আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিলিথ - সর্বপ্রথম মানবী

www.choturmatrik.com/blogs/আকাশ-অম্বর
গভীর রাত। সে ঘুমাচ্ছিল। অঘোরে। চিরপরিচিত সেই নুপূরধ্বনির মূর্ছনায় এক লহমায় কেটে গেল তার নিদ্রাচ্ছন্নতা। টানটান উত্তেজনায় অনুভব করলো পায়ে পায়ে এগিয়ে আসা সেই ভয়ংকর সুন্দর শব্দটিকে।

অসাড় অসহায়ত্ত্ব। নিঃশব্দ মৃদু প্রতিধ্বনি তুলে খুব কাছে এসে স্থির হলো শব্দটি। খুব কাছে। চোখ খুলে দেখা সাধ্যাতীত। শুধু শরীরের প্রতিটি লোমকূপ জানান দিচ্ছে এই মানবীর অস্তিত্ত্ব।

মহাকাল স্থির। অতিপ্রাকৃতিক এই বাস্তবতা। লিলিথ। হিব্রু লোক-কাহিনীর রাত্রির অপদেবতা এবং King James বাইবেলের screech-owl বা কালপেচাঁ, যা হুট হুট করার পরিবর্তে চিৎকার করে। মেসপোটেমিয়ার পৌরাণিক কাহিনীতে লিলিথ পরিচিত ঝড়, বাতাস ইত্যাদির অপদেবতা বা দানব হিসেবে।

হিব্রু (Lilit)এবং আকাডিয়ান (Līlītu) ভাষা অনুযায়ী লিলিথ শব্দের মানে হচ্ছে রাত্রি। আক্ষরিক অর্থানুযায়ী, রাত্রির নারী অপদেবতা। আবার, ভিন্ন মতানুযায়ী, লিলিথ এসেছে আকাডিয়ান Lil-itu থেকে, যেটার সুমেরিয়ান ধারকৃত শব্দ lil মানে হচ্ছে বাতাস বা মাদি-বাতাস, আর itud মানে হচ্ছে চন্দ্র বা চাঁদ। যাই হোক না কেন, রাত্রির অন্ধকারাচ্ছন্নতা মিশে আছেই লিলিথের সাথে! তো কে এই লিলিথ? খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৪০০০ বছর আগে সুমের (যা কিনা বর্তমান উত্তর ইরাক) নামক স্থানে লিলিথের প্রথম চিত্র পাওয়া যায় ঐ ঝড়-বাতাসের অপদেবতা বা আত্না হিসেবে। সুমেরীয় কাহিনীতে লিলিথ দায়ী Nocturnal Emission of Men এর জন্য, এ্যাসিরিয়ান কাহিনীতে লিলিথ শিকার করে শিশু আর নারীদেরকে, আর ছড়িয়ে বেড়ায় রোগ-বালাই।

গ্রেকো-রোমান লোক-কাহিনীতে লিলিথকে আবারও দায়ী করা হচ্ছে শিশু-চোর হিসেবে, যেখানে lamia নামক এক নরখাদক অপদেবতা তার ক্ষুধা নিবারণ করতে চুরি করতো শিশুদের। ঐ একই কথা আরব লোককাহিনীতেও, যেখানে কারিনা নামক এক পিশাচ চুরি করতো শিশুদের আর গর্ভপাত ঘটাতো মেয়েদের। কি এমন পাপে পাপী লিলিথ? কি করেছিল সে যার জন্য প্রতিটি উল্লেখযোগ্য সভ্যতায় তাকে পৈশাচিক ব্যাপারগুলোর সাথে জড়ানো হয়েছে? ওল্ড টেস্টামেন্টের দ্য বুক অফ জেনেসিস এ বর্ণিত কিছু শ্লোক শোনা যাক। ইভ বা হাওয়াকে সৃষ্টির প্রথম বিবৃতি দেয়া হয়েছে জেনেসিস ২:২২ তে, 2:22 And the rib, which the LORD God had taken from man, made he a woman, and brought her unto the man. কিন্তু তার আগে জেনেসিস ১:২৭ এ কি বলা হলো তাহলে? 1:27 So God created man in his own image, in the image of God created he him; male and female created he them. 1:28 And God blessed them, and God said unto them, Be fruitful, and multiply, and replenish the earth, and subdue it: and have dominion over the fish of the sea, and over the fowl of the air, and over every living thing that moveth upon the earth. হ্যাঁ, বিতর্কিত হলেও, অনেকের মতে ইভ’এর আগে সৃষ্ট ঐ নারীই ছিল লিলিথ। মধ্যযুগীয় এক গ্রন্থ The Alphabet of Ben-Sira অনুযায়ী, লিলিথ ও এডাম দুজনকেই মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করায় তাদের মধ্যে অন্তর্কলহ লেগেই থাকত।

লিলিথ দাবী করেছিল যে তাদের দুজনকে যেহেতু একইভাবে তৈরী করা হয়েছে, তাই কেউ কারো থেকে কম নয় মোটেই। অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় পালিয়ে যায় লিলিথ। এডামের আকুতিতে স্রষ্টা তিনজন দেবদূতকে পাঠান লিলিথকে ফিরিয়ে আনতে। মুক্তির স্বাদ পাওয়া লিলিথ কিন্তু ফিরে আসেনা। স্রষ্টা বাধ্য হন আবার এডামের সঙ্গী নির্ধারণে।

এবার আর ভুল নয়। এবার ইভ, এবং এডামের পাঁজরের হাড় থেকে! কি বিব্রতকর পরিস্থিতিতেই না পরতে হয়েছিল ঈশ্বরকে! কাব্বালাহ মরমিবাদে লিলিথকে দেয়া হয়েছে আরো গুরুত্ব। এক জায়গায়তো বলা হচ্ছে লিলিথকে তৈরী করা হয়েছে এডামেরও আগে, পঞ্চম দিনে! আরেক জায়গায় বলা হচ্ছে, লিলিথের উৎপত্তি এডামের মতন একই উপাদান থেকে। শেষ জায়গায় বলা হচ্ছে এডাম আর লিলিথকে এমনভাবে তৈরী করলেন স্রষ্টা যেন নর ধারন করে আছে নারীকে। নিজের অধীকার নিয়ে সচেতন, স্বাধীনচেতা এই লিলিথ সর্পরূপে পলায়ন করেছিল ডেভিলের সাথে।

শপথ করেছিল তার মায়া সে বিস্তার করেই যাবে এডামের বংশধরদের মাঝে। হয়তোবা, ইভ’কে প্রলুব্ধ করে ঐ নিষিদ্ধ ফলটি খাইয়েছিল সর্পরূপী এই লিলিথ! এই গল্পের শেষ কোথায়?
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।