আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভিন্ন ধর্মে প্রার্থনার ভাষা

আমি একজন অরাজনীতিবিদ
‘ইসলাম’ শব্দের অর্থ হলো: আত্মসমর্পণ ও শান্তি। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণেই শান্তি। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের অর্থ হলো তাঁর নির্দেশ মতো চলা। আর তাঁর নির্দেশিত পথ হলো সত্য ও ন্যায়ের পথ। এই কারণেই কোরআন ও হাদিসে নৈতিকতার উপর অনেক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সততা ও ন্যায়বিচারের উপর ইসলাম এত বেশি জোর দিয়েছে যে, হযরত মোহাম্মদ (স বলেছেন, আল্লাহর কাছে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রিয় যিনি ন্যায়পরায়ণ নেতা। কোন্ কারণে একজন লোক বেহেস্তে যাবে?- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর প্রতি ভয় ও মানুষের প্রতি ভালবাসার জন্যে। তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তিই খাঁটি মুসলমান যাঁর মুখ ও হাত থেকে মানুষ নিরাপদ। তিনি আরও বলেন, ঐ ব্যক্তি মোমিন নয় যে চুরি করে, মদ খায়, ব্যভিচার করে, পরের জিনিস দখল করে বা আত্মসাৎ করে। ঈমানদার ব্যক্তি ছাড়া কেউ স্বর্গে যাবে না এবং যিনি অন্যকে ভালবাসেন না তিনি খাঁটি ঈমানদার নন।

যে মানুষের প্রতি সদয় নয় আল্লাহ্ও তার প্রতি সদয় নন। মানুষের প্রতি কোরআনের নির্দেশ: নিজের বা পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও সে যেন ন্যায়বিচারই করে। আল্লাহতায়ালা অমিতব্যয়ী ও মিথ্যাবাদীকে হেদায়েত করেন না। শিখ ধর্ম অনেকটা ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সমন্বয়। এ দুটি ধর্মের নৈতিক শিক্ষা দ্বারা শিখ ধর্ম বিশেষভাবে প্রভাবিত।

এ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুত নানক বলেন, চারটি উপায়ে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়: (ক) সাধুসঙ্গ, (খ) সততা, (গ) সন্তোষ, (ঘ) ইন্দ্রিয় সংযম। প্রত্যেকের হৃদয়েই ঈশ্বর লুকিয়ে আছেন এবং তাঁর আলো দ্বারাই সবার হৃদয় আলোকিত হয়। কোন্ গোত্রে কার জন্ম তা ঈশ্বর জানতে চাইবেন না। তিনি জানতে চাইবেন, জীবনে কে কি করেছে। গুরু অর্জুন সিং বলেছেন, ষাটটি তীর্থস্থানে গিয়ে স্নান করা ও প্রসাদ দেয়ার চেয়ে মানুষের প্রতি সদয় হওয়া অনেক শ্রেয়।

গুরু অমর দাস বলেন, নিজের হৃদয়ের সাথে বিতর্ক না করে যে অন্যের সাথে বিতর্কে নামে সে শুধু সময়েরই অপচয় করে। গুরু নানক বলেন, অস্ত্র দিয়ে নয়; বরং ঈশ্বরের বাণী ও মানুষের প্রতি ভালবাসা দিয়েই সবকিছু জয় করা সম্ভব। সততা, ধৈর্য ও ধ্যানই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। প্রত্যেক ধর্মেই প্রার্থনা আছে। আর এই প্রার্থনায় সর্বত্রই সত্য ও ন্যায়ের পথ এবং মানুষের মঙ্গল কামনা করা হয়।

কয়েকটি ধর্মের প্রার্থনার ভাষা নিম্নে প্রদত্ত হলো। ইহুদিদের প্রার্থনা: প্রভু, আমাদেরকে পাপ, অপরাধ, লোভ ও ঘৃণার পথে পরিচালিত করো না। আমাদের ভিতর থেকে অন্যায়ের প্রতি আকর্ষণ দূর করো এবং মঙ্গলের সাথে জড়িত থাকার তৌফিক দাও। খ্রিষ্টানদের প্রার্থনা: হে প্রভু, আমাকে তোমার সত্যের পথে পরিচালিত কর। আমার সম্মুখে তোমার পথ সহজ ও সরল করে দাও।

গোপন ত্রুটি থেকে তুমি আমায় নির্মল করো। তোমার দাসকে দম্ভের পাপসমূহ থেকে বিরত রাখো এবং আমার উপর তাদেরকে কর্তৃত্ব করতে দিও না। অবিচার থেকে আমাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মল করো এবং পাপ থেকে পবিত্র করো। ঈশোপনিষদের একটি প্রার্থনা: হে পথ প্রদর্শক দেদীপ্যমান প্রভু, বিশ্বে বয়নকৃত সব তত্ত্বই তুমি জান। সরল পথে আমাদের সেই আনন্দের অভিমুখে নিয়ে যাও।

বক্র পথে গমনকারী পাপকে তুমি আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দাও। আমরা নম্রবাণীতে বার বার তোমার কাছে মিনতি করছি। কোরআন শরীফের প্রথম সুরা আল-ফাতেহা একটি প্রার্থনা। তাতে বলা হয়েছে: সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য, যিনি অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু, (যিনি) কর্মফল দিবসের প্রভু, আমরা কেবল তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি, আমাদের সরল সঠিক সত্য পথে পরিচালিত করো, তাদের পথে যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, যারা তোমার ক্রোধে পড়েনি এবং বিপথে যায় নি। (হে প্রভু আমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করো।

) বৌদ্ধদের মূল প্রার্থনা: সকল প্রাণী সুখী হোক, শত্রুহীন হোক, অহিংসিত হোক, সুখী আত্মা হয়ে কাল যাপন করুক। উপরের আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, অপরের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা, হিংসা ইত্যাদি যথার্থ ধর্মবোধের পরিচয় নয়। মনুসংহিতায় বর্ণিত ধর্মের দশটি লক্ষণ অথবা গীতায় উল্লেখিত ছাব্বিশটি মহৎ গুণ অথবা গৌতমবুদ্ধের অষ্টমার্গ অথবা বাইবেল, কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত ধার্মিক ব্যক্তির অপরিহার্য গুণাবলির কথা যদি আমরা স্মরণ রাখি তা’হলে দেখব প্রতিটি ধর্মই মানুষকে ন্যায়পরায়ণ, সদাচারী, কর্তব্যপরায়ণ, উদার ও সংযমী হতে শিক্ষা দেয়; ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় প্রকার কর্তব্য সম্পাদনে মানুষকে সমানভাবে সচেতন করে তোলে এবং জীবনের চরম মূল্যগুলোকে লাভ করে নিজের চারিত্রিক পূর্ণতা লাভে তাকে উদ্বুদ্ধ করে। বস্তুত ধর্ম নয়; বরং ধর্মান্ধতাই মানুষকে সংকীর্ণমনা, ক্ষুদ্রচেতা, স্বার্থপর ও নির্বিচারী করে তোলে। প্রফেসর ড. কাজী নুরুল ইসলাম সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.