আগামী বছরের জানুয়ারিতে সংসদ ভেঙে এপ্রিলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিন্তা করছে সরকার। নিজেদের সুসংহত করতে, বিরোধী দলকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে এবং গত পাঁচ বছরের সাফল্য মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বাড়তি তিন মাস সময় হাতে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সংবিধানে কোনো বাধা নেই এবং সংবিধান সংশোধনেরও প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সংসদের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে, যেমন ২০ জানুয়ারি সরকার যদি সংসদ ভেঙে দেয় তবে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে তথা এপ্রিলের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। কেননা সংবিধান অনুসারে সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
আর এ জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সংবিধানে বাধা না থাকলেও সরকার মেয়াদের শেষ সময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে তা অনৈতিক হবে। সংবিধানের স্প্রিট নষ্ট হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আইনত সমস্যা নেই। তবে শেষ সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়াটা অনৈতিক হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, অনৈতিক কাজ করার ফলাফল কখনো শুভ হয় না। এমনকি এভাবে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতও নিয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি দল বৈঠক করেছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে।
এই বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে।
গতকাল এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ীই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্তির পূর্ববর্তী না পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে হবে এবং এর জন্য কখন সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তা অবস্থাই বলে দেবে। ব্যারিস্টার শফিক বলেন, আসন্ন সংসদ অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন করা হবে না।
এটির প্রয়োজন নেই এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্র চলবে সংবিধান অনুযায়ী। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কাজ করবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(ক)-তে বলা হয়েছে, 'সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে। ' একই অনুচ্ছেদের ৩(খ)-তে বলা হয়েছে, 'মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
' নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সেই চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে কমিশনকে। অপরদিকে সংবিধান অনুযায়ী সরকার যদি মেয়াদের শেষ সময় ২০ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ ভেঙে দেয় সেক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তথা আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ মনে করে, পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ পাওয়া গেলে বাড়তি তিন মাসে দেশবাসীর কাছে দেওয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ সহজতর হবে।
পাশাপাশি গত এক বছরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তারও জবাব দেওয়া যাবে। তুলে ধরা যাবে সাফল্যগুলো। দল ও সরকার গোছাতে সুবিধা হবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দশম সংসদ জাতীয় নির্বাচনে। এ কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির পরিবর্তে এপ্রিলকে বেছে নেওয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল।
প্রথম থেকে সাংবিধানিক নিয়মনীতির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কারণে মতামত নেওয়া হয় সংবিধান বিশেষজ্ঞদের, পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতকে। সবকিছু স্বাভাবিক দেখে সরকার এপ্রিলকে নির্বাচনী মাস হিসেবে দেখছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবরের পরে কমিশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। এক্ষেত্রে সরকার ২৫ অক্টোবরের আগে যদি সংসদ না ভেঙে দেয়।
তবে ইসি সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নেবে। কমিশন সরকারের মেয়াদ শেষে সংসদ ভাঙার জন্য অপেক্ষা করবে না। সংবিধান অনুযায়ী আগামী দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার আগে কমিশন এ বিষয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
সে ক্ষেত্রে ২৬ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোনো কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুটি সময়ের কথা মাথায় রেখেই সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে প্রথমত, ২৬ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি রাখছে ইসি। কোনো কারণে নির্বাচন পিছিয়ে গেলেও ইসির নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা নেই।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী ৫৩ সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়ে ইউএনডিপির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে ইসি। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনেক মালামাল চলে আসবে ইসির কাছে। কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।