আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যশোরে একক জনসভায় বেনজিন খান: 'পানি, পনি রাজনীতি ও প্রাণের অধিকার'

শাফি সমুদ্র

ধন্যবাদ হোসেন ডাক্তারকে। বিশিষ্ট গবেষক-চিন্তক বেনজিন খানের একক জনসভায় উপস্থিত সকলকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন। এখনি শুরু হচ্ছে পানি, পানির রাজনীতি ও প্রাণের অধিকার বিষয়ক বেনজিন খানের একক জনসভা। জনসভার শুরুতে একটি মরমী সঙ্গীত। আর সঙ্গীত পরিবেশন করছে- হোসেন ডাক্তার।

এ কখন যেন উড়ে যায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায় একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় খাচার আড়া পড়লো ধ্বসে পাখি আর দাঁড়াবে কিসে\ উড়ে এখন আমি ভবি বসে, এখন আমি ভাবি বসে সদা চমক জড়া পড়ছে গায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় পাখি কখন যেন উড়ে যায়। কার বা খাঁচা কে বা পাখি আমি কার বা আপন কার বা পর দেখি\ আমার আমার কাঁপনে জুড়ে আঁখি পাখি আমার মন বা কাকে চায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় আগে যদি যেত জানা জঙ্গলা কভূ পোষ মানে না\ আমি আমি ওর সঙ্গে প্রেম করতামনা এখন আর না দেখি কোন উপায় পাখি কখন যেন উড়ে যায়। পাখি কখন যেন উড়ে যায়। একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায় সাধের পাখি যাবে ঊড়ে খালি খাঁচা রবে পড়ে\ আমার আমার সঙ্গের সাথি কেউ হবেনা ফকির লালন কেঁদে কয়\ এ কখন যেন উড়ে যায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায় খাচার আড়া পড়লো ধ্বসে পাখি আর দাঁড়াবে কিসে\ উড়ে এখন আমি ভবি বসে, এখন আমি ভাবি বসে সদা চমক জড়া পড়ছে গায় পাখি কখন যেন উড়ে যায় পাখি কখন যেন উড়ে যায়। ধন্যবাদ হোসেন ডাক্তারকে।

এ পর্যায়ে আমাদের সামনে আজকের এই জনসভার বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা নিয়ে আসছেন। বিশিষ্ট গবেষক, চিন্তক বেনজিন খান। আসছেন বেনজিন খান। আস্সালামুআলাইকুম। আজ মহান ফারাক্কা দিবস, ৩৩তম ফারাক্কা দিবস।

১৯৭৬ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের এক অকুতোভয় মহান রাজনৈতিক মাওলানা ভাসানীর ডাকে একটা লংমার্চ হয়েছিলো আপনারা জানেন। সারা বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন সিলেটে জড় হয়েছিলো এবং সিলেট মাদ্রাসা থেকে কানসার্ট মানুষ সেদিন লং মার্চে অংশগ্রহণ করেছিলো। এই লং মার্চ ছিলো পানির দাবিতে। বন্ধুগন, পানি পৃথিবীর মানুষের সভ্যতার সৃষ্টি না। পানি পৃথিবীর মানুষ সৃষ্টি করেনি, পানি আল্লাহর সৃষ্টি।

এই বিশ্ব-প্রকৃতি, এই বিশ্ব-প্রকৃতি সৃষ্টির সাথে সাথেই পানি ছিলো। এই পানিতে অধিকার রয়েছে এই বিশ্ব জগতের মানুষের, সকল প্রাণীর এমন কি সকল জীব এবং অনুজীবের। যে জীব দেখা যায় না, অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয় তাকে বলা হয় অনুজীব, আমরা অনেকে বলি ব্যাক্টরিয়া। এই বিশ্ব প্রকৃতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পানি সকলের জন্য লাগে।

একমাত্র পৃথিবীর একমাত্র বস্তু পানি, যার আরেক নাম জীবন। আপনারা জনেন যেÑমানুষ তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের সভ্যতার চুড়ান্ত বিকাশে যাচ্ছে তখন সে একটা ক্ষুধায় মগ্ন হয়েছে। সেটা হলো এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মা-ে আর কোন গ্রহে মানুষ আছে কিনা, সে মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। যদি মানুষ থেকে থাকে সে মানুষ কেমন? আমাদের মতো? আমাদের থেকে বুদ্ধিমান? নাকি আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো? মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু মানুষ আছে কি নেই, ছিলো কি ছিলোনা, মানুষ কোনদিন কোন গ্রহে আসবে কি আসবেনা তাই প্রথম আলামত হিসেবে মানুষ মহাশূন্যে-গ্রহ-উপগ্রহে যে জিনিসটার সন্ধান করে বেড়াচ্ছে তার নাম পানি। কেন? যে পানি হচ্ছে প্রাণের উৎস।

পৃথিবীর সমস্ত এই বিশ্বজগৎ গবেষণা করে দেখা গেছে যে পানি থেকেই প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে। প্রথিবীর প্রথম এককোষি প্রাণী এ্যামিবা সে পানির ভিতরে সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই পানির ভিতরেই প্রাণী সৃষ্টি হতে হতে প্রাণীর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রমাণ্বয়ে পানি ছেড়ে স্থলে, স্থল ছেড়ে আকাশে উড়েছে প্রাণী। এই যে প্রাণের প্রথম জš§ হয়েছে পানিতে। তাই মানুষের ধারণা সমগ্র বিশ্ব ব্রক্ষ্মা-ের কোন গ্রহে যদি পানির সন্ধান থাকে, বিজ্ঞানীদের ধারণা সেখানে একদিন মানুষ বসবাস করতে পারবে।

তারা খোঁজ করে যদি কোথাও পানি ছিলো এ নিদর্শন পাওয়া যায় তাহলে আমরা ধরে নেবো সেখানে একসময় প্রাণী ছিলো। পানির আরেক নাম জীবন। এই পানি পৃথিবীর সমস্ত জীব-অনুজীব-প্রাণী-গাছ-গাছালি এসব কিছুর জন্য পানির দরকার। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষ তার সভ্যতাকে, তার জ্ঞানকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে পানিকে সে ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে যেতে চায়। পানিকে ব্যক্তিগত ভাবে কুক্ষিগত করতে চায় এবং পানি থেকে সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতির সমস্ত মানুষ, অপারপার হকদারকে সে বঞ্চিত করতে চায়।

বন্ধুগন! বাংলাদেশে যখন কল চাপ দিই, জগ ভর্তি পানি আসে তখন বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারেনা পানি কি জিনিস। কিন্তু বন্ধুগন! পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখবো এই পানি হচ্ছে আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে দামি বস্তু, দামি উপাদান। আপনারা জানেন- আজকে সারা পৃথিবীতে যে যুদ্ধ হচ্ছে, সে যুদ্ধ তেলের জন্যে। সে যুদ্ধ গ্যাসের জন্যে। কিন্তু যে যুদ্ধ আসছে সামনে সে যুদ্ধ হবে পানির জন্য।

সারা পৃথিবীব্যাপি তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ যদি বাঁধে, সেটা পানির জন্য বাঁধবে। পানি পৃথিবীর সব থেকে দামি বস্তু। এক লিটার তেলের থেকে, এক লিটার দুধের থেকে, এক লিটার মদের থেকে এক লিটার খাবার পানির দাম বেশি। আপনারা হয়তো অনেকে ভাববেন-এই পৃথিবীতে চারভাগ স্থানের ভিতরে এক ভাগ স্থল আর বাকী তিনভাগ পানি, এতে গদগদ হবার কিছু নাই। কারণ যে চারভাগ যায়গার ভিতরে তিনভাগ পানি।

কিন্তু এই তিনভাগ পানি আবার খাবার পানি না। এই তিনভাগের মধ্যে মাত্র একভাগ হ্েচ্ছ মানুষ খেতে পারে আর বাকি সব সাগর-মহাসাগরের লোনা পানি আর কঠিন জমাট বাঁধা বরফ। এই কঠিন জমাট বাঁধা বরফ মানুষ খেতে পারেনা। সাগর-মাহাসাগরের লোনা জল মানুষ খেতে পারে না। মানুষ-যে পানি খায় অর্থাৎ প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে যে পানি সেটা মিঠা পানি, সুস্বাধু পানি।

যেটার পরিমাণ কিন্তু পৃথিবীতে খুব কম। সেই পানির উপরে মানুষ যদি তার আধিপত্য বিস্তার করে, মানুষ যদি সেই পানিকে কুক্ষিগত করে তাহলে অপর মানুষ যেমন পানি থেকে বঞ্চিত হবে, উদ্ভিদ বঞ্চিত হবে, প্রকৃতি বঞ্চিত হবে, জীব-অনুজীব সমস্ত পশু-প্রাণী-পাখি সবকিছু পানি থেকে বঞ্চিত হবে। আর এইসব প্রাণী যদি পানি থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে এইসব প্রাণীর মৃত্যু ঘটবে। আর এইসব প্রাণীর মৃত্যু ঘটলে এই বিশ্বপ্রকৃতি যে ঈুপষব এ চলে, এই ঈুপষব উরংঃৎড়ু হবে, ঈুপষব ধ্বংস হবে। অর্থাৎ ঊপড়ষড়মু ধ্বংস হবে আর যদি ঊপড়ষড়মু ধ্বংস হয় তাহলে বেঁচে থাকার শর্ত ধ্বংস হবে।

অর্থাৎ মানুষ বুঝে আর অবুঝে হোক নিজে নিজের কবর রচনা করে চলেছে। আর এসবই এসেছে অজ্ঞতা, অবিদ্যা আর মুর্খতা থেকে। মানুষ কিসের জন্য ছোটে? কিসের লালসায় কিসের জন্য মানুষ মানুষদেরকে বঞ্চিত করছে, মানুষ জানে না। কিছুক্ষণ আগে আমাদের লোক দার্শনিক গান গেয়েছেন, সাইজী লালন শাহের গানÑ ‘পাখি কখন যেন উড়ে যায়’। সেই মানুষের প্রথম ঊষালগ্ন থেকে মানুষের প্রশ্ন- আমি কোথা থেকে আসি কোথায় চলে যাবো, কোথায় আমার গন্তব্য মানুষ জানে না।

মানুষ ভাবতে ভাবতে সে নিজেকে দু’ইভাগে ভাগ করে ফেলেছে। আত্মা এবং দেহে। কেউ বলে আত্মা দেহের কারণ, আর কেউ বলে দেহ আত্মার কারণ। কেউ বলে দেহ আগে কেউ বলে আত্মা আগে। লালন বলছে না, দেহ না থাকলে আত্মা নেই আবার আত্মা না থাকলে দেহ নাই, ফলে কে আগে আর কে পরে এ জিজ্ঞাসা না বরং জিজ্ঞাসা ছিলো লালনের আত্মার সাথে দেহের সম্পর্ক কি? এই সম্পর্ক খুঁজতে যেয়েই লালন ভাবছে দেহের সাধনা কি এই হওয়া উচিৎ- যে আত্মার সাথে প্রেম করা নাকি আত্মার সাধনা হওয়া উচিৎ দেহের সাথে প্রেম করা? লালন গোলক ধাঁ ধাঁ এ পড়েছেন।

লালন বলছে যে এ এক এমন জিনিস দেহ এবং আত্মার এ এক এমন লীলা যে একে খ-িত করা যায়না। দেহ চেষ্টা করে আত্মার সাথে প্রেম করতে কিন্তু আত্মা থাকেনা। আত্মা এক জঙ্গলি পাখি, এ পোষ মানে না। লালন বলছে আগে যদি জানতাম- জঙ্গলা পাখি প্রেম করেনা পোষ মানে না তাহলে প্রেম করতাম না, পোষ মানতাম না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দেহ কি আত্মাকে অস্বীকার করতে পারে? আত্মার সাথে প্রেম না করলে আত্মার কি কিছু এসে যায়? নাকি দেহ অস্তিত্বহীন হয়ে যায়! এ এক মহান গোলক ধাঁ ধাঁ।

মানুষ এ সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। অথচ সে বিশ্ব জগতের সবকিছুকে পরজ্ঞান করে, নিজেকে সত্যজ্ঞান করে। কিন্তু সে জানে না এই বিশ্বজগতের সবকিছুর সাথে তার এই দেহময় এই জৈব সত্ত্বার জবষধঃরড়হ কি। এই জবষধঃরড়হ বুঝলে মানুষের দুনিয়ায় আশি ভাগ দুঃখের সমাধান হয়ে যেত। আর বিশ পার্সেন্ট দুঃখ মানুষ নিজেই সমাধান করতে পারতো।

আজকে আমরা যে পানি নিয়ে কথা বলছি আপনারা কি জানেন এই যে ক’দিন ধরে বাংলাদেশে যে সর্বাধিক তাপমাত্রা ছিলো এখানে মাত্র তিন মাসে পানি কোম্পানী পানি ব্যবসায়িরা কতো টাকা লাভ করেছে? এই তিন মাসে পানি কোম্পানীরা লাভ করেছে সাতশ কোটি টাকা। বাংলাদেশে কতোটা পানি কোম্পানী আছে আপনারা কি জানেন? আমি নিজে একবার ঢাকায় এই গবহধৎবষ ডধঃবৎ এর উপর কাজ করেছিলাম তো তখন ১৬৭ টা পানি পেয়েছিলাম। আপনারা বাজারে যেয়ে দেখবেন মাম, ফ্রেশ, প্রাণ এমনি অসংখ্য পানি কোম্পানী বাংলাদেশে রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি কি আটটি বৈজ্ঞানিক কারিগরি দিয়ে পানিকে ঠিক করে। কিন্তু আর বাকী প্রায় দেড়শ কোম্পানী আছে এই যে পান এর বৈজ্ঞানিক কারিকুলাম রয়েছে তা মানে না।

অর্থাৎ তারা সরাসরি ওয়াশা থেকে উঠে আসা পানি সেই পানি তারা বোতলজাত করে। বন্ধুগণ কিন্তু রাষ্ট্রের দেখার কেউ নাই যে কারণে পানির উপরে একটি সমীক্ষা আমরা হাজির করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো পৃথিবীতে এখন ৩১টি দেশে পানির স্বল্পতার সম্মুখীন। পৃথিবীর ৩১টা দেশ সেখানে কিন্তু পানি নাই। বাংলাদেশে কল চাপলেই পানি বের হয় আমরা ভাবি পানি একটা তরল ব্যাপার, একটা সহজ ব্যাপার, পানির আবার অভাব কিসের? কিন্তু না পৃথিবীর ৩১ টা দেশ পানি পায়না, অর্থাৎ এক বিলিয়ন জনগোষ্ঠি পানি বঞ্চিত। বন্ধুগন, ১০লক্ষে এক মিলিয়ন, ১০০ মিলিয়নে এক বিলিয়ন।

এক বিলিয়ন মানাুষ আজ পৃথিবীতে খাবার পানি পায়না। বন্ধুগন, বিশ্বে পানির ব্যবহার প্রতি বিশবছরে দ্বিগুন হচ্ছে। মানুষ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুন বিশ্বে পানির চাহিদা বাড়ছে। তাহলে পৃথিবীর ৩১টা রাষ্ট্রে এখন পানি নেই, পানি সংকট আর পুঁজি যদি বুঝে ফেলে পানি হচ্ছে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু তাহলে মনে রাখবেন আপনার পানির মালিক আপনি থাকবেন না। এখনি আপনার জমিতে আপনার টাকা আছে, আপনি স্যালো মেশিন বসিয়ে দেন , পানি তোলেন এই পানি শুধু আপনার জমির তল থেকে আসে না।

পাশের জমির তল থেকেও আসে অথচ ওই স্যালোওয়ালা পাশের জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা নেয় পানির দাম হিসেবে। কিন্তু জমিওয়ালা প্রশ্ন করতে পারেনা এই স্যালোমেশিনে কি শুধু তোমার জমির পানি উঠেছে? আমার জমিরও পানি উঠেছে। যেমন কিছু বলতে পারে না ঠিক তেমনি আজকের পৃথিবীতে বড় বড় পানি কোম্পানী ব্যবসা করছে সারা পৃথিবী জুড়ে, পৃথিবীর দু’টো দেশের কোম্পানি একটা ফ্রান্স আর একটা হচ্ছে আমেরিকা। এরা পৃথিবীর সমস্ত পানির মালিক। এরা জাতিসংঘকে বাধ্য করেছে ডঞঅ এর মিটিং এ বাধ্য করেছে, এরা গ্যাট এবং গ্যাটসে বাধ্য করেছে পানিকে বেসরকারীকরণ করে দিতে বলেছেএবং ডঞঅএর মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা পৃথিবীর সমস্ত পানিকে বেসরকারী করণের অধিকার দিয়ে দিয়েছে।

অর্থাৎ ওই ঈড়পধপড়ষধ, আমেরিকার ঋড়ঁৎ ঋড়ঁহফধঃরড়হ, ভারতের ঞঅঞঅ কোম্পানী, অথবা টৎধপধ ভধনধৎং তারা যদি বাংলাদেশে যন্ত্র বসিয়ে কোটি কোটি কিউসেক পানি তুলে নেয় আমার আপনার কিছু করার থাকবে না। কেননা এই অধিকার ডঞঅ তাকে দিয়েছে এবং ডঞঅ এর ওই মিটিং এ বাংলাদেশ সিগনেচার করেছে। এই হচ্ছে পানির অবস্থা। আজকে অবিশুদ্ধ পানি প্রতিবছর পাঁচ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু বয়ে আনে, যার অধিকাংশই শিশু। অবিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না।

শিশু মারা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাবে। আগামী ২০২৫ সালের দিকে ৫৬% এই পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ জনগন নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত এবং পানি বেসরকারীকরণে শিল্প বার্ষিক চল্লিশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা যা বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানির আয়ের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ বেশি। কতবড় ইঁংহবংং হচ্ছে দেখের, এই আপনি কোম্পানী বছরের ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে আন্তর্জাতিক ঔষদ কোম্পানীর আয়ের থেকে এক তৃতীয়াংশ বেশি।

শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে পানি কোম্পানীগুলো বছরে এক বিলিয়নের বেশি ডলার এ রাজস্ব উৎপাদন করে যা গরপৎড়ংড়ভঃ এর বার্ষিক বিক্রির চার গুন। বিলগেটস্ যে বার্ষিক আয় করেন তার থেকে চারগুন। পানি নিয়ে আজ সারা পৃথিবীতে ব্যবসা শুরু করা হয়ে গেছে। পানি নিয়ে আজ আমাদেরকে বঞ্চিত করা হবে। চোখের সামনে দেখতে হবে তার সন্তানের পানির জন্য, লালন সাইজীর একটি গান আছে- ‘সমুদ্রের কিনারে বসে জলবিনে চাতকী মরে’।

সমুদ্রের পাশে চাতকী কেন? যারা সমুদ্র ভ্রমনে যান তারা কি নিয়ে যান? গবহধৎবষ ডধঃবৎ নিয়ে যান ব্যাগে করে। সেন্টমার্টিনে চলে যান, ছেড়া দ্বীপে চলে যান কিন্তু কি নিয়ে যান? গবহধৎবষ ডধঃবৎ নিয়ে যান। সমুদ্রে পানি পায় না তাহলে সমুদ্রের কিনারে বসে জলবিনে চাতকী মরে চারিদিকে এতো পানির ভীড়ে আপনি পানি পাবেন না। ফলে পানি এক ভয়ঙ্কর রাজনীতির উপাদানে পরিণত হয়েছে। এই পানি নিয়ে যে যুদ্ধ আজকে সারা পৃথিবীতে হচ্ছে সে যুদ্ধ উপমহাদেশে প্রথম শুরু করেছে ভারত।

বন্ধুগণ, ভারতের পানি দস্যুতার শিকার আজ ১৫ কোটি মানুষ। আজকে আমি আপনাদেরকে একটা প্রশ্ন করতে চাইÑ যখন বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো ৪৩.৩ ডিগ্রী সে.সি.। আমি প্রশ্ন করতে চাইÑএই যশোরে বা বাংলাদেশে যারা আওয়ামীলীগ করে, যারা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ চেতনা বিশ্বাস করে তাদের কি গরম লেগেছিলো না লাগে নাই? শুধু কি বিএনপি বা জামায়ত যারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিশ্বাস করে শুধু কি তাদের গরম লেগেছিলো? নাকি সমস্ত আয়ামীলীগ-বিএনপি সবার গরম লেগেছিলো? আমার ধারণা প্রত্যেক মানুষের গরম লেগেছিলো। বাংলাদেশে যদি বৃষ্টি না হয়, যদি মারা যায়, নদী মারা যায়, যদি খাদ্যের সংকট হয় তাহলে এ দেশের সব মানুষকেই তার ভূক্তভোগী হতে হবে। আজকে বাংলাদেশে এই যে পানি, এই পানির প্রধান উৎস কি? বাংলাদেশের মাটি।

বাংলাদেশের নদী। মাটি, এই মাটিকে জš§ দিয়েয়েছে বাংলাদেশের নদী। আমাদের মনে রাখতে হবে এই যেখানে আমরা বসবাস করি লক্ষ-কোটি বছর আগে যারা এবড়মৎধঢ়যর ছাত্র তারা জানেন এখনে একটা সাগর ছিলো তার নাম ‘ঞড়ঃযরংব ংবধ’ ইতিহাসে সেই সাগর এখন নাই। ওই হিমালয় পর্বতের পাদদেশে মানুষ উপস্থিত হয়েছে, মানুষ মাটি পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে এটাা সমুদ্র তলদেশের মাটি। এখানে বিভিন্ন প্রশ্নের জীবাশ্ম, শামুকের সন্ধান এখানে পাওয়া গিয়েছিলো।

বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন হিমালয়ের চূড়ায় এই জীবাশ্মের সন্ধান কেন? সমুদ্রের তলদেশে শামুকের সন্ধান কেন? বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন ঘটনাটা কি। তখন তারা দ্যাখে এখানে একটা মহাসাগর ছিলো তার না ‘টেটিথস সী’। পাঁচটা ভূ-গর্ভস্থ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই হিমালয়ের জš§ হয়েছে এবং হিমালয়ের জš§ হওয়ার কারণে এর পাদেেদশ এবং এই হিমালয়ের এভারেস্টেই কারণেই আরব সাগর থেকে এবং ভারত মহাসগর থেকে যে জলবায়ূ ভেসে আসে হিমালয়ের এভারেস্টে এসে জমে বরফ তৈরী হয়। এ্বং এই বরফ গলে যখন নিচে নেমে আসে নখন নদীর জš§ দেয়। আবার নদী যখন সমুদ্রে মিশে জোয়ারের সৃষ্টি করে তখন জোয়ার আকারে উপরে উঠে আসে তখন সে পলি নিয়ে আসে।

এ পলি পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ বছর পড়ে পড়ে এ জায়গাটাতে মাটি হয়েছে। আপনারা জানেন বাংলাদেশের আয়াতন হচ্ছে একলক্ষ পঁঞ্চান্ন হাজার বর্গ কি.মি.। আজকে পত্রিকায় দেখবেন বাষট্টি হাজার ব.কি.মি বাংলাদেশের ভূখ-ের ভিতরে সমুদ্র জেগে উঠছে। বাংলাদেশের মতো আরেকটা বাংলাদেশ জেগে উঠছে। সবই এই পলির বদৌলতে।

অর্থ্যাৎ বিশাল এক বাংলা আমাদের হবে। দূর্ভাগ্য আমাদের, সেটাও ভারত দখল করে নেবার সমস্ত কারিকুলাম শেষে করে ফেলেছে। ২০১১ সাল জাতিসংঘ আমাদের টাইম দিয়েছিলো, এই সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা রেডি করে তোমাদের যাবতীয় পেপার্স জাতিসংঘে হাজির করবা। আমরা করিনি। কিন্তু ভারত-মিয়ানমার এ পর্যন্ত তাদের দিক থেকে তাদের সীমানা বাড়িয়ে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের নীচে ত্রিকোনা এক ল্যা-লর্ক তৈরী করেছে।

অর্থ্যাৎ তারা এই যে চর জেগেছে এই চরের মালিকানা দখল করেছে। কাগজপত্র রেডি করে তারা জতিসংঘে উপস্থাপন করেছে। অথচ আমরা এখনো করি নাই। ফলে যদি এটা দখল করে নেয় আমরা ভবিষ্যতে নেপালের মতো ল্যান্ডলর্ক রাষ্ট্রে পরিণত হবো। আজকে এই যে নদী, এই নদী গুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত: দেড় হাজার নদী ছিলো।

এর মধ্যে ৫৭টা নদী বাংলাদেশের বাইরে থেকে এসেছে। এই ৫৭টা নদীর মধ্যে ৫৪টা নদী ভারতের মধ্য থেকে উৎপত্তি। আর দুটো নদীর উৎপত্তি হচ্ছে একটা বার্মা যা নাফ নদী আরেকটা চীনের তিব্বতের মানস সরোবরে যেটার নাম ব্রক্ষ্মপূত্র। আর বাকী নদীগুলো হিমালয় থেকে এসেছে। আর হিমালয় থেকে গঙ্গোত্রীনামক হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গোত্রী ধারণ করে আমাদের বাংলাদেশে এসেছে যার নাম পদ্মা।

আবার নেপাল থেকে তিনটি নদী এসে পদ্মায় যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। আপনারা জানেন ১৯৫১ সালে ভারতের তৎকালীন গভ:মেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, ১৯৫১ সালে ভারত গভ:মেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেও পদ্মা অর্থ্যাৎ এই গঙ্গায় ফারাক্কায় একটা বাঁধ দিতে হবে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে ইংরেজরা। ইংরেজদের একটা আলাদা চড়ষরপু ছিলো। ইংরেজদের চড়ষরপু ছিলো তাদের যে জাহাজ ভগীরথি দিয়ে কলকাতা বন্দরে পৌঁছাতো, ভাগিরথীর যে জলধারা, স্রোতধারায় যদি নব্যতা জীবন্ত না থাকে, তবে তাদের সে জাহায আসবেনা। তাদের সিদ্ধান্ত ছিলো ফারাক্কায় একটি বাঁধ দিয়ে পানি যদি ভাগিরথীতে দিতে পারি তাহলে ভাগিরথী শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪০,০০০ কিউসেক পানি অহরহ ভাগিরথিতে যদি দিতে পারে তাহলে ভাগিরথীর নব্যতা শেষ হবেনা।

এখানে জাহায আসবে, এ পরিকল্পনা তাদের ছিলো। ব্রিটিশের দুই বিশেষজ্ঞ ছিলো তাদের শর্ত হচ্ছে এই- শুকনো মৌসুমেও ৪০,০০০ কিউসেক পানি অব্যাহতভাবে থাকতে হবে, তাহলে নব্যতা বাঁচবে। যদি কম হয় তাহলে এখানে নব্যতা থাকবেনা প্রকারন্তে এখানে সমান উল্টো প্রতিক্রিয়া হবে এই দুই বাংলায় মরুভূমি ও বন্যা সমানভাবে চলে আসবে। নদী মারা যাবে, নদীর বুক উপরে উঠে আসবে। আজকে ভারত থেকে প্রকাশিত গঙ্গা তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে না ফারাক্কা দিয়ে ওই নব্যতা রক্ষা করা যায়নি।

কিন্তু ভারতের হেডেড নাই, ভারত ওটা চায়নি আসলে। ভারত চেয়েছিলো পানি নিয়ে রাজনীতি করতে। পানি নিয়ে রাজনীতি অর্থাৎ বাংলাকে শুকিয়ে মারা, বাংলার কৃষিকে ধ্বংস করা। এই বাংলার নদীকে শেষ করে দেয়া, জীব-অনুজীবকে ধ্বংস করে দেয়া, এটা একটা মরুভূমি করে ফেলা। পানিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের মানুষ কে দাস-গোলামে পরিণত করা এটা একটা চড়ষরঃৎরপং।

এই চড়ষরঃৎরপং এ ভারত জয়লাভ করেছে। ভারত থেকে যে ৫৪টা নদী এসেছে, এই ৫৪টা নদীর উপরে বাঁধ দিয়েছে। শুধুমাত্র গঙ্গা না ঐ যে তিস্তা তার উপরে ওপারেও বাঁধ রয়েছে। ৫৪টা নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে আমাদের নদী তারা সরিয়ে নিয়েছে। তিস্তা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের উত্তর অংশ দিনাজপুর অংশ পুরো মরুভূমি হয়ে গেছে, আর গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের কারণে আমাদের এ অঞ্চলে পানির স্বল্পতা সৃষ্টি হয়েছে, নদী মরে গ্যাছে, নদীর বুক উচু হয়ে গেছে।

আর সমুদ্রের লোনা পানি যখন উপরে এসেছে তখন নদীর স্রোত না থাকার কারণে এ লোনা পানি ফিরে যেতে পারে না। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল টোটালি লবণাক্ত গয়ে গেছে। বন্ধুগণ! তাহলে বাংলাদেশের পশ্চিম অংশে মরুভূমি আর দক্ষিণ অঞ্চল লবণাক্ত আজ বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চল মরুভূমি আর দক্ষিণ অঞ্চল লবণাক্ত করে দেবার জন্যে ২০০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর সম্ভবত সেদিনই যে দিন আমাদের কথা ছিলো দেশের ১৫কোটি মানুষ ওই টিপাইমুখের দিকে মিছিল করা, ভারতকে থ্রেট করা আমরা তা না করে সেদিন বায়তুল মোকরমের সামনে এক মহাউৎসবে মিলিত হয়ে তার হলি খেলায় লিপ্ত হয়েছিলাম। ঐদিন ওরা টিপাইমুখে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে বাঁধের। কেন? টিপাউমুখি একটি জায়গার নাম।

গঙ্গা যেমন একটি আন্তর্জাতিক নদী ফারাক্কা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পদ্মা হয়েছে ঠিক এমনই আরেকটা আন্তর্জাতিক নদী তার নাম বরাক টিপাইমুখ হয়ে যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তখন তার নাম সুরমা। এই বরাক নদী টিপাইমুখে এসে দুটো নদীতে মিলিত হয়েছিলো একটার নাম বরাক একটার নাম থুইদি। থুইদি এবং বরাক নদী টিপাইমুখে এসে একটা নদীতে পরিণত হয়েছিলো। টিপাই মুখে এসে ভারত বাঁধ নির্মান করেছে। এই বাঁধের পরিকল্পনা ভারতের রয়েছে ১৯৫৫ সাল থেকে।

১৯৯৩ সালের দিকে সে এটা নিয়ে কাগজপত্র রেডি করেছে এবং ২০০৬ সালে সে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে। আজকে সে দরপত্র করছে, এখনো আমাদের সময় আছে কেননা- এখনো তারা ছাড়পত্র পায়নি। আমরা যদি আন্দোলন করি তবে আমরা এটাকে রুখে দিতে পারবো। এই থুইদি নদী ও বারাক নদী যখন টিপাইমুখ থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে তখন আবার দুটো নদীতে পরিণত হয়েছে একটা সুরমা আরেকটা কুশিয়ারা। সুরমা এবং কুশিয়ারা এক হয়েছে আরো দক্ষিণে এসে তখন তার নাম হয়েছে মেঘনা।

যদি এই টিপাইমুখ বাঁধ পরিকল্পনায় সে সফল করে ফেলে সুরমা এবং কুশিয়ারা মারা যাবে। সুরমা-কুশিয়ারা মারা গেলে মেঘনা মারা যাবে। সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা থেকে জš§ নেয়া যে সব ছোট ছোট নদী-বিল-জলাশয় এসব শুকিয়ে যাবে। সিলেট থেকে উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে এবং মেঘনা থেকে দক্ষিণাঞ্চল লবণাক্ত হয়ে যাবে। তাহলে টোটাল উত্তরাঞ্চল মরুভূমি ও দক্ষিণাঞ্চল লবণাক্ত হয়ে যাবে।

বন্ধুগন! আজ এই গঙ্গার ফারাক্কা নিয়ে আমাদের দেশে যখন রাজনীতি হচ্ছে তখন আমরা এদেশের মানুষ আমরা এটা নিয়ে কথা বলতে চাই। আজকে যখন একটা লিফলেট দিয়েছিলো তখন আমার অনেক বন্ধুই বলেছিলো এখানে ‘ভারতের পানি ডাকাতি’ শব্দটা না দিলে হতোনা? একটু হার্ড হয়ে গেছে। বন্ধুগন! ভালো লেগেছিলো এই বাংলাদেশের মানুষের রুচি, এই বাংলাদেশের মানুষের ভদ্রতা, শিষ্টাচারিতা, কালচার আছে এটা একটা হার্ড হয়েছে আমার এদেশের মানুষ তা অনুধাবন করেছে। কিন্তু যাদের কাছ থেকে আমরা গণতন্ত্র শিখি ভারতের কাছ থেকে কোথায় কোথায় আমাদের রাজনীতিবিদরা আর টকশোতে বন্ধুরা ভারতের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে বলে তাদের গণতন্ত্র এবং তাদের শিষ্টাচার এর কিছু ভাষা আমি আপনাদের কে দেখাতে চাই। যখন ভারত ঔ বাঁধ সৃষ্টি করলো এবং বাঁধ চালু করতে পারে নাই তখন এই বাংলার শত্রু পাকিস্তান ছিলো তাই পাকিস্তান আমলে পারেনাই।

আর যখন পাকিস্তান চলে গেছে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বীর-বাঙ্গালীরা বীরবাঙ্গালির সাথে বিনা যুদ্ধেই ওটা দখল হয়ে গেছে। ১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানী ইন্দ্রিরাগান্ধিকে দুই দুটো চিঠি লিখলেন এই চিঠি এই বইটার ভিতরে আছে। বইটার নাম ফারাক্কা ব্যারেজ ও বাংলাদেশ, লেখক বিএম আব্বাস এটি। তিনি এই দেশে আইয়ূব সরকারের আমলে, পাকিস্তানী আমলে এদেশে একজন পানি বিজ্ঞানি ছিলেন, পানি সচিব ছিলেন। শেখ মুজিব সরকারের আমলেও ছিলেন, উনি জিয়া সরকারের সময়েও কাজ করেছেন।

তিনি এই বইটা লিখেছেন। ইন্দ্রিরা গান্ধিকে তিনি বলেছিলেন যেÑ ইন্দ্রিরা গান্ধি, আপনি এভাবে পানি দিয়ে মানুষকে বঞ্চিত করতে পারেন না। পানির জš§ আপনি দেন নাই। এাঁ আন্তর্জাতিক নদী। আন্তর্জাতিক নদীতে আপনি এক তরফা ভাবে উজানে বাঁধ দিয়ে আপনি পানি প্রত্যাহার করতে পারেন না।

সুতরাং আপনি পানি ছাড়ুন। নয়তো এদেশের মানুষ বাধ্য হবে আন্দোলন করতে। ’ ইন্দ্রিরা গন্ধি মাওলানা ভাসানীর চিঠির জবাবে তাকে থ্রেট করেছিলেন। ‘আপনি কি করে এটা বলেন ১৬৯কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছি, এখন এটা ভেঙে ফেলবো? আর আপনারা ভুলে গেছেন ১৯৭১ এ আমরা আপনাদের কে মুক্ত করেছি। ’ মাওলানা ভাসানী আবারো চিঠি লিখলেন-‘যদি আপনি ফারাক্কা উইড্রো না করেন তাহলে আপনার বাবা এবং আপনার দাদার কাছ থেকে যে রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়েছি তাতে আমি যেতে বাধ্য হব।

’ বন্ধুগণ, তৎকালীন সরকার ১৯৭৭ সালের সরকার এবং সরকার বহির্ভূত জনগন ঐক্যবদ্ধ হবার কারণেই ১৯৭৭ সালের ১৭ই মে মাওলানা ভাসানি এত বড় লংমার্চ করতে পেরেছিলেন। সেই লংমার্চের ছবি এবং জনরোষ পৃথিবীর দেশে দেশে তৎকালীন সরকার প্রচার করে বললো এই আমার দেশের অবস্থা। যদি আর্ন্তাতিক বিশ্ব এতো বড় অবিবেচনার বিরুদ্ধে তোমরা যদি তোমরা ভূমিকা না রাখো এখানে যদি রক্তগঙ্গা বয়ে যায় এর দায়ি এই জনগন থাকবেনা এবং পৃথিবীর দেশে দেশে আমাদের পক্ষে ভোট হয়েছিলো এবং ১৯৭৭ সালে প্রথম পানি চুক্তি হয়েছিলো, এবং এই এটি আব্বাস সেদিন সই করেছিলো এবং পৃথিবীর চাপে বাধ্য হয়েছিলো ৬৩ কিউসেক পানি ভারত দেবে এবং ২৭ কিউসেক পানি ভারত নেবে। কিন্তু ভারতের এটা সহ্য হয় নাই। তাই ভারতের শিষ্টাচার সেদিন তাদের পত্রিকাগুলোতে কিরূপ ছিলো তার হেডিং দেখেন- ‘যুগান্তর’ ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ এর সম্পাদকীয় হেডি: ঘাড় বেঁকিয়ে চলে গেল বাংলাদেশ।

এখানে এক যায়গায় বলছে একমাত্র বেঈমান ছাড়া একথা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যদি বাংলাদেশের পাশে এসে না দাঁড়াতো তবে ওপারের সাধারণ মানুষের দুর্ধশা চরমে পৌঁছাতো। এছাড়া অনেক ল্যাংগুয়েজ আছে। ‘যুগান্তর’ ২৩ অক্টোবর ১৯৭৬: শিরোনাম: এবার ঘরে ফেরো বাংলাদেশ। একটা চোট খেলো বাংলাদেশে। বড় আশা নিয়ে সে গিয়েছিলো সে রাষ্ট্র সংঘে।

সেখানে নাকি সুরে কাঁদলে সোনা-বাচা বলে সবাই তাকে জড়িয়ে ধরবে। ফারাক্কার জলের বন্যায় নাকি বাংলাদেশ ভাসবে। আর ভারতের ভাগ্যে জুটবে সানকি ধোঁয়া পানি। আরো অনেক আছে। হেংলার মতো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশীরা......।

এখন কোন চাচার লুঙ্গি ধরে বাংলাদেশ টানাটানি করবে? এটা পত্রিকার ভাষা। বাংলাদেশকে ফরাক্কা পানি দেবে কিন্তু প্রয়োজনের বেশি নয়। পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতাকে শুকিয়ে নয়। দরোজা খোলা আছে চলে এসো বাংলাদেশ! আলোচনায় বসো। তোমার ন্যায্য অংশ বুঝে নাও।

পলিট্রিক্স করোনা ফয়দা নেই। এগুলো তাদের ল্যাংগুয়েজ। আনন্দ বাজার ২৮ আগস্ট ১৯৭৮: শিরোনাম: বাংলাদেশের নতুন আব্দার। আনন্দ বাজার ২৯ আগস্ট ১৯৭৮: শিরোনাম: শিশুর বায়না আর যায়না। ভিতরে এক জায়গায় লিখছে- গায়ে হাত বোলালে বিড়াল রোয়া ফলায়! পায়ে মাটি মিললে সে আচঁড়াতে শুরু করে।

‘সত্যকথা’ ০৮ আগস্ট ১৯৮০: শিরোনাম: বর্বাত হোক ফারাক্কা। এখানে এক জায়গায় লিখছে, প্রতিবেশি বাংলাদেশের শুভবুদ্ধির ্উপর নির্ভর করে সম্পাদিত হয়েছিলো ফারাক্কার চুক্তি। তাতে গঙ্গা জলের বেশির ভাগ পেয়েছে বাংলাদেশ। বঞ্চিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রতিবেশিকে উদারতা দেখানোর ফলে হড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এদেশের অগনিত মানুষ।

ফারাক্কা যখন হয়েছিলো তখন দাতা কর্ণ সেজেছিলো নয়াদিল্লি। ভেবেছিলেন ঢাকার মাথায় বেশি পরিমান পানি রাখলে তাকে ঠান্ডা রাখা যাবে। কু-বুদ্ধির বদলে সেখানে গজাবে সু-বুদ্ধির অঙ্কুর। আরো অনেক। আমি আপনাদেরকে বলি আমেরিকার সাধীনতা যুদ্ধে আমেরিক কে ফ্রান্স সহযোগীতা করেছিলো।

আমেরিকা স্বাধীন হয়েছিলো। স্বাধীন হবার পরে ফ্রান্স আমেরিকাকে ঝঃৎধপঃঁ ড়ভ খরনধৎঃু উপহার দিয়েছিলো। যার তাদের গর্ব। আমাদের কি উপহার দিয়েছিলো ভারত? আমাদের ফারাক্কার পানি বন্ধ করে দিয়ছিলো। আমাদের বেরিবাড়ি নিয়ে নিয়েছিলো মাত্র তিন বিঘা করিডোর দেয়ার জন্যে।

আমাদের সমস্ত নদীগুলো শুকিয়ে মেরেছে। সমস্ত কল-কারখানার নাট-বল্টুগুলো খুলে নিয়ে গেছে। এখানো আরো ব্যাপার আছে। ভারত তার নিজস্ব পলিট্রিক্স করেছিলো। এই সাব কন্ট্রিনজেন্ট এ তার সাব রাষ্ট্রগুলো তার করিদ হতে হবে।

সবাই তার করদ হতে পারতো। নেপাল হতে পারতো ভূটান হতে পারতো, শ্রীলঙ্কা হতে পারতো। শুধুমাত্র একটা মাত্র রাষ্ট্র ভারতের করদ হতোনা সেটা পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে আপনারা জানেন ভারতে চালের কেজি কতো ছিলো আর পাকিস্তানের চালের কেজি কতো ছিলো। বাংলাদেশে কতোগুলো সাইকেল ফ্যাক্টরী কবিতার মতো বলে দিতে পারি।

সোহরাব, হাম্বার এসব সাইকেল আমাদের এখানে তৈরী হতো। ১৯৮৪ সালেও এই ঝুমঝুম পুরে যে কাপড় তৈরী হতো তা মাথায় করেও ইন্ডিয়ায় যেত। খাদ্যও যেত। সুতরাং ভারত ও পাকিস্তান এক উদিয়মান রাষ্ট্র ছিলো। রাষ্ট্রের দুই ফ্রন্টে ভারত যুদ্ধ করে পারতোনা।

এ কথা সত্য যে পশ্চিম পাকিস্তান আমাদেরকে নির্যাতন করেতা, শোষণ করতো। পাকিস্তানের সাথে আমরা লড়াই করেছি সত্য। কিন্তু সে লড়াই প্রকৃতপক্ষে যে দিকে নিয়ে যাবার আমরা সে দিকে যেতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। কেন? ভারত তার নিজস্ব রাজনীতি করেছিলো। পাকিস্তান ভেঙে দিয়েছিলো।

তারা এদেশের স্বাধীনতায় হেলপ করে নাই। আমি যদি প্রশ্ন করি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের লাভ কি? ভারত কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা রাখবে? এই প্রশ্নের দু’টো উত্তর দিতে হবে, হয় ভারতকে বলতে হবে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের সংবিধানে আছে পৃথিবীর যেখানেই স্বাধীনতার সংগ্রাম সেখানেই ভারতের লজিস্টিক সাপোর্ট। সে কারণেই ভারত বাংলাদেশ কে সহযোগীতা করেছে। অথবা আপনাকে বলতে হবে ভারত পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দিয়েছে কেননা সে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করে পারতো না তার স্বার্থে। আমি যদি প্রথম স্বার্র্থটা পর্যালোচনা করি- ভারত যদি স্বাধীনতাকামী হবে, তবে যেখানেই স্বাধীনতার সংগ্রাম সেখানেই ভারতের সমর্থন, তাহলে আমিতো প্রশ্ন তুলবোই আসামের সাতটি রাজ্যে কি হচ্ছে? কাশ্মিরে কি হচ্ছে? স্ধাীনতার সংগ্রাম, সেখানে আপনার সমর্থনের হাতটা কোথায়? জুলেগারে কি হয়েছে, হায়দ্রাবাদে কি হয়েছে? তাদের গণতন্ত্রের আচারণ আমরা একটু পর্যালোচনা করিÑ১৯৪৭ সালে বৃটিশ ভারত ভাগ করার আগে লাহোর প্রস্তাব হয়েছিলো।

সেই প্রস্তাবে কতগুলো নীতিমালা ছিলো। তারা বলেছিলো- রাষ্ট্রের যেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান থাকবে সেখানে তারা পৃথক পৃথক রাষ্ট্র হতে পারবে। সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু আলাদা রাষ্ট্র হবে। সে অনুযায়ী আমরা বাংলার মানুষ আলাদা রাষ্ট্র হতে পারতাম, পশ্চিমবঙ্গও ইচ্ছে করলে আলাদা রাষ্ট্র হতে পারতো। কিন্তু বাংলার কোন নিজস্ব রাজনীতি ছিলোনা।

তাই মুসলিম লীগের প্রেক্ষিতে সর্বভারতীয় রাজনীতির দেন-দরবার কে করবে? তাই মুসলীমলীগের আমরা সেদিন একটা রাষ্ট্র করেছিলাম এটা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু ওখানে বলা ছিলো যে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম তারা আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হতে পারবে। কিন্তু তিনটা জায়গায় ছিলো সমস্যা। জনগণ মুসলমান কাশ্মিরে কিন্তু শাসক হরি শিং। আবার হায়দ্রাবাদ এবং জুনেগারে জনগণ হিন্দু শাসক মুসলমান।

কিন্তু বৃটিশ ’ল অনুযায়ী শাসক যে সিদ্ধান্ত নেবে ঐ রায়ই কার্যকর হবে। কাশ্মির, হায়দ্রাবাদ এবং জুনেগার এই তিনটি রাষ্ট্রের ব্যাপারে বৃটিশদের বক্তব্য ছিলো যে এই তিনটি রাষ্ট্রে শাসক যা বলবে তাই হবে। শাসক যদি স্বাধীন চায় ঐ রাষ্ট্র স্বাধীন হবে, যদি ঐ রাষ্ট্র ভারতের থাকতে চায় তবে ভারতের হবে, যদি পাকিস্তানের সাথে থাকতে চায় তবে পাকিস্তানের হবে। আমরা দেখলাম হায়দ্রাবাদ এবং জুনাগাড়ের শাসক বলেছিলো আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র হবো, ভারত বলেছিলো- এখানকার জনগন যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। এখানে শাসকের সিদ্ধান্ত নেয়া হলোনা।

এখানে জনগণ হিন্দু জনগন ভারতের হয়ে গেল। কাশ্মিরের প্রশ্নে কি হবে? শাসক যে সিদ্ধান্ত নেবে ভারত সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চায়। সেখানকার জনগন বলল ন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।