আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একাত্তরের চিঠির ডিজিটাইজড্ কন্টেন্ট ‌‌-১

প্রথমেই আমি তাকে যাদু করতাম
একাত্তরের চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট রিভার্সিং: একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনার পর আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি । সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী পাতলা খান, অরণ্যচারী এবং তর্পনের করা ৭ টি ডিজিটাইজ করা চিঠির এখানে প্রকাশ করা হল। যদি আপনার কাছে "একাত্তরের চিঠি" বইটি থেকে থেকে থাকে, তাহলে স্ক্যান করে দিন। স্ক্যান করা এবং অথবা টাইপ করার জন্য আপনাকে যথাযথ ক্রেডিট দেওয়া হবে। ----------------------------------------------------‌‌‌‌ পআ ১: ১৬ জুলাই পঞ্চগড় সীমান্তবর্তী ভারত থেকে মা রাফিয়া খাতুনকে এই চিঠি লিখেছিলেন ৬ নম্বর সেক্টরের সি কম্পানির আব্দুর রউফ ওরফে ববিন।

মায়ের আঁচলঘেঁষা এই মানুষ্টির বাংকার জীবনের বর্ণনা পড়ার পর না-দেখা সেই মা ও তাঁর ছেলের জন্য মনটা কেমন হু হু করে উঠে। ১৬.৭.১৯৭১ মা, মুক্তিসেনাদের ক্যাম্প থেকে লিখছি। এখন বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। তাঁবুর ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি সমস্ত দিগন্ত মেঘলা মেঘলা। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।

সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা, তাই মনটা ভাল না। আচ্ছা মা, সারা রাত এমনি চলার পর পূর্বয়াকাশে যে লাল সূর্য উঠে, তার কাঁচা আলো খুব উজ্জ্বল হয় তাই না? এই মুহূর্তে আমার ছোতবেলার কথা মনে পড়ছে। বর্ষা এলে তুমি বাইরে যেতে দিতে না, একদিন তোমার অজান্তে বাইরে আসতেই পিছলে পড়ে পায়ে চোট লাগে, তখন তুমি চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলে। ওষুধ দিয়ে ভর্তি হয়েছিল টেবিলটা, আমার বেশ মনে আছে। তখন থেকে একা বাইরে যেতে সাহস পেতাম না।

ভয় লাগত, বাইরে গেলেই পড়ে যাব। কিন্তু আজ! আজ আমার অনেক সাহস হয়েছে, রাইফেল ধরতে শিখেছি। বাংকারে রাতের পর রাত কাটাতে হচ্ছে, তবু ভয় পাই না। শত্রুর আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমনে শিরায়-উপশিরায় রক্তের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। মা, সত্যি তোমাকে বঝাতে পারবনা।

ছোটবেলার কথা মনে পড়লে কেমন যেন লাগে। কিন্তু আমার একি আশ্চর্য পরিবর্তন, কারণ আমি আমার স্বদেশ, আমার বাংলাকে ভালবাসি। মা, কৈশরে একদিন আব্বা আমাকে সৈয়দপুরে নিয়ে গিয়েছিল, স্পেশাল ট্রেন দেখাতে। সেখান থেকে আমি হারিয়ে যাই। তখন একলা একলা অনেক্ষন ঘুরেছিলাম।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যার ঘনঘটা নেমে এসেছিল, আমার কেমন যেন কান্না পাচ্ছিল। মনে হয়েছিল, আমি হারিয়ে গাছি। তখন মনে হয়েছিল, আর কনো দিনই হয়তো তোমার কাছে ফিরে যেতে পারবনা। তখন কাঁদতে কাদতে স্টেশনের দিকে আস্তে শুরু করেছিলাম। রাস্তায় হাজারী বেলপুকুরের হাই-ই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।

দেখি সেখানে কিছুক্ষন পর আব্বা গালেন। পরদিন এসে সমস্ত কথা শুনতে না শুনতে আমাকে বুকে জড়িয়ে তুমি কাঁদছিলে। অথচ সেদিন তুমি তো কাঁদলে না মা! আমি রণাঙ্গনে চলে এলাম। গুলি, শেল, মর্টার নিয়ে আমার জীবন। ইয়াহিয়ার জঘন্যতম অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁরাবার জন্য দুর্জয় শপথ নিলাম।

এখন বাংকারে বাংকারে বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়। কখনো বা রাতের অন্ধকারে শত্রুর ঘাঁটির ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালাই। এ যুদ্ধু ন্যায়ের যুদ্ধ, মা, জয় আমাদের হবেই হবে। মাগো, সেদিনের সন্ধ্যাটাকে আমার বেশ মনে পড়ছে। আজকের মত মেঘলা মেঘলা আকাশ সেদিন ছিল না।

সমস্ত আকাশটা তারায় ভর্তি ছিল। তুমি রান্না ঘরে বসে তরকারি কুটছিলে। আমি তোমাকে বললাম, 'মা,আমি চলে যাচ্ছি। ' তউমি মুখের দিকে তাকালে। আমি বলেছিলাম, 'মা, আমি মুক্তি বাহিনীতে চলে যাচ্ছি।

' উনুনের আলোতে তোমার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। তোমার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তুমি দাঁরিয়ে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে তাকালে। আমার ঘরের পেছনে বেলগাছটার কিছু পাতা বাতাসে দোল খেয়ে আবার স্থির হয়ে গেল। মা, সেদিন সন্ধ্যাতেই তুমি আমাকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলে।

মা, মনে হচ্ছে কত যুগ পাড়িয়ে গেছে, আর একটি দিন ইতিহাসের পাতার মত রয়ে গেছে। কত আশা, কত আকাঙ্খা অন্যায়ের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু মা দিনান্তের ক্লান্তে নিত্যকার মতো সেই সন্ধ্যাটা আবার আসবে তো? ইতি তোমার স্নেহের ববিন পাতলা খানের সৌজন্যে Click This Link ------------------------------------------------------------ পআ ২: জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলির বদৌলতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাফি ইমাম রুমি এখন আর আমাদের কাছে অপরিচিত কেউ নয়া। কোনোদিন না দেখা এই মানুষটিকেই এখন মনে হয় আমাদের পরিবারের কোন সদস্য। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাহমিদ সাঈদকে এই চিঠিটি লিখেছিলেন রুমী।

সম্পর্কে তিনি রুমীর মামা। মূল চিঠিটি ইংরেজীতে লেখা, এখানে দেওয়া হলো তার বাংলা অনুবাদ। প্রানপ্রিয় পাশা মামা, অবাক হয়ো না! এটা লেখা হয়েছে আর তোমার কাছে পৌছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখোনা।

তাহলে তাদের বিপদে পড়তে হবে। তারাহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে। আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি।

আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া কোরো। কী লিখব বুঝতে পাড়ছি না--কত কী নিয়ে যে লেখার আছে! নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াবহ ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করেছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একইধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের উপর আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব।

জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখ না। সোনার বাংলার জন্য যা পারো কর। এখনকার মত বিদায়। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ রুমী পাতলা খানের সৌজন্যে প্রাপ্ত ------------------------------------------------------------ পআ ৩: ২৭ জুন ময়মনসিংহের অজ্ঞাত এক স্থান থেকে মা আনোয়ারা বেগম কে এই চিঠি লিখেছিলেন ভোলা জেলার সদর উপজেলার আব্দুর ওদুদ পন্ডিতের ছেলে ওমর ফারুক।

তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় করাচি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন। চিঠিতে ফারুক মামে লিখেছিলেন, 'স্বাধীনতা আসিলেই আমি আপনাদের কলে ফিরিয়া আসিব। ' স্বাধীনতা ঠিকই এসেছিল, কিন্তু ফারুকের আর মায়ের কোলে ফেরা হয়নি। চার মাস পর অক্টোবরে 'বাংলার স্বাধীনতাসংরামের' জন্য লড়াই করতে করতে গাইবান্ধার নান্দিনায় শহিদ হন ওমর ফারুক। মা, আমার শত সহস্র সালাম ও কদমবুসি গ্রহন করিবেন।

আমার কাছেও তদ্রুপ রহিল। এত দিনে নিশ্চয় আপনারা আমার জন্য খুবই চিন্তিত। আমি আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোয়ায় বাংলাদেশের যেকোন একস্থানে আছি। আমি এই মাসের ২০ হইতে ২৫ তারিখের মধ্যেই বাংলাদেশে আসিয়াছি। যাক, বাংলাদেশে আসিয়া আপনাদের সাথে দেখা করিতে পারিলাম না।

আমাদের নানাবাড়ীর (...) বাড়ীর খবরাখবর নিম্নের ঠিকানায় লিখিবেন। আমি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আসিয়াছি (আশা করি বাংলায় স্বাধীনতা আসিলেই আমি আপনাদের কলে ফিরিয়া আসিব। ) আশাকরি, মেয়াভাই ও নাছির ভাই ইএবং আমাদের স্বজন বাংলার স্বাধীনতাসংগ্রামে লিপ্ত। যাক, বর্তমানে আমি ময়মনসিংহ আছি। এখান থেকে আজই অন্য জায়গায় চলিয়া যাইব।

দোয়া করিবেন। পরিশেষে আপনার স্নেহ মুগ্ধ ফারুক পাতলা খানের সৌজন্যে প্রাপ্ত ---------------------------------------------------------------- পআ৪: Click This Link ওয়াসেকা তখন ছোট্ট মেয়ে। এতই ছোট যে পড়তে পর্যন্ত পারে না। তারপরেও মেয়েকে উদ্দেশ্য করে এই চিঠি লিখেছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান। কারণ মনে শঙ্কা ছিল, মেয়ে বড় হওয়া পর্যন্ত দুনিয়ার আলো-হাওয়া দেখার সুযোগ নাও পেতে পারেন তিনি।

১৬ই জুলাই ১৯৭১ ইং মামণি আমার, তুমি যখন ইনশাল্লাহ পড়তে শিখবে, বসতে শিখবে তখনকার জন্য আজকের এই চিঠি লিখছি। তোমরা (...) নিশ্চয়ই। অনেক অভিমান জমা, আব্বু তোমাকে দেখতে কেন আসে না? মামণি, আব্বু আজ তোমার জন্মদিনে তোমাকে বুকে নিয়ে বুক জুড়াতে পারছি না, এই দুঃখ তোমার আব্বুর জীবনেও যাবে না। । কী অপরাধে তোমার আব্বু আজ তোমার কাছে আসতে পারে না, তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারে না, তা তুমি বড় হয়ে হয়তো বুঝবে, মা।

কারণ আজকের অপরাধ তখন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। আজকে এ দেশের জনসাধারণ তোমার আব্বুর মতই অপরাধী, কারণ তারা নিজেদের অধিকার চেয়েছিল। অপরাধী দেশবরেণ্য নেতা, অপরাধী লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক – এ দেশের সব বুদ্ধিজীবী কারণ তারা এ দেশকে ভালোবাসে। হানাদারদের কাছে, শোষকদের কাছে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছুই নেই। এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

সেই দণ্ড এড়াবার জন্য লাখ লাখ লোক দেশ ত্যাগ করেছে। সেই দণ্ড এড়াবার জন্য তোমার আব্বুকে গ্রামে – গ্রামে, পাহাড়ে – জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তাই আজ বুক ফেটে গেলেও আব্বু এসে তোমাকে নিয়ে আদর করতে পারছে না। মনের মণিকোঠায় তোমার সেই ছোট্ট মুখখানি সব সময় ভাসে, কল্পনায় তাকে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিই। আর তাতেই তোমার আব্বুকে সান্ত্বনা পেতে হয়।

আব্বু, নামাজ পড়ে প্রত্যেক ওয়াক্তে তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ রহমানুর রাহিমের কাছে মোনাজাত করি, তিনি যেন তোমার আম্মুকে আর তোমাকে সুস্থ রাখেন, বিপদমুক্ত রাখেন। মামণি, তোমার আম্মু লিখেছে, তুমি নাকি এখন কথা বলো। তুমি নাকি বলো, 'আব্বু জয় বাংলা গাইত। ' ইনশাল্লাহ সেই দিন আর বেশি দূরে নয় আব্বু আবার তোমাকে জয় বাংলা গেয়ে শোনাবে।

যদি আব্বু না থাকি, তোমার আম্মা সেদিন তোমাকে জয় বাংলা গেয়ে শোনাবে। তোমার আম্মু আরো লিখেছে তুমি নাকি তোমাকে পিট্টি লাগালে আম্মুকে বের করে দেবে বলে ভয় দেখাও। তোমার আম্মু না ভীষণ বোকা। খালি তোমার আর আমার জন্য কষ্ট করে। বের করে দিলে দেখো আবার ঠিক ঠিক ফিরে আসবে।

আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না। তোমার আম্মু দুঃখ পেলে এখন আর কাউকে বলবে না। একা একা শুধু কাঁদবে। তুমি আদর করে আম্মুকে সান্ত্বনা দিও কেমন? তুমি আমার অনেক অনেক চুমো নিও। ইতি আব্বু অরণ্যচারীর সৌজন্যে প্রাপ্ত ।

Click This Link ‌‌‌‌‌‌‌‌‌ -------------------------------------------------------------- পআ৫: এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে মাকে এই চিঠি পাঠান নারায়নগঞ্জের বন্দর উপজেলার ইসহাক খান। তাঁর মা ফযজনের নেসা তখন থাকতেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আটোমোরে। ইসহাক খান বর্তমানে কিশোরগঞ্জের ভৈরব খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মাগো, তুমি আমায় ডাকছিল? আমার মনে হলো, তুমি আমার শিয়রে বসে কেবলই আমার নাম ধরে ডাকছ, তোমার অশ্রুজলে আমার বক্ষ ভেসে যাচ্ছে, তুমি এত কাঁদছ? আমি তোমার ডাকে সাড়া দিতে পারলাম না । তাই আমায় ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেলে।

স্বপ্নে একবার তোমায় দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি আমার বড় আবদারের ছেলের আবদার রক্ষা করতে এসেছিল। কিন্তু মা, আমি তোমার সঙ্গে একটি কথাও বললাম না। দু চোখ মেলে কেবল তোমার অশ্রুজলই দেখলাম। তোমার চোখের জল মোছাতে এতটুকু চেষ্টা করলাম না । মা, তুমি আমায় ক্ষমা করো ‌ তোমায় বড় ব্যথা দিয়ে গেলাম ।

তোমাকে এতটুকু ব্যথা দিতেও তো চিরদিন আমার বুকে বেজেছে। তোমাকে দু:খ দেওয়া আমার ইচ্ছে নয়। আমি স্বদেশ জননীর চোখের জল মুছাবার জন্য বুকের রক্ত দিতে এসেছি। তুমি আমায় আশীর্বাদ করো, নইলে আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ন হবে না। একটিবার তোমাকে দেখে যেতে পারলাম না ।

সে জন্য আমার হৃদয়কে ভুল বুঝো না তুমি । তোমার কথা আমি এক মুহুর্তের জন্য ভুলিনি, মা। প্রতিনিয়তই তোমার আশীর্বাদ প্রার্থনা করি । আমার অভাব যে তোমাকে পাগল করে তুলেছে, তা আমি জানি । মাগো, আমি শুনেছি, তুমি ঘরের দরজায় এসে সবাইকে ডেকে ডেকে বলছ ‌‌- "ওগো, তোমরা সবাই আমার "ইসহাক" - শূন্য রাজ্য দেখে যাও" তোমার সেই ছবি আমার চোখের ওপর দিনরাত ভাসছে ।

তোমার এই কথাগুলি আমার হৃদয়ের প্রতি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে কান্নার সুর তোলে । মাগো, তুমি অমন করে আর কেঁদো না । আমি সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি তাতে আনন্দ পাও না? কী করবো, মা? দেশ যে পরাধীন। দেশবাসী যে বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত। দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনত, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা? তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে, মা? একটি সন্তানকেও তুমি কি মুক্তির জন্য উত্‍ সর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে? আর কেঁদো না, মা।

যাবার আগে আর একবার তুমি আমায় স্বপ্নে দেখা দিয়ো। আমি তোমার কাছে জানু পেতে ক্ষমা চাইব । আমি যে তোমার মনে বড় ব্যথা দিয়ে এসেছি, মা। ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। তুমি আদর করে আমাকে বুকে টেনে নিতে চাইছ, আমি তোমার হাত ছিনিয়ে চলে এসেছি।

খাবারের থালায় নিয়ে আমাকে কত সাধাসাধিই না করেছ। , আমি সেদিন ফিরে চলে এসেছি। না, আর পারছি না। ক্ষমা চাওয়া ভিন্ন আর আমার উপায় নেই । আমি তোমাকে দুদিন ধরে সমানে কাঁদিয়েছি।

তোমার কাতর ক্রণ্দন আমাকে এতটুকু টলাতে পারে নি। কী আশ্চর্য মা? তোমার ইসহাক নিষ্ঠুর হতে পারল কী করে? ক্ষমা করো মা, আমায় তুমি ক্ষমা করো। ইতি ইসহাক। Click This Link ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ ‌-------------------------------------------------------- পআ ৬: 'জানি, তুমি আমাকে যেতে দিবে না । ' তাই মাকে না বলেই যুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন ফরিদপুরের চাঁদ বোয়ালমারীর এ বি এম মাহবুবুর রহমান।

তারপর ৫ এপ্রিল ভারতের ২৪ পরগনার ৮ নম্বর সেক্টর হেড কোয়ার্টারের বসিরহাট সাব‌ ডিভিশনে বসে মাকে চিঠিটি লিখেছিলেন মাহবুব। আনন্দের কথা 'মাতৃভূমি সোনার বাংলাকে শত্রুমুক্ত' করে একদিন ঠিকই দেশে ফিরেছিলেন তিনি। ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল মাগো, তুমি যখন এ পত্র পাবে, আমি তখন তোমার থেকে অনেক দুরে থাকব। মা, জানি, তুমি আমাকে যেতে দিবে না, তাই তোমাকে না বলে চলে যাচ্ছি । তবে যেদিন মা‌-বোনের ইজ্জতের প্রতিশোধ এবং এই সোনার বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে পারব, সেদিন তোমার ছেলে তোমার কোলে ফিরে আসবে।

দোয়া করবে, মা, তোমার আশা যেন পূর্ণ হয়। ইতি তোমারই হতভাগা ছেলে পুনশ্চ: সেই গাঢ় অন্ধকারে একাকী পথ চলেছি। শরীরের রক্ত মাঝে মাঝে টগবগিয়ে উঠছে, আবার মনে ভয় জেগে উঠছে, যদি পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ি, তবে সব আশাই শেষ(..) যশোর হয়ে নাগদা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। পথে একবার রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। তারা শুধু টাকা‌-পয়সা ও চার-পাচটা হিন্দু যুবতী মেয়েকে নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়।

তখন একবার মনে হয়েছিল, নিজের জীবন দিয়ে মেয়েদের ওদের হাত থেকে রক্ষা করি । কিন্তু পরমূহূর্তে মনে হয়, না, এদের উদ্ধার করতে গেলে প্রাণটাই যাবে, তাহলে হাজার মা বোনের কী হবে? রাত চারটার দিকে বর্ডার পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করি। বাল্যবন্ধু শ্রী মদনকুমার ব্যানার্জি ইতনা কলোনি, শিবমন্দির, বারাসাত, ২৪ পরগনা - এই ঠিকানায় উঠলাম । এখানে এক সপ্তাহ থেকে ওই বন্ধুর বড় ভাই শরত্‍ চন্দ্র ব্যানার্জি আমাকে বসিরহাট মহকুমা ৮ নম্বর সেক্টর মেজর ডালিমের তত্ত্বাবধানে আমাকে মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিংয়ে ভর্তি করে দেন। সেখানে পরিচয় হয় ব.রেজিমেন্টের আবুল ভাইয়ের সঙ্গে।

ট্রেনিং ক্যাম্পে এক সপ্তাহ থাকার পর কর্ণেল ওসমান গণির নির্দেশে আমাদের উচ্চ ট্রেনিং (...) স্ক্যান কপির লিংক ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌------------------------------------------------ ঝালকাঠি, মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট ২৪/৭/৭১, বাংলা ৬ শ্রাবণ, ১৩৭৮ স্নেহের ফিরোজা, তোমাকে ১৭ বত্‍সর পূর্বে সহধর্মিণী গ্রহণ করিয়াছিলাম। অদ্যাবধি তুমি আমার উপযুক্ত স্ত্রী হিসাবে সংসারধর্ম পালন করিয়া আসিয়াছ। কোন দিন তোমার উপর অসন্তুষ্ট হইতে পারি নাই। আজ আমি (...) তোমাদের অকুল সাগরে ভাসাইয়া পরপারে চলিয়াছি । বীরের মত সালাম ‌- ইনশাল্লাহ জয় আমাদের হইবে, দুনিয়া হইতে লাখ লাখ লোক চলিয়া গেছে খোদার কাছে ।

কামনা করি যেন সব শহীদের কাতারে শামিল হইতে পারি । মনে আমার কোন দু:খ নাই। তবে বুক জোড়া কেবল আমার বাদল। ওকে মানুষ করিয়ো। আজ যে অপরাধে আমার মৃত্যু হইতেছে খোদাকে স্বাক্ষী রাখিয়া আমি বলিতে যে এই সব অপরাধ হইতে আমি নিষ্পাপ।

জানি না খোদায় কেন যে আমাকে এই রূপ করিল। জীবনের অর্ধেক বয়স চলিয়া গিয়াছে, বাকি জীবনটা বাদল ও হাকিমকে নিয়া কাটাইবে । (...) পারিলাম না । (...) বজলু ভাইয়ের বেটা ওহাবের কাছে ১৫ হাজার টাকা আছে । যদি প্রয়োজন মনে কর তবে সেখান হইতে নিয়া নিয়ো।

ইতি তোমারই বাদশা (বাবা হাকিম, তোমার মাকে ছাড়িয়া কোথাও যাইয়ো না) ==================================== স্ক্যান করা চিঠিসমূহ পআ১: Click This Link পআ২: Click This Link পআ৩: Click This Link পআ৪: Click This Link পআ৫: Click This Link পআ৬: Click This Link মুক্তিযোদ্ধা বাদশার চিঠি: এখানে ক্লিক করুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত চিঠির জন্য যৌবনযাত্রা ফোরামের sensei এর কাছে কৃতজ্ঞ। ফেসবুকে প্রাপ্ত কয়েকটি অসম্পুর্ণ স্ক্যান কপির জন্য দেখুন http://tinyurl.com/chithi1
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।