আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কামরুলের খাওয়ার আদব

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

আমার ক্লাস মেট ছিল কামরুল। আমরা ডাকতাম ভিমরুল। ওতে সে মাইন্ড খাইত না। কারণ কামরুলের সব কিছুই মোটা। তার বুদ্ধি মোটা, শরীর আরও মোটা এবং সবচেয়ে মোটা হইল তার চামড়া।

ভ্যাবলা কিসিমের এই ভদ্রলোক প্রতিদিন নিয়মিত বেতের বাড়ি খাইত। তাতে তার কোন প্রতিক্রিয়া দেখতাম না। স্যারেরা পড়া জিজ্ঞেস করলে সে নির্দ্বিধায় হাত পেতে দিত। স্যারেরা তাকে মেরে মজা পেত না বলে আমার ধারণা। সে ইচ্ছেমতো খেতে পারত।

বাছবিচারহীন খাওয়ার ফলে তার পেটের অবস্থা সুবিধা থাকত না। প্রায়ই সে ক্লাস কামাই করত তার লাইন ডাইরেক্ট হওয়ার কারণে। একবার সে ক্লাসে বসেই প্যান্ট ভরে কাজ সেরে ফেলেছিল। আরেকবার এসেম্বলিতে সে দাঁড়িয়ে কাজ সেরে দিয়েছিল। আমরা দুর্গন্ধে টের পেয়েছিলাম, এইটা কামরুল ছাড়া আর কারও কাজ না।

মফিজ ছিল আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ফাজিল। অনেক ফাইজলামির মধ্যে সে মাঝে মাঝে কামরুলের বসার সিটে একটা পেন্সিল খাড়া করে ধরে রাখত। কামরুল সেই পেন্সিলের উপর বসত। দিনের পর দিন পেন্সিলের খোঁচা খেলেও কখনও স্যারের কাছে বিচার দেয় নি কামরুল। একবার ঘটে গেল দুর্ঘটনা।

পেনসিল সোজা ঢুকে গেল জায়গা মতো। ঢুকে গেল ভেঙ্গে। কিন্তু কামরুল নির্বিকার। আমরা রক্ত দেখে বুঝলাম, ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। তাকে সবাই ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।

মফিজ ভয়ে স্কুলের ধারে কাছেও এল না ১৫ দিন। কিন্তু যে দিন মফিজ এল, সে দিনই প্রিন্সিপাল স্যার স্বয়ং ডাবল বেত দিয়ে পেটাল মফিজকে। আমরা সবাই পাস করে গেলাম এস.এস.সি। কিন্তু গর্দভ কামরুল আটকে গেল। সেই থেকে তার সাথে কোন যোগাযোগ নাই।

৫ বছর পর কামরুলের সাথে দেখা। আমার বড় ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে গেলাম ৩ দিনের তাবলীগ জামাতে। জামাতে গিয়ে দেখি, আমাদের জামায়াতে কামরুলও আছে। আরও মোটা হয়েছে। বেকার বলে তার বড় ভাই তাবলীগে পাঠিয়েছে।

কমপক্ষে আল্লাবিল্লা শিখতে যেন পারে কামরুল। জামায়াতের আমীর সাহেব আমাদের নানা কাজের আদব শেখাতে লাগলেন। এস্তেঞ্জার আদব, ঘুমানোর আদব, খাওয়ার আদব ইত্যাদি। সেগুলো মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হল খাওয়ার আদব।

জামায়াতে এক থালে ২ জন বসত। আমীর সাহেব বলেছিলেন, খাওয়ার আদব হল, একজন আরেকজনকে খাবার ঠেলে দেয়া। নিজে না খেয়ে সঙ্গীকে খাবার সাধা। আমরা নতুন শেখা আদব অনুযায়ী খাচ্ছিলাম। খাওয়ার সময়ে এক থালার ২ পাশে ২ জন বসতাম।

তারপর খাবার ঠেলাঠেলি করতাম। এ ওর দিকে ঠেলতাম, ও এর দিকে ঠেলত। তিন দিন ভালো কাটল। খাবারের মেনু ভাল। প্রতিদিন ভালো ভালো রান্না হচ্ছে।

শেষ দিনে দুপুরে লাগল ভেজাল। আমাদের সাথে একটা ১০/১২ বছরের ছেলেও ছিল। প্রতি বেলা এই ছেলেটাকে নিয়ে খেতে বসত কামরুল। শেষ দিন দুপুর বেলা ছেলেটাকে ডাক দিল কামরুল। ছেলেটা চিৎকার করে বলল, আপনের সাথে আমি খামু না।

আমরা তার দিকে মনোযোগ দিলাম। আমীর সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন বাবা, কামরুলের সাথে খাইবা না ক্যান ? হের দিকে খাওন ঠেইল্যা দিলে হেয় গপ কইরা খায়া ফালায়। আমার দিকে আর ঠেইল্যা দেয় না। আমরা হতভম্ব হয়ে গেলাম। কামরুল খাওয়ার আদবকে ভালো কাজে লাগিয়েছে।

ফেরার পথে কামরুলকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি রে তুই খাওয়ার আদব শিখলি না ক্যান ? এত মজার খাওন সামনে ঠেইল্যা দিলে কি না খায়া পাড়ন যায় ? - কামরুলের পাল্টা প্রশ্ন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।