আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি খুনের অপমৃত্যু...



জমাট অন্ধকারে অনেকটা ভেসে ভেসে এগিয়ে চলেন পয়তাল্লিশ বছরের শামসুদ্দিন। ভাপানো উষ্ণতা আর দীর্ঘপথ পেরোনো ধকলে তিনি ঘেমে ওঠেন। তার কোঁচকানো পাঞ্জাবী এবং ভেতরকার হাতাকাটা গেঞ্জি লবনপানিতে জবুথবু। থোকা থোকা অন্ধকার হাতড়ে তিনি কাঙ্খিত অনেকটা পথ চলে এসেছেন। ঘাসের মখমল বিছানো মেঠোপথ এড়িয়ে ঘুরপথে তিনি যে জায়গাটিতে যেতে চাচ্ছেন সেটি এখান থেকে দেখা যায়।

সাকুল্যে মিনিট পাচেঁক বা তারও কম হেটে যাবার পথ। শামসুদ্দিন তবু এইখানে, ঝোপজঙ্গলের মধ্যে একটা বয়সী আম গাছের শরীর স্পর্শ করে ঠায় দাড়িয়ে পড়েন। মাইল পেরোনো মধ্যবয়সী লোকটি এই প্রথম ক্লান্তবোধ করছেন। তিনি হাঁ করে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছেন। তার নিঃশ্বাসের শোঁ শোঁ শব্দ গাঢ় অন্ধকারের প্রাচীর ডিঙিয়ে ঘাই খায় আশপাশের আম-কাঠাল-নারকেল গাছ সমেত নির্জন বাগান বাড়ীতে।

অত:পর হারিয়ে যায় দূরে...। শামসুদ্দিন ধীরে ধীরে বসে, পরনের লুঙ্গিতে মুখ মোছেন। আতংকগ্রস্থ মানুষের মত একবার পিছনে তাকিয়ে খুব সতর্কভাবে মাজায় হাত বোলান। জিনিসটা ঠিকমত আছে তো ! বড় একদল গরম বাতাস মুখ দিয়ে চালান করে তিনি আশ্বস্ত হন, জিনিসটা পিঠের সাথে একেবারে লেপ্টে আছে। শামসুদ্দিনের নিশ্বাসের গতি পুনরায় বেড়ে যায়।

অস্থির হয়ে ওঠে শরীর মন সবকিছু। আবারও দাড়িয়ে, নিজের পাতলা শরীর গাছের আড়ালে সাধ্যমত ঢেকে রেখে বড় বড় চোখে সামনে তাকান শামসুদ্দিন। মনোযোগ আর সতর্কতার পুরোটা ঢেলে শামসুদ্দিন আন্দাজ করবার চেষ্টা করেন হলুদ আলো জ্বলা ঘরটার মধ্যে এখন কয়টি প্রাণীর অবস্থান। জায়গাটা খানিক দূরে হওয়ায় বোঝা যায় না কিছুই। তিনি আরও কিছুটা এগিয়ে যান।

শুকনো ডালপাতা পায়ের মসৃণ অংশের আঘাতে খস্খস্ শব্দ তোলে বাতাসে। যে শব্দে নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে ওঠে গাঢ়ো অন্ধকার। শামসুদ্দিন আলো জ্বলা ঘরটার কাছাকাছি আসতেই সতর্কতার মাত্রাটা খানিক বাড়িয়ে দেন। বাগানের মধ্যস্থিত গাঢ় অন্ধকার এখানে কিছুটা তরল। শেওলা জড়ানো ঘরটার মধ্যে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে।

সে আলোয় চারপাশের অনেকটা আলোকিত। শামসুদ্দিনের নিজেকে আড়ালের প্রচেষ্টা এবার কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয়। লুকাবার উপযুক্ত স্থান খোঁজায় ব্যস্ত শামসুদ্দিন সেকেন্ড সেকেন্ড অস্থিরতায় ভূগে পেয়ে যান একটা ঝোপ। উবু হয়ে ঝোপের আড়ালে ঢেকে ফেলেন শরীর। প্রকান্ড শিমুলগাছের নিচে টিনের ছাউনী আর কাঠের দেয়ালের ছোট্ট ঘরের আশেপাশে কোন ঘরবাড়ি নেই।

লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াতে মানুষ্য বিশেষ প্রাণীর আনাগোনা এদিকটায় কম। বিশেষ প্রয়োজন না হলে লোকজন এদিকটায় আসে না। শামসুদ্দিনও কোন কারণ ছাড়া ক্রমশ গভীর হওয়া রাতে এদিকটায় আসেন নাই ! পোকামাকড় আর মশার কামড় সহ্য করে শামসুদ্দিনের এখানে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকার বড়সড় একটা কারণ আছে। ক্রমেই নিস্তেজ হতে থাকা ধোয়া ধোয়া আলোয় শামসুদ্দিন মাথা তুলে ক্লাবঘরের দরজার দিকে তাকান। দেখবার চেষ্টা করেন সে এসেছে কি না।

হাসিঠাট্টারত তিন চারজন ছেলেকে দেখা যায়, যাদের বয়স পচিশ অথবা ত্রিশের মাঝে হাসঁ-ফাসঁ করে। তাদের মধ্যস্থিত একজন, যার পরনে কালো শার্ট আর সাদা চেক লুঙ্গি, যে একপার্ট খোলা দরজার সামনা সামনি বসেছে এবং অনবরত কারণে অকারনে হাসছে, তাকে দেখে শামসুদ্দিনের বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে ওঠে। মাথাটা চক্কর খেয়ে ঘুরতে থাকে। অপেক্ষমান চোখজোড়া মাথাসহ তড়িৎ নামিয়ে নিয়ে বসে পড়েন শামসুদ্দিন। ...অবিকল সেই হাসি।

একদম হুবহু ! শামসুদ্দিনের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে জ্যামিতিক হারে। ফাল্গুনের শুরুতে খুব নরম শীত শীত একটা ভাব, তবু তিনি ঘামতে থাকেন আর শরীরময় তেলচিটচিটে ভাবটা পুনরায় ফিরে আসতে শুরু করে। ভেতরকার প্রতিশোধের নেশাটা বড্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ! হ্যা, শামসুদ্দিন এই অন্ধকার রাতে পাগলের মত ছুটতে ছুটতে এখানে এসেছেন একটা প্রতিশোধ নিতে। বিচারের দায়িত্ব মানুষ নিজ হাতে তুলে নেয় তখন, যখন নিরুপায় হয়ে যায়। নিরুপায়, অসহায়, নির্যাতিত... এরকম সবগুলো বিশেষণে তাকে বিশেষায়িত করা যায়।

শামসুদ্দিনকে এখানে আসতে হতো না। এভাবে রাত বাড়বার জন্য অপেক্ষায় অস্থির হতে হতো না, যদি না পরপর অমন দুটি ঘটনা না ঘটত ! অবশ্য বিচার করনেওয়ালা মাতব্বরেরা যদি বিশেষ কারনে নৈ:শব্দ পালন না করতেন তাহলেও বোধহয় শামসুদ্দিনের প্রতিশোধের ¯পৃহাটা এমনভাবে জ্বলজ্বল করতো না। বোধহয় বলছি এজন্যেই যে শামসুদ্দিনকে যারা চেনে তারা জানে সে কতটা নিরীহ জীবনযাপন করে। কিন্তু কেউই যেহেতু এতা বড় ঘটনার জন্য কিছুই করলেন না, হচ্ছে-হবে ব্যস্ত ক্যান বলে এড়িয়ে গেলেন তখন শামসুদ্দিনকে এখানে আসতেই হলো। বলা যায় তার ভেতরকার একগুচ্ছ তীব্র ঘৃনা আর প্রতিশোধবোধ তাকে এখানে নিয়ে আসতে বাধ্য করল ! মনের মধ্যে ডুবন্ত শোক আর প্রতিশোধের উত্তেজনাকে একত্রে পুষে রেখে অপেক্ষা করাটা দারুন কষ্টের, যন্ত্রনারও।

শামসুদ্দিনের কষ্ট এবং যন্ত্রনা দু’টোই হচ্ছে। তবু ঠিক এই মুূহুর্তে কিছু করবার নেই। তাকে অপেক্ষা করতেই হবে। যতক্ষন না ক্লাবঘরের আলো নিভে যায় এবং অনবরত হাসতে থাকা ছেলেটি যার নাম ছাব্বির, সে একাকী বাগান বাড়ীর পথ ধরে ফিরতে থাকে। শামসুদ্দিন দীর্ঘসময় বসে থাকার ঝক্কি সামলাতে বিঘেতখানেক স্থান পরিবর্তন করে নড়ে চড়ে বসেন।

মাজার সাথে লেপ্টে থাকা জিনিসটা তাকে যন্ত্রনায় ফেলেছে। গুটিসুটি মেরে বসে থাকায় ধাতব জিনিসটা ঠোকাঠুকি খাচ্ছে শরীরে। বিরক্তি মেশানো অনুভতিতে শামসুদ্দিন আস্তে ধীরে জিনিসটা বার করে আনেন। অন্ধকার রাতে ক্লাবঘরের হালকা আলোয় শামসুদ্দিন জিনিসটার দিকে তাকান। অন্ধকার ভেদ করে রুপালী ধারালো অংশটা অহংকারে চিকচিক করে ওঠে।

তিনি তাতে আঙুলের স্পর্শ বোলান। ...যাক, আধঘন্টা বালি দিয়ে ঘষবার পর শেষ পর্যন্ত এক কোপে কারো ধড় থেকে মাথাটা আলাদা করবার একটা মোক্ষম অস্ত্র তৈরী হয়েছে! শামসুদ্দিন কিছুটা আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। ছাব্বিরের ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার এমনতর ভয়ানক পরিকল্পনা শামসুদ্দিন করেছেন মাত্র ঘন্টাতিনেক আগে। যখন ঘরে ফিরে দেখলেন আমগাছের শক্ত ডালের সাথে গলায় সবুজ ওড়না পেচানো তার রুপবতী মেয়েটির লাশ ক্রমশ: বা থেকে ডানে আবার ডান থেকে বায়ে ছন্দময় গতিতে ঘুরছে। এদৃশ্য যেকোন বাবার জন্য না সইতে পারার মত কষ্টের।

শামসুদ্দিনও কষ্ট পেয়েছেন। ভয়ানক কষ্ট। কেদেঁছেন। বিলাপ করেছেন। তারপর রান্নাঘর থেকে বড় এক দা বের করে দীর্ঘক্ষন শান দিয়ে রওনা দিয়েছেন ক্লাবঘরটার দিকে।

অস্থিরতা আর উত্তেজনার দ্বৈত কাঁপনে তার একবারও মনে হয়নি মেয়েটির লাশ গাছের ডাল থেকে নামানো দরকার। দাফনের ব্যবস্থা করা দরকার ! আসলে, মূল ঘটনাটা আরও দিন কতেক আগের। স্ত্রীহিীন সংসারে মেয়েকে নিয়ে ঘুমুচ্ছিলেন শামসুদ্দিন। ক্রমশ: গভীর হওয়া রাতে দ্রিম দ্রিম শব্দে ঘুম ভাঙ্গে তাদের। কিছু বুঝে উঠবার আগে শব্দ করে কাঠের দরজা ভেঙে যায়।

দ্রুততার সাথে ভেতরে ঢোকে চারজন আগুন্তুক। সবার হাতে লম্বা ছোরা সাদৃশ্য ধাতব আর মুখ চোখের নিচ থেকে গামছা জাতীয় কাপড়ে বাধা। হারিকেনের আবছা আলোয় ঘটে যাওয়া পরের ঘটনা গুলো এরকম- ক. শামসুদ্দিনকে নাইলনের দড়িতে বেধে ফেলা হয় হাতপামুখ সমেত। খ. উনিশ বছরের রুপার ঘুম ঘুম ভাব কাটবার আগেই টেনে হিচড়ে খুলে ফেলা হতে থাকে শরীরের একটার পর একটা আবরণ। গ. রুপা চিৎকার চেচামেচি করতে উদ্যত হলে, একটা শক্ত সমর্থ হাত মুখের উপর আচানক এসে পড়ায় সে চিৎকার গোঙানির মত শোনায়।

ঘ. ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বিরতি ছাড়াই চারজন যুবক রুপার মাখনের মত শরীর চেটেপুটে কামড়ে হিছড়ে ছিড়তে ছিড়তে আদিম জৈবিকতায় মেতে ওঠে। ঙ. আর অথর্ব শামসুদ্দিন একজন পিতার স্নেহময়ী চোখে সে পৈচাশিক আদিমতা দেখতে দেখতে ঘৃনায় কষ্টে ক্ষোভে পাথর হয়ে যেতে থাকেন এবং অশ্র“র ঢল নামা চোখদুটি বন্ধ করবার আগে তিনি স্পষ্ট দেখতে পান গামছার বাঁধন খুলে পড়ায় যে ছেলেটিকে দেখা গেল সে ছাব্বির। রহমত শেখের ছেলে ছাব্বির। বাজারের পিছনে মোল্লা বাড়ির ছাব্বির। ছাব্বির, ছাব্বির ছাব্বির...।

পরদিন আলো ফোঁটা সকালে আশপাশের মানুষ শামসুদ্দিনকে বাঁধন মুক্ত করে। রুপাকে জ্ঞানহীন ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। আর শামসুদ্দিন উন্মাদের মত ছোটেন চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে। সকলেই আশ্বস্থ করেন উপযুক্ত বিচারের। মেঘে মেঘে বেলা বাড়ে আর গ্রামময় একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে।

...চাইর জন মিলে শামসুদ্দিনের সেয়ানা মাইয়েডারে ধর্ষন করিছে তবে মরে নাই, বাইচে আছে...! বাড়িতে আনা হলে সবাই রুপা কে দেখতে আসে। কারো চোখে সহানুভূতি, কারো চোখে আফসোস। সেটা কামনার না করুনার ঠিকঠাক বোঝা যায় না। এদিকে শামসুদ্দিনের দৌড়াদৌড়ি আর জনমত তৈরীর প্রচেষ্টা তৃতীয় দিনের মাথায় এসে নিস্তেজ এবং অর্থহীন হতে থাকে। কেননা, ক. থানায় মামলা করার বহুচেষ্টা করা হলেও কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করে।

খ. চেয়ারম্যান বৈষয়িক কাজে ঘটনার পরদিন ঢাকা পাড়ি জমান। অপরদিকে মেম্বরের মেয়ের বিয়ে। মহা ধুমধাম। এ মূহুর্তে তার মরবারও সময় নেই! ঘ. ছাব্বিরের বাবা একদিন বিকালে শামসুদ্দিনকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলে- ও শামছু, ঝামেলায় যাইবা ক্যান, পোলাপান মানুষ একটু না হয় দুষ্টামি করিছে, তার চে’ গোপনে কিছু টাকা দিবানে তাই নিয়ে চুপ মাইরে যাও। , শামসুদ্দিন বিস্ময় হতবাক! কুত্তার বাচ্চা কুত্তা, তোর টাকায় আমি মুতি চিৎকার করে এ কথা বলে শামসুদ্দিন বাড়ি ফিরে যান।

বিধ্বস্ত রুপা শুধু কাঁদে। ঘরের দরজা দিয়ে বসে থাকে আর একজন পিতা কিছু না করতে পারার আক্ষেপে দগ্ধ হতে থাকেন। ক্রমশ দগ্ধ হতে থাকেন। অত:পর চিরায়ত নিয়মে বাংলাদেশের অসংখ্য নির্যাতিত মেয়ের মত রুপাও আজ সন্ধায় আত্মহত্যা করল অথবা নিষ্ঠুরপৃথিবী থেকে নিজেকে আড়াল করে নিল...। রাত অনেক হলেও ক্লাব ঘরের বাতি নেভার কোন লক্ষণ না দেখে শামসুদ্দিন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

মূলত তার উত্তেজনার অবসান হওয়া জরুরী। যতক্ষন না এক কোপে ছাব্বিরের মাথাটা দেহ থেকে আলাদা করতে পারছেন, ততক্ষন তার কিছু ভাল লাগছে না। ...আরও কিছুটা অস্থির সময় গড়িয়ে বেরিয়ে যায়। অন্ধকারের নিজস্ব গতি তার পরিধি বাড়ায় আর শামসুদ্দিন একটা জানোয়ারকে হত্যার আশায় জ্বলজ্বলে চোখে অপেক্ষা করতে থাকেন। শামসুদ্দিনের অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হত কিনা জানি না।

তবে ঘটনা একটা ঘটল! হুট করে কোথা থেকে য্যানো তিন ব্যাটারীর টর্চের আলোয় শামসুদ্দিনের ঘাপটি মেরে বসে থাকা অন্ধকার যায়গাটায় এসে পড়ল। আলোর বন্যায় ভেসে যেতে লাগল সব কিছু। অন্ধকারের নিজস্ব লুকানোর ক্ষমতা থাকলেও আলোর বেলায় তা কেবলই উল্টো ! শামসুদ্দিন ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া দৃষ্টিতে তিনি যথাদ্রুত পিছনে তাকান। অন্ধকার ফুটো করে সোলেমানী তরবারীর মত তীব্রগতিতে আলোটা পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে।

আলোর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর কি করা যায়, কি হবে - এধরনের নানা চিন্তা, দুশ্চিন্তা অথবা প্রশ্ন শামসুদ্দিনের বুকের ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে। অত:পর যেকোন ধরনের সিদ্ধান্তে পৌছাবার অনেক আগেই আলোর পিছনে দাড়ানো অন্ধকার মানুষটা যে কাজটি করে বসে সে সম্পর্কে শামসুদ্দিনের কোন আন্দাজ বা ধারনাই ছিল না। লোকটি প্রচন্ড চিৎকারে ভয় পাওয়া মানুষের গলায় বলে ওঠে, ‘বাগানে চোর ঢুকিছে...চোওওওওওওওওওওর !’ এবার শামসুদ্দিন ভিমড়ি খান। কয়েক সেকেন্ডের বিরতীতে সামনে তাকিয়ে দেখেন ক্লাবঘর থেকে লাঠি সোটা হাতে একে একে বেড়িয়ে আসছে ছাব্বির ও অন্যান্যরা। ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে অনুমান করে শামসুদ্দিন হাতের জিনিসটা ফেলে উঠে দাড়ান।

ধরধর আওয়াজ ক্রমশ কাছে আসছে। প্রতিশোধের নেশায় টগবগ করতে থাকা শামসুদ্দিন হঠাৎ করে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। অত:পর সবচিন্তা ছুড়ে ফেলে হঠাৎই দৌড় শুরু করেন শামসুদ্দিন। ক্রমশ: সে গতি বাড়ে। লম্বা লম্বা পা ফেলে তিনি দৌড়াচ্ছেন।

ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। তার অপেক্ষমান চোখ ভিজে যাচ্ছে, তিনি কাদঁছেন। মেয়েটির ঝুলন্ত লাশ নিজ চোখে দেখবার পর এই প্রথম তার খুব কান্না পাচ্ছে। মেয়েটার কথা মনে করে তার বুক ভেঙে যাচ্ছে। হাতের উল্টো পিঠে সে উষ্ণ জল মুছতে মুছতে শামসুদ্দিন প্রাণপন দৌড়াচ্ছেন।

আর পেছনে সমবেত সংগীতের মত চোর-চোর আওয়াজটা ক্ষিপ্রগতিতে একটা সনাতন আদিম ও ক্ষুধার্ত প্রনীর মত ছুটে আসছে ...। [২০০৯ সালে লেখা ৩০০৯ সালের গল্প ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.