আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে র‌্যাব



র‌্যাবের হাতে আরও দুজন মারা গেল, নিহত দুইজনই বয়সে একদম তরুণ, কিশোরই বলা চলে, পলিটেকনিকের ছাত্র। জীবন কি - এটা বুঝে ওঠার আগেই তাদের প্রাণ দিতে হলো । ওই দুই ছাত্রের সহপাঠীরা বলেছেন, তাদের এই বন্ধু দু জন কোনভাবেই সন্ত্রাসী নয়। নিহতদের বন্ধুরা তাদের পক্ষে ভালো ভালো কথা বলবে- এটাই তো স্বাভাবিক। যেটা অস্বাভাবিক সেটি হচ্ছে, থানা পুলিশের মতো ছিদ্রান্বেষী সংস্থাও যখন বলে, নিহত দু’ জনের বিরুদ্ধে কোন মামলা কিংবা কোন অভিযোগ নেই, তখন আমাদের হাত পা ঘেমে ওঠে।

র‌্যাবের হাতে মারা যাবার পর যখন থানা পুলিশ বলে যে, নিহতরা নির্দোষ , তখন আমরা, যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই, অভিযোগ নেই, তারাও আতংকে ঠান্ডা হয়ে যাই- এই ভ্যাপসা গরমের রাতে। র‌্যাব কেবল ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের মারে - এতদিনের এই আত্মতৃপ্তি গলার কাঁটা হয়ে আমাদের কামড়াতে থাকে। যদিও এক্ষেত্রে র‌্যাব যথারীতি একটি গল্প শুনিয়েছে। টিভিতে দেখলাম রাস্তায় পড়ে আছে দুটো লাশ, লাশের পাশে দু’টি অস্ত্র। আমার সন্দেহটা এখানেই হয়।

অস্ত্র উদ্ধারের পর সেটি পুলিশের জিম্মায় না থেকে কেন লাশ দুটির পাশে রাখা আছে, সেটি কি কেবল ফটোসেশনের জন্য ? ওরা যে অস্ত্র বহন করছিলো - এটা প্রমাণের জন্য ? এজন্যই অস্ত্র রাখা আছে লাশের পাশে ? একটা সংস্থা যখন কারো মৃতুকে জাস্টিফাই করার জন্য রাজপথে লাশের পাশে অস্ত্র ফেলে রাখে, তখন বুঝতে হবে সংস্থাটি নিজেই জানে এই মৃতু্টা ততটা জাস্টিফাইড না। এখানে আমরা কীইবা বলতে পারি। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন কিংবা আল্লাহ , র‌্যাব এবং পুলিশ যা করে ভালোর জন্যই করে। এদেশে র‌্যাবের সমালোচনা করা আর আল্লাহর সমালোচনা- দুটো একই জিনিস। কেউ সেটা করেনা - অন্তত: প্রকাশ্যে না।

করলেও সেটি খুব বিপদজনক একটি ব্যাপার। এই দেশে র‌্যাব এখন ঈশ্বরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা বলতে পারি, আল্লাহ, তুমি এইটা কি করলা? র‌্যাব কোন ঘটনা ঘটালে আমাদের সেটি বলারও সাহস নেই। আল্লাহর সমালোচনা করলে - উনি তেড়ে আসেন না আমাদের মারতে। র‌্যাব আসে।

র‌্যাব ১, র‌্যাব ২, র‌্যাব ৩ – এই রকম অসংখ্য র‌্যাব আছে, যদিও এই দেশে ঈশ্বর নিদারুনভাবে একা ... আল্লাহ-১ , আল্লাহ ২ বলে কিছু নেই। কখন যে কোন র‌্যাবের কোন টিম কোথা থেকে এসে টেনে দিয়ে যাবে, এই আধা মেঘলা রাতে, গুলি করে ফেলে রাখবে রাস্তায়, পরদিন প্রেসে পাঠিয়ে দেবে আগে থেকে তৈরী করা প্রেস রিলিজ, আশীফ এন্তাজ রবি নামের এক কুখ্যাত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর, তার সহযোগিরা র‌্যাবের উপর অতর্কিতে হামলা করে। র‌্যাব এর পাল্টা জবাব দিলে ঘটনাস্থলেই রবি নিহত হয়। তার কাছ একটি দেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। পরের দিন মরবে আরেকজন , পুরো বাক্যটা একই রকম থাকবে, কেবল আশীফ এন্তাজ রবি জায়গায় অন্য কারও নাম বসবে।

কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ হবে। এই সংবাদ প্রকাশিত যেদিন হয়েছে- সেই একই দিনে অন্তত: দুটি ক্রস ফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। র‌্যাব কি ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে যাচ্ছে ? নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির কথাও র‌্যাব শুনছে না ? আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এটি একটি অপসংস্কৃতি, এটি একদিনে বন্ধ হবে না। র‌্যাব যাতে মানুষ না মারে , সেজন্য কি একটি নির্দেশ যথেষ্ট না? মন্ত্রি যখন বলেন, এটি ধীরে ধীরে বন্ধ হবে, তখন আমাদের মনে সেই আশংকায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে র‌্যাব কি আসলেই ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে উঠছে ? আমরা একটা ভয়ংকর সমাজে বসবাস করছি। একটা গাঢ় অন্ধকার ধীরে ধীরে চারিদিক থেকে আমাদের গ্রাস করছে- এটি কি আমরা বুঝতে পারছি ? খুব সম্ভবত: এটিই পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে খেলাচ্ছলে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।

এখানে চাল ,আটা ,রুটি, ময়দা, সুজি কিংবা বোতলজাত পানি কোন কিছুই সস্তা নয়, সস্তা কেবল মানুষের জীবন। দুটি বাস পাল্লাপাল্লি চলতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়ছে , অননুমোদিত লঞ্চে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে লঞ্চ ডুবছে, আবহাওয়ার সংবাদ সময়মতো না পৌছায় ঝড়ের কবলে পড়ছে মানুষ, ফলত: মানুষ মরছে, ইদুরের মতো, মশার মতো , আচমকা এক সাথে অনেকজন অথবা ধুঁকে ধুঁকে ... কেন ঘটছে এসব- কারণ এখানে - এই মৃতু্ উপত্যকায় মানুষের জীবন ঢের সস্তা হয়ে গেছে রাষ্ট্র যখন এইসব মস্তানি অনুমোদন করে তখন গোটা সমাজের চেহারা এমটাই হয়। সমাজের মানুষগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে ওঠে হিংস্র , বদ্ধ উন্মাদ ... এই ক্রসফায়ার ট্রেন্ড চালু করেছিলো জামাত বিএনপি সরকার, যাদের শরীর বাংলাদেশে আর মাথা আছে মধ্যপ্রাচ্যীয় কোন মরুও দেশে যেখানে প্রকাশ্যে মানুষের গলাকাটা হয়। সবার উপরে মানুষ। মানুষের উপরে আর কেউ নেই- র‌্যাব তো নয়ই- এটা হয়তো র‌্যাব ভুলে গেছে - কিন্তু একজন আশীফ এন্তাজ রবি ( যে এখনও নিহত হয়নি কিংবা কাল আল্লাহ চাইলে এবং তাদের দয়া হলে হতেও পারে ) এটা ভুলে নি।

সবার উপরে মানুষ সত্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.