আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগ প্যারাডক্স............

আমার পরিচিত অনেকেই বলে আমার সাথে নাকি মানুষের চেয়ে জানোয়ারের মিল বেশী। তাই দয়া করে কেউ আমার কাছ থেকে মানুষের ব্যাবহার আশা করবেননা। প্রথমেই বলে নেই এইটা একটা হুজুগের ব্যাপার এরকম শুধু আমি না, অনেকেই ধারনা করছেন। তারা শাহবাগের মোড়ে যেয়ে দাড়াঁন নি বলে হয়তো তদের সংখ্যাটা নিরুপন করা যাবে না। কিন্তু অনেকই (এই অনেকের মধ্যে থেকে যারা জামাতের সমর্থক তাদের সংখ্যা বাদ দিয়েই ধরতে হবে) যে করছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এই আন্দোলন প্রথমে শুরু হয়েছিলো কিছু ব্লগারের মাধ্যমে। এই ব্লগাররা আগেও এরকম অনেক অন্দোলন করেছেন এই শাহবাগের মোড়েই। কিন্তু আজকের মত সাড়া মিলেনি। কিন্তু তাদের প্রতি আমার নৈতিক সমর্থন ছিল। কিন্তু এইবারের সাড়া যেন অন্যরকম মাত্রা পেল।

মানুষে মানুষে ছাড়িয়ে গেল। কোন সন্দেহ নেই যুদ্ধপরাধী বিচারের দাবি গত এক দশকে মানুষের মনে অন্যরকম একটি রেখাপাত করছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে এই গন জমায়েতটি অন্যরুপ নেওয়াতেই সন্দেহ তীব্র হয়ে উঠে। যাই হোক হুজুগের ব্যাপারটা বলার আগে কয়েকটা ব্যাপারে বলি। সেটা হলো আমাদের দেশের সাম্প্রতিক কালে বি,ডি আর হত্যাকন্ড এবং ১/১১ এই দুটি ঘটনাই যথেস্ট আলোচিত।

কিন্তু এই দুটি কেসেই হুজুগের মাত্রাটি ছিলো প্রবল। জরুরি সরকারের আমলে যখন উভয় পক্ষের সব রাজনিতীবিদ-দের দুর্নীতির দায়ে এক এক করে জেলে পোরা হচ্ছিল তখন আপামর জনসাধারন কে কোনভাবেই বোঝানো যায়নি একটি অগনতন্ত্রীক সরকার একটি দেশের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে। অনেকেই তো পারলে নিজের রক্ত লেখা বন্ড দেয়, ফখরুদ্দিন সরকার-কে আজীবন দেশ চালানোর ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সুখ-স্বপ্ন বেশিদিন সয়নি। অল্পদিনেই মোহ ভাঙ্গে জনসাধারনের।

তারপরে বিডিআর এর ঘটনা-টি স্মরন করার চেষ্টা করি। প্রথম দুই দিনে সেনাবাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত জনসাধারন তো পারলে ক্যান্টনমেন্টে যেয়ে ঠ্যাঙ্গানি দেয়। তখনো তাদের বোঝানো যায়নি সেনাবাহিনী যদি কোন অপরাধ করেও থাকে তাও তার ফল এমন ভয়ানক হতে পারে না। এটা ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের উপরে সরাসরি আঘাত। আর তার দুইদিন পরে আপামর জনতার চিন্তাধারা কিভাবে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিলো এটা সবার মনেই আছে।

লেখার পরিধি একটু বড় হয়ে গেলেও উপরের ঘটনা দুটি স্মরনে আনতেই হল। শুধু পাব্লিক সেন্টিমেন্টের একটু রকম সকম দেখানোর জন্য। আরেকটা ঘটনা কি বলব? না থাক বাদ দেই। আবারো আসি শাহবাগ প্রসঙ্গে, যারা আন্দোলন করছে তাদের প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই বরং অবশ্যই নৈতিক সমর্থনও আছে। কিন্তু যারা মনে করছে এই শাহবাগ আন্দোলন দিয়ে সবকিছু উল্টিয়ে যাবে তাদের সাথে একমত হতে পারছিনা।

কারন এরকম একটি আন্দোলনের রুপরেখা হাইলাইট হচ্ছে না। শুধু কিছু স্লোগান-ই মানুষের মুখে ছড়িয়ে পড়ছে আর কিছু আবেগী গল্প। অথচ যেখানে নাকি দরকার ছিলো তথ্য উপাত্ত সম্পর্কিত নিয়মিত পোস্টের ঝড়। যেটা নাকি আন্দলনের মাত্রা-কে অনেক গভীর করতে পারত। কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি সেরকম পোষ্টের সংখ্যা খুব-ই কম।

বরং এখানে কে কতদিন গেলো আর কতজোড়ে স্লোগান দিতে পারতেছে তারই গাল ভরা গল্প। সোজা কথা শো অফের একটা প্রবনতা। মানে আইফোন ৪ বাদ দিয়ে নতুন আইফোন ৫ নিলে যেই ভাবসাব অনেকটা যেন সেই রকমের। এখানে আগত জনতার মধ্যে ক্ষোভের চেয়ে যেন উৎসবের আমেজটাই চোখে পড়ে বেশী। অথচ এরকম একটা আন্দোলনের আন্দোলন কারীদের চোখে-মুখে প্রচন্ডভাবে ক্ষোভের আভাশ থাকবে এটাই হতো চরমভাবে স্বাভাবিক (একটা অংশের ভিতর হয়তো আছে।

কিন্তু বিশাল জনসমাবাশের তারা একটি ক্ষুদ্র অংশ । আমরা যদি নিকট অতীতে মিশরের তাহরীর স্কয়ার অথবা ভারতের দীল্লির আন্দোলন দেখি তাহলে এই একটা জায়গায় বিশাল পার্থক্য দেখতে পাই। কারন ঐখানে যারা আন্দোলন করেছিলো তারা সরাসরি ভাবে নির্যাতন এর স্বীকার হয়েছিলো অথবা তাদের আপনজনদের-কে নিরাপদ করার একটা প্রবল তাড়না ছিলো। পক্ষান্তরে এখানে শাহবাগের ঘটনায় আন্দোলনকারিদের সেই তাড়না অনুপস্থিত। কারন আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই হচ্ছে তরুন।

যাদের মধ্যে খুব কমই ঐ সময়কার ঘটনায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। সুতরাং তাদের মধ্যে ক্ষোভের পরিমান না থাকাটাই স্বাভাবিক। তারা আন্দোলনে যাবে, সেই আন্দোলনে অংশগ্রহনের ছবি ফেসবুকে আপলোড দিবে এই পর্যন্তই। কারন যারা অনেকেই এই ব্যাপারটাই ঠিকমত জানেনা যে 'এখানে যুদ্ধপরাধীর নয় বরং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার হচ্ছে' তাদের কাছ থেকে আর কতটুকু আশা করা যায়। নাহলে বাস্তবে সম্ভব হোক আর না হোক অন্তত আমাদের মানষিক শান্তির জন্য হলেও প্রকৃত যুদ্ধপরাধীদের সহ বিচার করার জন্য অনবরত স্লোগান উচ্চারিত হওয়া অবধারিত ছিলো।

কিন্তু ঐ যে বল্লাম এখানে আবেগের প্রধান্যই বেশি দিয়ে আন্দোলনের মেশিন চালানো হচ্ছে অনেকই বলছেন হোক এই আন্দোলন হুজুগের কিংবা অপরিনত কিন্তু আপনাদের সমর্থন দিতে বাধাঁ কোথায়। কোন বাধাঁ নেই আমরাও চাই যেকোনভাবেই হোক এই ইস্যুটার একটা শেষ দেখতে। কারন আমাদের হাতে প্রচুর সমস্যা এবং একেকটার চেয়ে একেকটা ভয়াবহ। চিন্তার বিষয় আমাদের বিশাল সংখ্যক একটি জনগষ্ঠি রয়েছে এইটা কি আমাদের সম্পদে পরিনত হবে নাকি ক্রমাগত ভাবে বোঝায় পরিনত হবে। আরেকটি ব্যাপারেতো নিঃসন্দেহে সবাই একমত হবেন যে আমাদের প্রানপ্রিয় ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য একটা নগরীতে পরিনত হচ্ছে।

অথচ কিছু করাতো দূরের কথা এখনো পর্যন্ত এটাকে কিভাবে বাসযোগ্য করা হবে সেই নিয়ে কোন ঐক্যমত তৈরী হলো না। এরকম জন গুরুত্বপূর্ন নান ইস্যু রয়েছে যেগুলা কোনটার চেয়ে কোনটা কম না। কিন্তু এই একটি 'যুদ্ধপরাধীর বিচার' এই ইস্যুটি মাঝখান দিয়ে এসে সবকিছু ভন্ডুল করে দিচ্ছে। পুরা জাতিকে বিভক্ত করে দিচ্ছে। তাই আমরাও মনে-প্রানে চাই এই ইস্যুটির একটি সুন্দর সফল পরিসমাপ্তি।

যাতে আমরা আমাদেরকে জাতি হিসেবে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু এইবার একটা অপ্রিয় কথা। আমাদের রাজনীতি-তে নাকি শেষ কথা বলে কিছু নেই। এবং এর প্রমান দুর এবং নিকট দুই অতীতেই পেয়েছি। সেইজন্য আমাদের কে যথেস্ঠ পরিমান চিন্তা-ভাবনা করেই ডিসিশান নিতে হয়।

কারন এখনো পর্যন্ত এরকম কোনো গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেনি যে এইবার আন্দোলনে দাঁড়িয়ে গেলেই এই ইস্যুটি চিরতরে কবরে যাবে। শেষ হইয়াও হইলনা শেষ এর মত কোনো ফ্লেভার যে থাকবেনা তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা। কারন চাইলেই এরপরেও এটার থেকে অনেক ইস্যুর উৎপত্তি ঘটানো সম্ভব। কারন এই ইস্যুটা যে সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। আর একটা কথা না বল্‌লেই না।

আমরা সাধারনত মুখে বলি যে, সুস্থ আলোচনা সবসময় কাম্য। কিন্তু প্রয়োগেই আমাদের সমস্যা। আমার সাথে মতের মিল না হওয়াতেই অনেকের কাছে আমি জামাত-শিবির এর নিষ্ঠাবান কর্মি অথবা কেউ কেউ আরেকটু ভদ্রভাবে জামাত শিবির ঘেষা বলার চেষ্টা করেনা বরং একেবারে বলেই ফেলে। আসলে এটা খুব একটা কমন ব্যাপার। কারন কারো সাথে মতের মিল না হলে তার মতামত-কে এইভাবেই পুরাপুরি কবর দেওয়া সম্ভব।

কারন তখন আর লজিক্যালি ডিফেন্ড করা লাগেনা। সো এক্সট্রা বোনাস। এই প্রসঙ্গে যুদ্ধবাজ বুশের সেই বিখ্যাত উক্তিটা মনে পড়ে, 'হয় আপনি আমাদের পক্ষে না হলে সন্ত্রাসের পক্ষে। যুদ্ধবাজ বুশ আর মাঝা-মাঝি কোন পক্ষ রাখেনি। বুশের এই ট্রিক্স নিন্দনীয় হলেও তা যে ক্ষেত্রবিশেষে অনেক কার্যকরী সেটা কিন্তু তখন প্রমানিত হয়েছে।

অনেক দেশই সন্ত্রাসী হবার ভয়ে নিরবে সমর্থন দিয়ে গেছে বুশের নীতিকে। কে জানে বুশের এই নীতি হয়তো অনেক্‌কে উৎসাহ দিয়ে থাকবে। যাহোক শিবির এর সাথে আমার সংস্রব কতটুকু এই প্যাড়ায় তা বিবৃত করার চেষ্টা করবো। প্রথম কথাই হলো আমি জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত শিবির এর কোনো ঘরোয়া কোন জমায়েতেও যাইনি। আর বড় বড় সমাবেশ তো দুরের কথা।

ওদের অর্গানোগ্রাম পর্যন্ত জানিনা। আর শিবির এর সাথে সবচে বড় বিভেদের জায়গাটি হলো আমার ইসলাম নিয়ে। কারন আমার জ্ঞানের পরিধি অনুসারে শিবির ইসলাম প্রসারের যে তরীকা বেচে নিয়েছে তা ইসলাম এর মুলনীতি এর সাথে সম্পূর্ন ভাবে সাংঘর্ষিক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। শুধু তাই নয় তারা মওদুদী এর কতগুলা মতবাদ মেনে চলে যেটা নাকি আমাদের ক্ষেত্রের বাইরে। আর আমি ইসলামের বিষয় নিয়ে সোচ্চার না থাকলেও আমি আমার পালনকর্তার উপর সম্পুর্ন ভাবে নির্ভরশীল।

সো এই বিষয়ে আমি কোন রকম কনসিডারেশন করতে পারবোনা। কারন আজকে আমি মারা গেলে আমার পরবর্তী জীবনে ঐটাই কাজে লাগবে। তখন দুনিয়ার কোন কিছুতেই আমার আসবে যাবে না। আর এর পরেও যারা অতি উৎসাহী তাদের জন্য শুধু এই একটা কথাই বলার আছে। আমরা অনেক সময় ঠাট্টা করে বলি সেই কবে ঘি খেয়েছি এখনো তার গন্ধ লেগে আছে।

আমিও বলি সেই ৯৬' এ আতাঁত করেছো এখনো চোখের থেকে সেই দৃশ্য যায়নি? চারিদিকে শুধু জামাত-ই দেখো, আমাদের-কে চোখে পড়েনা? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.