আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিকশা উচ্ছেদ নিয়ে কিছু ভাবনা।



বিশ্বব্যাংকের প্ররোচনায় কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এবং বাস্তবাজ্ঞান বিবেচনায় না করে শুধু মাত্র যানজট নিরসন হবে এই রকম একটি কাল্পনিক ধারনা থেকেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে অযান্ত্রিক যানবাহন উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণায় এটি স্পষ্ট হয় যে সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। বিশ্বব্যাংকের নিজেস্ব গবেষণায় তা স্পষ্ট হয়ছে। তাছাড়া ঢাকা পরিবহন নিয়ে দেশিয় ও আন্তজার্তিকভাবে কোন গবেষণায় কোন রাস্তায় রিকশা উচ্ছেদের কথা বলা হয়নি। তারপরও অগাত কারণে রিকশা উচ্ছেদের নিরবে পরিকল্পনা চলে।

জনগণের অগোচরে। অযান্ত্রিক যানবাহন উচ্ছেদের ফলে যাত্রীদের উপর কি প্রভাব পড়েছে তার কিছু বর্ণনা তুলে ধরছি। এই সমস্যাগুলো তুলে ধরার উদ্দেশ্য আগামীতে এই রকম প্রস্তাব এলে আমরা যেন এক সাথে প্রতিবাদ করতে পারি। এই গবেষণার অধিকাংশ তথ্যই ২০০৫ থেকে ২০০৬ এইচডিআরসি'র গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যারা আগে অযান্ত্রিক যানবাহনে চলাচল করত বর্তমানে তাদের অবস্থা কি? গড়ে প্রতিদিনের যাতায়াত খরচ বেড়েছে। আগে প্রতিদিন ৮২.৭ টাকা খরচ হত সেখানে বর্তমানে খরচ হয় ৯১ টাকা।

শুধু গার্মেন্টস কর্মীদের খরচ একটু কমেছে। কারণ ওরা এখন রিকসায় না গিয়ে হেটে যাতায়াত করছে। ওদের আগে খরচ হত ২১.৩ টাকা, বর্তমানে খরচ হয় ২০.৫ টাকা। মাসিক যাতায়াত খরচ পূর্বে ছিল ৫০০.৮ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪৬.৪ টাকা। অনেকেই বলেন পূর্বের তুলনায় তাদের যাতায়াত সময় কমেছে।

তারা যে সমস্ত জায়গায় বেশি যাতায়াত করত সে সমস্ত জায়গার মধ্যে এক জায়গায় যেতে পূর্বে ৩০.৪ মিনিট লাগত। সেখানে বর্তমানে ২২ মিনিট সময় লাগছে। - এই বিবৃতিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেহেতু তারা শুধুমাত্র এক জায়গার কথা বলেছে সেহেতু এখান থেকে পরিষ্কার কিছু বোঝা যায় না। কারণ আমাদের যাতায়াতগুলো এক জায়গায় সীমাবদ্ধ না।

অতএব বাকী জায়গাগুলোর অবস্থাও জানা দরকার। - আমরা যখন রিকসায় যাতায়াত করি তখন বাসা থেকে বেরোনোর পর রিকসা পাওয়ার জন্য ১-২ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু বাসের জন্য প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বাসে উঠার আগের রাস্তা এবং পরের রাস্তাটুকুও আমাদের অতিক্রম করতে সময় ব্যয় হয়। - এইচডিআরসি'র প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় মানুষ আগে যে সমস্ত পরিবহণে যাতায়াত করত এবং বর্তমানে যেভাবে যাতায়াত করছে এই দুই সময়ের গতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মানুষের যাতায়াত সময় ৫০% বেড়েছে।

মাত্র ২.৮% মানুষ বলছে রিকসায় যাতায়াতে কোন ধরনের সুবিধা নেই। অযান্ত্রিক যানবাহন উচ্ছেদের ফলে মহিলা ও ছাত্রীরা বেশী কষ্ট ভোগ করছে। বাসে উঠতে তাদেরকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া বর্তমানে যাতায়াতের জন্য তাদেরকে রিকসা এবং বাসে দুটি যানবাহনই ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে সময় ও খরচ উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।

রিকসা উচ্ছেদের পর মানুষের প্রয়েজনীয় যাতায়াত কমেছে। বিশেষ করে অনেকেই কেনাকাটা ও ডাক্তারের কাছে যেতে পারছে না। এমনকি ছাত্র/ ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখন মানুষ হেটে, বাসে এবং সি,এন,জিতে বেশী যাতায়াত করছে। যদিও এইচডিআরসি বলে হাটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

কিন্তু সব সময় কি হেটে চলাচল করা সম্ভব? বিশেষ করে আবহাওয়া যখন খারাপ থাকে এবং বয়স্করা যখন চলাচল করতে চায়। তাছাড়া যখন কাছে একটু ভারী কোন জিনিস থাকে তখন সেটা নিয়ে হেটে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য। অধিকাংশ (৪৭.৬%) যাত্রীরা বলেছে তারা প্রতিদিন প্রায় ১-৫ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করে। এ স্বল্প দুরত্বের রাস্তায় যাতায়াতের জন্য যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বল্প দুরত্বের জন্য যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার বেশি ব্যয়বহুল, এর থেকে দূষণ তৈরি হয় এবং জ্বালানী খরচ হয়।

সুতরাং এক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হচ্ছে হাটা, রিকসায় চড়া এবং সাইকেলে যাতায়াত করা। এখনো অনেক মানুষ রিকসা পছন্দ করে এর মূল কারণ হচ্ছে রিকসায় করে সহজে ও স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করা যায়। এইচডিআরসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে রিকসাতে যে কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য পরিবহণ পরিবর্তন করার দরকার হয় না। একই পরিবহণে করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া যায়। বাস কোন অবস্থাতেই একেবারে নির্দ্দিষ্ট পৌঁছতে পারে না।

যে কোন জায়গায় যাওয়া জন্য সি,এন,জি এবং ট্যাক্সি সহজ ও আরামদায়ক হবে কাছে বা দূরে হোক। কিন্তু তারা কাছাকাছি দুরত্বে যেতে চায় না, গেলেও অনেক বেশি ভাড়া দাবী করে। রিকসা রাস্তায় অনেক জায়গা নিচ্ছে কি? কর্তৃপক্ষের অভিযোগ রিকসা যে পরিমান যাত্রী বহন করে তার চেয়ে বেশি পরিমান জায়গা দখল করে। আসলে কর্তৃপক্ষের এ অভিযোগ ১৯৯৩ সালে প্রেক্ষিতে সত্য, কেননা তখন রাস্তায় রিকসার তুলনায় অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম ছিল। কিন্তু ১৯৯৮ সালে এ চিত্র পাল্টে যায়, এ সময়ের এক পরিসংখানে দেখা যায় ৫৪% যতায়াত হয়েছে রিকসায়, কিন্তু রিকসা রাস্তায় জায়গা দখল করেছে মাত্র ৩৮%।

১৯৯৮ সালের প্রেক্ষিতে প্রাইভেট গাড়ি ৩৪% জায়গা দখল করে, যদিও এই পরিবহনে মাত্র ৯% যাতায়াত হয়েছে। এ পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় সুস্পটভাবে বেরিয়ে আসে যে, রিকসা নয় গাড়িই যাত্রী পরিবহনের তুলনায় বেশী জায়গা দখল করে রাখে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।