আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রেণী বৈষম্য > শ্রেণী সংগ্রাম > শ্রেণী সংঘাত > কিছু দেখি কিছু দেখতে পাইনা.....

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি

ব্যাপারটা কিছুতেই জলিল সর্দারের মাথায় ঢোকেনা। শুধু এতটুকুই বোঝে বিলের পানি একবারে শুকায় না। ধাপে ধাপে শুকায়। ওদের বাপ-দাদাদের নাকি বিঘার পর বিঘা জমি ছিল, এখন নেই। জলিল সর্দার ভাগে পেয়েছিল আড়াই বিঘে।

তিনটি মেয়ের বিয়েতেই সব শেষ। এর পর কামলা খাটা। এ নিয়ে তার কোন আক্ষেপও নেই, কারণ ওদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই একই অবস্থা। মানুষ কি অদ্ভুতভাবে সব মিলিয়ে নেয়! ব্যালন্স করে নেয়! যদি ওর একারই শুধু এই দশা হতো তাহলে ওর কষ্টই হতো, এখন হয়না, কেননা অনেকের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পেরেছে। রসুল সর্দার।

জলিল সর্দারের বড় ছেলে। সড়সড় করে সিক্স পর্যন্ত গেল। তারপরই হোচট। একটা কালাজ্বর কিভাবে যেন একটা বছর খেয়ে দিল। এর পরে আবার তরতর করে ছেলেটা ক্লাস টেনে উঠল।

ম্যাট্রিকও দিল। তারপর সলতের তেল শেষ। অনেক দূরের কলেজে যাওয়া হলো না। ছেলেটা রাক্ষসের মত গিলত! শাকপাতা,কচু-ঘেচু যা পেত তাই দিয়েই দুই থালা। ৭/৮ জনের পরিবারে প্রতি বেলায় হাড়ি চড়ে না।

জলিল বিষন্ন চেয়ে চেয়ে দেখে, ছেলেটা মস্ত জোয়ান হয়ে উঠেছে, কি›তু ওর যেন আর কিছু করার নেই। বাপের সাথে কামলা দেয়। আবার মাঝে মাঝে বেঁকে বসে। বলে-ম্যাট্রিক পড়া ছেলে আমি, চাকরি করব, কামলা দিতে যাব না। একদিন খুব সকালে জেলা সদরের লম্বা লাইনে রসুল সর্দার।

গজ ফিতা, কথাবার্তা,শরীরের এখানে ওখানে থাবড়া আর চাটির পর টান দিয়ে অন্য একটা ছোট লাইনে। তিন মাস পর। চকরাবকরা পাতাবাহারী পোশাক পরে লঞ্চ থেকে নেমে এলো রসুল সর্দার। সিপাহী রসুল সর্দার। নম্বর-২৮৫৮২।

সোহান। চার্মিংবার্ড নার্সারী থেকে পি-ফাইভে টপ স্কোর। আরো কিছুদিন ধরে টপেই থাকা। একটা কোচিংয়ে টানা ছয় মাসের ক্লাসের পর ক্যাডেট কলেজ। তার আগে সকাল-বিকেল কমপ্লান চাইল্ড, কমপ্লান ইজি, স্পিরিলিনা ট্যাব, ডাবল আমলেট, এসি গাড়িতে ঘিলু ঠান্ডা রেখে লার্নিং।

বাড়িতে শ্যেভনিস্ট এটিকেট। ঘড়িধরে পড়াশুনা আর ঘড়ির কাঁটা ধরে জীবনযাপন। ক্যাডেট ছাড়া আর কিছু কি এরচে’ ভাল হয়? নাহ্, হলে তাতেই সই। ক্যাডেট কলেজ। ভিন্ন ধাঁচের জীবনদর্শন।

প্রথম ধাক্কাতেই শিখে নিল “ব্লাডি বেঙ্গলী গিভ নো ফুড”। “য়্যু শুড ওবে সিনিয়রস অর্ডার”। “য়্যু ডোন্নো হু আর য়্যু, য়্যু আর আ লিডার”। এমনতর আধুনিক হওয়ার হাতে-কলমের শিক্ষা। আরো কয়েক বছর পর, সোহান, আ প্রাউড সান অব মিঃ হাওলাদার ইজ আ কমপ্লিট অফিসার, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট।

বেশ কিছু বছর বাদে। লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সোহান, রানিং চার্জে সেক্টর কমান্ডার, উইথ মারভেলাস বাংলো, এ্যালংউইথ লট অব আর্দালী এন্ড ব্যাটম্যান। রসুল নামের এক দাড়িঅলা হাবিলদার তার ফুলের কেয়ারীর পাশে দাঁড়ানো। প্রথাগত বিচ্যুতির কারণে কোয়ার্টার গার্ডে ডিউটি। কাচুমাচু ভঙ্গিতে আর্জি জানানোর চেষ্টা।

কর্ণেল সোহান। স্মার্টলী রিপ্রেন্ট আ হগ অব কমান্ড লাইক স্ল্যাং। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বাবার এই প্রথাগত অপমান দেখছিল আসলাম। রসুলের ছেলে। এসব দেখে দেখেই ওর বড় হওয়া।

বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছে আসলাম। ও যখন কোন রিক্সাঅলার সাথে নিজেকে তুলনা করত তখন কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে উঁচুমাপের মানুষ মনে হতো। ভাবত তার বাবা সৈন্য! যখন টিভিতে যুদ্ধের ছবি দেখত তখন ভাবত তার বাবা ওই সিনেমার সৈন্যের মতই গর্বিত দেশমাতৃকার সন্তান!যখন প্রায় ছেলের বয়সী অফিসারের গালি খেয়ে তার সামনে কাচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়ানো দেখত, তখন মনে হতো তার বাবার চেয়ে ক্ষুদ্র মানুষ জগতে নেই!তার বাবার চেয়ে ঢের বেশি সন্মান একজন দিন মজুরের! লোহার সিঁকে প্লাস্টিক পেঁচিয়ে যে চেয়ার তাকেই ওরা “সোফা” বলত!চৌকিতেই তার বোন পরম মমতায় ফুল তোলা চাদর বিছিয়ে দেওয়ায় যেন ওদের বাড়ির আসবাবের মানরক্ষা হতো! সরকারী স্কুলে ওর সহপাঠিরা কেউ বাইরের গরিবের ছেলে, আবার অনেকেই ওদের চেয়ে অনেক বড়মাপের ঘরের ছেলে। ওর বাবা নিজেকে নিয়ে কিসের গর্ব করত তার ওর মাথায় আসত না। আবার কখনো অবাক হয়ে দেখত ওর সাদাসিধে ভালমানুষ বাবা বিশেষ কোন দায়িত্বে বাইরে মিছিল বা আন্দোলন ঠেকানোর ডিউটিতে কি নির্মম ভাবে ছাত্রদের পেটাত।

ও কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারত না। কেন এমন হয়? এভাবে বড় হওয়া আসলাম দুই দু’বার ইন্টার ফেল করার পর বাবা জোর করেই ক্যাপ্টেন বানাতে চাওয়া ছেলেকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বড় অফিসাররা পরিচিত ভেবে আশ্বস্ত হয়, ছেলেটা টিকে যাবে! আসলাম টিকে যায়। আসলাম জওয়ান হয়ে ট্রেনিং শেষ করে। আসলাম ক্রেজি সেপাই হিসেবে দুর্নাম কুড়োয়।

আসলাম অফিসারকে স্যালুট ঠোকে ঠিকই, কিন্তু কোথায় যেন একটা ঘোরলাগা ঘৃণা হুহু করে বাড়তে থাকে। আসলাম মাথা উঁচু করে হাঁটে। আসলামের উঁচু মাথা একদিন নিছু করে দেওয়া হয়। এটাই নিয়ম। এটাই হয়ে আসছে।

আসলাম বোঝে, জানে, আবার জানেনা। আসলাম জানে ওকে এই চাকরি দিয়েই ওর আরো তিনটা বোনের বিয়ে দিতে হবে। ওর বোনরাও নিয়মমত কোন সাধারণ সেপাই অথবা কোন সাধারণ ঘরে বউ হয়ে যাবে। তারপর সবই নিয়মের হাত ধরে নিয়মের মোহনায় গিয়ে থামবে। ২৫ ফেব্রুয়ারী।

এই আসলামরা গুলি করে অফিসার মেরেছিল। ওরা এটাকে বিদ্রোহ বললেও রাষ্ট্র আর সমাজের এলিটরা বলেছিল হত্যাযজ্ঞ। আসলামের চাইনিজ থেকে কয়টা গুলি বেরিয়েছিল, কিংবা আদৌ বেরিয়েছিল কিনা ওর মনে নেই। শুধু জেনেছিল ওরা কয়দিন পরে মারা যাবে। কিভাবে মারা যাবে তাও জানেনা।

মাত্র দুইদিন। এ জীবনে মাত্র দুইদিন আসলাম নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে পেরেছিল। ওই বিস্ময়কর ঘনঘটাময় ঘোর অমানিশার দুইদিন! আসলাম জানেনি, ওর ছয় বছরের মেয়েটা একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত চার নম্বর গেটের গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছিল! দুপুরের পর থেকেই মেয়েটা ঝিমিয়ে পড়ছিল। চোখের জল কতবার যে শুকনো খটথটে পিচে পড়ে মুহুর্তে শুকিয়ে গেছে মেয়েটি তা জানেনা। শতশত মানুষ রিকশা-গাড়ি করে গেটের পাশ দিয়ে চলে গেছে।

গাড়ির ভেতর বসা ফুটফুটে বাচ্চাগুলো কাঁচের জানালা দিয়ে অবাক বিষ্ময়ে দেখেছে পিলখানা গেটের ধারে দাঁড়ানো সেই মেয়েটিকে যার নাম রেবা, নয়ত রিতা, অথবা জয়া। সেই মেয়েটি সারা দিন কিচ্ছুটি মুখে না দিয়ে কি এক অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকেছে। একসময় মাটিতে বসে পড়েছে। কাকুরা গল্প করেছে, গাড়ি এসে থেমেছে, কেউ কেউ গেট দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ওর বাবা আসেনি।

ঘরে ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করেছে-আত্মহত্যা কি মা? মা নিরবে চোখ মুছেছে। সারা দিনের ক্লান্তি মেয়েটাকে কাদার মত বিছানায় লেপ্টে রেখেছে, তাই পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হযেছে। বাবার লাশটা দেখতে দেরি হয়েছে। বাবার মুখটা দেরিতে দেখেছে। জীবনটা দেরিতে নয়, দ্রুতই মেয়েটিকে বড় করে দিয়েছে।

ওই মেয়েটির কান্নায় রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনও একটি নাটবল্টও নড়ে ওঠেনি! আমাদের কারোরই বুকের বামপাশে খচ্ করে ওঠেনি!সময় পেরিয়ে গেছে সময়ের বেজন্মা নিয়মে! বিডিআর জোয়ানদের বঞ্চণা- দাবী দাওয়ার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে নিহতের স্বজনদের অশ্রুসজল চোখ, নিখোজ পিতার খোজে আকুল সন্তানের ছবি, গণকবরের দৃশ্য, অফিসারদের কোয়ার্টার ভাঙচুরের ছবি, লুটকরা স্বর্লাংকার নিয়ে পলায়নপর বিডিআর এর গ্রেফতার কাহিনী। সেই সাথে মিডিয়া- সরকারপ্রধান- সেনাপ্রধান- সামরিক- বেসামরিক আমলা-আমর্ত্য বুদ্ধিজীবী সবার মুখেই ষড়যন্ত্রের নানান জল্পনা। কেউ বলছে বিডিআররা মুখ বাধার জন্য এত রঙিন কাপড় কোথায় পেল, কেউ বলছে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্রপাতি কিভাবে লুটকরল, ওই গাড়িটি কোত্থেকে এলো- গণকবর কেন হলো- এত বাধ্য জোয়ানরা কোন সাহসে অফিসার দের গায়ে হাত তুলল- অফিসার দের বাড়িঘর কেন লুটপাট হলো? এগুলো সবই ষড়যন্ত্রের প্রমাণ। এদের সবাই কে খুজে খুজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে, দৃষ্টান্তু স্থাপন করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এরকম আর না ঘটে। মানুষ মানুষের শাস্তির ব্যাপারে কখনোই ঢিলেমি পছন্দ করে না!কেননা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে নাকি লোয়ার ক্লাসকে অপরাধী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতেই হবে।

শাস্তি ব্যাপারটা ওদের জন্যই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে আছে! এর পর চলেছে বিচার। কার বিচার? কিসের বিচার? কে করছে বিচার? বিচার যদি করতেই হয় তাহলে প্রথমেই বিচার করা দরকার বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রের, এবং বিদ্যমান সামরিক তন্ত্রের। এটা কেমন ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্যের মতই তথাকথিত অফিসার এবং সৈনিক এর মর্যাদার পার্থক্য করা হয়, যেখানে অফিসার সেই দাস যুগের দাস- প্রভুর মতই সৈনিক নামের দাসের সাথে প্রতিনিয়তই অন্যায়-অত্যাচার- জুলুম- নির্যাতন চালায়?আর তা যে চালায় সেটি কিন্তু কেউ অস্বীকার করছে না! এ সামরিক তন্ত্রে তো অফিসার শ্রেণী প্রতিদিনই সৈনিকের আত্মমর্যাদাকে হত্যা করছে। তাছাড়া কি শেখানো হয় মিলিটারিতে- সন্ত্রাসবাদ না মানবিকতা? যে শিক্ষাটা তারা পায়-তার সাথে মানবাধিকার বা সভ্যতার কি কোন সম্পর্ক আছে?না ছিল কোনও কালে? চেইন অব কম্যান্ডের স্বার্থে শুরু থেকেই স্বাধীন চিন্তা বিকাশের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয় সকলের- সার্কাসের পশুর মতই চাবুকের বাড়িতে নির্দিষ্ট ধরনের নড়াচড়া ছাড়া অন্য কোন কিছু করার কোন সুযোগ নেই এখানে। রাষ্ট্রিয় নিরপত্তা রক্ষার অযুহাতে এভাবে স্রেফ একদঙ্গল পশু তৈরীর কারখানা চালু রাখা হচ্ছে, (আর এটা শুধু বিডিআর এ নয়, প্রায় সব বাহিনীতেই)।

তার ওপর আছে সুযোগ-সুবিধার বঞ্চনা, বৈষম্য। মানবেতর জীবন যাপন। এর )ফলে পাশবিকতা বা নৈরাজ্য না ঘটাই তো অস্বাভাবিক। কাজেই বিশেষ ট্রাইবুনালে নৈরাজ্যের বিচার করার চেয়ে যে সিস্টেম/ প্রক্রিয়া এর জন্য দায়ী সেটার বিচার করা এবং সেটাকে পাল্টানো বেশী জরুরী, এটা কি কেউ ভেবেছেন? সাধারণ মানুষ এবং রাষ্ট্রের বানানো আইন হত্যা করা হয় অগোচরেই। বেসরকারী ব্যাংকগুলো প্রতিমাসে ২ লক্ষ ৫০ হাজার করে ১০ বছর মেয়াদে ৩ কোটি টাকা ১০ সেনাসদস্যদের পরিবারদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তারা সম্মিলিত ভাবে সম্ভবত সাড়ে সাত কোটি টাকা বা আরো বেশি দেবে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার পরিজনদের। সেনা কর্মকর্তাগণ পেলেন কোটি কোটি টাকা, ৩জন নিহত সাধারণ মানুষ পেলেন ২ লক্ষ টাকা করে, কিন্তু পিলখানায় বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত, কিংবা সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত বিডিআর সদস্যগণ গণদুশমন কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহী হওয়া ভিন্ন কি পেলো। এখন রাষ্ট্র এবং তার এলিট সোসাইটি সমস্বরে আর্তনাদ করে চলেছে, এই বাহিনী ভেঙ্গে দিয়ে অন্য বাহিনী বানাতে হবে। অথচ এই বাহিনীটির মুক্তিযুদ্ধে ছিল সবচেয়ে গৌরবজ্জল ভূমিকা। ঠেলায় টনখানেক শিট বা আরো ভারি কিছু নিয়ে যে দুজন প্রায় বৃদ্ধ প্রচন্ড রোদে ঠেলা টেনে চলেছে, তার কানের পাশে গাড়ির হর্ণ বাজলেই তার মুতের বেগ আসে।

তারা ওই গাড়ির আরহিদের মুখের ওপর মুতে দিতে চায়। পেছনের সিটে পায়ের ওপর পা তোলা যাত্রী যখন রিকশাচালককে বাঞ্চোৎ বলে ধাতানি দেয়, তখন রিকশাচালকেরও মুত আসে। ষ্টিল রিরোলিং মিলের গনগনে আগুণের সামনে দাঁড়ানো কিশোরটিরও মুত আসে। কচি গার্মেন্ট শ্রমিকটি যেদিন প্রথম কৌমার্য হারায় পিএম বা সুপারভাইজারের কাছে,বাড়ির কাজের মেয়েটি যখন সারাদিনরাত খেটে রান্নাঘরে বসে গোগ্রাসে গেলে তারও ভাবনায় কোন রাজপুত্তুর আসেনা, আসে বাড়ির কর্তা কিংবা তাদের দালাল ড়্রাইভার, যে প্রায়ই তাকে নিয়ে ছানাছানি করে, তারও পেচ্ছাপ চাপে। সুদূর অজপাড়াগাঁ থেকে এই মহানগরীতে কাজের খোঁজে আসা ক্ষেতমজুরটির জন্য এই শহর কিছুই রাখেনা।

ঠেলা খেতে খেতে একদিন আবার সে বাড়িমুখো হয়। খুব কম পয়সায় ট্রাকে চেপে। অর্ধেক মরে যায়, অর্ধেক বেঁচে ফেরে, তাদেরও মুত আসে। এরা সকলেই কল্পনায় প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্ত ক্ষমতাবান এলিট ক্লাসের মুখের ওপর মুতে দেয়। এই কাজটা তারা যদি কল্পনাতেও না করতে পারত, তাহলে এদ্দিন এরা ঝাঁকে ঝাঁকে বুক ফেটে মারা যেত।

যেহেতু মারা যায়নি অতএব বুঝতে হবে-এরা সকলেই ক্রমাগত মুতে চলেছে, থুথু দিয়ে চলেছে। হরিদ্রাভ একখন্ড আকাশে যত যত মেঘের আনাগোনা তার কিছু জল দেয়, কিছু দেয়না। জলহীন মেঘের দিকে চেয়ে কাল থেকে কালান্তরে এই মানুষেরা অপেক্ষা করে আছে। আমরা আমাদের দূরবীণে কতটুকু দেখব তা আমাদের শিক্ষা আর সংস্কৃতি ঠিক করে দিয়েছে। সেই ঠিক করে দেওয়াকেই আমরা ম্যানার বলছি।

সেই ম্যানারের মাপে একেবারে খাঁজে খাঁজে আমরা শ্রেণী সমন্বয়ের প্লাস্টার গেঁথে দিয়েছি, যেন কোনও ভাবেই আমাদের মধ্যবিত্ত এ্যারিস্ট্রোক্র্যাসিতে সামান্যতম চিঁড় না ধরে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.