আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাস্তিকতা ও ইসলামের পারস্পরিক সহাবস্থান যে কারণে সম্ভব নয়----------দ্বিতীয় পর্ব

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

এই পোস্টের বক্তব্য পূর্বের পোস্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত। । ধারাবাহিকতার স্বার্থে লেখাটি (Click This Link)এইখানে। ---------------------------------------------------------------------------------- ইসলাম একটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক ধর্ম। এর বিকাশ এবং আরোহন ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে।

মদিনার শাসনক্ষমতা ইসলামের নবী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ'র হাতে আসার পরপরই এর দ্রুত বিকাশ হয়। এর পূর্বে এর অনুসারীর সংখ্যা ছিল মুষ্টিমেয়। অর্থাৎ প্রথম অবস্থায়ই ইসলামের বিকাশ ও প্রকাশের মাধ্যম ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা। পরবর্তীতে পৃথিবীর যে কটি দেশে ইসলামের প্রসার হয়েছে তার মূল উৎসও ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা। তাঁরা প্রথমে তলোয়ারের মাধ্যমে সে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে এবং পরবর্তীতে এই ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছে।

আমাদের বাংলাদেশ কিংবা ভারতবর্ষ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পৃথিবীতে এমন একটি রাষ্ট্রও আপনি দেখাতে পারবেন না যেখানে ইসলামের প্রসার শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ প্রচারের মাধ্যমে হয়েছে (যেমনটা বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে হয়েছে)। ক্ষমতা কেন্দ্রিকতা ইসলামের মূল প্রবনতার অন্যতম। ইসলামে নবী, খলিফা বা ইমাম শুধু আধাত্মিক নেতাই নন তিনি রাষ্ট্রীয় নেতাও বটে। সে কারণেই নেতৃত্বের প্রতি এই আকর্ষণ ইসলাম সংশ্লিষ্টদের একবারেই প্রথমদিকে।

আচরণটা এমন যেন যেকোন মূল্যে ক্ষমতা দখল করতে হবে। ধর্মগুরুও হতে হবে, রাষ্ট্রগুরুও হতে হবে। ক্ষমতার প্রতি আকর্ষণের অনিবার্য্য পরিণতি হচ্ছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের পরিণতি সংঘাত। ইসলামের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

পয়গম্বর মোহাম্মদের মৃত্যুর পর ক্ষমতার প্রতি এ আকর্ষণ এবং পরিণতিতে দ্বন্দ্বের কারণে তার প্রিয় স্বজন, সাহাবা এবং অনুসারীদের মাঝে বহু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। মোহাম্মদের মৃত্যুর পর আবু বকর বা উমরের ক্ষমতারোহনকে আলী (মোহাম্মদের জামাতা ও চাচাত ভাই) বা তার অনুসারীরা সরলমনে মেনে নেয়নি। ঠিক এই সময়টাতে তিনি বা তার অনুসারীরা নীরব থাকলেও তৃতীয় খলিফা উসমানের সময়ে তারা সরব হন। অনেকের ধারণা উসমানের খিলাফতকালীন সময়ে অরাজকতা বা অস্থিতীশীলতা এবং পরবর্তীতে তার মর্মান্তিক হত্যার মূলে রয়েছেন আলী বা তার অনুসারীরা। মোহাম্মদের প্রিয় পত্নী আয়েশা (প্রথম খলিফা ও মোহাম্মদের সবচেয়ে প্রিয় সাথী আবু বকরের কন্যা), সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়ার (একসময়ে মোহাম্মদের একান্ত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী) মতো প্রভাবশালীরা প্রথমে আলীর কাছে উসমান হত্যার বিচার দাবি এবং এ বিষয়ে তার গড়িমসি দেখে উসমানের হত্যার জন্য আলীকে দায়ী করেন।

ফলশ্রুতিতে উসমানের হত্যা ও তার বিচারের দাবিকে কেন্দ্র করে আলী ও আয়েশার মধ্যে উস্টের যুদ্ধ (Battle of Camel) সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে আলীর বাহিনীর হাতে মোহাম্মদের দুই প্রিয় সাহাবা তালহা ও জোবায়ের নিহত হন। পরবর্তীতে উসমান হত্যার বিচার দাবিকে কেন্দ্র করেই মুয়াবিয়া এবং আলীর মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসব যুদ্ধে শুধু প্রচুর লোক নিহতই হয়নি ইসলামের চিন্তা ও ভাবধারাও বিভক্ত হয়। সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়া ও আলীর সন্ধিকে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে একদল লোক আলীর দলত্যাগ করে।

ইসলামের ইতিহাসে এরা খারেজী নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এক খারেজীর হাতেই আলী নিহত হন। উসমানের হত্যা হতে সৃষ্ট মুয়াবিয়া ও আলীর এ বিরোধীতার তাদের পরবর্তী প্রজন্মেও স্থানান্তরিত হয় এবং এ ধারাবাহিকতায় মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের হাতে কারবালার প্রান্তরে আলীর পুত্র ও নবী মোহাম্মদের দৌহিত্র হোসেইন নিহত হন। তার এ মর্মান্তিক মৃত্যু ইসলামী বিশ্বকে আরও বিভক্ত করে এবং শিয়া ও সুন্নী নামক দুটি পৃথক মতবাদের উদ্ভব হয়। উপরের ঘটনাগুলোর বর্ণনা করে আমি শুধু ইসলাম ও ইসলামের ব্যক্তিবর্গ যে শুধুমাত্র ক্ষমতাকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করেন তা প্রতিষ্ঠিত করা চেষ্টা করেছি।

আমার বিশ্বাস কেউ যদি যুক্তি দিয়ে এ আলোচনাটা অনুভব করার চেষ্টা করেন তবে তিনি আমার সাথে একমত হবেন। লক্ষ্য করে দেখবেন এসব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট উসমান, আলী, আয়েশা, মুয়াবিয়া, তালহা, জোবায়ের, হোসেইন সবাই ইসলামের নবী বা ইসলামের খুবই নিকটবর্তী মানুষ। তাদের কেউ মোহাম্মদের পত্নী, কেউ জামাতা, কেউ নাতী, কেউ প্রিয় অনুচর, কেউ ব্যক্তিগত সহকারী। ইসলামের নিয়ম বা রীতি সম্পর্কে তাদের কোন অজ্ঞতা ছিল বা তাদের চেয়ে অন্য কেউ এ বিষয়ে ভাল জানেন তা কেউ বলবেন না। অনেকের মতে তারা আধ্যাত্মিক শক্তিতেও বলীয়ান ছিলেন।

অথচ ইসলাম সম্পর্কে এসব জ্ঞানীলোক যাদের অনেককে দুনিয়াতেই বেহেস্তের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তারা কেন পরস্পরের বিরোধীতা করলেন, পরস্পরের শত্রুতে পরিনত হলেন এবং একে অপরকে হত্যা করতে উদ্যোগী হলেন? এর একটাই উত্তর, তাদের ক্ষমতালিপ্সা। ধর্মীয় ও জাগতিক নেতৃত্বকে এক করে দেখে ইসলাম, ধর্মকে ক্ষমতার সাথে একত্রিত করে ফেলেছে। এ কারণেই ক্ষমতার প্রতি এ ধর্মের সংশ্লিষ্টদের এতো মোহ। ক্ষমতার প্রতি ইসলামের এ মোহ যুগ হতে যুগান্তরে স্থানান্তরিত হয়েছে। আজকের জেএমবি, হরকাতুল মুজাহিদিন, তালেবান সেই একই ধারায় সিক্ত।

পুর্বজদের মতো তাদের একটাই কথা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে হবে। যেন ক্ষমতায় না গেলে ইসলামের কোন মান থাকেনা। এ কারণে রক্তের সাগর বয়ে গেলেও কোন আপত্তি নেই। ক্ষমতা তাদের চাইই চাই। অপরদিকে নাস্তিকতা কোন বিশেষ গোষ্ঠী, দল, ধর্মের কাছে দায়বদ্ধ নয়।

সে অর্থে নাস্তিকতা সাম্যবাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিবেকের নির্দেশ অনুসারে সে যোগ্যতমের শাসন মেনে নেয়, প্রগতির পক্ষ্যে অবস্থান নেয় এবং জোর করে চাপিয়ে দেয়া শাসনের বিরোধীতা করে। । এ অবস্থানের কারণে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ধারণায় অভ্যস্ত ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীরা নাস্তিক, সংশয়বাদীদের শত্রু মনে করে। যেহেতু তাদের প্রবৃত্তিটা হচ্ছে যেকোন মূল্যে ক্ষমতা দখল করতে সেহেতু তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্ত বিরোধীদের হত্যা করতেও পিছপা হন না।

এ কারণেই ইসলামী মুজাহিদদের হাতে দেশে দেশে প্রগতিশীল নাস্তিক কিংবা সংশয়বাদিরা লাঞ্চিত হচ্ছেন, প্রাণ হারাচ্ছেন। ইসলামের ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রবনতাই যে ইসলাম ও নাস্তিকতার সহাবস্থানের অন্যতম প্রতিবন্ধক তা উপরের আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস সংখ্যাগরিষ্ঠরা আমার উপস্থাপিত বক্তব্যের সাথে একমত হবেন। তবে পূর্বের পোস্টে আলোচিত ইসলামের অসহনশীলতা এবং এই পোস্টে উপস্থাপিত ইসলামের ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রবনতার বাইরেও নাস্তিকতা ও ইসলামের পারস্পরিক সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে আলোচনার আশা থাকল।

-----------------------------------------------------------------------চলবে

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।