যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
১৯৭১ সাল। বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটি তখন পাক-হানাদারদের আগ্রাসনের অধীনে। দেশের মুক্তিপাগল মানুষ কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত। আর পাকিস্থান সরকারের অধীনে চাকুরীরত অনেক বাঙ্গালী কর্তারা বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই সময় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান পাকিস্থান থেকে যুদ্ধ বিমান নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে চলে আসার সময় মৃত্যুবরন করেন।
এই খবরগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে অধীর আগ্রহের অক্ষেমান জনতাকে সাহসী করে তুলছিলো।
সেই সময় কিছু বাঙালী কর্মকর্তা তাদের আনুগত্য প্রকাশের জন্যে ঢাকা ছেড়ে পাকিস্থানে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্থানের সংবাদপত্রে একটা শিরোনাম ছিল -“বাঙালি দুষ্কৃতকারীদের সাহসীকতার সাথে মোকাবেলা করে দেশপ্রেমিক বাঙালি কুটনীতিকের দিল্লি ত্যাগ ও করাচীতে আগমন”।
এই ‘দেশপ্রেমিক’ এর নাম হলো ‘রিয়াজ রহমান’।
খবরের বিস্তারিত বিবরনে বলা ছিল - দিল্লিতে পাকিস্থানের দ্বিতীয় সচিব রিয়াজ রহমান বাঙালি দুষ্কৃতকারীদের প্রবল বাঁধার মুখে কিভাবে দেশ প্রেমে উদ্ভুদ্ব হয়ে করাচীগামী প্লেনে চড়েছিলেন।
সেই সময়ে পাকিস্থানে আটকে পড়া আরেক সেনা কর্তা মেজর জেনারেল (অব) খলিলুর রহমানের সাথে ‘দেশপ্রেমিক’ রিয়াজ রহমানের দেখা হয় উপসচিব হেদায়েত আহমেদের করাচীর বাসায়। রিয়াজ রহমানের পরিচয় পাওয়ার পর খলিলুর রহমান অত্যান্ত উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তাদের মধ্যে সেখানে যে বাক্যালাপ হয় - তার কিছু বিবরন নীচে দেওয়া হলো :
খলিলুর রহমান - আপনিই সেই রিয়াজ রহমান, যিনি সাহসিকতার সাথে দিল্লিস্থ বাঙালি দুষ্কৃতকারীদের প্রচেষ্টা প্রতিহত করে নিজের দেশ করাচিতে পৌঁছেছেন সফল ভাবে?
রিয়াজ রহমান এতে বিরক্ত বিভিন্ন কথা বলার এক পর্যায়ে বলে - ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখেছে ঢাকায় পাকিস্থানিরা জেনোসাইড করছে। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? এরা কি জেনোসাইডের অর্থ জানে?’
খলিলুর রহমান - জেনোসাইডের অর্থ আমিও জানি না, তবে আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী ঢাকায় পঁচিশে মার্চে সেনাবাহিনী কত লোক মেরেছে?’
রিয়াজ - ‘যা পত্রিকায় বলা হয়েছে তার চাইতে অনেক কম’।
খলিলুর রহমান - ‘তবুও বলুন, সেই সংখ্যাটা কত হবে, দশ হাজার”?
রিয়াজ - ‘না, এতো হবে না’।
খলিলুর রহমান - ‘তবে হাজার দুই-এক’।
খলিলুর রহমান - ‘তা, হতে পারে’।
এই পর্যায়ে খলিলুর রহমান অত্যান্ত উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং বলেন - আপনার লজ্জা করে না ‘মাত্র এই কথা বলতে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে?’
হেদায়তে হোসেন এবং উপস্থিত অন্যান্যদের হস্তক্ষেপে বিষয়টা বেশী দুর যেতে পারেনি।
(২)
১৯৭৩ সালে রিয়াজ রহমান “স্বাধীন বাংলাদেশের” পররাষ্ট্র দফতরে যোগদান করেন - যিনি সাফল্যের সিড়ি বেয়ে পররাষ্ট্র সচিব পদ পর্যণ্ত যান। পরে দেখি তাকে ২০০১ সালে পররাষ্ট্র প্রতি - মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন।
২০০৬ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক সংঘাতের চুড়ান্ত পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন মানুষকে যথেষ্ঠ সংক্রিয় দেখা গেছে - যিনি সদস্য বিদায়ী জামাত-বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্র উপ-মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
(৩)
নতুন প্রজন্মের জন্যে এই দেশ প্রেমিকদের চিনে রাখা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন নয় কি?
...................
(সূত্র: পূর্বাপর ১৯৭১, পাকিস্থানি সেনা-গহ্বর থেকে দেখা - মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান (অব) - সাহিত্য প্রকাশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।