আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীর জন্য কর্মক্ষেত্র -একটি Universal প্রশ্ন



সম্প্রতি জার্মানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনার রিপোর্টে লেখা হয়, ছাত্রীদের তিন চতুর্থাংশই তাদের পড়ালেখা শেষে বাচ্চা নিতে চায়। ৭০ ভাগই পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তান বা পার্টনারকে সময় ও ভালবাসা দিতে এবং দেখাশোনা করতে ইচ্ছুক। গবেষনার শেষে বলা হচ্ছে, কিন্তু জীবনের বাস্তবতা অন্যরকম। বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ একাডেমিশিয়ান কেই সন্তানহীন জীবন যাপন করতে হয়। পশ্চিমা দেশ গুলোতে বড় ছোট সকল প্রতিষ্ঠানগুলো লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর চেয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে নারীর যোগ্যতা বেশী হলেও।

কারনটা হচ্ছে, নারীদের সন্তান ধারনের প্রয়োজনে যে কোন সময়েই কাজ ছেড়ে দেওয়া বা ছুটি নেবার সম্ভবনা থাকে। তাছাড়া এসব দেশে বাচ্চাকে বেবি সিটার অথবা কিন্ডার ক্রিপে রাখাও অনেক ব্যয়বহুল, যা তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। (আর তাদের সিঙ্গেল মা হবার সমস্যা তো রয়েছেই। ) কিন্তু ইসলাম ও পারিবারিক বন্ধনের সংস্কৃতিতে রেড়ে ওঠা নারীদের জন্য সমস্যা শুধু এসবই নয়। সন্তানের অধিকার, মাতৃত্বের কর্তব্য, সর্বোপরী মাতৃ হৃদয়ের অপত্য স্নেহ নারীর ক্যারিয়ার গঠন কে থামিয়ে দিচ্ছে মাঝপথে।

নারীর বিভিন্ন অবস্থা: ১. যে নারী ছাত্রজীবনে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে, পরবর্তীতে নিজের যোগ্যতার সবটুকু কে জীবন থেকে মুছে ফেলে পালন করতে হচ্ছে শুধুই গৃহিনীর কাজ়ে ২. ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে বিয়ের অনেক দিন পরও সন্তান গ্রহনের পরিকল্পনা নিতে অসমর্থ ৩. পিতা মাতা বা কাজের লোকদের উপরে সন্তানের দায়ভার ছেড়ে ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগী ৪. উন্নত বিশ্বে প্রতিটি মাকে ন্যূনতম ৪-৫ বছর একজন সন্তান লালনের প্রয়োজনে ঘরে থাকতে হচ্ছে। একারনে সৃষ্টি হচ্ছে সন্তান গ্রহনে চরম অনিহা ৫. যারা শুধুই গৃহিনী- তাদের মধ্যে হতাশা ভর করছে। আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী না হতে পেরে আত্মসম্মানে আঘাত হানছে ৬. ক্যারিয়ার ধরে রাখছে যারা, তাদের সন্তান গ্রহনে বিলম্ব হছে। ক্যারিয়ারকে মোটামুটি গুছিয়ে নিয়ে সন্তান গ্রহন করার উদ্যোগ নিতে ন্যূনতম ৩০ বছর বয়স এসে যায়। medical science যে বয়সটাকে ঝুকিপূর্ন মাতৃত্ব বা ( high risk mother) হবার উল্লেখযোগ্য কারন বলে গন্য করছে ৭. প্রথম বাচ্চাটি ৩০ এ নেওয়া সম্ভব হলেও পরবর্তীতে পূনরায় ক্যারিয়ার ধরে রাখা এবং প্রথম বাচ্চার শারীরিক সুস্থ্যতা ও দেখাশোনার কথা ভেবে দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়া আর হয়ে ওঠেনা অনেকক্ষেত্রেই।

বেশী বয়সের কারনে ও working mother হবার কারনে দ্বিতীয় বেবিটি নেওয়া মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ন। আর তা না নেওয়াটা শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক, পিতা মাতার কম সাহচর্য, দ্বিতীয়ত ভাই বোন তথা খেলার সাথীর অভাব শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। শিশুর মধ্যে একগুয়েমী, জেদ,প্রচন্ড রাগ, খাদ্য গ্রহনে অনিহা ইত্যাদি নানা উপসর্গ যা একসময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ৮. সন্তান পালনে নিম্ন শ্রেনীর (কাজের মেয়ে/ছেলে) লোকদের শরনাপন্ন হওয়া, যা সন্তানের যথোপযুক্ত শিক্ষা ও আচরন তৈরীর প্রতিবন্ধক।

তাছাড়া মাতা পিতার সাথে কম ভাব আদান প্রদানের ফলে সন্তানের সাথে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, এমনকি পরিনতিতে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়া ও বখাটেপনারও জম্ন দিচ্ছে। এসব কারনে একজন ক্যারিয়ার সম্পন্ন মা আর্থিক ভাবে পরনির্ভরশীলতার গ্লানি থেকে মুক্তি এবং নিজ যোগ্যতা বিকাশের পরিতৃপ্তি পেলেও হৃদয়ে থেকে যাচ্ছে এক প্রচন্ড হাহাকার। অপরদিকে যারা সম্পূর্ন ভাবে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিচ্ছে তাদের কিছু না করতে পারার হতাশা তো রয়েছেই। সমাধান কোন পথে? পৃথীবিকে এগিয়ে নিতে নারীর অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহন যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি সমস্ত বিশ্ব আজ সুখী সমৃদ্ধ বিশ্ব-গঠনের জন্য মাতৃত্বের ভূমিকাকে অনুধাবন করতে শুরু করেছে চরম ভাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর বেশীর ভাগই এখন কর্মজীবি মায়েদের পূর্ন বেতন সহ পুরো এক বছরের মাতৃকালীন ছুটি নির্দিষ্ট করেছে।

এটাকে আরো বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা চলছে । মায়েদের সন্তান গ্রহনকে খুব বেশি সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে। সন্তান গ্রহনের পর parents money, child money নামে বিভিন্ন ভাতা দিয়ে উতসাহিত করা হচ্ছে মায়েদের। এমনকি স্বাভাবিক অবস্থায় আয়ের একটা বিরাট অংশ ট্যাক্স পরিশোধে দিতে হলে ও যারা অধিক সন্তান নিচ্ছে তাদের জন্য ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া হচ্ছে। জার্মানীতে ৫ টি বাচ্চার পিতা মাতা কে কোন ট্যাক্স তো দিতে হয় না, উপরুন্ত kinder geld( child money ) তো পাচ্ছেনই।

কারন বিশ্বের চিন্তাশীল মস্তিস্ক গুলো আজ বুঝেছে বংশ রক্ষা এবং মাতৃত্বের দ্বায়িত্ব পালন ব্যতিরেকে শুধুমাত্র নারীর অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহন একটি সুন্দর আগামী উপহার দিতে পারে না। যার চরম মূল্য ইতিমধ্যে দিতে হচ্ছে পশিমা দেশ গুলোকে। বয়স্ক লোকদের হার বেড়ে গেছে, শিশু কিশোরদের হার কমে গিয়েছে আশঙ্কাজনক ভাবে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই কর্মক্ষম মানুষের হার নেমে আসবে জিরোর কোঠায়। এর মধ্যেই বৃদ্ধ আর অক্ষম ভাতা দিতে গিয়ে হিমিশিম খাচ্ছে সরকার গুলো।

উন্নত দেশগুলো কি ভাবে নারীর কর্তব্য ও যোগ্যতার এই দ্বিমূখী ভুমিকাকে কাজে লাগানো সম্ভন তার জন্য খুজে চলেছে সমাধানের পথ। তারা ও ভাবছেন নারীদের জন্য সহজ কর্মক্ষেত্রের কথা, A lack of adaptable care of children and not family-friendly working hours are the reason for women in the administrative district to choose long family phases... পুরুষের সাথে নারীর কর্মকে সমান তুলাদন্ডে বিবেচনা না করে, বরং নারীদের পৃথক, সহজসাধ্য, এবং কম সময় ব্যাপী কর্মক্ষেত্রের আজ বড় প্রয়োজন। যেখানে নারীর এই অংশগ্রহনকে দেখা হবে সম্মানের চোখে। নারী পাবে তার অর্থনৈতিক অধিকার, যোগ্যতা বিকাশের সুযোগ। সমাজ একই সঙ্গে পাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহন এবং সুন্দর আগামী গঠনের একমাত্র হাতিয়ার মায়ের ভুমিকা।

(সংকলিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।