আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মগজের কার্ফিউ

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সুমনের গানটা অনেক আগে শোনা, তবে গত কয়েকদিন ধরে বুঝতে পারছি বিষয়টা পীড়াদায়ক হয়ে যাচ্ছে, অনেক ভাবনা মাথায় নিয়ে বসে আছি, কিন্তু লিখবার ইচ্ছা হচ্ছে না। কিংবা আগ্রহ পাচ্ছি না কোনো কিছু লেখার। মানুষের ভাবনার কারাগার থেকে মানুষ মুক্ত হতে পারে না, তথাকথিত সামাজিকতা, শোভনতা এবং কৌলিন্যপ্রথার বাইরে আসা খুব একটা সহজ নয়, ভাবনার জড়তা থাকে, প্রকাশের জড়তা থাকে, তাই মঞ্চ উন্মুক্ত হলেও অনেকেই সেই উন্মুক্ত মঞ্চে স্বাধীন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতেও সঙ্কুচিত বোধ করে, তাদের নিজস্ব ভাবনার কারাগারে আটকা পড়ে থাকা প্রকাশভঙ্গী এবং সুশীলতা আমাকে পীড়িত করে। যদিও আমি কখনই তেমন ভাবে পাঠক আকর্ষণ, সামাজিকতা রক্ষা কিংবা দিক নির্দেশনা এবং নেতৃত্বমূলক কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকি না, পারতপক্ষে সংঘবদ্ধতা এড়িয়েই চলবার চেষ্টা করি কিন্ত সংঘবদ্ধতার উৎপীড়ন সবসময়ই সঙ্গে থাকে। সংঘবদ্ধ মানুষ নিজেদের সম্মিলিত ভাবনাকেই যখন ভাববার আদর্শ স্থাপন করে তখন সে আদর্শ মান কিংবা সে পরিমাপে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া কঠিন।

তথাকথিত সমাজের কোনো দোষ কিংবা গুণ অন্তর্জালে গোপন থাকে না, এখানেও মানুষ চরম সামাজিক, তারা নিয়মিত হাসি চায়, বয়স্ককে সম্মান প্রদর্শন করতে চায় এবং ছোটোকে স্নেহ করতে চায়। এইসব ছাগপামির যদিও কোনো অর্থ হয় না, এরপরও তথাকথিত সামাজিক মানুষেরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই একটা সংঘবদ্ধ শ্রেণী নির্মান করে ফেলে সব সময়ই। প্রথম আলো তার শপথ এবং ইত্যকার ফাজলামি মিলিয়ে পরোক্ষ ভাবে বাংলাদেশের একদল মানুষের ভাববার ধরণকে নিয়ন্ত্রন করছে, সেই প্রথম আলোসেবী মানুষেরা, যারা প্রথম আলো আদর্শিক নেশাক্রান্ত তাদের নিজস্ব ভাবনার বিকার রয়েই যাচ্ছে, সেটা সব খানেই বিশিষ্ট মাণদন্ড হিসেবে স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও তারা এটাকে নিজেদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যাদির একটা মনে করে, আমরা ভালো এবং তোমরা খারাপ, আমাদের ভাবনা উন্নত এবং তোমাদের ভাবনা কলুষিত, এমন ছাগলামি দেখে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। মত থাকবে, মত পার্থক্য থাকবে, মতাদর্শিক লড়াই হবে, যৌক্তিক এবং অযৌক্তিক আলোচনার ভেতরে যৌক্তিক আলোচনা সব সময় টিকে থাকুক এমনটা চাইলেও সেটা সব সময়ই বাস্তবতাকে প্রকাশ করে না। ভাবনার প্রতিবন্ধকতা সমেত যারা উন্মুক্ত স্রোতে নিজেকে ভাসাতে চায়, তাদের নিজেদের ভাবনার জড়তা তাদের স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশের প্রধান বাধা।

এটা নিজেকে প্রকাশের জায়গা, নিজের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, ভালোবাসা এবং আক্ষেপ প্রকাশের জায়গা, ভাষা এবং সহবতজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ কিছু না, ভাষাকে পোশাক পড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই, অষ্টাদশ শতকের ভিক্টোরিয়ান আদর্শকেই নিজের ভাবনার চুড়ান্ত বিকাশ ধরে নেওয়া। যে অর্থনৈতিক পরিবেশে ভিক্টোরিয়ান আদর্শের জন্ম, সেই অর্থনৈতিক পরিবেশ বর্তমানে নেই, লড়াই এবং পল্টন বদলে গেছে সম্পূর্ণ। মানুষের নোংরামি বেড়েছে, সন্তের মতাদর্শ এখন মুখ বুঝে পীড়নসহ্য করা নয়, বরং এই পীড়ন এবং সন্ত্রাসের বিপরীতে দাড়িয়ে নিজের গলার স্বর সপ্তকে চড়িয়ে চিৎকার করা, আমি মানি না। আমি মানি না, আমি মানবো না, এবং আমার ভাবনার প্রকাশকে যখন কেউ রুদ্ধ করতে চাইবে আমি সর্বোচ্চ প্রতিরোধ করবো, সেখানে অগ্রজ অনুজ বিবেচনা নেই, এখানে সবাই সমান, যে মানুষটা মসজিদ থেকে এসেছে এবং যে এসেছে বেশ্যালয় থেকে, সবারই কথা বলবার সমান অধিকার এখানে।

যে মানুষটা মুখচোরা এবং যে বাচাল, সবারই একই রকম প্রকাশের স্বাধীনতা, প্রকাশের কুণ্ঠা নিজস্ব ভাবনার কারাগারে নিজের সমর্পন করা। যা বলা প্রয়োজন সেটা বলতেই হবে, যদি চ বর্গীয় প্রকাশ হয়, সেটাও সমান গ্রহনীয়, কারণ আমাদের আক্ষেপে আমরাও আল্লা ভগবানের গোয়া চুদে খাল করে ফেলতে পারি, যদি কারো মনে হয় এইসব চ বর্গীয় শব্দাবলী নিতান্তই বস্তিবাসীর বিকার, এই লেখা ড্রইং রুমে পরিবার পরিজন নিয়ে পড়া যায় না, সেটা আরও এক ধরণের কৌলিন্যতার প্রকাশ। আমি ভালো, মুখ খারাপ করি না, কটু কথা বলি না- আমাদের সবার ভেতরেই একটা ভাববার নির্দিষ্ট ধাঁচ আছে, সেখানে অনেক পূর্বানুমান যুক্ত থাকে, সেই পূর্বানুমান শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে সত্য কিংবা আমার মতো একই অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা সবার জন্য সত্য, এটা সার্বজনীন কোনো সত্য নয়, এই বাস্তবতা উপলব্ধি না করলে অনেক রকম ঝামেলা তৈরি হবে। মিরপূরের রাস্তায় গত কাল কিংবা গত পরশু তিনটি শিশু বাস চাপায় মারা গিয়েছে, সংবাদটা দুঃখজনক, কিন্তু যখন এটার প্রতিক্রিয়ায় একজন বললো, গরীবের প্রাণে মায়া নেই, তারা বাচ্চাদের এমন উজবুকের মতো রাস্তা পার হতে দেয়, তাদের খেয়াল করে না--- তার এই অনুভবটা আপত্তিকর, সেটা স্নবিশ একটা বিষয়। কৌলিন্যতা বোধ হয় একেই বলে, ওরা গরীব ওদের বাচ্চা তো মারা পড়বেই পথে ঘাটে, বেঘোরেই মারা পড়বে, যদি বাচ্চার প্রতি মায়া থাকতো তাহলে কি আর গরীবের বাচ্চা উদভ্রান্তের মতো রাস্তা দিয়ে হাঁটতো, তাদের বাবা আদর করে হাত ধরে পার করিয়ে দিতো, মায়ের আঁচল থাকতো গণগণে রোদে, সেসব তথাকথিত সুশীল আদরের প্রকাশ গরীব দেখায় না বলেই যখন গরীবের প্রাণে মায়া কম, তখন বলতেই হয়, এটা সব সময়ই অর্থনীতই নিয়ন্ত্রন করে ভাইয়েরা, বাপে মায়ে চুইদ্যা যেইটা পয়দা করে, সেইটা প্রতি বাপ মায়ের টান সমান, কিন্তু যার নিজের পরিচয় আমি হোম মেকার তার সাথে সেই হোম মেকারের প্রায় অবৈতনিক সহকারীর ভাবনার ধাঁচ মিলে না।

তার পিঠে খুন্তির আঁচ বাঁচানোর ধান্দা থাকে, সেই পুরুষের যে ক্ষমতাবানের শিশ্ন চেটে অর্থোপার্জন করছে তার সাথে যে মানুষটা রিকশার পয়াডেল মারছে তার ভাবনার বিস্তর ফারাক। তাদের সেই অবসর নেই যে তারা আহ্লাদ দেখাতে পারে। এটা মায়া কিংবা ভালোবাসাহীনতা নয়, বরং কার কতটুকু আহ্লাদের উদ্ধৃত সময় আছে তার উপরে নির্ভর করে। কৌলিন্য ক্ষতিকর বিকার। সুতরাং সব চুতমারানি যারা নিজেদের সামাজিক ভাবছে এবং যারা একটা ওনারশিপ নিয়ে বাল ছিড়ছে তাদের কাউকেই চুদলাম না।

ইন্টারনেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য হওয়ায় এখন অলিখিত সংঘবদ্ধতা সবখানেই, এরা নিজস্ব ম্যাসেঞ্জার আর টেলিফোনে আজ্জব একটা ব্যবস্থা চালু করেছে, সেটা ক্ষতিকর নয় সব সময়, কিন্তু সংঘব্ধতা এবং ব্যক্তিগত পরিচয়ের কারণে অনেকেই নিজের মতের বিরুদ্ধে অনেক উৎপীড়নে সহমত প্রকাশ করছে, এই মতিচ্ছন্ন অবস্থা কাটানো প্রয়োজন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।