আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি উত্তরাধুনিক কবিতা রচনা-প্রক্রিয়া [কবি ও কাব্য সমালোচকদের মতামত সাপেক্ষে]

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
কবি বলিয়াছেন, "ঢাকা শহরে ক্রৌঞ্চ অপেক্ষাও কবিদিগের সংখ্যা অধিক"। এই যা, নিশ্চয়ই কোথাও ভুল সংঘটিত হইতেছে! এইরূপ অন্তর্ঘাতমূলক বাণী কবিদিগের কোমল অন্তঃকরণের পক্ষে শোভণীয় নহে, তাই এমত কথা তাহারা বলিবেন না, দ্ব্যর্থহীন। বরঞ্চ ইহার পক্ষে কোনো কাব্য সমালোচকের উক্তি হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা বিদ্যমান। তবে এই ব্যাপারে কবি আইরিনের মতামত নিম্নরূপ: "আজকাল কাকের সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে, পূর্বেকার ন্যায় কা-কা শব্দ আর শ্রুত হয় না।

রাস্তায় অনেক ময়লার স্তুপ বিদ্যমান রহিয়া থাকিলেও, সেই স্থানে কাকদিগকে ঘোরাফেরা করিতে দেখা যায় না। কাকের সংখ্যা হ্রাস কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্যহীনতারই আরেকটি লক্ষ্মণ। কবিদিগের সংখ্যা বাড়িয়া যাওয়ার পেছনের বাস্তবতা হইলো, আসলে কাকের সংখ্যাই হ্রাস পাইয়াছে!" পরিসংখ্যানবিদদের পরিসংখ্যানজ্ঞানে আমি মাঝে মাঝে বিস্মায়াবিষ্ট সন্দেহে স্তম্ভিত হইয়া থাকি, কবিদিগের পরিসংখ্যানজ্ঞানে কদাচ নহি। তবে ইদানিংকালে কবিতার মূল্যমান সম্পর্কে বিজ্ঞজনেরা যেইরূপ হতাশা পরিব্যক্ত করিয়া থাকেন, উহার পশ্চাতে মূল কারণ কবিতার মান নহে। বরঞ্চ কবিতা আজকাল সহজবোধ্য হইয়া গিয়াছে, আর মানবসম্প্রদায়কে সহজ-সরল বস্তু কম আকর্ষণ করিয়া থাকে।

তাই কবিদিগের জন্য নিম্নে একটি চমৎকার কিন্তু জটিল উত্তরাধুনিক কবিতা লেখার প্রক্রিয়া বর্ণনা করার প্রয়াস পাওয়া হইল: পদক্ষেপ ১। প্রথমে একটি গদ্য নির্বাচন করুন [কবি লেনিনের সহজ-সরল "আমাদের কৃষি ও খাদ্য সংকট" প্রবন্ধটি উদাহরণ হিসেব উপস্থাপন করা হইল] আমাদের কৃষকরা শিল্পী সুলতানের আঁকা চিত্রের মতো সবল, পেশীবহুল দেহের অধিকারী নয়। তারা কৃষকায় না খাওয়া ভূখা-নাঙা। ... পদক্ষেপ ২। বাক্যগুলো পরপর লাইনে সন্নিবিষ্ট করুন আমাদের কৃষকরা শিল্পী সুলতানের আঁকা চিত্রের মতো সবল, পেশীবহুল দেহের অধিকারী নয়।

তারা কৃষকায় না খাওয়া ভূখা-নাঙা। তাদের নেই আধুনিক জ্ঞান, নেই চাষ করার জমি। কৃষিতে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা অথচ আমরা আমাদের ছেলেদের আদম-দালালদের মাধ্যমে হয় করছি সর্বসান্ত নাহয় পরকালে পার। যারা কিছুটা সৌভাগ্যের অধিকারী তারা কোনোরকম গাধার খাঁটুনিতে অত্যন্ত ক্লেশকর অথচ কম-বেতনে কাজ পাচ্ছে। জাপান, ভিয়েতনাম থেকে আমরা কী কিছুই শিখতে পারিনা? কী করে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জাতি থেকে তারা এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অবস্থানে উঠে আসছে ধাপে ধাপে তা থেকে আমরা উদাহরণ নিতে পারি।

আমাদের বাইরে রফতানি যোগ্য খাবার নয় অন্তত দেশের প্রত্যেকের মুখের আহার দরকার। কৃষি আর খাদ্যোৎপাদনে আপরা গার্মেন্টসের মতো বিশাল শিল্প গড়ে তুলতে পারি। কৃষির বীজোৎপাদন, ফসল ফলানো, বাজারজাতকরণ একটি বৃহৎ সমন্বিত শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা এখন অত্যন্ত জরুরি কাজ। আর শিল্পায়ন করে যাতে প্রচলিত জাতগুলোর অবলুপ্তি না ঘটে সেদিকেও নজর দিতে হবে। পদক্ষেপ ৩।

এইবার একটা কর্তনযন্ত্র লইয়া প্রতি লাইন হইতে কিছু শব্দ কাটিয়া ফেলুন। [খুব সাবধান, এমৎভাবে কর্তন করিতে হইবে যাহাতে কাক-পক্ষীও টের নাহি পায়। এইস্থলে আমার বেশি কিছু করিবার অবকাশ নাই। ] কৃষকরা শিল্পী, চিত্রের দেহ কৃশকায় নাঙা আধুনিক জ্ঞান চাষ বিপুল সম্ভাবনা পরকালে পার। সৌভাগ্যের খাঁটুনিতে ক্লেশকর যুদ্ধ উদাহরণ, দেশের মুখ— বিশাল শিল্প সমন্বিত এখন প্রচলিত জাতের অবলুপ্তি।

এটি একটি উত্তরাধুনিক কবিতা, যাহার মানে কেবলমাত্র আপনি ও স্রষ্টা অবগত। কিয়ৎদিবস পরে আপনিও উহা বিস্মৃত হইবেন! তখন কাব্য সমালোচকগণ প্রতিনিয়ত উহার মধ্যে নানাবিধ সৌন্দর্য ও রহস্য অনুসন্ধানে পরিব্যাপ্ত থাকিবেন আর মাঝে মাঝে আবিষ্কারের আনন্দে উদ্বেলিত হইবেন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.