আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ। শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতি। নির্লজ্জতার পাঠচক্র।

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
ডক্টর আকবর আলী খানের 'পরার্থপরাতার অর্থনীতি'র কোন এক অধ্যায়ে কোটেশন পড়েছি 'তিন প্রকারের অর্থনীতি' নিয়ে। ভাল অর্থনীতি (নো ঘুষ, বাট ওয়ার্ক), মন্দ অর্থনীতি (নো ঘুষ, নো ওয়ার্ক) এবং শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতি (ঘুষ বাট নো ওয়ার্ক!)। হাড়ে হাড়ে আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছেও বটে! গত বছর। স্থানীয় কর অফিসে। যথারীতি ট্যাক্স দিয়েছি, রিটার্নও।

ডিসেম্বর নাগাদ একটা ট্যাক্স সার্টিফিকেট দরকার হল। ভালর ভাল হল চাহিবা মাত্র এটা পাব। চেয়েছি- নয় ছয় শুরু হল তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী মহোদয়ের! কালকে আসেন। এসব। অর্থাৎ, পাবনা।

ভাই এটা আমার দরকার। একটু আর্জেন্ট দেন। ফি টি লাগলে নিয়েন সমস্যা নাই। স্পস্টত: ঘুষের প্রস্তাব দিলাম। কিঞ্চিত আভা ছড়ানো বদনে বলল- আসেন কালকে।

পরদিন গেলাম। ৩ ঘন্টা ঘুরিয়ে, লাঞ্চের পর ছাড়া স্যারের সাইন হবেনা এসবের ঝক্কি গিলিয়ে কাজটা করল সে বটে! শুয়োরের বাচ্চা বলতে বলতে বিদায় নিলাম। নগন্য ৩য় শ্রেনী এবং উপরে নীচের লক্ষ লক্ষ অন্যান্য এসব শ্রেনীর জঘন্য উৎপাতে নাগরিক প্রাণ ওষ্ঠাগত। কর, বিচারালয়, ভূমি, সাধারন প্রশাসন, পুলিশ, শুল্ক, রেল, স্থল, জল ও বিমানবন্দর, সড়ক, হাসপাতাল সহ প্রায় সকল সরকারী সেবা বা ব্যবস্থাপনাখাতে এ দস্যুতা প্রায় জায়েজ ও রুটিন কাজে পরিনত হয়েছে। নাগরিককে কিছু ফির বিনিময়ে বা ফ্রি সেবাদানের মৌলিক অক্ষরেখাচ্যুত হয়ে এসব স্থান জনদুর্ভোগের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।

হাতের কাছে কাউকে পেলেই হল। ঘুষ দেয়াই যথেস্ট না! বাড়তি রাজনৈতিক যোগ বা সচিবের ভাগ্নের ফুফাতো শ্যালক গোছের কিছু না হলে আপনার চেয়ে অসহায় ভূমন্ডলে কেউই নাই। এ ধরনের শুয়োরদেরকে পালার জন্য, তাদের প্রনীত, লালিত, পালিত একটি অর্থনীতির মধ্যে আমরা বসবাস করছি। এটাই শুয়োর ও তাদের বাচ্চাদের অর্থনীতি। বড্ড নির্লজ্জ।

বেহায়া। বে-শরম অর্থনীতি। এ অর্থনীতি কতগুলি গালভরা শব্দ প্রচার করে। প্রবৃদ্ধি তার মধ্যে প্রধান। মোট দেশজ আয় ৬% বেড়েছে বলে তারা তাকধিন তাকধিন করে নাচতে থাকে।

আপন পশ্চাতদেশে থাপ্পড় মাড়তে থাকে। বলি, ১০ জন চোর ফুলে ফেঁপে মোট দেশজ আয় ২গুন হলেই বা আইজুদ্দিনদের লাভ কি? এরা বাজেট করে। কিসের বাজেট? চুরির বাজেট। বার্ষিক উন্ণয়ন কর্মসূচীর টাকার যে ৭৫% মিলেমিশে চুরি হয় তা তারাই গবেষনা করে দেখিয়েছে। পাউবো, এলজিইডি, সওজ, সামরিক বেসামরিক ক্রয়ের নল দিয়ে এ টাকা কর্মচারী, আমলা, ঠিকাদার, মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় রাজনৈতিক (তথাকথিত) কর্মী, কনসালট্যন্টদের পেটে যায়, যাচ্ছে, যাবে।

তারপর ঘোষনা দিয়ে কালো চোরকে সাদা করা হবে। কালোটাকা সাদাকরন! ছি! ছি!! ছি!!! রাস্ট্র কি করে এমন কুপ্রস্তাব দেয়। কালোটাকা জব্দ করে তা কোষাগারে প্রেরন করাই তো রাস্ট্রের কাজ জানতাম। শুধু তা না। হক হালালি ট্যাক্স ২৫% (ব্যক্তি) থেকে ৪৫% (সংস্থা)।

আর চোরদের মাত্র ১০%। তাহলে সবাই মিলে চুরি করাই তো বেহ্‌তর! বৈদিশিক বিনিয়োগ এ অ-অর্থনীতির আরেক বিরাট মুলা। জাতীর সামনে রুটিন করে যা ঝুলানো হয়। গাধার বাচ্চাদের কে বুঝাবে যে দেশেই অলস টাকার পাহাড় জমেছে? ৫০শেয়ারের ১টা লটের জন্য ১০০টা পর্যন্ত এপ্লাই করছে মানুষ। স্থানীয় বিনিয়োগ ঠিকঠাকমত হলেই ৫ বছরে চেহারা পাল্টাবে আমাদের।

আর উল্লুকের মত চায়না থেকে জুতারব্রাশ আনার নীতি কায়েম রেখে তা হবেনা। শতভাগ ট্যারিফ উঠায়ে দেওয়ার উলঙ্গ অর্থনীতি আমাদের জন্য নয় এটাও বুঝতে হবে। বিশ্বসভা যদি চোখরাঙ্গায় 'দরজা মুক্ত কর' বলতে হবে, তাহলে বল যে মানুষও মুক্তভাবে চলাচলকরতে পারবে। তোমার গাড়ী বিনাবাধায় আমার দেশে আসছে, আমার মানুষ (যা আমার কাছে বেশী আছে, বা যা উৎপাদনে আমি দক্ষ) কেন তোমার দেশে বিকোতে পারবেনা? (চলবে)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.