আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ শালার ঘাউড়া বাঙ্গালের সবচেয়ে সক্রিয় যে হাত, তার নাম অজুহাত...

জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...

বাঙালীর জীবনে দুঃখের শেষ নাই, কারন দুনিয়ার তাবৎ জাতিসমুহ বাঙালীকে হিংসা করে। তারা কেউ বাংলাদেশের ভাল দেখতে চায় না। বাধ্য হয়েই বাংলাদেশের আজ হতচ্ছাড়া কুৎসিত অবস্থা। যে দেশ বা জাতিগোষ্ঠিকে সব বিদেশী শক্তিই চাকর-বাকর বানিয়ে রাখতে চায়, তাকে পদানত করতে চায়, তার কোমর ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে... যার জনগনকে ন্যাংটা ভিখারী বানিয়ে রাখতে চায়, সেই দেশের সাধ্য কি দুনিয়ার বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে? বাংলাদেশের দুর্ভোগের জন্য আমার সত্যিই কষ্ট হয়। আহারে... বাঙালীর করিৎকর্মতার কোন তুলনা হয় না।

সে চার হাত-পা দিয়ে কাজ করে। সে চোখ দিয়ে কাজ করে, মুখ দিয়ে, এমন কি মুখের ভিতরের জিহবা দিয়েও কাজ করে...! তবে বাঙালীর যাবতীয় সাফল্যের পিছনে তার প্রধান যে হাত সে ব্যাবহার করে সেটা হল “অজুহাত”...। তার আজকের এত শত কর্মতৎপরতার (?) পরেও তার যে এত গরিবী হাল, সেটার জন্য তার বিস্তর অজুহাত মজুত আছে। পুরানো দিনের কথা হিসাবে আমরা যদি ভুলে না যাই- তবে সবাইকে একবার মনে করতে বলি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরের দিনগুলোর কথা। সারা দেশের বিপর্য্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার, পাকিস্তানিদের পুতে রেখে যাওয়া মাইন অপসারন সহ দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চালু করার জন্য সেদিন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমুহের কাছ থেকে কি পরিমান মনোযোগ এবং সহানুভুতি পেয়েছিলো।

বাংলাদেশকে সাহায্য করতে সেদিন কে না ঝাঁপিয়ে পড়েছিল? বাংলাদেশকে সে সময় এবং পরবর্তী বছর গুলোতে যে পরিমান আর্থিক সাহায্য করা হয়েছিল আমরা তার কতটুকু সদ্বব্যবহার করতে পেরেছি? আর কতটুকু লুটপাট করে খেয়েছি? বাংলাদেশকে এই সাহায্য দেওয়ার পিছনে কি কোন ষড়যন্ত্র ছিল? বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ আমাদের জন্য সমস্যা, এটা নিয়ে আমাদের মাঝে তেমন কোন মত পার্থক্য নাই। এই বাড়তি জন সংখ্যা কমানোর জন্য সাহায্য হিসাবে এ পর্যন্ত্য কোটি কোটি ডলারের সাহায্য আমরা পেয়ে এসেছি। আমরা কি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, জনসংখ্যা সমস্যাকে আমরা কার্য্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রনে আনতে পেরেছি? বাংলাদেশকে এই অর্থ সাহায্যের পিছনে যদি কোন বদ মতলব না থাকে, তবে এটা আমাদের মানতেই হবে- এই অর্থ আমরা অপচয় করেছি, এই অর্থ ব্যায়ের কোন সুফল আমরা ঘরে তুলতে পারি নাই। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ আমাদের জন্য আজও একই মাত্রার সমস্যা! যদি আমাদের সাহায্যের জন্য পাঠানো এই সকল অর্থ সমুহ অপচয় এবং লুটপাটে শেষ হয়, তবে সেই লুটপাট বন্ধ করার ব্যাপারে আমরা কার্য্যকর কি পদক্ষেপ নিতে পেরেছি? লুট হয়ে যাওয়া এই সব সাহায্যের একটা কিনারা করার বিষয়ে আমরা কখনো কি জাতীয় ঐক্যমত গঠন করতে পেরেছি? এই লুটপাটের হিসাব না নিয়ে ঘরে ফিরবো না, এমন কোন প্রতিজ্ঞা আমরা জাতি হিসাবে নিতে পেরেছি? এর মধ্যে এমন কোন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কি ছিল, যে কারনে আমরা এই দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিচার করতে পারি নাই? অবাক পৃথিবী, অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে, পুড়ে , মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়… সেই চল্লিশের দশকে লেখা সুকান্তের এই কবিতা ইদানিং আমরা অনেক আওড়াচ্ছি আর আমাদের যাবতীয় গাফিলতি আর মুর্খতাকে ঢাকার জন্য সাফাই গেয়ে যাচ্ছি। এই কবিতা আওড়ানো আমাদের জন্য কি পরিমান বেকুবি সেই বোধটুকুও আমরা আজ হারিয়ে ফেলেছি।

না হলে কি ভাবে আমরা প্রতিনিয়ত সেই দুর্নীতিবাজ অতি পরিচিত রাজনীতিবিদদের কাছে মাথা নোয়াচ্ছি তা আমাদের নজরেও পড়ে না। এমন কি দুর্নীতির দায়ে এই সব রাজনীতিবিদদের জেলে নেওয়া হলে আমরা মাতৃহারা গোশাবকের মতো আহাজারি আর আর্তনাদ করছি। এই দুর্নীতির প্রতিকার করতে গেলে কেউ কি আমাদের বাধা দিয়ে কোমর ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে...? আমাদের পদানত করতে চায়...? আমাদের জনগনকে ন্যাংটা ভিখারী বানিয়ে রাখতে চায়? আজ আমাদের দেশের, আমাদের রাষ্ট্রব্যাবস্থার এই অধঃপতনের জন্য কাকে আমরা দায়ী করতে চাই? আমরা নিজেরাই কি এই পরিস্থিতি তৈরি করি নাই? পুঁজিতান্ত্রিক এই বিশ্বব্যাবস্থার অধীনে আজ কি কোন দেশ, অন্য কোন দেশকে দাবিয়ে রাখতে চায়? কাউকে ন্যাংটা ভিখারী বানিয়ে রাখতে চায়? কি লাভ তার? মান্ধাতা আমলের এই সব আবেগী ভাষা আর কতদিন আমরা ইস্তেমাল করবো? বরং বিশ্ব পুঁজি ব্যাবস্থা চায় অনুন্নত দেশগুলোও দ্রুত উপরে উঠে আসুক, যাতে করে তার বাজার ব্যাবস্থার সম্প্রসারন ঘটে। আমাদের দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটুক, এটা ভারত সহ জাপান আমেরিকা সবাই চায়, যাতে তাদের পন্য তারা বেশি বেশি করে এখানে বিক্রি করতে পারে। তাছাড়া গত কয়েক দশকে পুঁজির যে পরিমান পুঞ্জিভবন এবং আন্তর্জাতিকিকরন হয়েছে, তাতে তার দেশ সীমানার বিষয়টি কি অনেক গৌন হয়ে যায় নি? পুঁজি লাভজনক মনে করলে এবং আমাদের সেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকলে কেন মার্কিন কিংবা ভারতীয় পুঁজিপতিরা তাদের কারখানা আমাদের দেশে বসাবে না? আমাদের ন্যাংটা ফকির বানালে আন্তর্জাতিক পুঁজি তার ব্যাবসা করবে কোথায়? আমরা চাইলেও তো তারা তা হতে দেবে না।

বরং আমাদের সেই আত্মসমালোচনা থাকা উচিত, কি ভাবে আমাদের দেশটাকে (বাইরের কেউ নয়) আমরাই প্রায় নরক হিসাবে বানিয়ে রাখছি। আমাদের রাজধানীর রাস্তাঘাট, আর মেট্রোপলিটান সিটির বাইরে প্রায় পুরোটা দেশ একজন বিদেশী বিনিয়োগকারীর চলাফেরার জন্য কতটুকু নিরাপদ! সেই বিদেশী যদি একজন নারী হন, তবে তার কি অবস্থা হবে, সে কথা না হয় উহ্যই থাকলো। এদেশে আসার আগে আজ একজন বিদেশীকে চিন্তা করতে হয়, তাদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে। আজ সকালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, শিরোণামঃ বাংলাদেশে মার্কিনিদের ভ্রমন নির্দেশনা হালনাগাদ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই খবরের কিছু অংশ আসুন পড়া যাকঃ …নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জননিরাপত্তা প্রায়শই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।

প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যেকোন মুহুর্তে বিস্ফোরণে রুপ নেয়। ফলে বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় মার্কিন নাগরিকেরা যেন স্থানীয় দূতাবাস থেকে তথ্য হালনাগাদ করে নেন৷ এ ছাড়া স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দেওয়া খবরের প্রতিও মনোযোগী থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশে ভ্রমণ বা অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের স্থানীয় দূতাবাসে নিবন্ধন করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, দূতাবাসের ওয়েবসাইটে স্থানীয় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সতর্কীকরণ নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার জন্য মার্কিন নাগরিকদের রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব এড়িয়ে চলা এবং পকেটমার, জালিয়াতি−এমনকি যৌন হামলার ব্যাপারেও সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে৷ আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জমিজমা বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ একটি স্বাভাবিক ঘটনা৷ এ ধরনের বিরোধে জড়িয়ে পড়লে আইন-আদালতের আশ্রয় নেওয়া আরও জটিল৷ জমিজমা-সংক্রান্ত মামলা বাংলাদেশের আদালতে নিস্পত্তির জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় দূতাবাস কার্যত কোন সহযোগিতা করতে পারে না বাংলাদেশে কোন সম্পত্তি কেনার আগে সমস্ত ঝুঁকির বিষয়টি আগেভাগেই বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনায় বাংলাদেশে অপ্রতুল চিকিৎসা-ব্যবস্থা, জনপরিবহন, নৌযান দুর্ঘটনা ইত্যাদি বিষয়ে নাতিদীর্ঘ পরামর্শ ও সতর্ক করে দিয়ে ঢাকায় দূতাবাসে প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত এই নির্দেশনার প্রতিটি লাইন পড়ে দেখুন, বিদেশীদের নিরাপত্তা নিয়ে এখানে একটি শব্দও কি বাড়িয়ে বলা? নাকি এটা কোন যড়যন্ত্রমুলক প্রচারনা? যে বাঙালী জ্বলে, পুড়ে , মরে ছারখার হয়ে গেলেও মাথা নোয়াবার নয় বলে আমরা কবিতা আওড়াচ্ছি, আজকে বাংলাদেশের এই হাল, এই দুরবস্থার জন্য কি সেই বাঙালী নিজেই দায়ী নয়? কেন শুধু শুধু আমরা বিদেশীদের দিকে আঙুল তুলে যড়যন্ত্রের তত্ত্ব আওড়াচ্ছি, আর তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছি...? বিশ্বজগৎ সভায় মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে আমাদের যাবতীয় অধঃপতনে নিজদের দায় আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।