আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহান মে দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ লিখেছেন অনিন্দ্য

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!

মহান মে দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ লিখেছেন অনিন্দ্য ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকার ১৪টি রাজ্যের শ্রমিকেরা ৮ ঘন্টা শ্রম, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম, ৮ ঘন্টা বিনোদনের দাবীতে গড়ে তুলেছিলো আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিকাগোর হে মার্কেটে শ্রমিকদের সমাবেশে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ৬ জন শ্রমিক শহীদ হন । গ্রফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জন শ্রমিক নেতার সাজানো বিচারে জনসমক্ষে নৃশংসভার ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এর প্রতিবাদে আরো উত্তাল হয়ে ওঠে আন্দোলনর। সেদিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও আত্মদানের কাছে নতি স্বীকার করে দাবি পূরণে বাধ্য হয় আমেরিকার ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী।

১৮৮৯ সালে প্যারীতে অনুষ্ঠিত কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকের কংগ্রেসে ১লা মে কে 'মে দিবস' তথা 'শ্রমিক দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কেমন আছে বাংলাদেশের শ্রমিকরা: ১২৩ বছর আগে শ্রমিকরে রক্তে অর্জিত অধিকারের জন্য আজো সংগ্রাম করে চলেছে বাংলাদেশের মহান শ্রমিকরা। শ্রমিক ছাড়া অন্যসব শ্রেণী ও পেশার মানুষের জন্য ৮ঘন্টা শ্রম দিবস প্রতিষ্ঠিত হলেও শ্রমিকেরা আজো এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশের শিলপ কারখানায় ঝুঁকি নিয়ে ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত অমানবিক খেটে চলেছেন তারা। এছাড়া কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মারধর, নারী শ্রমিকদের প্রতি চরম অপমান-গঞ্জনা ফ্যাক্টরিগুলোর সাধারণ চিত্র।

আর এসব অবর্ণনীয় শোষণ, নির্যাতনে শ্রমিকদের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন শ্রমিকরা ফেটে পড়ে তীব্র বিক্ষোভে, আন্দোলনে। শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনের উপর নেমে আসে প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট দমন; চলে নির্বিচার গুলিতে শ্রমিক হত্যা, খুন, গুম। কেবল ২০০৬ সালে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ও দমনে ৯৪৭ জন শ্রমিক নিহত এবং ৩৬৫০ জন্ শ্রমকি আহত হন। আন্দোলন ঠেকানোর জন্য লোক দেখানো শ্রমিক-মালিক চুক্তি করা হচ্ছে যার কোন বাস্তবায়ন নেই এবং দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার জন্য মালিকের পক্ষ তৈরি করছে কালো 'শ্রম আইন'। আর এর উল্টোদিকে বীর শ্রমিকরা দ্রুত বিকশিত ও পরিণত করে তুলছে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন।

মহান মে দিবসের সত্য: আজ মহান মে দিবসে সরকার ও মালিক পক্ষ মালিক-শ্রমিক মৈত্রীর স্লোগান নিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর আহবান জানাচ্ছে। অথচ শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ তো নিচ্ছেইনা, বরং অগণতান্ত্রিকভাবে, ফ্যাসিস্ট কায়দায় ন্যায্য আন্দোলন দমন করছে। রেলী করে, ভুরিভোজ করে খাইয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে, ব্যান্ড বাজিয়ে তারা মহান মে দিবসের সংগ্রামী চেতনাকে আড়াল করতে চায় এবং দিবসটিকে বড়জোড় নিছক আমোদ-ফুর্তির একটি দিনে পরিণত করতে চায়। দেশের হাজার হাজার শ্রমিক আজো জানেই না তাদের ৮ঘন্টা শ্রম দিবস সহ অন্যান্য অধিকারের কথা। এমনকি মহান মে দিবসে দেশের বহু শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের ছুটিও দেয়া হচ্ছে না।

১৮৯৪ সালে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে মে দিবসের পরিবর্তে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার শ্রমিক দিবস পালিত হতে থাকে। এসবই হচ্ছে মে দিবসের সত্য ও চেতনাকে আড়াল করে শ্রমিকদের অধিকার অসচেতন ও আন্দোলন বিমুখ করে রাখার পায়তারা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.