আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একাত্তরের যীশুরা......

একলা হতে চাইছে আকাশ মেঘগুলোকে সরিয়ে দিয়ে ভাবনা আমার একলা হতে চাইছে একা আকাশ নিয়ে...

অ্যালেন গিন্সবার্গ, উইলিয়াম ওডারল্যান্ড, কাইফী আজমী, সাইমন ড্রিং, বব ডিলন, হ্যারিসন, পন্ডিত রবি শঙ্কর, ইয়েভ তুস্কেকার, আন্দ্রে ম্যালরা, রোনাল্ড গ্যাস্ট......এরা কেউই বাংলাদেশী নন। কিন্তু হৃদয়ে বাংলাদেশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছিল। কেউবা সরাসরি সরাসরি যুদ্ধে, আবার কেউ বিশ্বজুড়ে এই অপরিচিত দেশটার পক্ষ নিয়ে অর্থ সংগ্রহ ও জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। বিনিময়ে আমরা কতটুকু সম্মান তাদেরকে দিয়েছি? সাইমন ড্রিং এর মত বিশ্বখ্যাত সাংবাদিককে অপদস্ত করে বের করে দিতে একটুও বুক কাঁপে নি। তাদের স্মরণ করা না করায় আজ তাদের হয়তো কিছুই যাবে আসবে না... কিন্তু নিজের বিবেকের কাছ থেকে কি পালিয়ে বাঁচতে পারব? উইলিয়াম ওডারল্যান্ড (বীরপ্রতীক): উইলিয়াম ওডারল্যান্ডের জন্ম ১৯১৭ সালে, নেদারল্যান্ডের আর্মস্টারডামে।

১৯৭০এ বাংলাদেশে আসেন বাটা সু কোম্পানীর ম্যানেজার হিসেবে। চাকরি সু্ত্রেই বিভিন্ন উপর মহলের লোকজনদের সাথে পরিচয়, দাওয়াত পেতেন বিভিন্ন সরকারী অনুষ্ঠানের। পাক সেনাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পেতেন এখান থেকে। যা তথ্য পেতেন সরবরাহ করতেন মুক্তিবাহিনীর কাছে। এভাবেই শুরু।

এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র, অর্থ, রসদ সংগ্রহের কাজে হাত দেন, একসময় সরাসরি জড়িয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ২ নং সেক্টরের গনবাহিনীর ৩১৭ নং সদ্স্য হিসেবে তার নাম লেখা আছে। তিনি খেতাবপ্রাপ্ত একমাত্র বিদেশী মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যু বরণ করেন ১৮ মে, ২০০৮ পার্থ হাসপাতালে। সাইমন ড্রিং: মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

বহির্বিশ্বে ২৫শে মার্চের গনহত্যা ও পাকিস্তানি বর্বরতার কথা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথম সংগ্রহ ও প্রকাশ করেন এই ব্রিটিশ সাংবাদিক। খুজতে গিয়ে তার সেই রিপোটর্টির বাংলা অনুবাদও পেয়ে গেলাম এই ব্লগে, লেখকের অনুমতি ছাড়াই লিংকটি দিয়ে দিলাম, Click This Link সাইমন ড্রিং সম্পর্কে আমরা অবশ্য কম-বেশী সবাই ই জানি। বাংলাদেশ ছিল তার দ্বিতীয় ঘর। বহুবার এসেছেন। সাইমন ড্রিং-এর একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশর টিভি চ্যানেল জগতে এক ভিন্নমাত্রা নিয়ে এসেছিল।

অবশেষে রাজনৈতিক পালাবদলে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে এইদেশ ছাড়তে হলো। অ্যালেন গিন্সবার্গ: জন্ম ১৯২৬, মার্কিন কবি ও গীতিকার। '৭১এ চষে বেড়িয়েছেন ভারতের বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরগুলোতে। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন বিখ্যাত কবিতা "সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড"। ( Click This Link ) ।

এই কবিতাটিকে গানে রূপ দিয়ে শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন বব ডিলনরা। মৃত্যু: ৫ই এপ্রিল, ১৯৯৭ কাইফী আজমী: জন্ম: ১৯১৯, উত্তর প্রদেশ। বিখ্যাত উর্দূ কবি। ভারত ভাগের পর যান পাকিস্তানে। তার অবস্থান বরাবরই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে।

অনেক প্রাতিকুলতা সত্ত্বেও অবিচল ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। কবিতা লিখেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে। অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শরণার্থীদের জন্য। মৃত্যু: ১০, মে ২০০২ বোম্বে। বব ডিলন, হ্যারিসন, পন্ডিত রবি শঙ্কর: ১ আগস্ট ১৯৭১, বব ডিলন, হ্যারিসন, রবি শঙ্কর, লেননদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালে মেডিসন স্কয়ারে আয়োজিত হয় "দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ"।

গত শতাব্দী সেরা ও আলোচিত কনসার্টগুলির একটি এটি। কনসার্টটি ব্যাপকভাবে নাড়া দেয় সারা বিশ্বকে। কনসার্ট থেকে আয় হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ ডলার। যার পুরোটিই দান করা হয়েছিল বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য। ইয়েভ তুস্কেকার: রাশিয়ান কবি।

'৭১এ কবিতা লেখেন বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। খুব একটা তথ্য অবশ্য তার সম্পর্কের যোগাড় করতে পারিনি। আন্দ্রে ম্যালরা: ফরাসী নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আন্দ্রে ম্যালরা যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার কথা ঘোষনা করেন, সারা ইউরোপে ব্যপক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তার এই ঘোষনার পর সারা বিশ্ব থেকেই বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক সাহায্য আসতে থাকে।

উনি পরে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রনে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন। রোনাল্ড গ্যাস্ট: বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক রোনাল্ড গ্যাস্ট এসেছিলেন ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আবেদনে। শত শত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার নতুন করে জীবন দিয়ে গেছেন তিনি। এছাড়াও আরও রয়েছেন, বিবিসি সাংবাদিক মার্ক ট্যালী, ব্রিটিশ এমপি স্টোনহাউস, পিটারসোর সহ আরো অনেকে, যাদের কাছে আমরা চির ঋণী। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে, যার ভূমিকা কোনদিনও ভোলার নয়।

আরও শ্রদ্ধা জানাই নাম না জানা হাজার হাজার শুভাকাঙ্ক্ষীদের যারা নানা ভাবে সাহায্য করেছে এই বাংলা নামের দেশটি হওয়ার জন্য। (বি:দ্র: শিরোনামটি শাহরিয়ার কবীরের ছোটগল্প "একাত্তরের যীশু" থেকে নেয়া। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।