ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই তোমার সীমানায়
আগামী ১লা জুলাই হতে জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সচিব কমিটির মতামতের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন একপ্রকার নিশ্চিতই বলা যায়। কমিশন বর্তমান সর্বনিম্ন বেতন ২ হাজার ৪ শত টাকা হতে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ২৩ হাজার টাকা হতে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধিসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এর জন্য অতিরিক্ত খরচ হবে ৮৪৯০ কোটি টাকা।
পূর্বের তুলনায় শতকরা ৩৫ ভাগ বেশী। এই অতিরিক্ত ব্যয় মিটাতে সরকার নির্ভর করবে সম্পূর্ণ রাজস্বের উপর। তাই অবশ্যই জনগণের উপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়াতে হবে। শুধু তাই নয় ট্যাক্স আহরনের অনেক নতুন ক্ষেত্র তৈরী করে তা জনগণের উপর চাপাতে হবে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দাপীড়িত মানুষ এই বর্ধিত ট্যাক্স দিবে কি করে? বর্তমানে যারা সরকারি চাকুরি করছেন তাদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু যারা বেকার, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা শিল্প কল-কারখানায় চাকুরি করেন তাদের কথাও তো সরকারকে ভাবতে হবে।
মাত্র ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর কথা ভাবার সঙ্গে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ১৪ কোটি মানুষের কথা মনে রাখতে হবে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে তথা জনপ্রশাসনকে গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে কখনোই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে নাই।
বেতন কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে বৎসরে অতিরিক্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই খুব মজবুত নয়। তদুপরি, মন্দার এই সময়ে এতো বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান করা মোটেও সহজ নয়।
আরেকটি বাধা হল- মূল্যস্ফীতি। পূর্বের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, বেতন বৃদ্ধির কথা শুনলেই আমাদের দেশে বাড়ি ভাড়া হতে শুরু করে চাল-ডালসহ সবকিছুর দাম হু হু করিয়া বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনে স্বস্তি আনাই যদি বেতন বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বর্ধিত বেতনের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ও যদি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেই থাকে তাহলে বেতন বাড়িয়ে কোনো ফল হবে না।
বরং মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই নিষ্পেষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্দশা আরও বৃদ্ধি পাবে।
মনে রাখতে হবে যে, বেতন বৃদ্ধির ফলে কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই উপকৃত হবেন। তাদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যা তুলনায় কিছুই নয়। কিন্তু তাদের বেতন বৃদ্ধির অভিঘাতে যদি নতুন করে মূল্যস্ফীতি ঘটে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সীমিত আয়ের কোটি কোটি মানুষ। এদের বড় অংশেরই আয় বাড়ার সম্ভাবনা নাই।
বরং এমন নারী-পুরুষের সংখ্যাও কম নয় যাদের আয়ের বর্তমান উৎসটিও খুবই নড়বড়ে। উদাহরণ হিসেবে দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, বেসরকারি চাকুরে-এমনকি গার্মেন্টসসহ রফতানীমুখি শিল্পখাতে কর্মরত বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করা যায়। এব্যাপারে বিশদ বলার প্রয়োজন নাই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সকল খবর ভালো করেই জানে বলে আমার বিশ্বাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।