আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম জয়



বিজয়ের আনন্দ সবসময়ই মধুর। আর সেটি প্রথম হলে অন্য রকম একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে মনের গভীরে। একদিনের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নিয়ে নিশ্চয় রোমাঞ্চিত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। রোববার ডমিনিকায় স্বাগতিকদের ৫২ রানে হারিয়ে রেকর্ডের স্বাদ নিলো টাইগাররা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান করে বাংলাদেশ।

জবাবে ১৯৪ রানে অল-আউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিক দলের ব্যাটিংয়ের শুরু নিয়ে বলার মত তেমন কিছুই নেই। বরং ৪২ রানে বাংলাদেশের বোলাররা চার উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই চাপে ফেলে। রিচার্ড ১, ফ্লেচার ৫, রেইফার ৩ ও ট্রাভিস ডাওলিন ১০ রানে আউট হন। যদিও পঞ্চম জুটিতে বিপর্যয় কাটিয়ে পাল্লা দিয়ে রান তোলেন ডেভন স্মিথ ও ডেভিড বার্নাড।

জুটি ভাঙ্গার আগে ৭৮ রান যোগ করেন তারা। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ব্যক্তিগত ৬৫ রানে সাজঘরে ফেরেন ডেভন স্মিথ। একদিনের ক্রিকেটে এটি তার তৃতীয় অর্ধ শতক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তখন ১২০। এই দুই ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার পর ম্যাচের নিয়েন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে।

ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ১৩০ রানে। নাঈম ইসলামের বলে ৩৮ রানে তামিমের হাতে ক্যাচ দেন ডেভিড বার্নাড। সপ্তম উইকেট জুটিতেও কিছুটা রান আসে। সামির ২৮ ও লুইসের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ১৯৪ রান করে স্বাগতিক দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে ধস নামাতে স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের অবদান সবচেয়ে বেশি।

৯ ওভার চার বলে ৩৯ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার। বোলিং অ্যাকশন শুধরে প্রায় আটমাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজসিক ফেরাই বলা চলে রাজ্জাকের। বাকি ছয় উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ছয় বোলার। এর আগে আশরাফুল ও সাকিবের হাফ সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান তোলে বাংলাদেশ। ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কের পেস বোলিং-এর সুবিধা নেওয়ার জন্য টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ওয়েস্ট ই্িন্ডজ।

দিনের প্রথম বলেই তামিমকে ফিরিয়ে দেন পেসার কেমার রোচ। অফস্ট্যাম্প বরাবর ফুল লেন্থের বল মারতে গেলে ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেট কিপারের হাতে। কিন্তু পরের জুটিতে পরিস্থিতি সামলে নেন আশরাফুল ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। দলকে ৭৪ রানের শক্ত ভিতে পৌঁছে দিয়ে ফিরে যান জুনায়েদ। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে বার্নাডের বলে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়ে মিড-অনে ধরা পড়েন বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান।

রকিবুল এসে সুবিধা করতে না পারলেও আশরাফুল তখনো উইকেট আগলে রেখে বড় ইনিংস গড়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখেন। ব্যক্তিগত ১২ রানে রকিবকে সরাসরি বোল্ড করেন কেমার রোচ। টেস্টের ব্যর্থতা কটিয়ে আশরাফুল ৫৭ রান করেন ৯৫ বলে। রান আউট হওয়ার আগে লিটল জিনিয়াস দলকে রেখে যান ১২৮ রানে। এটি তার ১৭তম অর্ধ শতক।

সাত ম্যাচ পর একটি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন আশরাফুল। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিাকার বিপক্ষে ৭৩ রান করেছিলেন পচেফস্ট্রমে গত বছর নভেম্বরে। ইনিংসের পরের অংশে অধিনায়ক সাকিব আর মাহমুদুল্লার প্রশংসা করা ছাড়া বলার তেমন কিছু নেই। নেতার ভূমিকায় সাকিব দিয়েছেন দায়িত্বশীলতার পরিচয়। দলের সংগ্রহে তার অবদান ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ রান।

৬০ বলে তিনটি চার মেরে নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটি তার একাদশ অর্ধ শতক। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই বা কম কিসে। ৩৯ বলে ৪২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে রানের গতি বাড়িয়েছেন। বাংলাদেশকে ২৪৬ রানে আটকে রাখতে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি পেসার কেমার রোচ।

১০ ওভার বল করে ৩৩ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডমিনিকার উইন্ডসর পার্ক স্টেডিয়ামের অভিষেক নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে। কারণ স্বাগতিকদেরই হারিয়েই সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। অথচ উইন্ডিজ কোচ জন ডাইসন এবং কিউরেটর রিচার্ডস লেটং ম্যাচের আগের দিন (শনিবার) বলেছিলেন সিমিং উইকেট তৈরি করা হয়েছে উইন্ডসর পার্কে। তারা বলেন, স্বাগতিক পেসারদের তোপের মুখে পিচে গড়াগড়ি খাবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

কেমার রোচের বোলিং সাফল্য দেখলে ডমিনিকার উইকেটকে হয়তো অনেকেই স্বীকৃতি দেবেন সিমারদের পিচ হিসেবেই। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিনাররা উল্টোটাই প্রমাণ করেছেন। স্লো এবং স্পিন সহায়ক পিচই ছিল উইন্ডসরে। শুধু ম্যাচের প্রথম ঘন্টায় যা সুবিধা পেয়েছেন পেসাররা। সব চেয়ে বড় কথা, যথাসময়ে সাকিবের সিদ্ধান্তগুলো বেশ কাজে দিয়েছে।

যখন যাকে দিয়ে বল করালে দল উপকৃত হবে বাংলাদেশ অধিনায়ক বল তুলে দিয়েছেন সেই বোলারেরই হাতে। বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রতিটি বোলারই দলের জয়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্ব না দিলে তাদের অবশ্যই ছোট করা হবে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২৪৬/৯ (মোহাম্মদ আশরাফুল ৫৭, সাকিব আল হাসান ৫৪, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪২, জুনায়েদ সিদ্দিকী ৩৬, কেমার রোচ ৪৪/৫) ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯৪/১০ (ডেভন স্মিথ ৬৫, ডেভিড বার্নাড ৩৮, আব্দুর রাজ্জাক ৩৬/৪ সূত্র


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।