আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাক্তন নিয়মিত ব্লগারের বর্তমান দিনলিপি

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

শরীর বলে ঘুমাও, মন বলে এটা কি ঘুমাবার পরিবেশ। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি বইছে। একটু আগে দেখলাম পাড়ার দোকানে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। জানালার পর্দা টেনে দিলাম, বৃষ্টির ফোটা থেকে আমার বিছানা বাঁচাতে। নিজে ভিজতে ভাল লাগে, কিন্তু ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায় ঘুমাতে একদম ভাল লাগে না।

সকালে দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। গতকাল অনেক পরিশ্রম গেল। রাতে বাসায় ফিরে বিছানায় পড়েই ঘুম, টানা ১০ ঘন্টা। আবার সাড়ে এগারটার মাঝে অফিস যাবার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আজ দুপুরে পরিবেশ ঠান্ডা ছিল।

কেন জানি না, মগবাজারের ফালতু রাস্তায় তেমন একটা জ্যামে আটকালাম না। অফিসে পৌছে ব্যাগ রাখবার আগেই কাজ শুরু। সাড়ে তিনটায় টি ব্রেকে বেড়িয়ে দেখি অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ে। তারপরও আমতলায় কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। অফিস তথা আমাদের ল্যাবের ভেতর দুনিয়াদারির খবর পাওয়া যায় না।

টেমপারেচার সবসময় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের চাপ এক এটমোসফিয়ার থেকে কম। ব্রেকগুলোতে আর কিছু না হলেও অন্তত আকাশ, বাতাস গাছ পালা দেখতে বের হই আমরা। আজ একটা এমারজেন্সি স্যাম্পল এসেছে। মেয়েটার বয়স বিশ, শ্বসনযন্ত্রের মারাত্বক কোন সমস্যার ভুগছে সে। তার কিছু আত্মীয় আবার ম্যারিকা হতে এসেছেন।

ডাক্তাররা সোয়াইন ফ্লু সন্দেহে আমাদের কাছে পাঠাল। বস বলল, মেয়েটার যা অবস্থা আমাদের রেজাল্ট দিবার আগেই নাকি টিকে থাকবার সম্ভবনা কম। আর রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ তাই মারাত্বক সংক্রামক কিছু থাকতে পারে। আমাদের বলা হত অতিরিক্ত সতর্ক হতে। আমি অন্য দিনের মতই নরমাল কাজ করলাম।

শালার মরলে এইডস, সিফিলিস, যক্ষ্মা বা ক্যান্সার জাতীয় রোগে মরব তুচ্ছ সর্দি জ্বরে মরলে পোষাবে না। মনে হয় না, আল্লাহ আমার প্রতি এত অবিবেচক হবে। এই নতুন স্যাম্পল নিয়ে কাজ করতে করতে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল। রোগীর কারেন্ট সিচুয়েশন আরো খারাপ যদিও মারা যায়নি এখনও। নয়টার দিকে রেজাল্ট দিলাম মেয়েটার সোয়াইন ফ্লু বা অন্য কোন ফ্লু হয় নি।

মেয়েটার সাপেক্ষে খবর ভাল। কিন্তু আমাদের সাপেক্ষে খবর তেমন কিছু না, বরং বিরক্তিকর। সোয়াইন ফ্লু হলে আমরা আহ্বালাদিত হতাম, প্রশংসিত হতাম। রেজাল্ট দেখা মাত্র খুশিতে বাগ বাগ হতাম। পৃথিবীটা এমনই, কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ।

নিরস গলায় জানালাম, নাহ্‌!! সোয়াইন নাই। যদি পজিটিভ হত, অন্য কারো খবর জানি না, আমি খুশিতে আটখানা হয়ে রেজাল্ট দিতাম। হয়ত আমার এই সরল স্বীকারোক্তি শুনে অনেকেই আমাকে ভয়ংকর মানসিকতার মনে করবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যারা কাজ করে তাদের এমনই হয়। মানুষের মাঝে নতুন ভাইরাসের উপস্থিতি আবিস্কার করে বিজ্ঞানী মানবজাতী নিয়ে সংকিত কখনই হয় না বরং নিজের নাম এই ভাইরাসের সাথে সবসময় যুক্ত থাকবে এই আনন্দে আটখানা হয়।

এটাই বাস্তবতা। তবে, সত্যিই কথা পাবলিকলি বলতে নেই, লোকে ভুল বোঝে। বরং অর্ধেক সত্য বা মিথ্যা বললেই লোকে ভাল ভাল কথা বলে। যাইহোক, প্রায় পোনে এগারটার দিকে বের হলাম। টিকেট কাউন্টার গুলো আগেই গায়েব।

এই বৃষ্টিতে আর লোকাল বাসে ঝুলাঝুলি করতে ইচ্ছা হল না। জুনিয়র কলিগ সহ নিলাম সিএনজি। সেই দুপুরে যেই রাস্তা দিয়ে সহজে অফিস পৌছালাম, সেই একই রাস্তার পয়েন্টে পয়েন্টে এই রাতে জ্যাম। ধীরে ধীরে বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তেই থাকল। শহুরে বৃষ্টির ঢংই আলাদা।

গ্রামে টিনের চালে বৃষ্টির ছন্দের যে রুপ, কবি সাহিত্যকরা মনোযোগ দিলে শহরে রাস্তায় বৃষ্টিকেও একই মর্যাদা দেওয়া সম্ভব হত। পিচ ঢালা রাস্তা পানির ফোটা পেছনের গাড়ির লাইটের আলোতে অন্যরকম একটা রূপ নেয়। সাদা টিউব লাইটের বিপরীতে বৃষ্টির ধারা আর রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আভায় পানির ফো|টা দুটোই অন্যরকম। আর চলন্তু গাড়িতে বসে দেখা যায় বৃষ্টি ধারা এক একবার এক দিক নেয়। সিএনজির ভেতর হালকা হালকা পানির ছিটা যখন গায়ে লাগে সেটার অন্যরকম একটা আবেদন আছে।

আবেদন না থাকলেও বানিয়ে নিতে হবে। আমরা শহরের মানুষ ইচ্ছে হলেও তো আর কবিতার প্রকৃতির মাঝে যেতে পারি না। প্রকৃতি যতটুকু আমাদের কাছে আসে ততটুকুকেই ভাষার রঙ লাগিয়ে বিশাল করে নিতে হবে। গলির মুখে এসে দেখি পাড়ার গলি ভেনিসের রাস্তা হয়ে গেছে। শালার সিএনজি ড্রাইভার বলে তার ইঞ্জিনের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাবে, সে ভিতরে যেতে পারবে না।

আরে পানিতে জুতাই ভিজাব তো তোরে কেন বিশটাকা বেশি দিব। বলে আপনারে রিক্সা ঠিক করে দেই আপনি গলির ভিতরে যান, আমি যামু না। কিন্তু কেমনে দিবে রিক্সা ঠিক করে রিক্সাতো আগেই গলির মুখে ঢোকা ছেড়ে দিয়েছে। অগ্যতা তার আগাতেই হল। রাস্তায় পানি আছে কিন্তু এত নাই যে সিএনজির ইঞ্জিন থামিয়ে দেবে।

ততটুকু পানি উঠতে আরো ক্ষানিক্ষন বৃষ্টি হতে হবে। আমি এক যুগ ধরে এই এলাকায় থাকি, এতটুকু বুঝব না! আওয়ামী লীগ বিএনপি মিলে বিভিন্ন আমলে এই গলি এক হাত করে উঁচু করল। কিন্তু ফলাফল কিছু দেখলাম না। হয়ত এক হাত কেটে আবার এক হাত উঁচু করে। ইঞ্জিনিয়ারদের ব্রেনের প্রশংসা করতে হয়।

বাসায় ফিরতেই ধরা খেলাম। বাবার মোবাইল নষ্ট। অফিসের এক বড় ভাইয়ের মেঝ ভাইয়ের মোবাইলের দোকান আছে এলিফেন্ট রোডে। তাকে দিলে সারিয়ে এনে দিবে। এত কাজের মাঝে ভুলেই গেছি।

বাবা বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা নিয়ে নিল, কালকে বসুন্ধরা সিটিতে নিয়ে যাবে। সেখানে নাকি এরিকসনের সার্ভিস সেন্টার আছে। ফ্রেস হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আজকে ঢেঁড়শ দিয়ে কি রান্না হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বাসায় যাই রাধে ঢেঁড়শ সহই রাধে। মাছে ঢেঁড়শ, ডিমে ঢেঁরশ, ভাজি ঢেড়ঁশের খালি ঢেরশ আর ঢেরশ।

জানতে পারলাম আজকে বরবটি দিয়ে বেলে মাছ রান্না হয়েছে। হয়ত এই শুরু হল বরবটির সাইকেল। আমার আবার নিজের হাতে খাওয়া হয় কম। সকালেও মা নিজ হাতে খাইয়ে দেয়, রাতেও একই। নইলে, ক্লান্তিতে হয়ত খাওয়াই হত না।

অবশেষে চান্স পেলাম, কিছু সময় নিজের জন্য। মানে ইন্টারনেটে ঢুকে ব্লগ, ফেসবুকে ঢুঁ দেওয়ার। অফিস ওয়ালারা মনে করে নিয়মিত মেইল চেক, রিসার্চ পেপার খোজা আর পড়া ছাড়া গবেষণা কর্মকর্তার কোন কাজ নাই। শালারা ফেসবুকও ফিল্টার করেরেখেছে। ব্লগারদের কাছ হত প্রক্সি সাইটের খবর নিয়েছি, কালকে ঢুকব ইনশাল্লাহ্‌।

প্রতিদিন ঘরে ফিরে ব্লগে ঢুকি সব পোস্ট দেখি। লিখবার কত কিছু মাথায় কিন্তু সময় পাই না। চিন্তা ভাবনা ছাড়া হাবি জাবি লিখে গেলাম আজকে। জানালা দিয়ে তাকালেই মনটা উড়তে ইচ্ছে করছে। সেই সুযোগ আর কোথায়, তবে আজ কিছু লিখতে না পারলে ভাল লাগত না।

ব্যস্ততার মাঝে এক বান্ধবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারি নি। সকালে চিঠি (মেইল) করেছিলাম। রাতে কাজের ফাকে একটা এসএমএসও করেছিলাম। কিন্তু ফোন করা হয়ে উঠল না। যাইহোক, এতটুকু করবার সময় আছে, তাতেই শুকরিয়া।

এখন ঘুমাতে হবে। কালকে সকালে টিএসসিতে যাব। দুই বছর আগের সেই অনার্স রেজাল্টের উপর ডিন্‌স এওয়ার্ড দিবে মাননীয় উপাচার্য ও অনুষদ প্রধান। কার্ডে বাবা-মায়ের জন্যও একটা নিমন্ত্রন পত্র ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভাবতাম, সিনিয়রদের মত এওয়ার্ড নিতে আমিও বাবা মাকে নিয়ে যাব।

বিশ্ববিদ্যালয়টার কিছু মানুষ মনটা এতটাই ভেঙ্গে দিয়েছে যে, সেই আগ্রহ আর নাই। বাবা মাকে জানানোও হয় নাই। সিভিতে লিখব এওয়ার্ডের কথা তাই নিতে যাওয়া সার্টিফিকেটটা। অনেক প্যাচাল পাড়লাম। সবাইকে শুভরাত্রী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.