আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যান্ত্রিক নগরের যান্ত্রিক মানুষগুলো........



জাপান নিঃসন্দেহে পৃথিবীর উন্নত দেশ সমুহের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। কাজ প্রিয় জাপানের মানুষ গুলো যন্ত্রের মত নিজেরাও যন্ত্রিক হয়ে গেছে। তদের জীবনে যন্ত্রিকতা পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। জাপানের রাজধানি টোকিয়ো শহরে আমার নিবাস। জাপানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা জাপানের এই যন্ত্রিক পরিবেশে খুব কষ্ট করে টিকে আছে।

এখানে নেই বিনোদনের ভাল কোন মাধ্যম। আমরা বাঙ্গালী আমাদের নিজেস্ব কিছু আচার অনুষ্ঠান আছে। যেমন বাংলাদেশের মানুষ একজন অন্য জনের প্রতি খুবই আন্তরিক। কিন্তু এখানে পাশাপাশি বাসা কিংবা পাশাপাশি বাড়িতে একজনের সাথে অন্য জনের কোন যোগাযোগ হয় না। কথা হয় না।

এখানে সবাই ব্যাস্ত নিজেকে নিয়ে। কিন্তু আমরা{বাংলাদেশিরা} তো কোনদিন এমন তা করিনি। যাইহোক এর মধ্যেই আমরা বেচেঁ আছি। এখনে সময় নষ্ট করার মত সময় পাওয়া যায় না। আমার একদিন সকাল থেকে রাত অব্দি কিভাবে কাটে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

আমি জাপানে একটা স্কুলে পড়াশুনা করছি। আমার স্কুল সকাল ৯ টায় শুরু হয়ে ১২টা৩০মিনিটে শেষ হয়। তাই আমাকে সকাল ৮ টায় রওনা করতে হয়। ঘুম থেকে উঠি ৭টা ৩০ মিনিটে। প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে ৮ টায় বাসা থেকে বের হতে হয়।

বাসা থেকে ষ্টেশনে যেতে ১০ মিনিট হাটতে হয়। অনেক সময় একটু দেরি হয়ে গেলে দৌড়তে হয়। রাস্তায় দেখা যায় ছেলে মেয়ে সবাই দৌড়াচ্ছে। যেন কোন দৌড় প্রতিযোগিতা। এবার ষ্টেশনে একসাথে এতো মানুষ দেখলে গুলিস্তানের ভিড় এর কথা মনে পড়ে যায়।

আর ট্রেনের মধ্যে এতো ভিড় যা কিনা বাংলাদেশের লোকাল বাস, ৭ নাম্বার কিংবা১২ নাম্বার কেও হার মানায়। প্রতিদিন সকাল বিকাল একই রকম অবস্থা। যাইহোক কোন রকমে যুদ্ব করে উঠতে পারলেই হল। ট্রেনে ৩০ মিনিট তারপর আবার ১৫ মিনিট হাটতে হয়। একটা মজার বিষয় কি জানেন? জাপানে কোন রিক্সা নেই, অথচ তারাই রিক্সা আবিস্কার করেছিল।

আরএকটা জিনিস সবচে ভাল লাগে তাহল ছেলে মেয়ে সবাই সাইকেল চড়ে। একদিন দেখি ৮০/৯০ বছর বয়সের এক বৃদ্ব যিনি ঠিকমতন হাটতে পারেন না তিনি সাইকেল চালিয়ে বাড়ি চলে গেলেন। আমাদের দেশে যদি রিক্সা বন্ধ করে সাইকেল চালানোর প্রচলন হতো তাহলে বড় শহরের যানযট কমে যেত বলে মনে হয়। যে কথা বলছিলাম ক্লাশ শুরু সকাল ৯ টায়। ৯ টা ১ মিনিটে গেলে এক ঘন্টা দেরী লেখা হবে।

এভাবে ৪ ঘন্টা দেরী হলে এক দিন অন উপস্তিত দেখানো হবে। এভাবে কেউ যদি মাসে শতকরা ৯০ ভাগ উপস্তিত না থাকে তাহলে তার জন্য জবাবদিহিতা করতে হয়। স্কুল শেষে কাজে যেতে হয়। এর মধ্যে সময় পেলে খাওয়া হয় না হলে হয় না। কাজেও একই নিয়ম।

ঠিক সময়ে যেতে হয়। কাজ সবসমই কষ্টের হয়। কিন্তু জাপানের কাজ যে কতটা কষ্টের তা কেউ ভাবতেও পারবেন না। কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত১/১;৩০ বাজে। তারপর বাসায় এসে রান্নাকরে খেয়ে ঘুমাতে যাতে হয়।

এর মাঝেই পড়াশোনা, দেশে কথা বলা আরও অন্যান্য কাজ করতে হয়। এভাবেই কাটচে আমাদের দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, তারপর বছর,.. এই যান্ত্রিক জীবনে জাপানের মানুষ অভ্যস্ত, কিন্তু আমরা.......................... আমাদের পক্ষে এই যান্ত্রিক জীবনের সাথে পাল্লাদিয়ে কত দিন বেচেঁ থাকা সম্ভব। তবুও চেষ্টা চলছে অন্তত বেচেঁ থাকার জন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।