চোখ মেলে দেখি জানালায় ভোরের পাখি
শুধু রিয়াজ সাহেবই নন, সেই প্রগৌতিহাসিক যুগের সকল ছাত্রছাত্রীরাই গল্পটি পড়েছিলো। হোক সে মেধাবী কিংবা মেধাহীন, সিরিয়াস কি ফাঁকিবাজ, কৃতি কিংবা ফেল্টুস।
এসএসসির গন্ডি পেরিয়ে কলেজের আঙিনায় পা রাখা মানেই বাধাবদ্ধ একঘেয়ে জীবনের বলয় ভেঙ্গে মুক্ত বাধাহীন , যা ইচ্ছে তা করার এক অবারিত স্বাধীনতার উল্লাস। ইন্টারে উঠে কবিতা লেখেনি কিংবা নিদেনপক্ষে একলাইন দুলাইন লেখার চেস্টা করেনি এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবেনা-সমবয়সী এক বুদ্ধিজীবী টাইপের বিদ্যান ছাত্র একদিন খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে আমাদেরকে তার এ গবেষনালব্ধ তথ্যটি জানিয়েছিলো। আমরা তারও চেয়ে সিরিয়াস হয়ে হিসাব করে দেখলাম 'কথা সত্য'।
অজপাড়াগা থেকে উঠে আসা সেই মন্টুও শক্ত মলাটের যে খাতা নিয়ে কলেজে আসে সেটা আসলে একটা ডায়েরী। এবং খুঁজলে ভেতরে অবশ্যই দুটো কবিতার লাইন পাওয়া যাবে।
মন্টু কিংবা তার মত ডায়েরী নিয়ে কলেজে আসা অন্য ছেলেরা এমনকি ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পেছনে পুরনো গাছের ছায়ায় রোমান্টিক আড্ডার মায়া ত্যাগ করে যে ছাত্রটি দু বছরেরও দোতলার সিড়িতে পা রাখার সময়ই পায়নি সেও গল্পটি পড়েছে তা আমরা বুঝতে পারি পরীক্ষার আগের দিন । একজন নাবিক একটি জাহাজে করে অনেক দূরের দেশে যাচ্ছিলো। প্রতিদিন তার সাথে দেখা হতো কতগুলি অ্যালবাট্রস নামক সামুদ্রিক পাখির সাথে।
পাখিগুলোকে বিবেচনা করা হতো সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। সমুদ্রগামী নাবিকেরা তাই ওগুলোকে কখনোই বিরক্ত করতোনা। কিন্তু বুড়ো নাবিক একদিন একটা সিরিয়াস কান্ড ঘটিয়ে ফেললো।
বুড়োর জন্য এটা অবশ্য বিচিত্র কিছু নয়। মানুষ বুড়ো হলেই বোধ হয় একধরনের পাগলামো পেয়ে বসে।
সুতরাং বুড়ো নাবিককে কোনভাবেই দোষ দেয়া যায়না। সে কি জানতো আ্যালবাট্রসকে মেরে ফেললে এত ভোগান্তি পোহাতে হবে!
সমুদ্রের সকল পানি শুকিয়ে গেলো, শীতল বায়ু স্রোত স্তব্ধ হয়ে থাকলো। পান করার জন্য এক ফোটা পানিও নেই কোথাও।
গল্পটা মর্মান্তিক। ক্লাসশুদ্ধ উৎকন্ঠিত ছাত্রদের সামনে শিক্ষক যখন ব্যাখ্যা করতেন পুরো ঘটনা, গভীর মনোযোগ দিয়ে আমরা সবাই শুনতাম।
কত বিচিত্র ভাবনা খেলে যেতো আমাদের মনে। আচ্ছা, বুড়োর পাপের কি কোন প্রায়শ্চিত্ত নেই ? একটা মানুষের জন্য কি কাফেলার সবাই এভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে!!
ক্লাস শেষ করে , বন্ধুকে সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে নিয়ে টুং টাং ক্রিং ক্রিং বাজিয়ে, কবি মন্টুর গায়ে কায়দা করে এক পশলা কাঁদা ছিটিয়ে, গভমেন্ট গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে অহেতুক একটা বিপদজনক বাঁক নিয়ে, গলির মুখে শুয়ে থাকা কুকুরটার লেজের উপর দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে বাসায় পৌছা র্পযন্ত পুরো সময়টাতে বুড়ো নাবিকের কথা থেকে থেকে স্মরন করতাম কিনা জানিনা, তবে সন্ধার পরে আমাদের ভাবনায় আবার বুড়ো নাবিকের পদচারনা শুরু হতো।
প্রগৌতিহাসিক যুগে আমাদের মত যারা কলেজের আঙ্গিনায় পা রেখেছিলাম। তারা প্রত্যেকেই এই বুড়ো নাবিকের গল্পটি অন্তত দুবার পড়েছিলো বলে জনারণ্যে চালু আছে। এমনকি যে রিয়াজ সাহেবের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে বইটি পেয়েছিলাম প্রথমদিনের পরে তিনি আর কলেজের ছায়া না মাড়ালেও ঝকঝকে তকতকে ইংরেজি বইটার প্রথম কটি পৃস্ঠায় তার স্মৃতিবহ কলমের দাগ স্মরন করে অনুভব করি তিনিও এ গল্পটি পড়েছিলেন।
কারনটা সবাই বুঝতেই পারছেন ! সে আমলে 'দ্যা এনসিয়েন্ট মেরিনার' ই ছিল ইংলিশ টেক্সট বুকের ফাস্ট স্টোরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।