আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেমপত্র সংকলন

পাখি এক্সপ্রেস

ছোটবেলায় মা কপালে কাজলের ফোটা দিয়ে দিতেন। এমনকি যখন সেভেন এইটে পড়তাম তখনও। আমার পকেটেও একটি কাজলের ডিব্বা থাকতো। বাড়ির দরজায় এসে পানি দিয়ে কপালের ফোটাটি ধুয়ে ফেলতাম। আবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে দরজায় এসে ডিব্বা থেকে কাজল নিয়ে ফোটাটি বরাবর বসিয়ে দিতাম।

নইলে খবর ছিলো। এখনো মাঝে মাঝে ছোটবেলার ছবিগুলো দেখি। সবাক পোলাটা বেশ নাদুস নুদুস ছিলো । মায়ের ভয় ছিলো যদি কোন মাইয়ার মা তাবিজ কবচ করে বশে নিয়া নেয়!! মাইয়ার যন্ত্রনা যে কি, তা প্রথম টের পাই ক্লাশ সেভেনে। আমি তখন নিয়মিত ফেয়ারনেস ক্রীম, শ্যাম্পুসহ অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার নিয়মিত করতাম।

মাথাটা সাইজে একটু বড় হলেও চুলগুলো বেশ রেশমী ছিলো। ক্লাশের মেয়েরা আমার চুল ধরে ধরে দেখতো। আরেকটা বিশেষ ছিলো আমার ভ্রু যুগল। খুব মোটা এবং জয়েন্ট। এখন অনেক ঝরে গেছে।

কতো মেয়ে যে ধরে ধরে দেখতো। ভ্রু আর চুলের প্রেমে পড়ে একদিন একটি মেয়ে প্রেমপত্র জমা দিল। পড়তে যে কি ভালো লেগেছিলো....। আমার ভ্রু নাকি তাদের বাড়ির পাশের কাশঝাড়ের মতো সুন্দর। অধিক মাত্রায় টাশকিত হয়েছিলাম।

আবার ঠোটের কথাও আবজাব কি লিখেছিলো। এইটা নিয়ে ভালো লাগা শেষ হইতে না হইতে আমার ২বছরের এক সিনিয়র মাইয়া মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে প্রেমপত্র ধরাইয়া দেয়। ভেতরে যা লিখলো! আমি তারে আমার একটি ছবি দিতাম, বুকে নিয়া ঘুমাইবো । এই পত্রখানার জবাব দিছিলাম। বলছিলাম, আপনিতো আমার বড়।

জবাবটাও সেরম হইছিলো। মাইয়াটা খুব ফরহেজগার ছিলো। আমারে কইলো রাসূল আর খাদিজার কথা। যাই হোক মাইয়াটা ক্লাশ টেনে উঠতেই দফারফা হইছিলো। তার বাবা বিয়া দিয়ে দিছিলো।

পত্রগুলো জমা করে রাখতাম। ইচ্ছা ছিলো একটা আর্কাইভ বানাবো। ক্লাশ এইটে উঠে নিজেই কোরবান হয়ে গেলাম। সিক্সে ভর্তি হওয়া একটা মাইয়ার প্রেমে একেবারে হাঁটু গেড়ে পড়লাম। আমাদের ফার্স্ট বয়ের বোন।

ফলশ্রুতিতে ফার্স্ট বয় আমার বন্ধু হলো। আমি আবার একটু রয়ে সয়ে। প্রেমটারে লালন পালন করে দশম শ্রেনী পর্যন্ত নিলাম। টেস্ট পরীক্ষার আগে একখান পত্র লিখবো বলে সিদ্ধান্ত নিই। রাতে পত্র লিখতে গিয়ে ধরা খাইলাম মায়ের হাতে ।

মা জাগাইলো বড় আপারে। আপা আমার চেহারার ভাষা দেখে খুব বড়ধরনের ছাড় দিলেন। আপা পড়তে শুরু করলেন- প্রিয় সোহাগ, অনেকদিন তোর কাছে চিঠি লিখি না, জানিনা তু্ই কেমন আছিস......... আমিতো বাইচা গেছি কিন্তু হায় হায়! মাইয়া চিঠি পাইয়া কইলো - "আমিতো আপনেরে বড় ভাই'র মতো জানি" টেষ্ট পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করি। রোল নং ৮ এর থেকে ৩ এ আসে। বিরহ আমাকে একটুও আটকায়নি।

আমার ভালো রেজাল্ট করার কারণে যার রোল ৩ ছিলো তার প্রেম ভেঙ্গে যায়। সে প্রেম এসে আমার কাঁধে ভর করেছিলো। টেষ্ট পরীক্ষা থেকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সময়ে আমার প্রেমে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে। এসময় ছিলো স্বর্ণযুগ। প্রেমপত্র গুলো রাখার জন্য মাছ ধরা জাল বানানোর সুতো দিয়ে একটি ছোট্ট ব্যাগ বানিয়েছিলাম।

ওই চিঠিগুলোর মাঝে কয়েকটি লাইনতো ইতিহাস হয়ে আছে। এক চিঠিতে হুমকি ছিলো - "যদি তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি না হও, তবে তোমার চোখে রান্নার চুলো বসাবো কি ভয়ানক কথা রে বাবা!!!! আরেকজনতো কইছে _ প্রতি চান্নিপ্রসর রাইতে কোলে শোয়াইয়া তেতুলের আঁচার খাওয়াইবো এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এলাকায় হিরো হয়ে গিয়েছিলাম। বড়বোন আর মায়ের কিনে দেয়া নতুন জামা পড়ে যখন স্কুলের সামনে দিয়ে বাজারে যেতাম তখন আমাকে ঘিরে অনেক চোখ ব্যস্ত থাকতো। আমার ছোটবোনের বান্ধবী তাকে ১০০টাকা ঘুষ দিয়েছিলো খালি ওই মাইয়ারে আমি লাইক করি কিনা তা জানার জন্য। এসএসসি থেকে ইন্টার পর্যন্ত সময়টাতে খরা গিয়েছিলো।

কোন পত্র আসেনি আমার ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষার অনেক পর একদিন ওই মাইয়ার থেকে একটি পত্র আসলো। দুইটা লাইন খুব মনে ধরছিলো- "আপনি যখন একহাতে লুঙ্গির কাছা ধরে আর অন্য হাত নাড়াতে নাড়াতে স্কুলের সামনে দিয়ে হেঁটে যান তখন আমার মন আর ক্লাশে রয় না। আর আমি খালি ভাবি, আপনার ওই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির গোড়ায় না জানি কতো প্রেম জমা আছে কয়দিন পরই আরেকটা পত্র হাতে আসে। মনি নামের একটি মেয়ের। স্কুলে পড়ে।

সে লিখলো "প্রতিটি প্রেমের গন্তব্যই বিয়ে। আমি তোমাকে আমার নাতি নাতনীর দাদা বানাতে চাই। " আর শেষে এসে লিখলো.... আমি সাপের মাথার মনি নয়, ব্যাঙের মুখের মনি নয়, আমি তোমাকে আমার নয়নের মনি বানাতে চাই" ইতি তোমার নয়নের মনি এটাই ছিলো আমার পাওয়া সর্বশেষ প্রেম পত্র। এখন আর বেইল নাই। আমার এখানে এখন বৃষ্টি হচ্ছে।

বৃষ্টিতে বসে বসে ছোটবেলার অনেক কিছু নিয়ে নাড়াছাড়া করতে গিয়ে মনে হলো ব্লগে কিছু লিখি। বিষয় খুঁজে না পেয়ে এই ফাজলামোটা করলাম। সবাই প্রেমে প্রেমে থাকুন। সিঙ্গেল অথবা মাল্টিপল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।