আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মজৈবনিক প্যাঁচাল-২ (ফ্রেন্ডস আর এ বান্চ অফ বাস্টার্ডস)

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

মনে থাকা বন্ধুদের মধ্যে সর্বপুরাতন মোশাররফ । তার শুধু নামটাই মনে আছে আর মনে আছে কুতুবখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে আমার দ্বিতীয় শ্রেণীর বন্ধু ছিলো । তৃতীয় শ্রেণীতে অন্য ইশকুলে চইলা যাওয়ার পর থাইকা আর যোগাযোগ নাই । ওর বাসায় গেছিলাম একবার তাও মনে আছে । তবু এমন কিছু মনে নাই যেইটা দিয়া ওর সম্পর্কিত আর কোন তথ্য খুঁইজা বাইর করা যায় ।

লায়েকবয়সে বন্ধুন্ত কি জিনিস এইটা নিয়া আরসব রহিমকরিমজব্বারের মত আমিও চিন্তাযে করি নাই তা না । তবে নিজেরি হঠকারিতার ফলাফলে পরিত্যক্ত হওয়া গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের নায়ক ফ্রেন্ডস আর এ বান্চ অফ বাস্টার্ডস বৈলা চিল্লাইয়া উঠার বিবরনটাই মনে দাগ কাটে একটু বেশি । শহর ম্যাকোন্ডো বিরান হওয়া শুরু করলে বন্ধুরা কাঁচকি মাছের মত এদিকওদিক ছিটাইয়া পড়বো সেইটাইতো স্বাভাবিক । ওরাতো আর প্রাচীন যাযাবরের ভবিষ্যতবাণী সফল করার জন্য পইড়া থাকবো না । হালা আবাল কুনহানকার ।

তবু দীর্ঘকাল পরে মনে হয় শহর বিরান না হৈয়া ক্রমোন্নত হৈতে থাকলেও বন্ধুরা ঠিকই ছড়ায়, হারায় আর ক্রমে পরিচিতজনে পরিনত হৈতে থাকে । কখনো নিতান্ত পথচারিতে পরিনত হয় । তৃতীর শ্রেণীর নতুন ইশকুলের প্রথমদিনে এইসব শহরতলীর কালচারে অনভিজ্ঞ আমাকে ইশকুল শেষে বাড়ি নিয়ে মিষ্টি খাইয়ে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়ে বসে পলাশ । কিছুদিন একসাথে ইশকুলে যাওয়া আর টিফিনের সময়ে ফেরা আর দুইক্লাশের ফাঁকে অনর্থক আলাপের এই বন্ধুত্ব বেশ কাটে । তারপর পরিচিতি আলাদা হৈতে থাকে এবং একসময় একটি আক্ষরিক রক্তক্ষয়ী মারামারির মধ্য দিয়ে আলাদা হতে থাকে আমাদের পথ ।

আমার দাঁতে ঘুষি লাগে আর পলাশের মাথার চামড়া ইটের টুকরার আঘাতে কেঁটে যায় । এসবের বয়স পার হওয়ার পরে এখন সে রাস্তায় দেখা হলে করমর্দনের বন্ধু হয়ে গেছে আজ অনেক বছর । তারো পরে কেবল চোখের ইশারার । বয়ঃসন্ধির নিদারুন দিনগুলাতে ইশকুলের রহিম করিমের সাথে আমি জব্বারের তিন মাস্কেটিয়ার জুটি গইড়া উঠে । নিষ্ঠুর সপ্না আক্তার ভ্রুকুঞ্চণযোগে ঢাউস দুধের উপর দিয়ে গলার দুইপাশে ওড়না ফেইলা আত্নীয়বাড়ী যাওনের পথে তার যুগল ভারের একটি কাঁপনও পলক না ফেইলা রাস্তার তিন কুত্তা মিলে দেখে যাওয়ার ভিতর দিয়ে বড় হওয়া বন্ধুত্ব জারি থাকে আরো অনেকদিন ।

থাকবে হয়তো জীবনভরই । শুধু পার্থক্য আসবে তীব্রতায় আর ফ্রিকোয়েন্সিতে । নাবালেগ থেকে বালেগ হওনের লক্ষণরুপে অন্ধকার গোধূলি সিনেমা হলে থিরি দেখার দোস্তরা এত সহজে হয়ত হারাবে না । বয়ঃসন্ধীর বহুভাঁজওয়ালা প্রপঞ্চের মধ্যে এক ভাঁজ হয়ে থাকে বন্ধুতের গোত্রবিভক্তি । ইশকুলের করিমজব্বারের সাথে মিশ খায়না পাশের ঘরের রেহান ।

দিনের অন্য সময়ে স্বল্প বা অশিক্ষিত রেহানের কাছে যা খুলে বলা যায় করিমজব্বারের কাছে তা যায়না । অথচ আইজ এতদিন পরে সেও হারাইছে । এমনভাবে যেখানে আর কোন উপায়ই না ট্রেসিংএর । সবযুগে সবসমাজে হয়ত না , কলেজের (উচ্চমাধ্যমিক) বন্ধুত্বের মধ্যে কাগজকলমযন্ত্রের স্থায়ী যোগাযোগ অনেকবেশী সম্ভবপর । অথবা কেবল পরিনত বয়সের জন্যই অথবা ঠিক সেই সময়েই যন্ত্রযোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব বাংলাদেশে ঘইটা যাওনের কারণেই এরা স্থায়ী হয়ে বইসা গেছে জীবনের সাথে ।

তাও পরিবর্তন আসছে তীব্রতা আর ফ্রিকোয়েন্সিতে । কারণ ব্যাক্তিগত জীবনের নানান ঝুট ঝামেলা । বন্ধুত্ব এর পরেও অনেকের সাথে হৈছে । সেইগুলার কিছু কিছু টিকে গেছে । কিছু কিছু স্বল্পসময়ে গেছে হারাইয়া ।

একইবয়সের হৈতে হবে এমন ধারণাও গেছে একই লিঙের হৈতে হবে সেইটাও গেছে । ফলস্বরুপ রহিমজব্বারের সাথে জরিনাশেফালিও যোগ হৈছে । শেফালির সাথে বন্ধুত্বের শুরু হুটহাট । একদিনে । তারপর কয়েকদিনে কাইটা গেছে অনেক সময় একসাথে ।

রহিমজব্বারের কাছে বলা যায়না এমন অনেক কথা তারে বলা গেছে । না বুঝেও বুঝার ভান করা হয়তো এইখানে তার চেষ্টা কিংবা অন্তরের বিশুদ্ধতার উপসর্গ হৈছে । তবু শেষ পর্যন্ত বন্ধুরা ছড়ায় । ছড়াইয়া পড়ে গোটা দেশ, বিশ্বময় । তাদের স্মৃতির ভিতরে আমিও হয়ত মাঝেমাঝে একটা উৎকট প্রিয় অথচ বিরক্তিকর মাছি হৈয়া উৎপাত করি যেমন আমার স্মৃতিতে তারা করে ।

এভরি করিম হ্যাজ এটলিস্ট টু ফ্রেন্ডস, রহিম এন্ড জব্বার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।