আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিতো কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।

ব্যান হবো না তো! শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই গিয়েছি শাহবাগে। বিশেষ কাজে গ্রামের বাড়িতে যেতে হয়েছিল শুক্রবার। তাই যেতে পারিনি। রাতে বাসায় এসে টিভিতে দেখলাম। এত লোকসমাগম হয়েছিল! আমি যেতে পারিনি তো কি হয়েছে? যারা গিয়েছে, তাদের সংখ্যা তো আমার কয়েক লক্ষগুন।

গ্রামে ছিলাম বলে জানতে পারিনি, কত মানুষ জমায়েত হয়েছিল! আমি অভিভুত। শনিবারও গেলাম। এত মানুষ কোথা থেকে আসে। জোর করে তো কাউকে আনা হচ্ছেনা, রাজনৈতিক দলগুলো যা করে। সবাই প্রানের তাগিদেই এসেছে।

যেমন আমি আসি। রবিবারও গেলাম। শনিবার ভেবেছিলাম, আজ ছুটির দিন তাই হয়তো এতো মানুষ। রবিবার এত মানুষ কেন, আজতো ছুটির দিন না। আজ স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সবই খোলা।

একটা কথা আমার মনে হতে থাকে। এতদিন কোথায় ছিল দেশের জনগন? কোথায় ছিল এই প্রজন্ম? এমন একটা আন্দোলন আগে হয় নি কেন? কি মন্ত্রবলে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছিল এই প্রজন্মকে? আমার চল্লিশ বছরের জীবনে জাতির জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে যেতে দেখেছি। মধ্যবিত্তের মুল্যবোধ, নৈতিকতা, সহমর্মিতা, মনবিকতা, এমনকি প্রতিবাদের ভাষা পর্যন্ত হারিয়ে যেতে বসেছিল। একসময় ভাবতে শুরু করেছিলাম, জাতি হিসাবে আমাদের মৃত্য হতে আর বেশী দেরী নাই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন প্রজন্মকে পতনোন্মুখ দেখতেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম মনে মনে।

অন্ধকার ভবিষ্যতের দুঃচিন্তায় কত প্রহর কাটিয়েছি পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে। কিন্তু আজ আমি শাহবাগের মোড়ে এ কি দেখছি? আমার ভুল ভাঙতে শুরু করছে। যেভাবে এরা এখানে সমবেত হয়েছে তা আগে কখনো দেখিনি। কেউ কাউকে চিনে না অথচ মনে হচ্ছে অনেক দিনের চেনা। সবার চোখ মুখ থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে।

ছোট ছোট এক একটা গ্রুপ আসছে, গোল হয়ে বসে স্লোগান দিচ্ছে। কেউ কারো সাথে সামান্যতম ঠোকাঠুকিতেও জড়াচ্ছে না। এ অভাবনীয় । ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ পর্যন্ত ভুলে গেছে। কেউ কাউকে টিজ পর্যন্ত করছে না।

ছেলেমেয়ে গাঁ ঘেষাঘেষি করে বসে স্লোগান দিচ্ছে। একটা ও অশ্লিলতা চোখে পড়েনি এই কয়দিনে। বোরখাওয়ালী, শাখাওয়ালী সব একাকার। একসময় মানুষ ভাবতে বসেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে না। গাড়ীতে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেরাবে এরা।

মাথা নিচু করে থাকবে বাকীরা, আর ওরা হয়ে যাবে আমাদের দন্ডমুন্ডের কর্তা। কেন জানি আমার চোখে কান্না চলে আসলো। নিজেকে নিয়তির কাছে সপে দেবার গ্লানি আর বইতে হবে না আমাকে। আর যাই হউক, একটা আশা তো জেগে থাকবে আরো কিছুকাল-এই তরুনরা যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গেল সমাজের বুকে তাতে পুড়ে খাটি হবে সমাজের পচনধরা মুল্যবোধ, ভুলে যাওয়া আত্মমর্যাদা, হারিয়ে যাওয়া মানবিকতা। আর আরও শানিত হবে ভবিষ্যত প্রজন্ম, আরো শানিত হবে তাদের প্রতিবাদের ভাষা।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।