আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাশ্চাত্যে সিংগেল সেক্স এডুকেশন: সাফল্য আর ব্যর্থতার খতিয়ান

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক

বেশ কিছু দিন আগে সামহোয়ার ব্লগে একজন ব্লগার বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সিংগেল সেক্স এডুকেশন নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিল। সেবার সে লেখাটিতে মন্তব্য করতে গিয়ে এই ইস্যুতে পূর্নাংগ একটি লেখার ভাবনা আমার মাথায় উকি দিয়ে যায়। কিন্তু সে উকি দেয়া পর্যন্তই। সময় গড়িয়ে যায়, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আলসেমীতে আর কি-বোর্ড চাপা হয় না। এদিকে অন্য আরো কত লেখা সেরে ফেলি কিন্তু ওটা নিয়ে লেখা আর এগোয় না।

আসলে লেখালেখিটা আমার স্রেফ ভাল লাগার জন্য - কোন ধরনের দায় বদ্ধতা সেখানে কাজ করে না। ব্লগ কিংবা ইন্টারনেট শুধুই অবসর কাটানোর সংগী, লেখালেখিটাও তাই বড় বেশী খাপছাড়া, এলোমেলো। ফিরে আসি মূল প্রসংগে, অর্থ্যাৎ সিংগেল সেক্স এডুকেশন বিষয়ে। অবসরের ইন্টারনেট বিচরন আর সে নিয়ে কিছু অগোছালো ভাবনা থেকে সিংগেল সেক্স এডুকেশন নিয়ে আজকের এ লেখার অবতারনা। এ আমার মৌলিক লেখা নয়, বরং বিভিন্ন সাইট পড়ে যা বুঝতে পেরেছি তাই লিখছি।

কি করে আমেরিকাতে সিংগেল সেক্সে এডুকেশনের কনসেপ্ট এলো এবং কি করে তা সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে - তার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন এ লেখাটিতে দেয়ার চেষ্টা করছি। আমেরিকাতে সিংগেল সেক্স এডুকেশনের অনুমোদন খুব বেশীদিন আগের নয়। ২০০৬ এর অক্টোবরে আমেরিকান পাবলিক স্কুলে সিংগেল সেক্স এডুকেশনের নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। তারপর থেকে তা সংশ্লিষ্টদের মাঝে ব্যপক আগ্রহ এবং উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এখন পর্যন্ত এই শিক্ষা পদ্ধতি সাধারনের কৌতুহল এবং মনোযোগের কেন্দ্র বিন্দু।

পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হবার পর থেকে এর পরিসর মোটামুটি ভাবে ক্রমবর্ধমান। পাশ্চাত্যের পাবলিক স্কুলের অন্যতম সমস্যা ফ্রি মিক্সিং - যা টিন এজ মাতৃত্বের একটি বড় কারন। হাই স্কুল ড্রপ আউটের পেছনে এই টিন এজ মাতৃত্ব একটি গুরুত্ববহ ফ্যাক্টর। এই ইস্যুতে ব্যপক প্রচার প্রচারনা স্কুলে চালানো হচ্ছে, তবুও তা কাংখিত কার্যকরী কোন ফল বয়ে আনছে না। এমন কি কয়েক বছর আগে এই প্রচারনার অংশ হিসেবে এক পর্যায়ে স্কুলে বার্থ কন্টোল পিল দেয়া হয়।

সেটা আবার জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে এখন প্রকাশ্যে আর কোন জন্ম নিরোধক বিতরন করা হয় না। সিংগেল সেক্স এডুকেশনের কনসেপ্ট দেখে আবার ধারনা করবেন না, ফ্রি মিক্সিং এর চ্যালেন্জ্ঞ মোকাবেলা করার জন্য সিংগেল সেক্স এডুকেশনকে সামনে টেনে আনা হয়েছে। অন্ততপক্ষে প্রবক্তা উদ্যোক্তারা এই বিষয়কে মূল ইস্যু হিসেবে সামনে টেনে আনেন নি। অন্যতম প্রবক্তা লিওনার্ড স্যাক্স, পেশায় যিনি চিকিৎসক আর ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়া থেকে পি এইচ ডি এবং এম ডি দুটোই করেছেন, এক বছরে লিংগ পার্থক্য নিয়ে তিনি প্রায় ৫০ টির মত সেমিনার করেছেন।

তার থিসিসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ছেলে এবং মেয়েরা ভিন্ন পরিবেশে ভিন্নভাবে শেখে। সান ফ্রানসিসকোর একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেনীর ক্লাশরুমে তিনি ব্যখা করছিলেন তার তত্ত্ব: মেয়েদের শ্রবন এবং গন্ধ, এ দুটি ইন্দ্রিয় ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশী উন্নত। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয়ে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে শেখে। বয়:সন্ধিকালে তারা ভেবে পায় না কেন তাদের বাবা, ভাই এবং প্রতিবেশীরা এত বেশী হাবা। মেয়েদের স্কুলে সে স্পীচ দেবার কয়েক সপ্তাহ পরে স্যাক্স অভূতপূর্ব সাড়া পান ক্লাশের মেয়েদের কাছ থেকে।

একটি মেয়ে তাকে চিঠিতে জানায়, "ড:স্যাক্স, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার ঘরে যে গন্ধ রয়েছে তা আমার বাবা টের পাচ্ছিল না। আমি ভাবছিলাম আমি বুঝি পাগল হয়ে গিয়েছি। পরবর্তীতে দেখা গেল আমার ঘর থেকে মৃত ইদুর বের হয়েছে। আশা করি আপনি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।

" স্যাক্স আবারো ফিরে যান তার বিশ্বাসকে পুজি করে। মানুষের মাঝে ব্যক্ত করেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। কি করে তিনি ২০০০ সালে সর্ব প্রথম সিংগেল সেক্স এডুকেশনের মহাত্ম খুজে পেলেন। তখন তিনি একটি বালকের চিকিৎসা করছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরে। একদিন তার পিতা মাতা এসে জানালেন ছেলেটির অসম্ভব এক পরিবর্তনের কথা।

একাধিক মেডিকেশনে থাকা নিস্পৃহ মনোভাবের এই ছেলেটির মধ্যে এসেছে বিশাল এক পরিবর্তন - যাকে তার বাবা মা মনে করছেন ছেলেদের স্কুলে দেবার জন্যে। স্যাক্স প্রথমটায় গুরুত্ব দেন নি, তিনি জবাব দেন, "আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি। সিংগেল সেক্স এডুকেশন ভিক্টোরিয়ান এন্টিকের ধ্বংসাবশেষ মাত্র। " ছেলেটির মাতা তা শুনে উত্তর দেন, "ড: স্যাক্স, আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি। আপনি যা বলছেন তা সম্পর্কে আপনার নিজেরই কোন ধারনা নেই।

" স্যাক্সের বিশ্বাসে চিড় ধরল। তিনি কয়েকটি সিংগেল সেক্স স্কুল ঘুরে দেখলেন। অধ্যয়ন করতে শুরু করলেন নারী এবং পুরুষের স্নায়বিক পার্থক্যের বিষয়টি। মনোযোগ দিলেন ছেলেদের বিশেষ কিছু সিনড্রোমের প্রতি, যেমন, ছেলেরা কেন ডেটিং কিংবা ক্লাশ ওয়ার্কের চেয়ে কিলিমানজারোর প্রতি বেশী আকর্ষন বোধ করে। স্যাক্সের প্রাথমিক কিছু প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল ছেলেদেরকে কিন্ডারগার্টেনে ছয় বছর বয়েসে ভর্তি, অর্থ্যাৎ মেয়েদের এক বছর পরে।

কেননা ছেলেদের ডেভেলপমেন্ট কিছুটা দেরীতে হয়ে থাকে। স্যাক্সের কিছু বন্ধু তাকে নিরুৎসাহিত করল এই বলে যে, আমেরিকান পরিবার কখনই এতে আগ্রহ দেখাবে না। ফলে স্যাক্স বিকল্প হিসেবে ভাবলেন ছেলে মেয়েদের পৃথকীকরনের কথা, পৃথক ক্লাশরুমের কথা। সিংগেল সেক্স নিয়ে স্যাক্সের আনুষ্ঠানিক পদযাত্রা শুরু হয় ২০০২ তে ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর সিংগেল সেক্স পাবলিক এডুকেশনের মাধ্যমে। প্রথম দিকে ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর সিংগেল সেক্স পাবলিক এডুকেশনের খুব একটা তৎপরতা ছিল না।

তারপরে ২০০৪ এ তাকে ফোলেতে আমন্ত্রন জানানো হল সেমিনার আয়োজন করার জন্য। পরের কয়েক বছরের মধ্যেই সবার দৃষ্টি আকর্ষন করতে লাগল। যার ফলে এখনকার হিসেবে ৩৬০টি সিংগেল সেক্স স্কুলের মধ্যে ৩০০টি স্কুল নিউরোসাইন্সের ধারনাকে গ্রহন করে। বেন্জ্ঞামিন রাইট, নাশভিল প্রাইভেট স্কুলের প্রধান প্রশাসক, সিংগেল সেক্স এডুকেশন প্রসংগে বলেন, "কো-এড এখন আর কাজ করছে না। আমাদের এখন অন্য কিছু দেখতে হবে।

" ১৯৯৯ সালে রাইট ঘুরে দেখেন সিয়াটলের একটি স্কুল যে স্কুলটি ভাল করছিল না। তিনি দেখলেন প্রতি তিনটি বালিকার জন্য একটি বালককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে এবং তা খুব তুচ্ছ কারনে। বালিকাদের বহিষ্কারের তুলনায় বালকদের বহিষ্কারের হার দ্বিগুন। ৬৫ ভাগ ছাত্র যেখানে চার বছরে হাই স্কুল শেষ করে সেখানে ৭২ ভাগ ছাত্রী শেষ করে চার বছরে। যার ফলে রাইট ছেলে মেয়েদের পৃথকীকরনের সুপারিশ করেন।

২০০১ এ সিংগেল সেক্স ফরম্যাট দেবার ফলে দেখা যায় বালকদের একাডেমিক স্টান্ডার্ড পূরন করার হার অংকের ক্ষেত্রে ১০ ভাগ থেকে ৩৫ ভাগ এ উন্নীত হয় এবং রচনাশৈলীর এর ক্ষেত্রে ১০ ভাগ থেকে ৫৩ ভাগে উন্নীত হয়। কিন্তু এটাই সব নয়। এ নিয়ে করা চল্লিশটি স্টাডির মধ্যে খুব শক্তিশালী ফল পাওয়া যায় নি। ৪১ ভাগ সিংগেল সেক্স স্কুলের পক্ষে গিয়েছে, ৪৫ ভাগ সিংগেল সেক্স বা কো-এড কোনটারই পক্ষে যায় নি, ৬ ভাগ সিংগেল সেক্সের একটি সেক্সের পক্ষে গিয়েছে, বাকী ৮ ভাগ কো-এডের পক্ষের গিয়েছে। কর্নেলিয়াস রিওর্ডান শিক্ষা বিভাগের পক্ষে এই জরিপটি করেন।

তিনি ব্যখা করেন যে এ ধরনের মিশ্রিত ফলাফল স্কুল নিয়ে গবেষনার পক্ষে খুব স্বাভাবিক। এখানে অনেক ভেরিয়েবল কাজ করে: শিক্ষকের যোগ্যতা, প্রশাসকের যোগ্যতা, স্কুলের কাঠামো, পরিবারের অংশগ্রহন, অর্থায়ন, কারিকুলাম এসব। রিওর্ডান আরো বলেন যে, "আপনি কখনই দুই ধরনের স্কুলকে তুলনা করে বলতে পারবেন না, এই ধরনের স্কুল সেই ধরনের স্কুলের চেয়ে উন্নত। " সিংগেল সেক্স এডুকেশনের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সিংগেল সেক্স এডুকেশনের যেসব তথ্য আছে তাতে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে সিংগেল সেক্স এডুকেশন সমস্ত শিশুর জন্য অধিকতর উপযোগী।

আবার এটাও বলা যায় না যে এটা খারাপ। দেখার মত বিষয় যে এইসব গবেষনাগুলো করা হয়েছে ক্যাথলিক স্কুলগুলোর উপরে যাদের সিংগেল সেক্স এডুকেশনের ইতিহাস প্রাচীন। এসব গবেষনা সাজেশন দিচ্ছে যে সিংগেল সেক্স এডুকেশন হোয়াইট মিডল ক্লাস ছেলেদের উপরে খুব অবদান না রাখলেও গরীব এবং সংখ্যালঘু ছেলেদের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। রিওর্ডান বলেন, পিছিয়ে পড়া স্টুডেন্টরা কোএড স্কুলের চেয়ে সিংগেল সেক্স স্কুলে ম্যাথ সাইন্স এবং অন্যান্য স্টান্ডার্ড টেস্টে বেশী স্কোর করতে পারে। এর ব্যখায় বলা যায়, একাডেমি বহির্ভূত ইয়োথ কালচারের প্রাদুর্ভাব সিংগেল সেক্স স্কুলে কম থাকে বলে ছাত্রদের জন্য পজিটিভ ভাবধারাটা সিংগেল সেক্স এডুকেশনে বেশী থাকে।

অন্যটি হল, পিতামাতার অবদান - সিংগেল সেক্স এডুকেশনের স্কুলে পিতামাতাকে অন্তত এইটুকু দায়িত্ববান হতে হয় যে স্কুল থেকে পাঠানো নোটিশগুলো তাকে পড়তে হয় এবং পছন্দ বেছে নেবার প্রক্রিয়া দিয়ে যেতে হয়। ১৯৯৬ এর সুপ্রীম কোর্টের রায়ে দেখা যায় সিংগেল সেক্স এডুকেশনের আইন গত বৈধতা নির্ভর করে প্রয়োগ পদ্ধতির উপরে। স্টেটস বনাম ভার্জিনিয়া কেসে একটি মিলিটারি ইনস্টিটিউট, যা ছিল ছেলেদের প্রতিষ্ঠান, তা থেকে নারীদের বাদ দেয়া সংক্রান্ত রায়ে বিচারকরা ১৪ তম সংশোধনীর ভায়োলেশন দেখতে পান। একজন বিচারকের অভিমত অনুযায়ী সিংগেল সেক্স এডুকেশনের বৈধতা একটা পর্যায় পর্যন্ত থাকতে পারে যতক্ষন না তা একজনের যোগ্যতার উপর কৃত্রিম সীমাবদ্ধতা এনে দেয়। ১৯৯৬ এ মেয়েদের স্কুল চালু হবার খবরে সমালোচনার ঝড় উঠে এই বলে যে এটি কি কোন নারী বিরোধী পদক্ষেপ কিনা।

কিন্তু সিংগেল সেক্স এডুকেশনের প্রবক্তারা দাবী করেন লিংগের বিষয়টি ধর্ম কিংবা বর্নের চেয়ে কিছুটা আলাদা। সিংগেল সেক্স এডুকেশনের বিরোধিতাও কম হয়নি। গার্ডিয়ান (Click This Link) এই রিপোর্টে সিংগেল সেক্স এডুকেশনের তেমন কোন উপকারিতা আছে বলে মনে করা হয় নি। তবুও এটা যে নানা কারনে অভিভাবকরা বেছে নিতে পারেন, তা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। মূল সূত্র: Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।