আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেলমন্ত্রীর বায়না খুশি করবে জমির দালালদের

অনিকেত

রেলমন্ত্রীর বায়না খুশি করবে জমির দালালদের অনিকেত চক্রবর্তী সময়টা ছিল ২০০৬ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস। সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকায় সর্বদলীয় বৈঠকে বসেছিলেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। গাড়ি কারখানার নির্মাণ নিয়ে কীভাবে জমি অধিগ্রহণ হবে, গ্রামবাসীদের তা বুঝিয়ে বলতে সেই সর্বদলীয় বৈঠক হচ্ছিল। তাতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা পুরো বিষয়টি পেশ করার পর উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও তাঁদের অভিমত রাখতে শুরু করেন বৈঠকে।

তৃণমূল কংগ্রেস গোড়া থেকেই ওই গাড়ি কারখানা নির্মাণের বিরোধিতা ঘোষণা করলেও, সেদিন ওই বৈঠকে বেড়াবেড়ি অঞ্চলের তৃণমূলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা তাৎপর্যপূর্ণ শর্তে জমি দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছিলেন। তিনি বৈঠকে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের বলেছিলেন, দেখুন, জমি দিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু একটা বক্তব্য আছে আমাদের। তা হলো, যারা কারখানা গড়বে, তারা সরাসরি এসে কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনুক। মাঝখানে যেন রাজ্য সরকার কোনও মধ্যস্থতার ভূমিকা না নেয়।

তৃণমূলের এমন প্রস্তাব শুনে সেদিন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা বলেছিলেন, আমাদের রাজ্যে জমি ছোট ছোট এবং তার মালিকদের সিংহভাগই মাঝারি অথবা ক্ষুদ্র কৃষক। তাই বিশেষ করে কোনও বড় শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শিল্প কিংবা পরিকাঠামো গড়ার বেসরকারী উদ্যোগে নেমে যদি এই ছোট কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কেনাকাটা করে, তাহলে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকই জমির বিনিময়ে প্রাপ্য অর্থ ও ক্ষতিপূরণের ন্যায্য মাপকাঠির প্রশ্নে বঞ্চিত হতে পারেন। তাঁদের দরকষাকষির ক্ষমতা না-ও হতে পারে। অতএব বিশেষ করে বড় কোনও শিল্পগোষ্ঠী যখন একলপ্তে অনেকটা জমি অধিগ্রহণ করতে চাইবে, তখন কৃষকদের স্বার্থেই তাদের দরকষাকষির ক্ষমতাকে রক্ষা করতেই মাঝখানে সরকারের ভূমিকা থাকা জরুরী। ফলে তাঁদের প্রয়োজনে শিল্পপতিরা সরাসরি জমি কিনে নেবে কৃষকদের কাছ থেকে, এমন বাস্তবতা নেই, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে।

প্রশাসনের সেই যুক্তি অবশ্য মানেননি তৃণমূলের ওই স্থানীয় নেতারা। তারপর তো দিনে দিনে কী হয়েছে সিঙ্গুরের সেই কারখানা নির্মাণ নিয়ে, তা এখন বিশ্বের মানুষও জানেন। কিন্তু সেই প্রসঙ্গটা আবার মনে পড়লো এখন। কারণ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উনিশ শতকের জমি অধিগ্রহণ আইনটির সংশোধনে একটি খসড়া প্রস্তাব এসেছিল আলোচনার জন্য। সরকারীভাবে ওই আলোচনার বিবরণ কিছু না জানানো হলেও, মিডিয়া যা প্রচার করছে, তার সারমর্ম হলো, ওই খসড়া সং‍শোধনীতে নাকি রেল মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি আপত্তি জানিয়েছেন।

সংশোধনীতে নাকি আছে, শিল্প বা নির্মাণের প্রয়োজনে উদ্যোগী গোষ্ঠী সরাসরি কৃষক বা জমির মালিকের কাছ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত জমি কিনবে। তারপর দরকার হলে ৩০ শতাংশ জমি জোগাড়ের প্রশ্নে সরকার ভূমিকা নেবে। কিন্তু মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, মমতা ব্যানার্জি চেয়েছেন, ৭০ শতাংশ নয়, ১০০ শতাংশ জমিই কিনে নিক উদ্যোগী গোষ্ঠী। সরকারের কোনও ভূমিকা থাকবে না। ৩০ শতাংশ কেন, এক শতাংশ জমির প্রশ্নেও কোনও ভূমিকা রাখা চলবে না সরকারের।

এটাই দাবি মমতার। মিডিয়ার ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণজনিত সাম্প্রতিক যে চিত্র, তার দিকে চেয়েই নাকি মমতা ব্যানার্জি জমি জোগাড়ের সম্পূর্ণ দায় উদ্যোগপতির হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। মিডিয়া যা-ই ব্যাখ্যা দিক, ঘটনা হলো, শুধু পশ্চিমবঙ্গের দিকেই চাওয়ার প্রশ্ন যদি প্রাধান্য পেত, তাহলে মমতা ব্যানার্জির বলা উচিত ছিল, জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা কোনও মতেই খর্ব করা চলবে না। ঠিক এই কথাটাই এর আগে বারবার পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে বলা হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। উনিশ শতকের পুরানো জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধন করতে হবে বলে যখন এর আগে দাবি ওঠে, বামপন্থীরাও যখন এই দাবির শরিক, তখনই পশ্চিমবঙ্গের তরফে বলা হয়েছিল, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা হলো, ভূমিসংস্কারের ফলে অধিকাংশ জমি ছোট ছোট কৃষকদেরই হাতে, জমির খণ্ডীকরণও প্রবল, তাই জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা যদি খর্ব করা হয়, তাহলে মার খেয়ে যাবেন এই ছোট ছোট কৃষকরা।

বড় উদ্যোগপতি বা গোষ্ঠী জমি জোগাড়ের সময় নিজেরা সরাসরি নামলে, ছোট ছোট কৃষকরা মাৎস্যন্যায়ের মুখেও পড়বেন বলে আশঙ্কা থাকে। তাই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা, রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা খর্ব করা চলবে না। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি রাজ্য সরকারের ভূমিকাকেই তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিরোধিতার প্রশ্নে। এ প্রসঙ্গে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ভি পি সিং-র একটি সাংবাদিক বৈঠকের কথা মনে করা যেতে পারে। সিঙ্গুর প্রসঙ্গ যখন ইস্যু, তখনই ভি পি সিং দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জমি অধিগ্রহণে সরকারী ভূমিকা একেবারে নস্যাৎ করে দিয়ে শিল্পগোষ্ঠীর হাতেই সবটা তুলে দেওয়ার সওয়াল করেছিলেন।

শিল্পগোষ্ঠী সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকেই জমি কিনুক, এই ছিল তাঁর দাবি। তিনি বলেছিলেন, সরকার যেন এতে মাথা না গলায়। তখন এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি যা বলছেন, তাতে দেশে যে সব রাজ্যে ভূমিসংস্কার আদৌ হয়নি, প্রচুর জমি রয়ে গিয়েছে জোতদার জমিদার বা বড় কৃষকদের হাতেই, সেই সব কৃষকরা বা জোতদার জমিদাররা হয়তো দরকষাকষি করে নিজেদের জমির ন্যায্য বা তার বেশি দাম আদায় করে নিতে সক্ষম হবেন। কারণ, বড় উদ্যোগপতি বনাম কুলাক কৃষকদের সেই দরকষাকষি হবে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার মতই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো যে সব রাজ্যে জমির মালিকানা ছোট কৃষকদের হাতে, সেখানে কি আপনার প্রস্তাব কৃষকদের বিরুদ্ধে যাবে না? কৃষকরা জমির উপযুক্ত দাম না পেলে তখন কী হবে? উত্তরে ভি পি সিং বলেছিলেন, তখন সরকার বিষয়টা দেখবে।

যাতে কৃষকরা ন্যায্য দাম পান। ভি পি সিং-র এই অভিমত শুনে সাংবাদিকটি বলেছিলেন, সেই কথাটাই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বলছে যে ওই রাজ্যে ভূমির যা পরিস্থিতি, তাতে সরকারের ভূমিকা যদি না থাকে, তাহলে জমি অধিগ্রহণে কৃষকরা মার খাবেন, দাম পাবেন না হয়তো। এই প্রসঙ্গেই, মমতা ব্যানার্জির তৈরি ‘কৃষি ও জীবন-জীবিকা বাঁচাও কমিটি’র এক নেতার মন্তব্য শুনুন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মমতা জমি অধিগ্রহণ আইনের খসড়ায় বিরোধিতা করেছেন শুনে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল তাদের স্টুডিওয় ওই নেতাকে ডেকেছিল আলোচনার জন্য। একথা-সেকথার পর সঞ্চালক যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে ছোট ছোট কৃষকদের কী হবে? যদি কোনও বড় গোষ্ঠী উপযুক্ত দাম না দিয়ে কৃষকদের জমি নিতে চায়, ছোট কৃষক তো পেরে উঠবেন না লড়াইয়ে! উত্তরে সেই নেতা বললেন, ‘কেন? স্থানীয় যে পঞ্চায়েত থাকবে, তাকেই এগিয়ে আসতে হবে সেই কৃষকের স্বার্থ রক্ষায়!’ প্রশ্ন হলো, পঞ্চায়েত তো সরকারেরই অংশ।

তার মানে ছোট কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সেই সরকারের ভূমিকাকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন ওরা। অথচ একই ইস্যুতে আবার সময়ে বলছেন, সরকারের কোনওরকম ভূমিকা থাকবে না! এই দ্বিচারিতা করে মানুষকেই কি প্রতারণা করছেন না ওরা? তবে এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণে সরকারী ভূমিকাকে পুরোপুরি নস্যাৎ করার দাবি সমর্থন করে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার দুটি অদ্ভুত যুক্তি শুনিয়েছেন। ছোট কৃষকরা এ রাজ্যে অধিকাংশ জমির মালিক, তাই তাঁরা দরকষাকষি করতে সক্ষম হবেন না বলে যে শঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে, তাকে উড়িয়ে দিয়ে অভিরূপ সরকার বলছেন, সিঙ্গুরে যেভাবে ‘উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনে’ শামিল হয়ে ছোট কৃষকরা সফল হয়েছেন, তেমনভাবেই সবাই জোট বেঁধে ছোট কৃষকরাও দরকষাকষি করে সঠিক দাম ও বাড়তি ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেবেন শিল্পগোষ্ঠী বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছ থেকে। সিঙ্গুরে এ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মিলে কিছু কৃষককে ভুল বুঝিয়ে যে ভূমিকা নিয়েছিল, তাকে অভিরূপবাবু ‘আন্দোলন’ ভাবতেই পারেন, কিন্তু শেষ বিচারে ওই ভূমিকা নৈরাজ্য ছাড়া যে কিছু নয়, তা সিঙ্গুরে টানা ১৭ দিন ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জির কাণ্ডকারখানা‍‌ও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। অথচ অভিরূপবাবুদের মতো অর্থনীতিবিদরা এখন দাওয়াই বাতলাচ্ছেন যে, সেইরকম নৈরাজ্য করেই দরকষাকষিতে সফল হবেন ছোট কৃষকরাও, যদি কোনও শিল্পপতি জমি কিনতে আসে সরাসরি! কথা হলো, এমন নৈরাজ্যের পথ যদি বেছে নেন কেউ, তখন তো সরকারকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে! তখন কী হবে? তখন কী হবে, তা অবশ্য পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এখনই বলা যায়।

তখন এই অভিরূপবাবুরাই টিভি চ্যানেলে বসে বলবেন, নৈরাজ্য প্রতিরোধে সরকারের এমন কঠোর হওয়া উচিত হচ্ছে না! সিঙ্গুরে সরকার কিছুদিন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল, তাতেই এই বিশিষ্টজনেরা কত সমালোচনা করেছেন, তা দেখেছেন রাজ্যবাসী। অভিরূপ সরকারের আরেকটা অদ্ভুত যুক্তি হলো, শিল্পপতিরা যদি সরাসরি জমি কিনতে যান, তাতে প্রতিযোগিতা হবে। কৃষকরা দাম পাবেন ভালো। কী রকম? উনি বলছেন, এক শিল্পপতি যদি কোথাও কারখানা বানাতে জমি কিনতে যান, তাহলে আরেক শিল্পপতি সেই কারখানা যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে ওখানেই নিজের জমি কিনতে যাবেন। ফলে দুই শিল্পপতির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

তা কাজে লাগিয়ে কৃষকরাও দরকষাকষি করে নিজেদের জমির দাম বাড়িয়ে নেবেন। কী অদ্ভুত যুক্তি! শুনে মনে পড়ছে, টাটার কথা। ওরা বলেছিলেন, সিঙ্গুরে তাদের গাড়ি কারখানা আটকাতে প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পগোষ্ঠীও নানাভাবে বাধা দিয়েছে! অভিরূপ সরকার বোধহয় জানেন, কোন শিল্পগোষ্ঠী কিভাবে বাধা দিয়েছে সিঙ্গুরে টাটাদের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি হয়তো এমন সরল যুক্তি দিয়েছেন। সেকথা যাক।

কথা হলো, কী করে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, কোনও শিল্পপতি জমি কিনতে কোথাও গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পগোষ্ঠীও যাবেই সেই এলাকাতে ওই জমি কেনার প্রতিযোগিতায়? সর্বত্র এমন হবে? কী করে এমন ধারণা করা হচ্ছে? আর, কোনও শিল্পগোষ্ঠীর কারখানা নির্মাণ আটকাতে অন্য শিল্পগোষ্ঠী যে জমি কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেই বাধা দেবেন, তা কী করে ধরা হচ্ছে? কারখানা নির্মাণ আটকাতে যে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী কোনও এলাকায় প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে অর্থ দিয়ে, বোমা, বন্দুক, গুলির ব্যবস্থা করে, এমনকি সি বি আই-র মতো সংস্থার অফিসারদের হাত করে যে ষড়যন্ত্রে নামবেন না, তা কী করে মনে করা হচ্ছে? সবচেয়ে বড় কথা, একজন জমি কিনলে আরেকজন সেখানে বাধা দিতে জমি কিনতে নামবেন, এটাকে ‘প্রতিযোগিতা’ ভাবা হচ্ছে কোন্‌ বুদ্ধিতে? এটা তো কর্পোরেট লড়াইয়ের নামে নৈরাজ্যকেই স্বীকৃতি দেওয়া। তাই নয় কি? এতে কৃষকদের উপকার হবে? না। অরাজকতার দিকেই ঠেলে দেওয়া হবে রাজ্যকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.