আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রাম্য কথন

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

গ্রামে বেড়ে ওঠা বলে গ্রামের প্রতি মায়া কাটে না কখনই। যেখানেই যাই- গ্রামই খুঁজি মনে মনে। অক্সফোর্ডের আশ পাশের গ্রামের চিত্র দেখার ইচ্ছা অনেকদিন। মাস কয়েক আগে গ্লাম্পিং-এ গিয়ে ফার্ম হাউসসহ গ্রাম দেখা হয়েছে। কিন্তু একেবারে ঘরের আঙিনায় বসে সেই আলস্য ভরা বিকেল সন্ধ্যা- উপভোগ করা হয় নি।

গত মাসের ৫ তারিখ ছিলো ল্যাবের গার্ডেন পার্টি। পার্টিটা হলো ল্যাবেরই একজনের বাড়িতে। ট্যামি দে'র বাড়িতে। ট্যামিকে নিয়ে অনেক কিছু লেখা যায়। ল্যাবের সবাই তার ছেলে- মেয়ে।

তার বাড়িয়ে খায় নি, এমন কেউ নেই ল্যাবে। কিন্তু তারপরও তার ব্যাপারে ল্যাবে মিশ্র মনোভাব। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের সুপারভাইজার ট্যামিকে খুব পছন্দ করে। ট্যামি পাকিস্তান থেকে এদেশে এসেছে সেই ষাটের দশকে। তার স্বামী একজন ব্রিটিশ ভদ্রলোক।

লন্ডনে একটি আদালতের বিচারক সে। ভীষণ ভালোমানুষ। যাই হোক, ট্যামির বাড়িটা সত্যিকার গ্রামে- নাম এ্যপলটন ভিলেজ। অক্সফোর্ডশায়ারের অন্যতম বড় অংশ এ্যাবিংডন-এর মধ্যে পড়েছে গ্রামটা। সেখানে বিকেল থেকে পার্টি।

রোজার মধ্যে ছিলো। তারপরও অনেক উপভোগ্য হলো সবকিছু। গ্রামে ঢোকার খানিকটা আগে একটা বড় ফার্ম হাউস। সেখানে একরের পর একর জুড়ে নানান ফলের আবাদ। আমরা স্ট্রবেরি তুলতে গেলাম।

কিন্তু পাশের মাঠের রাসবেরি ইচ্ছেমতো খাওয়া হলো। নিয়মটা হচ্ছে আপনি গেট থেকে ঝুড়ি নিয়ে ঢুকবেন। যা খুশি খাবেন। কিন্তু গেট গিয়ে কেবল ঝুড়িতে যা নিয়ে বের হবেন তার দাম দিতে হবে। পেটের টা কেউ চেক করবে না! আমি রোজা ছিলাম বলে কিছুই খাওয়া হলো না।

কিন্তু সাথের ব্রিটিশ মেয়েটা, আমেরিকান ছেলেটা খেলো যতটা পারা যায় (খুব পারা যায় না অবশ্য এমন অবস্থায়)। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পরে আমরা গেটে আসলাম। এসব ফার্ম হাউস ফ্যামিলি ভিজিটের জন্যও আদর্শ। যত খুশি হাট, খাও দাও। পরে পয়সা দিয়ে কিছু কিনে নিয়ে আস।

আমরা ভাবলাম- ইচ্ছে মতো খেয়ে দেয়ে শেষে খালি ঝুড়ি নিয়েও ফেরা যেতে পারে- এসে বলবো, টেস্ট করে দেখলাম- কোনটাই ভালো লাগে নি, সুতরাং কিনবো না। আজ আবার গেলাম এ্যাপলটন ভিলেজে। ট্যামির বাড়িতে। উদ্দেশ্য ট্যামির বাগানের নানান ফল পেকেছে সেগুলো পাড়া। তারপর ওখানে ডিনার করে ফেরা।

দুপুরে ট্যামি এসেছিলো ল্যাবে। বলে গেছে- ফুলকপির তরকারী রান্না করেছে আমাদের জন্য। আর বার্বি-কিউ করতে চাইলে সেটা আমাদের ইচ্ছে। দুটো গাড়িতে করে আমরা ট্যামির বাড়িতে পৌঁছলাম সোয়া পাঁচটার দিকে। পাচঁজন গেলাম।

তার বাড়ির সামনের আর পিছনের আঙিনায় প্লাম, আপেল, পিয়ার পেকে আছে। সেগুলো আমাদের পাড়তে হবে। যা পাড়বো সবটাই আমাদের। ল্যাবে নিয়ে আসবো। সবাই কিছু কিছু নিতে পারবে।

প্লাম পাড়লাম কিছু। দুটো ধরন আছে ট্যামির বাগানে। একটার ভিতরটা সবুজাভ আরেকটার সোনালী হলুদ। প্লাম কাচা অবস্থায় ভীষণ টকই বলতে হবে। তবে পাকলে বেশ মিষ্টি লাগে।

টক মিষ্টি মিলিয়ে বেশ টেস্টি। ট্যামি কিছু পেড়ে রেখেছিলো আগেই। গিয়েই সেখান থেকে কিছু খেলাম আমরা। আমাদের একজন চেষ্ট করলো বাবি-কিউ করার আগুন জ্বালানোর। অনেক কসরতের পর পারা গেলো।

বার্বি-কিউ এর প্রায় পুরোটা প্রসেসই আমার কাছে ভীষণ অস্বাস্থ্যকর লাগে। সুতরাং কিছু খাওয়া হলো না আমার। আমরা খেতে বসলাম গ্রামে ঢোকার প্রায় দুই ঘণ্টা পর। ফুলকপির তরকারি, ভাত, পাস্তা- এবং ট্যামির বাগানের কাচা মরিচ। বেশ কিছু কাচা মরিচ তোলা হয়েছে ল্যাবের ইণ্ডিয়ান একজনের জন্য।

আমিও অবশ্য কিছুটা নেব সেখান থেকে। খেতে বসে বুঝলাম- মরিচগুলো বেশ ঝাল। আমি অনেক কষ্টে একটা শেষ করতে পারলাম। এখানে মরিচ খাওয়া বেশ বাহাদুরির বিষয়। পৃথিবীর প্রায় দেশেই গ্রাম একরকম।

মানুষে মানুষে বেশি হৃদ্যতা। একটু শান্ত জীবনাচার। ট্যামির স্বামী স্টিভ এসে পড়েছিলো এরমধ্যে লন্ডন থেকে। সে আমাদের সাথে খাবার পর্বে যোগ দিলো। নানান বিষয়ে কথা হলো তার সাথে।

এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো- বাংলাদেশে বাস করাটা কেমন? আমি খানিকক্ষণ ভেবে জবাব দিলাম- চ্যালেঞ্জিং বাট একসাইটিং। এ বছর একটা পরিকল্পনা করেছি- আগামী বছর গ্রীষ্মে এক মাস এখানে কোন একটা গ্রামে কাটাবো। ট্যামিকে বললাম পরিকল্পনার। ট্যামি বললো- আমার এখানেই থাকতে পারো। ট্যামির এক ছেলে এক মেয়ে।

তারা এখন সবাই যার যার কর্মস্থলে। ট্যামি তার ছেলের ঘর দেখালো- আমি পছন্দ করলে সেখানেই আগামী বছর উঠতে পারি, আমার আরাধ্য মাসের জন্য। কিন্তু আমার ইচ্ছা- এমন একটা গ্রামে যাবার যেখানে আমি কাউকে চিনি না। তেমন গ্রামের সন্ধানও পেয়ে গেছি আজই। ল্যাবের এক সামার স্টুডেন্ট বললো- মাই প্যারেন্টস উড বি ভেরি হ্যাপি ইফ ইউ ওয়ান্ট টু স্টে এ্যাট আওয়ার হোম।

অক্সফোর্ড থেকে চল্লিশ মিনিটের পথ। খুব বেশি দূরে না। দেখা যাক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.