখে ড্রেজিং করার জন্য ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ এখনও অনুমতি পায়নি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন কামরান রেজা চৌধুরী। কর্মকর্তারা বলেন, সুরমার মুখের এই চরটির কারণে বরাক নদীর পানি বর্তমানে মূলত তার আরেক শাখা নদী কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফলে সুরমার ওপর নির্ভরশীল এলাকায় পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। অভিন্ন নদী বরাক অমলসিদ দিয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে। সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার মধ্য প্রবাহিত হচ্ছে। আর এ এলাকার লাখ লাখ কৃষক ও জেলে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরোপুরি নির্ভরশীল সুরমার শাখা-প্রশাখা ও খালবিলের ওপর। ভারত ও বাংলাদেশের পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে বরাক নদীর উজান ও ভাটি উভয় এলাকাতেই 'পরিবেশ বিপর্যয়' ঘটবে।

তবে তাদের এ আশঙ্কা বরাবরই নাকচ করে আসছে দিল্লি। গত ৯ আগস্ট পাউবোর মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ তার কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হ্যাঁ, গত কয়েক বছর শুস্ক মৌসুমে সুরমা নদীর মুখে (অমলসিদে) একটি বড় চর জাগছে। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে আমরা নদীমুখে ড্রেজিংয়ের চেষ্টা করছি। " মহাপরিচালক জানান, যত দ্রুত সম্ভব চরটি কেটে তুলে ফেলতে হবে। নইলে বালি জমে পুরো নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।

একইদিন পাউবোর সিলেট শাখার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) সৈয়দ আহসান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সিলেট ও সুনামগঞ্জের শত শত ছোট-বড় নদী-নালা ও খাল-বিল সুরমার পানির ওপর নির্ভরশীল। "শুস্ক মৌসুমে চরটির কারণে পানি কুশিয়ারা দিয়ে চলে যাওয়ায় এসব নদী-নালা ও খাল-বিল পানি সংকটে পড়ে। " বরাক নদীর ৮০ শতাংশ পানি বর্তমানে কুশিয়ারা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় বলেও জানান তিনি। পাউবোর প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানের অনুমতি সাপেক্ষে সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আহসান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন। সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সুরমা নদীতে ড্রেজিং করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি।

" পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর) ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। গত ১২ আগস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "ড্রেজিংয়ের বিষয় নিয়ে আমরা ভারতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। " তবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শুক্রবার বলেন, "কথা বলবো না। " পাউবোর তথ্য অনুযায়ী শুস্ক মৌসুমে সুরমা নদীর প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়। পাউবো সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার প্রবাহ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালের শুস্ক মৌসুমে সুরমার সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহ সেকেন্ডে ৯ দশমিক ১৮ কিউমেক ছিল এপ্রিল মাসে এবং সবচেয়ে কম প্রবাহ সেকেন্ডে ৪ দশমিক ৫৬ কিউমেক ছিল ১৩ ফেব্র"য়ারি। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে একই পয়েন্টে নদীটির সর্বোচ্চ প্রবাহ সেকেন্ড ১৪১৬ কিউমেক ছিল ১০ জুলাই এবং সর্বনিু প্রবাহ সেকেন্ডে ৬৭০ কিউমেক ছিল আগস্ট মাসে। ২০০৭ সালের শুস্ক মৌসুমে সুরমার সর্বোচ্চ ও সর্বনিু পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় মার্চ মাসে। তখন সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহ কমে সেকেন্ডে ৪ দশমিক ৬ কিউমেক এ দাঁড়ায় এবং সর্বনিু প্রবাহ রেকর্ড করা হয় সেকেন্ডে ৪ দশকি ২২ কিউমেক। নদীটির একই বছরের বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ ও সর্বনিু পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় আগস্ট মাসে।

তা ছিল যথাক্রমে সেকেন্ডে ৯৬২ কিউমেক ও ৬৭০ কিউমেক। ২০০৮ সালের শুস্ক মৌসুমে সুরমার সর্বোচ্চ ও সর্বনিু পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় মার্চ মাসে। তা ছিল যথাক্রমে সেকেন্ডে ১৫ কিউমেক ও ৬ দশমিক ০৫ কিউমেক। একই বছরের বর্ষা মৌসুমে নদীটির সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহ সেকেন্ডে ১৪৫৬ কিউমেক রেকর্ড করা হয় ২১ জুলাই। ২০০৯ সালের তথ্য এখনও প্রস্তুত হয়নি বলে জানান পাউবো কর্মকর্তারা।

Click This Link Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।