আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারি মাল, দরিয়া মে ঢাল ।

নিজের সর্ম্পকে বলার মতো আমার কোন অর্জন নেই বহুল প্রচারিত,লোক মুখে উচ্চারিত এই প্রবাদ বাক্যের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় ,এর সততা উন্মোচিত হয় আমাদের সরকারি সম্পদ ব্যবহারে । সরকারি সম্পদ এমন ভাবে ব্যবহার করা হয় যেন ব্যবহারকারি মনে করে সম্পদ গুলো তিনি পেয়েছেন উত্তরাধীকার সূত্রে । বস্তুত উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া সম্পদও লোকজন এমন ভাবে ব্যবহার করেন না ,যেমন করেন আমাদের সরকার সংশ্লিষ্ট সর্বমহল । পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে একেবারে সরকারের উচ্চমহল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় এই সম্পদের অপব্যবহারের হিড়িক পড়তে দেখা যায় । তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ।

একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মাসিক উপরি পাওনা হিসেবে একটি গাড়ি দেওয়া হলে ,সাথে যদি জ্বলানি খরচও ফ্রি থাকে দেখা যায় সেই গাড়ী অযথা ব্যবহার হতে । সরকারি প্রয়োজনে ব্যবহার না হয়ে সেই গাড়ি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার শালী,শশুর থেকে শুরু করে এমন কোন স্বজন বাকী থাকেন না যিনি সেই গাড়ির অপব্যবহার করেনা । করবে না কেন ? জ্বালিনি খরচ যে আসবে সরকারি তরফ থেকে অতএব ''নো চিন্তা ডু ফুর্তি''। জ্বালানি তেলের এরূপ অপব্যবহারের জন্য একদিকে এই নবায়নঅযোগ্য তেলের পরিমাণ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে ,পাশাপাশি সরকার প্রতিনিয়ত জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি করে জনগনের সরকারের তকমা থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যায়। রাষ্ট্রের এই রূপ সম্পদের অপব্যবহার এক প্রকার চরম দুর্নীতির শামীল ।

যেহেতু নীতির বরখেলাপ করাও এক ধরনের দুর্নীতি ,তাই এটিও একটি দুর্নীতি । একজনের ব্যক্তি গত গাড়ি বা আলিশান বাড়ীর এবং সরকারি গাড়ি বা বাড়ির দিকে থাকলে কিছুটা আচঁ করা যায় । রাস্তায় একজনের ব্যক্তিগত গাড়ি কি জকঁজকে দেখা যায় আর একটি সরকারি গাড়ি দেখতে লাগে যেন বহু বছর অতিক্রম করে চলছে কোন ধোয়া মুছা হয় নাই । এখানে সদ্যপ্রয়াত বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদের একটি কলাম থেকে উদ্ধৃতি করলে সততা পাওয়া যাবে ''পরে আরেকবার ঢাকায় এসে বাংলাদেশের ট্রেনের দুরবস্থা দেখে মার্ক টালি (বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক )খুব ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছিলেন। আমরা একটা লেভেল ক্রসিংয়ে আমার গাড়িতে বসেছিলাম।

ট্রেন আসছে দেখে মার্ক গাড়ি থেকে নেমে ক্রসিংয়ের গেটের কাছে ছুটে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, 'এই ট্রেনটা কী কেউ ধোয় না, এটা এত ময়লা, এত হতশ্রী। ' পরে আরো কয়েকটা ট্রেন দেখে তিনি হতাশ হয়ে বলেছিলেন, 'তোমাদের প্রশাসক আর রাজনৈতিক নেতারা অযোগ্য না হয় অসভ্য (আনকালচার্ড)''(কালের কন্ঠ ১১/১০/১২) । অর্থাৎ সরকারি গাড়ি, সম্পদ গুলো অনাদর আবহেলায় ব্যবহার হয় । যদিও এখনে একক ব্যক্তির কোন দায় নয় ,তারপর সরকারি মাল সব খানে ,সব ক্ষেত্রে একই অবহেলার শিকার ।

এবার আসি আলিশান বাড়ির দিকে । যেমন আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব যতদূর জানি শহরে থাকেন তারঁ আগের জনও ছিলেন । আগের জনতো রীতিমতো বিশাল সম্পদের মালিক,শহরে নিজস্ব বাসাবাড়ী আছে । একজনের থাকতে পারে ,সেখানে আমার আলোচনা নয় । আমার উদ্দেশ্য হল বলা ,যে শহরে যেহেতু বাসা-বাড়ি একজন চেয়ারম্যানের তাই স্বাভাবিক ভাবে বলা যায় অনেক সুন্দর ,জাকঁজমক পূর্ণ হবে ।

কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের অফিসের অবস্থা বা হাল হকিকত দেখলে মনে হয় এটা ইউনিয়ন পরিষদের অফিস না, লটর -পটর খুচরা বিক্রয়ের কোন দোকান । আমার বিশ্বাস নিশ্চয় সরকারের তরফ থেকে প্রতিবছর না হলেও একটা এ্যামাউন্ট আসে অফিস সংস্কারের জন্য । কিন্তু সেই টাকা যায় কই ? আর যদি সংস্কার হয়েই থাকে তবে এই অবস্থা কেন ?অথচ নিজের আলিশান বাড়ি কি না সুন্দর আর এ দিকে সরকারি মাল অযথা অবহেলায় পড়ে আছে । এটা শুধু আমার এই ইউনিয়নের অবস্থা নয় ,দেশের প্রতিটা ইউনিয়নের এরকম হচ্ছে । এটা কি দুর্নীতি নয় ? এখন এই যে এতো অপব্যবহার এই টাকার যোগান আসে কই থেকে ।

প্রথমেই আসে সরকারে রাজস্ব আয় থেকে । সেই রাজস্বে আয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন ফকির এমন কি একজন পাগলও রাজস্ব আয়ের যোগান দাতা । মূসক ধার্য্য করে সরকার পণ্য ভোগের আগেই তার হক নিয়ে যায় । একজন পাগল কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে দু'টাকার পোলাউ খেলে সেখানেও ভাগ বসায় সরকার । বস্তুত কে পাগল আর কে পাগল নয় তা নির্ণয় করা সম্ভব নয় ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো বুঝাতো কষ্ট নয় ,যে এভাবে সংগৃহিত হয় সেই টাকা ,তবে কেন এই টাকার অপব্যবহার হবে ?। এখন প্রশ্ন হলো এর সমাধান কি ? বা এই মহা দুর্নীতি থেকে পরিত্রানের উপায় কি? হ্যাঁ যাদের উপরি পাওনা হিসেবে গাড়ির সাথে জ্বালানি বিনা মূল্যে দেওয়া হয় ,সেই বিনামূল্যে জালানির ব্যবস্থা রদ করতে হবে । প্রয়োজনে বেতন বৃদ্ধি করে হলেও । ফলে একদিকে জ্বালানির অপচয় রোধ হবে অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মিতব্যয়ী হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে । যখন নিজের টাকার খরচ করতে হবে তখন আর সুহাগ থকবে না ।

সুহাগের ভান্ডারে ভাটার টান পড়বে । সরকারি ভাবে বাড়ি না দিয়ে সেই বাড়ি বরং ভাড়া দিয়ে অনেক লাভের পথ সুগম হবে । একটি সাদামাটা সরকারি বাড়ির বাড়া বর্তমান কালে কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা হবে । এখন এই বাড়ি ভাড়া দিয়ে সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা একজন কর্মকর্তাকে প্রদান করলে সেই ব্যক্তির আনন্দে আর রাতে ঘুম হবে না । পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও বাড়তি ২ হাজার টাকার আয় হবে ।

(উৎস: অর্থনীতির যুক্তি তর্ক ও গল্প ,কৌশিক বসু ) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.