মধ্যযুগীয় কায়দায় পাষণ্ড স্বামী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে টানা ১২ দিন লোহার শিকল পরিহিত অবস্থায় অন্ধকার ঘরে আটক রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন। খাবার না জুটলেও নির্যাতন চলতো প্রতিদিন। হতভাগা গৃহবধূ তসলিমা কান্না জড়িত কণ্ঠে তার বন্দিদশার বর্ণনা দেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব গোয়ালিয়া পালং গ্রামের হাজী নূর আহমদের পুত্র আবু সৈয়দ (৬৫) দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী তসলিমাকে নির্যাতন করে আসছেন।
রামু থানার তালিকাভুক্ত ডাকাত আবু সৈয়দ এ পর্যন্ত বিয়ে করেছেন ৩টি। সর্বশেষ ২ বছর পূর্বে আবু সৈয়দ নাতনি সম্পর্কের তসলিমাকে বিয়ে করেন। তসলিমার বাবা সৈয়দ আলম আবু সৈয়দের জামাই। আড়াই বছর আগে আবু সৈয়দের প্রথম স্ত্রীর ঘরের কন্যা রাবেয়ার বিয়ে হয় তসলিমার বাবা সৈয়দ আলমের সঙ্গে। এর ৬ মাস পর সৈয়দ আলম তার প্রথম স্ত্রীর ঘরের কন্যা তসলিমার সঙ্গে শ্বশুর আবু সৈয়দের বিয়ে দেন।
আবু সৈয়দের তৃতীয় স্ত্রী তসলিমা ১১ মাসের এক পুত্র সন্তানের জননী।
স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে তরুণি গৃহবধূ তসলিমা এক বছর আগে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মামলা করেন। অত্যাচারি স্বামীও দায়ের করেন পাল্টা মামলা।
এভাবে মামলা ও পাল্টা মামলা চলার পর গত ১৫ জুলাই কক্সবাজারের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ও অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় আর কোনো নির্যাতন করা হবে না মর্মে একটি বন্ড দিয়ে স্বামী আবু সৈয়দ তার স্ত্রী তসলিমা আক্তারকে ঘরে নিয়ে যান। কিন্তু আদালত থেকে ফিরে ওই দিন থেকেই তসলিমাকে ঘরে ঢুকিয়ে শিকল পরিয়ে দেন বর্বর স্বামী।
একটানা ১২ দিন স্ত্রী তসলিমাকে শিকল পরিহিত অবস্থায় আটকিয়ে রাখেন। বন্দি অবস্থা থেকে কৌশলে গত মঙ্গলবার পালাতে সম হন তসলিমা। বর্তমানে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা মুক্তি’র আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তিনি। তসলিমা জানান, জঘন্য চরিত্রের ব্যক্তিটি তার দুই পা থেকে গলা পর্যন্ত আগাগোড়া শিকল দিয়ে বেঁধে তাতে তালা লাগিয়েছিল। শিকলের কারণে সোজা হয়ে হাঁটতে পারতেন না।
ঘুমাতেও হত কাত হয়ে। ঘরের ভেতরই বিশেষ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হত। তসলিমা তার দুগ্ধ পোষ্য সন্তানটিকেও কাছে পেতেন না। কেবল দুধ পানের সময়ই তাকে দেয়া হত মায়ের কাছে। ঘরে আটকানো অবস্থায় তাকে পাহারা দিত আবু সৈয়দের অন্য দুই স্ত্রীর সন্তানরা।
গত মঙ্গলবার সকালে স্বামী আবু সৈয়দ কোর্টে মামলার হাজিরা দিতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে ঘরের তালা লাগাতে ভুলে যান। আর এ সুযোগে তসলিমা পালিয়ে কক্সবাজারের আদালত প্রাঙ্গণে আসতে সম হন। আইনজীবীদের সহায়তায় শিকল পরা অবস্থায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন তসলিমা। পুলিশ সুপারের নির্দেশে রামু থানায় মামলার পর পুলিশ গতকাল তসলিমার সৎপুত্র জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করেছে।
সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।