আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড্ডায় গিয়ে দেখে এলাম আমাদের পাঠশালার ইন্ট্যারএ্যাকটিভ পাঠদান পদ্ধতি

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

আমাদের পাঠশালায় আড্ডার ডাক শুনে মনে হলো - প্রাথমিক শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযুগি করে গড়ে তোলার যে রূপায়ণ আমাদের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রুবেল ও তার সংগীসাথীরা ঘটিয়ে চলছে তার সংস্পর্ষে থাকার এমন সুযোগ ছাড়া উচিত নয়। ১১টার দুচারমিনিট আগে পল্লবী সুপার মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে বিড়ি ফুকিতকালে এসে হাজির অন্যমনস্ক শরৎ, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, আইরিন সুলতানা ও অন্যআনন। কিছুক্ষণ পরে এলো লিটা কাইয়ুম ও তার মেয়ে অনঙ্গ। মুসলিম বাজারের কাছে ডি ব্লকের ২৫ নম্বর লেনের ৪০ নম্বর বাড়িতে যখন আমরা পৌছুলাম তখন সাড়ে এগারোটা ছুঁইছুঁই। ততক্ষণে চলে এসেছে অনন্ত ও মো মুজাহিদ আলম।

এরপরে কাছাকাছি সময়ে এলো স্বর্ণা, রাসেল (আইরিনের কলিগ), জামাল ভাস্কর, ক্যামেরাম্যান, মুনশিয়ানা, মেজবাহ য়াযাদ, সাদিক মোহাম্মদ আলম, পথিক!!!!!, আরিফ জেবতিক দম্পত্তি, একরামুল হক শামিম, আরিল দম্পত্তি সাথে তাদের কন্যা কিন্নরী, রাসেল ও তার একমাত্র পুত্র ঋক। শনিবার হচ্ছে আমাদের পাঠশালার কালচারাল ডে। এদিন তাদের গানের ক্লাস, আঁকার ক্লাস থাকে। বাচ্চারা দুটো ক্লাসে তাই করছিলো। লিটার মেয়ে অনঙ্গ তো উচ্ছ্বসিত।

বাচ্চাদেরকে সে পড়াতে চায়। ভাল একটা ইংরেজী মিডিয়ামের স্টুডেন্ট মেয়েটি এই দরিদ্র বাচ্চাদের স্কুলের কারিকুলাম দেখে মুগ্ধ। রাসেলের ছেলে ঋক তো বসে গেলো গানের ক্লাসে। সামনের বেঞ্চিতে বসে ম্যাডামের সাথে গলা মেলালো, উই স্যাল ওভার কাম! আরিলের কন্যা কিন্নরী তার আঁকা একটা পেইন্টিং শেয়ার করলো বাচ্চাদের সাথে। আড্ডায় তখন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এমন একটা স্কুল চলছে কেবল বন্ধু-বান্ধবের আর্থিক সহায়তায়। মাসে খরচ হয় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আড্ডারুরা প্রতি মাসে কমপক্ষে একশ টাকা করে স্কুলের ফান্ডে জমা দেবার জন্য আমাদের পাঠশালার বান্ধব কর্মসূচীতে নাম লেখালো। এভাবে যদি কমপক্ষে ৮০০ জন মেম্বার পাওয়া যায় তাহলে স্কুলটার কার্যক্রম আরো ব্যাপক মাত্রায় সম্প্রসারণ করা সম্ভব। হয়তো তখন আরো কেউ এমন আরেকটা স্কুল তৈরীতে উদ্বুদ্ধ হবে - একটা আন্দোলনের মত।

রুবেল তুলে ধরলো কেন তারা এমন একটা স্কুল চালু করেছে। সে বললো, দেশে শ্রেনীভিত্তিক প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়, কিন্তু এই দরিদ্র, বস্তিবাসীদের জন্য এই মুহূর্তে দরকার মানসম্মত প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান। এনজিওদের স্কুলগুলোতে কেবল কিছু স্কিল শেখানো হয়, একটা রুমে বিভিন্ন বয়স ও ক্লাসের বাচ্চাদের একত্রিত করে একজন বারোশটাকা মাইনের শিক্ষক পড়ান। কি পড়ান আল্লাহ মালুম। এই পদ্ধতি শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে, ধরেই নেয়া হয় এদের নাম স্বাক্ষর আর পেপার পড়া ছাড়া আর বেশী শিক্ষা গ্রহণের দরকার নেই।

সাদিক প্রস্তাব দিলো বাচ্চাদের আর্ট নিয়ে এক্সিবিশেন করে ফান্ড রেইজের সম্ভাবনার কথা। আমারও মনে হলো এটা সম্ভব। বাচ্চারা যে কি সুন্দর ছবি আঁকে না দেখলে বোঝার উপায় নাই। কয়েকটা বাচ্চার গানের গলাও চমৎকার। রুবেলের কথা স্বপ্ন দেখাতে বাধ্য করে।

সে বলছিলো তাদের স্কুলের পাঠদান পদ্ধতি পূর্বনির্ধারিত নয়। তারা বাচ্চাদের কাছ থেকে শিখে তাদের শেখায়। বাচ্চাদের মনস্তত্ত্ব, তাদের অনুবাবনক্ষমতা, ভালোলাগা-মন্দলাগা প্রথমে পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষকরা। তারপরে তৈরী হয় ক্লাসের রূপরেখা। ফলে স্কুলের জন্য বাচ্চাদের টান অপরিসীম - মন্ত্রমুগ্ধের মত ছুটে আসে।

এখন প্রায় দেড়শ স্টুডেন্ট আছে, জুনিয়র ক্লাসে যাদের কাছ থেকে ১০টাকা আর সিনিয়র ক্লাসের জন্য মাত্র ২০টাকা নিয়ে থাকে স্কুল - কিন্তু তাদের পেছনে খরচ করা হয় তার চেয়েও সত্তর গুন। শিক্ষকরা প্রায় স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে পাঠদান করছেন - বাচ্চাদের সাথে তাদের হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা নিবিড়। আড্ডারুরা হাজার খানেক সদস্য জোগার করবে এমন প্রত্যয়ে উদ্বেলিত হলো। যারা প্রতি মাসে একশটাকা করে স্কুলটিকে সাহায্য করবে। আমি ইতোমধ্যে সদস্য হয়েছি।

পাড়া-পড়শী, আত্মীয়স্বজনদেরও বলবো ভাবছি স্কুলটির সদস্য হবার জন্য। এমন একটা স্কুল নিয়ে গর্ব করা যায়। আড্ডার অন্যতম সংযোজন আরিলের আনা তরমুজ আর আননের নিজের রচিত ও সুরাপিত একটা গান গিলে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।