আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশটা কেবল হাসিনা-খালেদার নয়, সে দেশটা আমারওঃ তসলিমা নাসরিন



বাংলাদেশটা কেবল হাসিনা-খালেদার নয়, সে দেশটা আমারওঃ তসলিমা নাসরিন প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করে দেশে ফিরতে চান তসলিমা নাসরিন। ভারতে থাকার প্রয়োজনীয় অনুমতি মিললেও সেখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না তসলিমা। ভারত সরকারেরও এ ব্যাপারে অনীহা যথেষ্ট। নিউ ইয়র্ক থেকে ফোনে তিনি আনন্দবাজারকে বাংলাদেশে ফেরার আগ্রহের কথা জানান। বলেন, আমি জানি বাংলাদেশে কোন দিন ফিরতে পারলেও সাত দিনের মধ্যে মৌলবাদীরা আমাকে খুন করবে।

তবু প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও আমি ফিরতে চাই। কারণ আমেরিকা বা ইউরোপে বাস করাটা আমার কাছে মৃত্যুরও বাড়া। আসলে তসলিমা ভারতেই ফিরতে চান। কিন্তু ২০০৮ সালে সংখ্যালঘু বিক্ষোভের পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে কলকাতা ছাড়তে বাধ্য করে। দিল্লি রেসিডেন্সিয়াল পারমিট দিলেও তাকে থেকে যেতে দেয়নি।

তসলিমা বললেন, তারপর থেকে দেশে যেতে দেয়নি। তসলিমা বললেন, তারপর থেকে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার জন্য নিরাপদ দেশ ভারতেই আমি বাস করতে চাই। টানা পাঁচ বছর রেসিডেন্সিয়াল পারমিট পেলে যে কেউ স্থায়ী নাগরিকত্ব পেতে পারেন। কিন্তু আমাকে এখন রেসিডেন্সিয়াল পারমিট দেয়ার পরে মৌখিকভাবে বলে দেয়া হয়, দু’দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।

পত্রিকাটি জানিয়েছে, ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেতে সম্ভাব্য সব রকম চেষ্টাই করেছেন তসলিমা। তসলিমার কথায়, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি লিখেছি। আরও অন্যান্য নেতানেত্রীকেও চিঠি লিখেছি। কিন্তু কারও কাছে কোন জবাব পাইনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, আমার এমন কিছু জানা নেই।

একইভাবে প্রাণ সংশয় জেনেও তসলিমা শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন। কিন্তু ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় যে, প্রধানমন্ত্রী তসলিমার কোন চিঠি পাননি। তসলিমা হাসিনার কাছে বাংলাদেশের ফেরার আবেদন জানিয়ে চিঠি লেখেন দিন দশেক আগে। তার কিছু দিন পরে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপুমনি নিউ ইয়র্কে যান। সেখানে সাংবাদিকরা তাকে তসলিমার দেশে ফেরার আবেদন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অবশ্য জানান, তসলিমার দেশের ফেরার ব্যাপারে আইনি কোন বাধা নেই।

তিনি বাংলাদেশে ফিরতেই পারেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা ঠিক তার উল্টো। তসলিমার কথায়, কলকাতা সমেত পৃথিবীর বহু দেশের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে আমি আমার বাংলাদেশী পাসপোর্ট রিনিউ করানোর চেষ্টা করেছি এবং ইউরোপের পাসপোর্টে ঢাকার ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করেছি। কোন কারণ না দেখিয়েই তারা সব সময় আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তসলিমাকে বাংলাদেশে ফেরানোর ব্যাপারে সে দেশের সরকারের যে আগ্রহ নেই, তা এ দিন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের কথাতেও পরিষ্কার।

তিনি বলেন, তসলিমা ফিরছেন বলে কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আগে ফিরেন, তারপরে নিরাপত্তা দেয়ার প্রশ্ন। আমি তো শুনেছি, তিনি অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তবে নাগরিক হোন বা না হোন, বাংলাদেশের মাটিতে কেউ বিপন্ন বোধ করলে স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও পুলিশ তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। ১৯৯৪ সালে তসলিমার লজ্জা উপন্যাস নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা।

তারা লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করার পরে তাকে দেশ ছাড়তে হয়। তসলিমা এখন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ফেলোশিপ নিয়ে সেখানে বাস করছেন। বললেন, সামনের সেপ্টেম্বর মাসে আমার ফেলোশিপের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ৫ই আগস্ট আমি দিল্লি যাচ্ছি, ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি চাইতে। ওরা যদি থাকতে না দেয়, তখন কি করবো জানি না।

বাংলাদেশ সরকার তাকে ফিরতে দেবে না বলে এক রকম ধরেই নিয়েছেন তসলিমা। তবু বারবার ফেরার চেষ্টা করেছেন কেন? তসলিমার উত্তর, বাংলাদেশটা কেবল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নয়, সে দেশটা আমারও। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। তবে সরকার যদি বা অনুমতি দেয়, সে দেশে তিনি বিদ্বৎসমাজে কতটা গ্রহণযোগ্য হবেন, তা নিয়েও সংশয় আছে। ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানী যেমন বলছেন, তসলিমা নিজের সস্তা প্রচারের জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আগুন নিয়ে খেলা করেছেন।

তার দেশে ফেরার কোন প্রয়োজন নেই। আবার সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের মতো কিছু মানুষও আছেন, যারা মনে করেন তসলিমা বাংলাদেশে ফিরবেনই। মিলনের কথায়, তসলিমার জন্ম বাংলাদেশে। তিনি বাংলায় কথা বলেন, বাংলায় লেখালেখি করেন। সুতরাং তার নাগরিকত্ব নিয়ে কথাই উঠতে পারে না।

আমি জানি তসলিমা ফিরবেনই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.