আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও টিপাই মুখে বাধঃ সাহারা মরুভমির পথে বাংলদেশ-২

মাঝে মাঝে মন নিয়ন্ত্রনহীন হতে চায়; কিন্তু...............

পড়ুন পর্ব-১ পর্ব-২ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ নীহগাররঞ্জন রায় ‘বঙ্গালীর ইতিহাস’ লিখতে গিয়ে অনুভব করেছেন, “বাংলার ইতিহাস রচনা করিয়াছে বাংলান ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী। এই নদ-নদীগুলিই বাংলার প্রাণ, এরাই বাংল কে গড়িয়াছে, বাংলার আকৃতি-প্রকৃতি নির্ণয় করিয়াছে যুগে যুগে। এখনও করিতেছে। এই নদ-নদীগুলো বাংলার আশির্বাদ; এবং প্রকৃতির তাড়নায় মানুষের অবহেলায় কখনও বোধ হয় বাংলার অভিশাপ। ” আমাদের বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি এবং তার হাল-অবস'া এই ছোট্ট কয়েকটি কখার মধ্যদিয়ে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

ঢাকার অদুরে মধুপুর অঞ্চল এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র ভূমির একটা অংশ বাদে এদেশের পুরো ভূখন্ডই নদ-নদীগুলোর -প্রধাণত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বয়ে আনা পলি দ্বারা গঠিত। এবং এখনও এ প্রক্রিয়ায় এখানে ভূমি গঠন চলছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই এদেশের ভূপ্রকৃতি, মানুষের জীবন জীবিকা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, একথায় গোটা জীবন প্রবাহ গড়ে ওঠেছে নদ-নদীকে ঘিরে। সেজন্য নদ-নদ কেই ধরাহয় এদেশের প্রাণ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কোন কারণে এগুলো শুকিয়ে গেলে, গোটা দেশটাই মৃত্যূমুখে পতিত হবে।

সম্প্রতি এ আশঙ্কাটা জনমনে বেশ ভালভাবেই জেঁকে বসেছে; বিশেষ করে, ভারত সরকারের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের কথা জানার পর থেকে। এমনিতেই রাজশাহী সিমানে-র ১১ মাইল উজানে গঙ্গার ওপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের কুপ্রভাব দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ওদিকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারার উজানে বরাক নদীর ওপর টিপাইবাঁধ দিয়ে মেঘনাকে মারার আয়োজন চলছে। (সুরমা-কুশিয়ারার মিলিত স্রোতের নামই হল মেঘনা)। এর মধ্যেই যদি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মধ্যমে ব্রহ্মপুত্র থেকেও পানি প্রত্যাহার শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশের সামনে মৃত্যু ছাড়া আরকোন গতি থাকে না।

জনশ্রুতি আছে যে এক সময় এদেশে ১৬শ নদী ছিল। কবিয়ালরা বন্দনা গাওয়ার মসয় এতথ্য পরিবেশন করতেন। তারা ব্রহ্মপুত্রকে বলতেন নদীর রাজা। জনশ্রুতি বাদ থাক, বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন একসময় এদেশে ১২০০ নদীর নাম পাওয়া যেত। কিন্ত এখন ২৩০ টি নামে আছে, যদিও বাস্তবে সবগুলো সচল নেই।

শীতকালে ৬০/৬৫টির বেশি প্রবাহমান থাকে না । পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, ২৫টি নদী সহসাই শুকিয়ে যাবে। এরই সাথে জানা গেছে, ভারত বাধেঁর মালা দিয়ে বাংলাশেকে ঘিরে ফেলেছে। আমাদের আন-র্জাতিক নদী ৫৭টি। ৫৪টি এসেছে ভারত, ৩টি মিয়ানমার থেকে।

ভারত আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে উজানে অধিকাংশ নদীতে বাঁধ দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬ টি বৃহৎ বাঁধ চালু করা হয়েছে। ৮টি নির্মাণাধীন। খবরে প্রকাশ, ভারত তার উত্তর-পূর্বাংশে ক্রমান্বয়ে আরও ৬৪টি বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সেগুলোর প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।

আমাদের পানির প্রধাণ উৎস তিনটিঃ আর্ন্তজাতিক নদী প্রবাহ, বৃষ্টির পানি এবং ভূগর্ভস' পানি। এর মধ্যে নদীপ্রবাহের আবদান দুই তৃতীয়াংশের বেশী (৭৬.৫%)। বাকি দু ’টোর অবদান যথাক্রমে ২৩% ও ১.৫%। বলা বাহুল্য, সাগরের পাশাপাশি নদীর পানি বাস্পীভূত হয়েই বৃষ্টিতে পরিণত হয়। ভূগর্ভস' পানির ভান্ডারেও নদীর পানির অবদান বিশাল।

আবার, নদীপ্রবাহের মাধ্যমে দেশে যে পরিমাণ পানি আসে তার ৯০% এরও বেশী বহন করে ৩টি প্রধাণ নদী- ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্রই আনে ৬০-৭০% পনি। ফলে একদিকে বাঁধের মালা, অন্যদিকে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের অশুভ পরিনাম ভেবে সচেতন মানুষ মাত্রই শিউরে উঠবেন সন্দেহ নেই। তবে এ অশুভ পরিণামকে রুখতে হলে সমগ্র জনগনকে দাঁড়াতে হবে, বাংলঅদেশকে পানিতে মেরে ভারতীয় শাসকদের কথিত উন্নয়নের স্বরূপ বুঝতে হবে। আর এ প্রয়োজন থেকেই নদী নিয়ে ভারত সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের স্বরূপ সন্ধান জরুরি বলে আমরা মনে করছি।

প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, আমাদের ভাবনা ছিল, নদী সংযোগ ফারাক্কা ও টিপাইবাঁধ তিনটকে মিলিয়েই একটা আলোচনা হাজির করা। কিন' স্থানাভাবে বর্ততমান পরিসরে তা সম্ভব নয়। ফারাক্কা নিয়ে আমরা অন্যত্র (ট্রানজিট-হাইওয়ে বির্তক, পানিচুক্তি ও বাংলাদেশ-ভারত সর্ম্পক পুস্তিকায়) বিস-রিত আলোচনা করেছি। টিপাইবাঁধনিয়েও আমাদের অনরূপ ভাবনা আছে (সম্প্রতি ’টিপাই মুখ বাঁধ প্রকল্পঃ মৃত্যুর মুখে সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা’ শীর্ষক পুস্তিকাটি হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে ব্লগে প্রকাশের ইচ্ছা আছে।

) এখানে শুধু নদীসংযোগের উপরই আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ থাকবে। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.