আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের' নিরপরাধ' র‌্যাবের চোখে 'হত্যাকারী'

আমি কিছুই লিখব না।

চার নিরপরাধ যুবককে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে খুনে জড়িত থাকার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে র‌্যাব-৪ এর বিরুদ্ধে। মীরপুরের সা¤প্রতিক এক সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে র‌্যাবের হাতে আটক ওই চার ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর তারা এখন হাজতে আছেন। কিন্তু পুলিশের ধারণা তারা নিরপরাধ। পুলিশ ও র‌্যাবের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণে এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মামলার মূল আসামীদের গ্রেপ্তার করেছেন। তবে র‌্যাব আগেই তাদের সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির করায় তারা আর ঘটনাটি প্রকাশ করেননি। অন্যদিকে র‌্যাব দাবি করেছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৩ জুলাই রাজধানীর মীরপুরে খাসজমিতে গড়ে তোলা 'স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটে' সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে একজন নিহত ও আটজন আহত হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৪ জুলাই সাভারে যশোর থেকে ঢাকায় ফিরতি হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে নামিয়ে রফিকুল ইসলাম রনি, মনির হোসেন মোল্লা, শাহিন খান ও নজরুল ইসলাম নামের ৪ যুবককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পরদিন র‌্যাব-৪ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই চারজন 'স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটে' গুলিবর্ষণকারী পেশাদার খুনী। এরা আরো কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে জনপ্রতি এক লাখ টাকার বিনিময়ে গুলি করে একজনকে হত্যা ও কয়েকজনকে আহত করে। কিন্তু বুধবার ঢাকা ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) কার্যালয়ে গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম রনির বাবা ব্যবসায়ী হাফিজ উদ্দিন গাজী এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তার ছেলে রনি ও তিন কর্মচারীকে র‌্যাব মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। তিনি বলেন, রনি আদালতে তাকে জানিয়েছে, র‌্যাব সদস্যরা 'অমানুষিক নির্যাতন' করে তাকে দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে। রনি বলেছে, না দিলে তাকে ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখানো হয়।

হাফিজ উদ্দিন দাবি করেন, তার ছেলে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে কোনও থানায় মামলা বা জিডিও নেই। তিনি নিজে যাত্রাপালার ব্যবসা করেন জানিয়ে হাফিজ বলেন, ছেলে এতে তাকে সহায়তা করে। আটক অন্য তিনজন টিকেট বিক্রি করে। ১৩ জুলাই থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একমাসব্যাপী তাদের যাত্রা চলছে।

ঘটনার দিন ১৩ জুলাই ব্যবসার কাজে ছেলে ও অন্যরা তার সঙ্গে কলারোয়াতেই ছিলেন দাবি করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, তাদের পক্ষে ওই হত্যাকাণ্ডে কোনভাবেই সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব নয়। ছেলের মুক্তির জন্যে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব ও পুলিশ প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিশেষ করে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমনে গঠিত এলিট বাহিনী র‌্যাবের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে 'ক্রসফায়ারে দেওয়ার' ভয় দেখিয়ে সুবিধা আদায়ের অভিযোগ শোনা যায়। অপরাধ দমনে লক্ষ্যণীয় সাফল্যের পাশাপাশি 'ক্রসফায়ারের' নামে বিচার-বর্র্হির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য এ বাহিনী ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। র‌্যাবের বক্তব্য এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-৪ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্র্নেল এ কে এম শামসুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, র‌্যাব কর্মকর্তারা হত্যাকাণ্ডে ওই চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পরেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

কর্র্নেল শামসুদ্দিন বলেন, " তাদের সাথে তো আমাদের ব্যক্তিগত শত্র"তা নেই। তারা তো মিডিয়ার সামনেই অপরাধ স্বীকার করেছে। আমরা তো চাইলে তাদের অন্য মামলায় সাজিয়ে গ্রেপ্তার দেখাতে পারতাম বা অস্ত্র হাতে দিয়ে অস্ত্র উদ্ধার দেখাতে পারতাম। তা তো করিনি। পুলিশ কেন তাদের সম্পৃক্ততা খুজে পাচ্ছে না, তা তারাই বলতে পারবে।

" পুলিশের ভিন্নমত অন্যদিকে ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার দিনই শমসের নামের সন্দেহভাজন একজন ও পরে আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, এর মধ্যে একজন নিজের হাতেই সেদিন গুলি ছোঁড়ে বলে স্বীকার করেছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার চারজনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের কাছে হস্তান্তরের পরে তাদেরকেও রিমান্ডে নিয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে ঘটনাটির সাথে এখনো তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

" মামলার নথি অনুযায়ী, এই হত্যা মামলায় মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরা হলেন মাসুদ রানা, শহীদুল, শমসের, পনু বিহারী, রুবেল ও রুস্তুম। এদের মধ্যে মাসুদ রানা নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আরো কয়েকজন ডিবির সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, "শাহাদতের সহযোগী মনু লালমনিরহাটে বসে এই অপারেশন পরিচালনা করে। তার সূত্র ধরেই আমরা শাহাদতের সহযোগীদের ঢাকা, সাভার ও বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করি। " তিনি জানান, মাসুদ রানা আদালতে জবানবন্দিতে বলেছে ঘাতকদের মধ্যে সমন্বয় ও টাকা বন্টনের দায়িত্ব ছিল তার ওপর। পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘাতকদের গ্রেপ্তারের পরে তারা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময় 'হঠাৎ করে' র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে। "র‌্যাবের হস্তান্তর করা আসামীদের সাথে এই মামলার যে কি সম্পর্ক, তাই এখনো আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা।

শাহাদতের কোন হত্যাকাণ্ডে জনপ্রতি একলাখ করে টাকা দেওয়ার দৃষ্টান্তও নেই। আমাদের কাছে গ্রেপ্তারকৃত ঘাতকদের দেওয়া তথ্যে এদের সম্পর্কেও কোন উল্লেখ নেই", বলেন ওই কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই পুলিশ কর্মকর্তা জোর দিয়েই বলেন, "এরা যে কোনভাবেই এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয়, তাতে সন্দেহ নেই। " এই 'নির্দোষ' ব্যক্তিদের এখন কী হবে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন," মামলায় সম্পৃক্ততা না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই চার্জশিটে তাদের নাম আসবে না। সেক্ষেত্রে তারা খালাস পেয়ে যাবেন।

তবে চার্জশিট দাখিলে যতদিন লাগবে, ততদিন অযথা তাদের জেল খাটতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের করণীয় কিছু নেই। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.