আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রয়ের যুদ্ধ

........

পুরানা মুভি ট্রয় আবার দেখলাম । আমার খুবই পছন্দের একটা মুভি। পাঠ্যবই হিসাবে মহাকবি হোমারের ইলিয়াড পড়েছিলাম অনেকদিন হয়ে গেল। স্মৃতি হাতরে হাতরে ট্রয় যুদ্ধের পেছনের কারনটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য নিজের মতো করে লিখলাম। কাহিনিটা এরকম ।

অলিম্পাসে একজন হিংসার দেবি ছিলো। কারো সাথে তার ভাব ছিলোনা। ঘটনার শুরু এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। সব দেবদেবীরা ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করছিলো। এদিকে হিংসার দেবী জ্বলেপুরে মরছে কারন তাকে দাওয়াত করা হয়নি।

হটাৎ তার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসলো। সে একটা সোনার আপেলের গায়ে লিখলো "যে দেবী সবচেয়ে সুন্দর, আপেলটা শুধুমাত্র তার জন্য " তরপর সেটা ডাইনিং টেবিলের মাঝখানে ফেলে দিলো । তিন দেবী হেরা , আফ্রেদিতি, আর পালাস এ্যথেনা নিজেদেরকে সবচেয়ে সুন্দর বলে দাবি করতে লাগলো। কিন্তু আপেল যেহেতু একজনের জন্য তাই গোন্ডগোল লেগে গেল। শেষে তারা দেবরাজ জিউসের কাছে গেল।

জিউস পড়েগেল মহা পেজগীর মধ্যে। এমনিতে আফ্রেদিতি সুন্দর আর ভালোবাসার দেবী, পালাস এ্যথেনাও কম যায়না । তাদের দুজনের একজনকে যদি সুন্দর বলে তাহলে তার বউ হেরা তাকে আবার এক হাত দেখে নিবে। সব ভেবেচিন্তে সুন্দরের এই কঠিন দ্বন্দ জিউস নিজের ঘাড়ে নিলোনা । সে বলল "তোমরা তিনজন যাও আইডা পাহাড়ে।

সেখানে প্যারিস নামের এক রাখাল ছাগল চরাচ্ছে । আমি নিশ্চিত প্যারিসই তোমাদের মধ্যে সঠিক জনকে নির্বাচন করবে। " এদিকে প্যারিসের প্রথম জীবনে রাখাল হওয়ার পেছনে একটু কাহিনী আছে। প্যারিস যখন তার মায়ের গর্ভে, তখন তার মা স্বপ্নে দেখে যে, কোন মানু্ষ সন্তানের বদলে সে একটা আগুনের গোলার জন্ম দিয়েছে। এই কথা সে প্যারিসের বাপ রাজা প্রায়াম কে বলল।

তখনকার দিনে তারা আবার ভবিষ্যৎ বক্তাদের খুবই বিস্বাস করতো কারন তাদের কথা কখনো মিথ্যা প্রমানিত হতো না। তো স্বপ্নের শানে নযুল জানার জন্য প্যরিসের বাপ সাথে সাথে রাজদরবারের খাস ভবিষৎ বক্তাকে ডাকলো। বক্তা বলল মহারানী যে সন্তানের জন্ম দেবে তার দ্বারা একদিন ট্রয় নগরী ধংস হবে। এই শুনে রাজা খুবই ভয় পেয়ে গেল । তাই রাজা প্রায়াম যেদিন প্যারিসের জন্ম হলো সেদিন জল্লাদ ডেকে দূর পাহাড় আইডায় প্যরিসকে নিয়েগিয়ে হত্যা করতে বলল।

ঘটনাক্রমে জল্লাদের মনে ছোট বাচ্চার জন্য দয়া হওয়ায় তারা তাকে না মেরে সেখনে ফেলে রেখে আসে । তারপর দিনে দিনে নির্জন আইডা পাহারে প্যারিস বড় হয় নিজের আসল পরিচয় না জেনেই। এবার আসল ঘটনায় ফিরে আসি। জিউসের কথা মতো তিন দেবী আইডা পাহাড়ে প্যারিসের সামনে আসলো সম্পূর্ন নগ্ন হয়ে । তাদের রূপ দেখে প্যারিসের ফিট লাগার অবস্হা।

তার জবান বন্ধ হয়ে গেল। তারা তিনজনই একসাথে বলল " ট্রয়ের যুবরাজ তোমাকে আভিন্দন। " একথায় প্যারিস একটু অবাক হয়ে গেল। তখন দেবীরা তাকে বলল যে সে সত্যিয় ট্রয়ের রাজপুত্র। এবং তার হাতে সোনার আপেলটা দিয়ে তাদের আসার উদ্দেশ্য বলল।

প্যরিস আপেল হাতে তিন দেবীর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো। এদের কাকে ছেরে কাকে আপেল দিবে এই মহাচিন্তায় মধ্যে পরেগেল। তার কাছে তিনজনকেই সমান সুন্দর মনে হলো । তার উপর আবার দেবীরা এমন খবর দিয়েছে যে তার মাথা কাজ করছেনা। দেবীরা প্যারিসের অবস্হা দেখে বুঝলো এভাবে কাজ হবে না ।

তাই তারা প্যারিসকে ঘুস দেয়ার ফন্দি আটলো। প্রথমে হেরা বলল" প্যারিস তুমি আমাকে যদি আপেলটা দাও তাহলে তোমাকে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা বানাবো। " পালাস এ্যথেনা বলল " তুমি যদি আমাকে নির্বাচন কর তাহলে তোমাকে দুনিয়ার সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ বানাবো। " ভালোবাসার দেবী আফ্রেদিতি বলল" প্যারিস , সোনার আপেলটা আমাকে দাও । আমি তোমারে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর নারীকে তোমার করে দিবো।

" প্যারিস এক সেকেন্ডও দেরী না করে সাথে সাথে আপেলটা আফ্রেদিতিকে দিয়ে দিলো। তারপর আর কি আফ্রেদিতির সহায়তায় প্যারিস গ্রীসের এক প্রদেশের রাজা মেনালিউয়াসের বাড়ীতে গেল অতিথি হয়ে এবং আফ্রেদিতিরই সহযোগিতায় মেনালিউয়াসের বউ হেলেন কে খুব অল্প সময়ে পটিয়ে ফেললো। এবং সুযোগ বুঝে চম্পট দিলো সোজা ট্রয়ে। প্যরিসের বাপ বুঝতে পারলো প্যারিস সাথে করে নিশ্চিত তাদের ধংস নিয়ে এসেছে। তারপরেও নিজের ছেলে বলে কথা।

প্রায়াম নিজ রক্ত কে অস্বীকার করতে পারলো না । হেলেন সহ প্যারিস কে ঘরে তুলে নিলো। মেনালিউয়াস নিজের স্ত্রীর ভেগে যাওয়া হজম করতে পারলো না ( অনেকে মনে করে প্যারিস হেলেন কে অপহরন করে নিয়ে যায়। কিন্তু আসল ঘটনা তো জানলেন) আর মেনালিউয়াসের লোভী ভাই আগামেমনন ট্রয়ের মতো ধনসম্পদশালী নগর দখল করার জন্য পানির মতো সহজ একটা ইসু পেল। তার পরের কাহিনী তো সবার জানা।

১২ বছরের যুদ্ধ । ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।