আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের ক্ষতি করে অন্যের শুভ কমনা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ....................................................?

আমি জানি ভাল কিছু করার মাঝে প্রকৃত আনন্দ । আমি সব ভালদের সঙ্গী হতে চাই।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানির লক্ষ্যে কয়লার সালফার উপাদান সংক্রান্ত মানদন্ড শিথিল করার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরানুযায়ী দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতিটি ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য দৈনিক ১৬০০০ টন কয়লার প্রয়োজন হবে এবং আগামী ২০১২ সালের মধ্যে বোর্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করার প্রস্তাব করেছে।

দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বকে সামনে রেখে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রস্তাবিত উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহার্য কয়লায় সালফার উপাদানের পরিমাণ ০.৩৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য যে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লার সালফার উপাদানও এই সীমার মধ্যেই রয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের একশ্রেণীর কয়লা ব্যবসায়ী ভারতীয় রফতানিকারকদের যোগসাজশে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের সুপারিশকে উপেক্ষা করে অধিকতর সালফার উপাদান সম্পন্ন ভারতীয় কয়লা আমদানির জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন এবং সালফার উপাদান সংক্রান্ত মানদন্ডটি শিথিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপর অবৈধ চাপ সৃষ্টি করছেন। এই চাপকে আমরা জাতি বিধ্বংসী একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। সরকার যদি এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন তাহলে তারা শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ধ্বংস করবেন বলে আমাদের ধারণা।

উল্লেখ্য যে, ভারতীয় কয়লার সালফার উপাদানের পরিমাণ অন্যূন পাঁচ শতাংশের বেশি যা পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক। এই কয়লার কালো ধোঁয়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী এবং এর ফলে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এ মানের কয়লার ব্যবহার মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু তথাপিও লক্ষ্য করা গেছে যে, সরকারি দলের আশীর্বাদপুষ্ট একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানির জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা সরকারকে এই মর্মে বুঝাবার চেষ্টা করছেন যে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় এবং কয়লা আমদানিতে সালফার উপাদান সংক্রান্ত মানদন্ডটি বহাল রাখলে এর আমদানি মূল্য যেমনি প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে তেমনি সময়ও লাগবে অনেক বেশি।

পক্ষান্তরে মানদন্ডের বাধ্যবাধকতা পরিহার করে ভারত থেকে আমদানি করা হলে ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা সম্ভব হবে। জাতীয় স্বার্থ এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের এই যুক্তিকে আমরা একটা বিশেষ দেশের দালালী বলে মনে করি। বলাবাহুল্য, সরকার বিদ্যুৎ উন্নয়ন খাতকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন এবং এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী দালালরা নিম্নমানের ভারতীয় কয়লা আমদানি করে আমাদের জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করতে চাচ্ছে। তাদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দ্বিতীয়তঃ ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, বড়পুকুরিয়ার কয়লা স্তূপীকৃত হয়ে আছে এবং কোন কোন মহলের তরফ থেকে এই কয়লা রফতানিরও প্রস্তাব এসেছে।

এমনকি ভারতে রফতানির প্রশ্নও উঠেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের উন্নতমানের কয়লা রফতানি করে নিম্নমানের কয়লা আমদানি এবং তা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর প্রস্তাব খুবই রহস্যজনক বলে মনে হয়। বাংলাদেশী কয়লায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে আমরা কোনও সমস্যা দেখি না এবং তাতে অর্থ ও সময় উভয়েরই সাশ্রয় হয়। কিন্তু তা না করে যারা কয়লা আমদানির পরামর্শ দিচ্ছেন তাদের আসল উদ্দেশ্য উ ঘাটন করা দরকার বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশ গ্যাস ও কয়লা সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ।

এই সম্পদের উপর অনেকেরই শ্যেন দৃষ্টি রয়েছে এবং এ কারণেই বিভিন্ন সময়ে আবিষ্কৃত আমাদের কয়লা খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনে বিভিন্নভাবে বাধা এসেছে। সর্বশেষ বাধা হচ্ছে উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে। খোলা পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে, না ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ তৈরির মাধ্যমে--এই বিতর্কটি আমাদের এই মূল্যবান সম্পদ আহরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ফলে আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে। এই বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই বিতর্ক হয়নি, চীনে হয়নি এবং বাংলাদেশে অব্যাহত থাকার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই।

এই অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এদেশের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে অবিলম্বে নতুন খনিতে কয়লা উত্তোলন এবং বড়পুকুরিয়ায় তা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সাথে সাথে ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানির উদ্যোগ বন্ধ হওয়াও জরুরি বলে আমরা মনে করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.