আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একগুচ্ছ প্রেমপত্র

কালের স্রোত

এককালে কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে অপো করতে হতো কবুতর কখন ফেরত চিঠি নিয়ে আসে! এরপর এলো কাগজে, বাহারি প্যাডে ভালোবাসার চিঠি লেখা। এখন ভালোবাসার বারতা বিনিময় হয় মোবাইলে এসএমএস, মেইল আর ফেসবুকের মেসেজ এবং চ্যাটিংয়েও। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে প্রতি বছরই প্রকাশ হয় নানা রঙের, নানা বর্ণের আয়োজন। বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রেমের চিঠি নিয়ে এ চিরকুট....... স্ত্রী কেমিকে উইনস্টন চার্চিল প্রিয়তমা কেমি মাদ্রাজ থেকে লেখা তোমার চিঠিতে তুমি কয়েকটি শব্দ লিখেছ, যে শব্দগুলো আমাকে ভীষণ আবেগাপ্লুত করেছে। আমি তোমাকে বলতে পারব না, আমি কতটা আনন্দিত হয়েছি।

আমার সব সময় মনে হয় তোমাকে আমি কিছুই দিতে পারিনি, যতটা তুমি দিয়েছ। তোমার আমার এক সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আজ আমাকে কতটা তাড়িত করে বোঝাতে পারব না। এর কোনো বিশেষণ নেই। সত্যি, তোমার কাছে অনেক ঋণ আমার। সময় খুব দ্রুত চলে যায়, কিন্তু আমাদের একত্রিত সময়গুলো কত বড় আমরা কি জানি? শত বছরের ঝড় ঝাপটার চেয়ে আমাদের এ ক’টি বছর অনেক ভালো নয় কী? তোমার প্রিয়তম উইনস্টল চার্চিল ২৩.০১.১৯৩৫ [ উইনস্টল চার্চিল : ব্রিটেনের সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ] প্রেমিকা জোসেফাইনকে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সুইট জোসেফাইন গতকাল তোমার সঙ্গে কাটানো সন্ধ্যাটির কথা ভুলতে পারছি না কিছুতেই।

তোমার ভাবনা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কী আশ্চর্য এক প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছো তুমি আমার মনে! তুমি কী রাগ করে আছ? তুমি কী চিন্তিত? আমি কী তোমাকে দুঃখী দেখছি? আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে। রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর এক আগুন। আহ! কী মিথ্যে ছবিটাই না কাল তুমি আমাকে দিয়েছ। দুপুরে তুমি চলে যাচ্ছ।

তিন ঘণ্টার মধ্যে তোমাকে দেখব আমি। ততণ পর্যন্ত হাজার চুমু তোমাকে। কিন্তু তুমি আমাকে তা ফিরিয়ে দিতে চেও না। কারণ, আমার রক্তে আগুন ছড়াবে। বোনাপার্ট ডিসেম্বর, ১৭৯৫ [ নেপোলিয়ন বোনাপার্টি : ফ্রান্সের সম্রাট ] ভ্যালেরিয়া আর্সেনেভকে তলস্তয় ভ্যালেরিয়া এরই মধ্যে তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছি আমি।

কিন্তু বাইরে নয়, তোমাকে ভালোবাসার শুরুটা হোক ভেতর থেকে। তোমার ভেতরটা দেখতে চাই আমি। ভালোবাসতে চাই ভেতরের তোমাকে। তোমার রূপ এক ঝলসায় ঝলসে দিতে পারে যে কাউকে। মুহূর্তের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে যে কোনো পরুষের হৃদয়।

তাই রূপ দিয়ে তোমাকে চেনা যাবে না। তোমাকে চিনতে চাই আত্মা দিয়ে। আমাকে বিশ্বাস কর। শ্রম ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই পাওয়া যায় না। ভালোবাসাও তাই।

এ আমি জানি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুন্দর এ অনুভূতির জন্য আমার কোনো শ্রমই কী সার্থক হবে না? শুধু একবার বল ভ্যালেরিয়া। লিও তলস্তয় ০২.১১.১৮৫৬ [ লিও তলস্তয় : বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ] অ্যাডেলকে ভিক্টর হুগো প্রিয়তমা দুটি আনন্দময় সন্ধ্যা কাটানোর পর এবং আগামী দিনের পূর্বে আজ রাতে আমি কোথাও যাব না কিন্তু। তবু তোমাকে লিখতে বসেছি। প্রিয়তমা অ্যাডেল আমার, এমন কী আছে, আমি তোমাকে বলিনি? দু’দিন ধরে আমি আমার নিজেকে জিজ্ঞেস করছি, এই সুখকর মুহূর্তগুলো স্বপ্ন নয়তো? তুমি এখনও জানো না অ্যাডেল, আমি আমাকে কতটা হারিয়ে ফেলেছি।

হয়তো আমিও জানি না। যদি তুমি আমাকে ভালোবাস তবে তুমি জান এ আমার কেমন সুখ। এটা আমি বর্ণনা করতে পারব না। আমার অ্যাডেল, এ আনন্দের ভাষা নেই। কেন বলতে পার? এটা কী এ কারণে যে, মানুষের ভাষায় এ সুখ প্রকাশের শক্তি নেই? প্রিয়তমা আমার, সম্ভবত আর মাত্র কয়েকটা মাস।

তারপর তুমি আমার বুকে ঘুমাবে, জাগবে, আমার বুকে থাকবে। তোমার সব মুহূর্তের সব ভাবনা, তোমার তাকিয়ে থাকা শুধু আমার। আমার অ্যাডেল, আমার পরী! দেবদূত! এখন আমি তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে। কিন্তু তুমি ঘুরে বেড়াও আমার চারপাশ জুড়ে। ভালো থেক।

তোমার ভিক্টর ১৫.০৩.১৮১২ [ ভিক্টর হুগো : বিশ্ববিখ্যাত কবি ও উপন্যাসিক ] ফ্যানি ব্রনকে জন কীটস সুইটেস্ট ফ্যানি তোমার ভয়, মাঝে মাঝে আমি তোমাকে ততটা ভালোবাসি না, যতটা তুমি চাও। প্রিয়তমা আমার, কী করে বোঝাই তোমাকে, আমার ভেতরে কিছুই সংরতি নেই, সব নিয়ে গেছ তুমি। তোমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি আমি। কিন্তু সবই ভালোবাসার জন্য, আর কিছু নয়। তুমি সব সময় নতুন।

তোমার হাসি, আচরণ সবই জীবন্ত। গতকাল তুমি যখন আমার জানালার পাশ দিয়ে হেঁটে গেছ, আমার মনে হয়েছে এই প্রথম আমি তোমাকে দেখলাম। ফ্যানি, কোনো অশুভ শক্তি যেন এক মুহূর্তের জন্যও তোমার ভাবনা থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। যদি তুমি আমাকে ভালো না বাস তবু আমি কখনও ভাবতে পারব না, আমি তোমার ভাবনা থেকে এক মুহূর্ত দূরে ছিলাম। তুমি যখন আমার ঘরে থাক, আমার ভাবনা কখনও জানালার বাইরে যায় না।

তোমার সবশেষ চিঠিতে তুমি আমাদের ভালোবাসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছ। এটা আমাকে আনন্দ দিয়েছে। কারণ, আমি বুঝেছি আমাদের বিচ্ছিন্নতা তোমাকে ণিকের জন্য হলেও পীড়া দেবে। যাই হোক, ভেবো না। আশা করি, শিগগিরই তোমার উদ্বেগের অবসান হবে।

ব্রাউন বাইরে গেছে, কিন্তু মিসেস ওয়াইল এখানে আছে। সে চলে গেলে আমি তোমার জন্য জেগে থাকব। তোমার ভালোবাসা জে. কীটস ০৩.০৩.১৮২০ [ জন কীটস : বিশ্ববিখ্যাত কবি ] প্রেমিকা ক্যারোলিনকে বায়রন প্রিয় ক্যারোলিন জানি কেমন আছ। তবু জানতে চাই, কেমন আছ তুমি? তোমার চোখের জল হয়তো কখনও দেখা হবে না আমার। অনুরোধ, তোমার স্বামীও যেন কখনও না দেখে।

ক্যারোলিন, তোমার আমার যত ভুল, ভালোবাসায়। কেউ এর জন্য অপরাধী নয়। শুধু শুধু কাউকে কষ্ট দিও না। স্বামীকে ভালোবেসো। তাকে কষ্ট দিও না।

পারলে আমাকে মা করে দিতে বলো। তোমার শক্তি আমি জানি, বিশ্বাস করি, তুমি সব সামলে উঠবে। ঈশ্বর তোমার সঙ্গে আছে। ভালো থেকো। বায়রন ০৭.০৮.১৮১২ [ বায়রান : বিশ্ববিখ্যাত কবি ]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।