আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামকৃষ্ণ মাঝি আমাদের সবার নাম



রামকৃষ্ণ মাঝি আজ জেলে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। সাথে আরো দুই বন্ধ মনিকা রাণী হালদার, আনিস রায়হান। আসলে কি করতে চেয়েছিলো সে? তারা কি রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধনের নেমেছিলো? নাকি তারা রাষ্ট্রর সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করছিলো। আজ আমরা রাম কৃষ্ণ মাঝির কথা শুনি, আমাদের ভাষায়।

কারণ রাম এখন চার দেয়ালের পিছনে: ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হলো সে। আগ্রহের জায়গা মানুষ আর মানুষকে ঘিরে যে অধিকারের রাজনীতি। প্রথম বর্ষ কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে দেয়াল পত্রিকার কাজ শুরু হয় বিভাগে। সে প্রধান র্ভমিকায় থাকে। সেখানে একটি লেখা নিয়ে শিক্ষকের সাথে তর্ক শুরু হয়।

শিক্ষক বলেন, এটা এভাবে বলতে পারলে ভালো হতো কিন্তু আমাদের জায়গা থেকে এটা বলা মুশকিল। কিন্তু রামের মনে প্রশ্ন মানুষের কথা কেন বরা যাবে না? সে বিভাগ ত্যাগ করে আর শিক্ষকের কাছে ওয়াদা করে মানুষের জন্য, কৃষকের জন্য কাজ করে সে দেখাবে এটা সম্ভব, যার যার জায়গায় থেকেই সম্ভব। রাম একটা স্কুল দিয়েছিল। কৃষক শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা দৈনিক ১টাকার বিনিময়ে যে স্কুলে পড়তে পারবে। সেই দৈনিক ১টাকাও অনেকেই দিতে পারতো না।

সেই স্কুলে শিক্ষকতা করতো মনিকা। ব্যাক স্কুলের পাশাপাশি এই স্কুলে স্বেচ্ছাশ্রম। ভুল করেছিলো ওরা? কেনো কৃষক-শ্রমিকের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হবে, এটা কি ওদের বুঝা উচিত ছিল না? ওরা বোকা। এধরনের বোকামি খুব কম মানুষই করতে জানে। রা সিডরের পর এলাকায় গরীব চাষীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সহায়তায় ট্রাক্টরের ব্যবস্থা করেছিলো যেটা গরীব কৃষকরা ব্যবহার করতে পারবে।

গরীবদের জমির পরিমান এতোই ছোট যে আইলের কারনে ট্রাক্টর চালানো যেত না। সে তখন জমির আইল তুলে ফেলে ব্লক পদ্ধতি চালু করার জন্য কৃষকদের বুঝায় এবং কৃষকরা লাভের পরিমান দেখে রাজি হয়। এসব করা কি কোন সহজ মানুষে কাজ হতে পারে? 'এসব নিশ্চয় রাষ্ট্রদ্রোহীরাই করে'। আমরা সেই রাষ্ট্রদ্রোহীদের যেন চিনে রাখি। কোন কোন রাষ্ট্রদ্রোহী যে গরীব মানুষের বন্ধু হতে পারে সেটা যেন মনে রাখি।

রামের প্রতিটা কাজে বাধা দিয়েছে এলাকার চেয়ারম্যান। সবশেষ ২০০৮ এ বৈশাখকে সামনে রেখে এলাকায় মেলার ব্যবস্থা করেছিলো রাম। যেখানে নারীরাই মূল দায়িত্বে ছিলেন। এবং তারা তাদের কারুশিল্প দিয়ে দোকান খুলেছিলেন। সেখানেও চেয়ারম্যানের কু নজর।

তার সাঙ্গ পাঙ্গরা সেখানে জুয়ার আসর বসাতে চেয়েছিলো। সে নিয়ে বাক বিতণ্ডা। কিন্তু সেটাও রামের উচিত হয়নি। 'ছিঃ, গুরুজন না' জুয়া খেলার বয়স হয়েছে, খেলুক। বাধা দেয়ার তো কিছু হয়নি।

' মাত্র ৩০ বছরের রামের পক্ষে আরো কি কি করে ফেলা সম্ভব ছিলো!! আমরা যারা ত্রিশ পেরিয়েছি তারা কতোটুকুই বা করতে পেরেছি? ৯ মাসে তিজন বন্ধুকে জেল থেকে ছাড়াতে পারলাম না, নির্দোষকে নির্দোষ প্রমাণটুকু এই মুক্ত আমরা করতে পারলাম না। কিন্তু যারা কোন প্রমান ছাড়া এতোবড় অভিযোগে অভিযুক্ত করলো রাম-আনিস-মনিকাদের তাদের জন্য একটা কথা বলে রাখি। রাম এর আর আনিস এর এ আর মনিকার এম এক জায়গায় করলেও কিন্তু উচ্চারণ সেই রাম-ই হয়। সত্য কখনোই বেধে রাখা যায় না। যারা বেধে রাখতে চায় তারা সেটা যতো তাড়াতাড়ি অনুধাবন করতে পারেন, ততোই ভালো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।